শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

প্রত্যেকের প্রায়োরিটি আলাদা। সেটাকে অনুসরণ করার দরকার নেই, অন্তত সম্মান করুন।

প্রতিটা মানুষের প্রায়োরিটি আলাদা। প্রায়োরিটি আলাদা মানে কিন্তু মানুষটা ‘ফালতু’, তা নয়। নিজের প্রায়োরিটি দিয়ে অন্যকে বিচার করতে গেলেই তখন অন্য একজনকে ফালতু বা ‘ইউজলেস’ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সবার চিন্তা এবং গুরুত্বের জায়গাটুকু আলাদা- এটা মাথায় রাখলেই অনেক সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়।

যেমন আমি নিজেকে দিয়েই উদাহরণ দিতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি ক্লাস ও একাডেমিক কাজ থেকে দূরে ছিলাম(ঠিক অতটা দূরে নয়)।কারণ, আমার প্রায়োরিটি ভিন্ন ছিল।একদিকে বিভাগের শিক্ষক ও পরিবেশ সম্পর্কে এক ধরণের বিতৃষ্ণা এবং অন্যদিকে পারিবারিক স্ট্রং ফাইনান্সের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একাডেমিক লাইফ খুবই ভালই কেটেছে।


বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম স্টাডি ট্যুরে যখন সবাই দলবেঁধে আশুলিয়াতে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস এক্সপ্লোরিং করতে তখন আমি সাভারে, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আছি রেড-ক্রিসেন্ট এর কর্মী হিসেবে। আমার কাছে স্টাডি ট্যুরের থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে যাওয়া।

আমি নিজেকে মহৎ প্রমাণের চেষ্টা করছিনা। আমার প্রায়োরিটি যেমন আমার কাছে, আমার বাকি ক্লাসমেটদের প্রায়োরিটি তাদের কাছে। কোনটাকেই মহৎ বা খারাপ বলার সুযোগ নেই।
পুরো ভার্সিটি লাইফে আমি একটাও ল্যাব রিপোর্ট, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট ফাঁকি দেয়নি ।শিখেছি প্রচুর।এমনও হয়েছে যে,কাউকে টাকা
  দিয়ে সাহায্য করতে যেয়ে  প্রতি ইয়ারে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ফাইন দিয়ে। কেন আমি ঠিক সময়ে টাকা দেয়নি? কারণ দুটো। এক- পারিবারিক কারণে আমাকে অনেক সময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে এবং দুই- আমার ক্লাস করতে ভালো লাগতো না!অন্যকে হেল্প করতাম বেশী।পৃথিবীটাকে জানতে চাইতাম ও পৃথিবী হতে শিখতে চাইতাম বেশী।


সাধরণ মানুষের উপকার,পরীক্ষার পরেও যেটুকু সময় পেতাম সে সময়টাতে আমি ক্লাসে না গিয়ে (নতুন সেমিস্টার) পাবলিক লাইব্রেরি কিংবা বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে কাটাতাম। কারণ ক্লাসের লেকচারের থেকে ওটার প্রায়োরিটি আমার কাছে বেশি ছিল। এই সময়টাতে আমি প্রচুর বই পড়েছি, যার গুরুত্ব ‘আমার’ কাছে বস্তাপচা লেকচারের থেকে বেশি ছিল। কিন্তু এর মানে এই না, আমার যে সহপাঠিরা নিয়মিত ক্লাস করেছে তাদের আমি অন্য চোখে দেখব। তাদের কাছে ওটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমার কাছে অন্যটা।


 এ কারণে আমাকেও আমার সহপাঠিরা যদি বাতিল/ইউজলেস/বাজে ছাত্র মনে করে, সেটা তারা মনে করে তাদের প্রায়োরিটির নিরিখে। আর এই কাজটাই আমাদের সব থেকে বড় ভুল।
আমরা মানুষকে বিচার করি আমাদের মানদন্ডের ভিত্তিতে, আমাদের প্রায়োরিটির নিরিখে। কেউ অন্য রকম পোশাক পড়ে, সে উদ্ভট? কেউ সারাদিন গান বাজনা করে, সে নষ্ট? কেউ মেহনতি মানুষের জন্য রাজনীতি করে, সে বাতিল? না। আপনি আপনার পোশাকের স্টাইল দিয়ে বিচার করছেন দেখে তাকে উদ্ভট মনে হচ্ছে।

আপনি তার গানের প্রতি ভালোবাসাটা বুঝতে অক্ষম বলে তাকে নষ্ট মনে হচ্ছে। আপনি ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র সুখটা অনুভব করেননি বলে তাকে বাতিল বলে মনে হচ্ছে। যে যেরকম, সে সেরকম।


প্রত্যেকে যার যার মত করে ‘ইউনিক’। শুধু পোশাক বা ‘অ্যাপিয়ারেন্স’ দেখেই যেমন একটা মানুষের সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক না, একই ভাবে কারো কর্মকাণ্ড দেখেও ভালো বা খারাপের সরলীকরণ করা উচিত নয়। প্রত্যেকের প্রায়োরিটি আলাদা। সেটাকে অনুসরণ করার দরকার নেই, অন্তত সম্মান করুন।

মো:মেহেদী হাসান।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট । 
Share: