শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭

একজন গণমানুষের উপাচার্য-অলি মাহমুদ


vc sir
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর হয়ত স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার।আর সেই বিশ্ববিদ্যালয় যদি হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাহলেত আর কোনো কথাই নেই। তারওপর বিষয়টি যদি এমন হয় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক যদি তাঁর ছাত্রদের মতই সাধারণ জীবনাচরণে অভ্যস্ত হয় তাহলে বিষয়টা কেমন দাঁড়ায়? শিরোনাম দেখে অধিকাংশ পাঠকের নিশ্চয় বুঝার বাকি থাকবেনা কাঁর কথা বলছি। জ্বি আমি অধ্যাপক ড. আবুল আহসান মোহাম্মদ শামসুল আরেফিন সিদ্দিক স্যারের কথা বলছি। যিনি ছাত্র- শিক্ষক আর অভিভাবকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সাধারন মানুষের সাথে মেশার এবং তাদের কথা মনোনিবেশ করে শোনার অফুরান ইচ্ছাশক্তি অর্জন করেছেন।তিনি সাধারন কর্মচারী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ছাড়াও সমাজের প্রতিটি শ্রেণীপেশার মানুষের অকৃত্রিম বন্ধুতে রুপ নিয়েছেন। তাঁর ডায়রীতে দিন আর রাত বলতে কিছু নেই;সকাল আর বিকেলের কোন তফাৎ নেই ; সন্ধা কিংবা গভীর রাতের মাঝে কোন অমিল নেই। সকাল সাতটা টা থেকে রাত তিনটা এখানে সময়ের অনেক তফাৎ শুধুমাত্র একটা জায়গায় মিল তা হলো প্রতিটি মুহুর্তে তিনি কাজের মাঝে আছেন। হয় কোন ছাত্রের সমস্যার কথা শুনছেন, না হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছেন অথবা সমাজের অন্যকোন শ্রেণীপেশার মানুষের কথা শুনছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ভোরের কাচা আলো সকালে পরিণত হয়,সকালের আলো দুপুরে,দুপুর বিলিয়ে পরে পড়ন্ত বিকেলে, বিকেলের আলো মিশে যায় সন্ধার লগ্নে, সন্ধা থেকে গভীর রাত হয় কিন্তু মানুষটির মুখে কখনো বিরক্তির ছাপ খুজে পাওয়া যায়না। তিনি এতে পরম আনন্দ পান শুধুমাত্র তাই নয় যাঁরা স্যারের কাছে যান তাদের অধিকাংশই বিনা কাজে স্যারকে ভালোবেসেই যান। অন্যের কথা শুনা যদি শিল্প হয়ে থাকে তাহলে আরেফিন সিদ্দিক স্যার নিঃসন্দেহে জগতের শীর্ষ শ্রবণশিল্পী। এরকম মানুষ সত্যি পৃথিবীতে বিরল। যিনি শুধু ধৈর্য সহকারে শুনেন এবং পারতপক্ষে কথা কম বলার চেষ্টাই করেন না বরং সমাধানেরও চেষ্টা করেন। এ পৃথিবীতে বলার মানুষের অভাব নেই কিন্তু অপরের কথা শুনার মত মানুষের বড়ই অভাব।এক্ষেত্রে আরেফিন সিদ্দিক স্যার সম্পূর্ণ ভিন্ন। কথাগুলো হয়ত অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্তু বাস্তব সত্য হলো স্যার এরকমই মানবিক একজন মানুষ। কাছে থেকে যাঁরা দেখেছেন তারাই শুধুমাত্র আরেফিন স্যারের দৃড়তা ও পাথর চোখের দৃষ্টি উপলব্ধি করেছেন। যে দৃষ্টিতে তিনি সব মানুষকে সম মূল্যয়ন করেন। আমি নিজ থেকে যা দেখেছি, নিজের চোখে যা দেখেছি তাই বলেছি। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলাম।ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের কাছে গেলেই হাত পা কেপে ওঠতো আর উপাচার্যতো বহু দূরের কথা। পক্ষান্তরে আরেফিন সিদ্দিক স্যার সম্পূর্ণ উল্টো। স্যারের সামনে গেলে সাহস বাড়ে, মনে শক্তি পায়। স্যারের সাথে প্রথম পরিচয়টা যদিও লেখালেখির মাধ্যমে এবং সেটা আমার কলেজ জীবনে। তখনো একজন উপাচার্য কি এবং তাঁর সময়ের মূল্য কেমন তা ভালোভাবে বুঝে ওঠেনি। ঐসময়ে স্যারের কাছে বসে থাকতাম মিনিটের পর মিনিট ঘন্টার পর ঘন্টা আর এখন যখন কিছুটা বুঝতে শিখেছি উপাচার্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়;এখন আর এতটা সময় নেই না ঠিকই কিন্তু স্যারের কাছে এসে বসে থাকার অভ্যাসটা রয়ে গেছে। এটাকে আমি আমার অভ্যাস বলছিনা,এটা আমার বদঅভ্যাস। কারন সময় অসময় না বুঝে স্যারের কাছে গিয়ে বসে থাকি।নিজের সাথে প্রতিঙ্গা করেছি মানুষটি যেখানেই থাকুক আর আমি যতদিন বেঁচে থাকবো আমার সব বদঅভ্যাস পরিবর্তন করলেও আরেফিন স্যারের কাছে কারনে অকারনে আসার বদঅভ্যাসটা জিইয়ে রাখবো।মানুষটির কাছে কিছু চাইনি,কখনো কিছু চাইবোনা, শুধু চাই স্যারের কাছে বিনা নোটিশে আসা- যাওয়ার সিলমোহরটা কারন এখানেই যে আমার সুখ, এখানেই আমার বিশ্বাস, আরেফিন সিদ্দিক স্যারেই আমার প্রাপ্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা এদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বহুজনের নামের পাশে উপাচার্য যোগ হয়েছে কিন্তু আরেফিন সিদ্দিক স্যার একজনই। তিনি বিরল। সবার চেয়ে আলাদা। সর্বসাধারনের ভালোবাসার ভান্ডার। আরেফিন স্যারকে যারা ভালোবাসেন তাঁরা অকারনেই ভালোবাসেন, কোনো প্রয়োজনে নয় অপ্রয়োজনে ভালোবাসেন। আর এটাই স্যারের বড় এবং একমাত্র অপরাধ। কিছু মানুষ আরেফিন স্যারের মত হতে চাই,স্যারের মতই করে সাধারন মানুষের ভালোবাসা পেতে চাই আর যখন না পায় তখন স্যারের পেছনে কুছায়া হয়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু তারা জানে না স্যারের শক্তি কোথায়? আরেফিন স্যারের বড় শক্তি হলো স্যারের সততা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে নাকি লবিং প্রয়োজন হয় কিন্তু অনেকে হয়ত জানেন না আরেফিন স্যারের লবিং কে?আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লবিং- এর নামও সততা। অার এ সততা বলেই আজ সাধারন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্ব সাধারনের কাছে অসাধারন একজন সত্যিকারের মানুষ।সেই সাথে একজন সফল গণমানুষের উপাচার্য
ভাস্কর ও লেখক: অলি মাহমুদ, সম্পাদক, বাংলা দর্পন
Share: