সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

কবি সোনাই মন্ডলের গুচ্ছ কবিতা



আঁধারের কুয়াশা


শর্তহীন কিছু ভুলচুক,কিছু রজনীগন্ধার উত্তপ্ত বিষণ্ন উপহার হয়তো উদ্ভ্রান্ত জীবনশৈলী
সৃষ্টিশীলতার জন্যই এই সুদীর্ঘ জীবন রাখাটা হয়তো বড়ই জরুরী।

 রক্তের স্রোতে হেঁটে বেড়ায় এখনো তোমার কবরের বেদনাময় এপিটাফগুলোর কান্নাভেজা উপলদ্ধি,
খেই হারানো ঝাপসা কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের সূর্যদয় অবলোকন করা এখন শুধুই স্বপ্নবিলাসী ।

কুয়াশার দিগন্ত ছুঁয়ে অবিরাম প্রত্যক্ষকরা বেহিসাবি আদরমাখা ক্ষতচিহ্ন,
প্রহর গুনে যাওয়া শিশিরসিক্ত অশ্রু কোটরে অনুভূতিরা ক্রমশ হয়ে চলেছে জরাজীর্ণ !

 অনন্ত বসন্ত একাকী কাটিয়ে দেখা হয়নি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের অপরূপ সৌন্দর্যের বৈভব্য,
প্রতি শেষরাতের স্নিগ্ধতা সমর্পিত ওই নিষ্ঠুর কবরের রজনীগন্ধা সজ্জায়,
গোলাপের ক্ল্যারিওনেট করেছি সংকীর্ণ ।



অন্তর্দহন
                       

অনু থেকে অনুপম সবই হৃদয় রাঙায় পোড়ামাটির রঙে,
যেখানে পরিত্রাণের নিঃশব্দ নির্মাণ খুঁজে ফেরে নিগূঢ়তম আস্বাদনে।
মোহের মধুরমধুরং ডাক দেয় প্রতিমুহূর্তে মৌনতার দিকে,
কোমল মৌন অন্তর হেঁটে চলে ভালোবাসার মাত্রাহীন মাপের সুখে ।
স্বপ্ন সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে চির তৃষ্ণার্ত অন্তরের এ কোন অলীক কায়া ?
সুস্পষ্ট সর্বাঙ্গীণ মধুরিপু যেন মৌ-এর অন্তরের আলেয়ার মায়াখেলা।
নব প্রেমিকের পুনর্বাসন এর স্রোতে ভিজিয়ে যায় মেদুর মেঘমালা,
জোড়া বুকের নিঃশ্বাসে খেলেছিল যে দুর্লভ প্রজাপতি সৃষ্টির বেলা !
অন্তর জানলার স্থানাঙ্ক নির্মাণে হয়নি দেখা শিশির বাঁধানো জ্যোৎস্নার সুখ,
হৃদয় উপকূলে দাঁড়িয়ে একা,ঢেউ তুলে যায় তোমার অস্থির মুখ।
জ্যোৎস্নার বিরাট রুপালি সমুদ্রে হারিয়েছি গুপ্ত আশ্চর্যের খেলাঘর,
জানালার ভাঁজে ভাঁজে ঢুকে গেছে আজ মহাশূন্যের বিরল ঝড় ।
তোমার হৃদয় অলিন্দে আমার বসত ছিল সময়প্রকীর্ণ এক শূণ্যে,
অন্ধিসন্ধির দায়ভার টুকু বিরাজিত আজ তোমার পক্ষাঘাতের অরণ্যে।
ক্রমে ক্রমে রক্তক্ষরণ গুলি সব শুকিয়ে বেধেছে জমাট স্মৃতি,
বৈপরীত্যের অনুরেখায় আজ আমরা দুজন গভীর অভিনিবেশের চক্ষুঃশ্রবা গীতি।
অন্তর্দহনের আবহাওয়া আজ সন্তর্পণে সমর্পিত নির্জন স্থির নিশ্চুপে,
ছোট ছোট ক্রমজিজ্ঞাসা ভালবাসাগুলি স্থান পেয়েছে নাতিদীর্ঘ গাণিতিক মাপজোকে।

পরকীয়া প্রেম

না জাতি, না রং, না বর্ণ, না বয়সের অবসর,
বুকের পাঁজরে পরকীয়া তোলে প্রেমের উন্মত্ত ঝড়।

হৃদয়ে হৃদয়ে ওঠে প্রেমের তীব্র উষ্ণতা,
ঠোঁটে ঠোঁটে ওঠে বিষাক্ত হেমলকের মধুর ছোঁয়া।

প্রেমের বিষময় বাতাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে বহুদূর,
 নিঃশব্দে অঙ্গে অঙ্গে রোমে রোমে ভাসে গভীর প্রেমের রোদ্দুর।

এ যে শুধুই প্রেমের পরশ, নয় প্রাণের ছলন
পরকীয়া মানে পূর্ণ প্রেমের অবৈধ আকর্ষণ।

টানাপোড়েনের এক বিষাদ যন্ত্রণা হাজার লুকানো দুখ,
নীরবে নিভৃতে সয়ে যাওয়া প্রেমের অকৃত্রিম নিষিদ্ধ সুখ ।

দুশ্চরিত্রা আখ্যায় নারী, এ যে উদাসী দখিন হাওয়া
অস্থিহীনতায় জিজ্ঞাসাচিহ্ণ ,সেমিকোলন ,দাড়ি, কমা

পরিপূর্ণ রেখায় , রঙে মনের  উচাটন
হাজার প্রতিলিপিতে প্রেম ফিরে পায় নতুন এক প্রাণ।

মনের কিনারা বেয়ে একটি মুচকি ঠোঁটের রেখা,
আলো আঁধারির দেওয়াল জুড়ে অসীম শূন্যতা আঁকা ।

পরিস্রুত জীবনের সুখ-দুঃখের অসীম পরিতাপ
পরকীয়া রেখে যায় অভ্রভেদী
প্রলয়ের মুহুর্মুহু প্রতিছাপ।
Share: