মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

আইরিন সুলতানা লিমা'র এক গুচ্ছ কবিতা

অপরিণামদর্শী



অতঃপর নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা
অগত্যা গন্তব্যহীন এ যাত্রা
পথিমধ্যে থমকে দাঁড়ানো
অতঃপর আবার পথ চলা
কবিরা প্রেমবিলাসী, অপরিণামর্শী
সমাজ সংসার তুচ্ছ অতি
নিয়মের বেড়াজাল পেরিয়ে
কল্পিত স্বর্গালোকে তাদের বসবাস।

তবে সব লেখক কবি নন
মনের কবিত্বই আসল কবিসত্বা।
দু'কলম লিখলেই মেলেনা
আসল কবির পরিচয়

কত কবি কবিতা লেখে
মনের জানালায় চুপটি করে
কেউ দেখেনা, কেউ বোঝেনা
কবিযে ভাষাজ্ঞানহীন।




তুমি নেই বলে



তুমি নেই বলে
আনন্দলোকে আনন্দ নেই
জলপুকুরে সাঁতার কাটে না
সফেদ বকেরা।

তুমি নেই বলে
ধমনীতে নৃত্য হয় না,
হৃদয়ে শিহরণ জাগে না
প্রজাপতির ওড়াওড়িতে।

তুমি নেই বলে
ভোরের আলোয় ফুল ফোটে না,
পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে না
সূর্যালোক ফিকে লাগে।

তুমি নেই বলে
রাতের জোনাকিরা আলো দেয় না
দীঘির জল ঘোলাটে লাগে
পূর্ণিমা রাত লাগে অমাবস্যা।

তুমি নেই বলে
দু'চোখ বেয়ে জল গড়ায় না
ঠোঁট দুটো তাদের বন্ধন ছিড়ে না
মৌচাকে মধু জমে না।

তুমি নেই বলে
কাশফুলেরা ছাঁই রং হয়ে গেছে
নদীর উত্তাল থেমে গেছে
দক্ষিণ হাওয়ায় মন মাতাল হয় না।

তুমি নেই বলে
বেসুরা লাগে শিল্পীর গান
যামিনীর নৃত্য যেন ব্যাঙ্গলম্ফ
বৃষ্টির শব্দ যেন কান্নার সুর।

তুমি নেই বলে
শিশিরে পা ভেজাতে ইচ্ছে করে না
ভরদুপুরে গাছের ডালে ওঠে
গান গাওয়া হয় না।

তুমি নেই বলে
শাপলা ফুলেরা নেতিয়ে পড়েছে
মালা গাঁথা হয় না এখন আর
শাপলা, বকুল ফুলে।

তুমি নেই তাই, আমি এখন
এক বিজন মরুভূমি
তপ্ত দেহ নির্জনাকায়
পড়ে আছে একা নিরালায়।



তোমাকে অভিনন্দন



তোমাকে অভিনন্দন
হে প্রিয়তম!
যদিও তুমি হাঁটো-
স্রোতের বিপরীতে
তবুও তোমায় দিলাম-
কয়েকফোঁটা জল
যেন তা তোমার
ছুয়ে যায় হৃদয়।
কয়েকফোঁটা জলে তোমায়
জানাই অভিনন্দন!

যদি না হয়-
হৃদয় ছোঁয়া,
আর কোন দিন
না হয় দেখা;
তবে আমি কেজি দরে
বেচে দেবো সেই আবেগ
যত্ন করে আমি যাহা-
জমিয়েছিলাম...
একদিনেরি মিছে কথায়।



আমি নস্টালজিয়া



বুকের ভেতরটা হটাৎ চিড়িক করে ওঠে
অঝোরে জল ঝরে প্রেমাতুর দু'নয়নে;
বিশাল শূন্যতায় ছেয়ে যায় হৃদয়তট
মনে করিয়ে দেয় আমি নস্টালজিয়া!

কত সময় হারিয়ে যায়, ঘটে কতকিছু
আমি নিশচুপ নিরালায় একা বসে;
কিছুতেই নয়নসম্মুখে  বৈপরীত্য আসেনাকো
শুধু একজনই স্বপ্নজাল বোনে নয়নজুড়ে।

শত বছর পিছিয়ে পড়ে থাকে অবুঝ মন
জানালায় ঠায় দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষা অন্তহীন ;
প্রতিরাত জেগে চাঁদের সাথে কথোপকথন
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে একাকীত্বের তীব্র জ্বালা!
গোধূলী লগ্নে সুপারি বৃক্ষে তার নামাঙ্কন
নামটি মুছে গেল কিনা তা পর্যবেক্ষণ
এই যেন হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের কর্ম
ভুল করেও তা ভুলে যাবার নয়।

একদিন তার রাজ্যপথ ভ্রমনে গিয়েছিনু
সারানিশি জেগে প্রার্থনা ছিল তার দর্শন;
অলৌকিকভাবে দেখা হলো তার রাজ্যে
সেদিনের দর্শন ভুলিনি, আমি নস্টালজিয়া!
Share: