মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮

জীবন সংগ্রামে হাড় না মানা এক যোদ্ধা:

মো:মনিরুজ্জামান(ইমন):
বয়স যখন আড়াই বছর তখন থেকেই চোখে দেখেন
 না মো: খোরশেদ মিয়া। পৃথিবীর রঙ-রূপ কোনো স্মৃতিই মনে নেই। এখন তার বয়স ৫০ বছর। কিন্তু কে বলবে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী! দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নরা  যা করতে পারেন না সেসব কাজ অনায়াসে করতে পারেন তিনি।

খোরশেদ মিয়া হাউজ ওয়ারিং,শ্যালোইঞ্জিন, নলকূপ মেরামত, মাছ ধরা,বাজার করা ও যাবতীয়  কৃষিকাজ করতে পারেন দ্রুততার সঙ্গে। অন্যের গলগ্রহ না হয়ে নিজেই কাজ করে অর্থ উপার্জন করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্বচ্ছন্দে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

 দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিস্ময়কর এই মানুষটির বাড়ি পলাশ উপজেলায় জিনারদী ইউনিয়নের বাদ বরাব(বোন্দের বাড়ী)  গ্রামে। তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, আড়াই বছর বয়সে গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান তিনি।

 গ্রামের মানুষের ঘরের বিদৎু নষ্ট হলে, নলকুপ নষ্ট হলে, কারো ক্ষেতের শষ্য বাজারে বিক্রি করে দিতে হলে ডাক পরে খোরশেদ মিয়ার।অন্যের সাহায্য না নিয়ে এসব  কাজ করে তিনি অর্থ উপার্জন করে থাকেন । আর এসব কাজ করেন তিনি স্বাবাভিক সুস্থ মানুষের চেয়েও দ্রুত। পুকুর-ডোবা থেকে মাছ ধরার ক্ষেত্রেও তার রয়েছে বিশেষ দক্ষতা।

এ ছাড়া ধানা কাটা-মাড়াই থেকে শুরু করে চারা রোপণ-উত্তোলনসহ কৃষির প্রায় সব কাজ করতে পারেন তিনি। বাড়ির আশপাশ ও বাজারঘাটে দুধ  ও কৃষিপণ্য বিক্রির কাজে যাতায়াত করতে পারেন কারো সাহায্য ছাড়াই।প্রতিদিন জিনারদী,বরাব, চরনগরদী বাজার গুলোতে পায়ে হেটে এসে কোন না কোন পন্য বিক্রি করতে দেখা যায় খোরশেদ মিয়াকে।

 খোরশেদ মিয়া  জানান, অন্ধ হয়ে জন্ম নিয়েছি বলে কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। সব সময় নিজের কাজ নিজেই করছি। এখন কারো সহযোগিতা ছাড়াই সব কাজ করতে পারেন তিনি। তিনি কখনো কারো কাছে হাত পাতেন না বা কারো সাহায্য চান না।
 প্রতিবেশী আ:রউফ গাজী  (৪০) জানান, খোরশেদ মিয়া  এক বিস্ময়ের নাম। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কীভাবে অবলীলায় সব কাজকর্ম করে যাচ্ছেন তা এক অপার রহস্য। আমরা যা করতে পারি না, তিনি তা করেন অবলীলায়।

 খোরশেদ মিয়ার  স্ত্রী  জানান, ২৭ বছর আগে অন্ধ ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। প্রথমে কোনো অবস্থাতেই তিনি বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। একপর্যায়ে পরিবারের চাপে তিনি স্বামীর সংসারে আসেন। এখন তিনি তার স্বামীকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। কারণ, তিনি কোনো দিন কারো কাছে হাত পাতেননি। কষ্ট করে উপার্জন করে সংসার চালিয়ে আসছেন। একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো তিনি সব কাজকর্ম করতে পারেন।
Share: