সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯

ফখরুল হাসান এর ছোট গল্প ♦প্রণয়িনী♦

সদ্য বিধবা রুনার, কিছুদিন আগেই স্বামী মারা গেলো হার্ট এ্যাটাকে। জগৎসংসারে সবকিছুর প্রতি নিরাশ হয়ে পড়েছিলো রুনা। বিধবার অভিশাপটা বয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণায় টিকতে পারছিলো না সে। চারপাশের পরিচিত মানুষদের কথাদূ্ষণে বেঁচে থাকার পরিবেশটাই পাল্টে যাচ্ছিলো। নিজকে ঘুটিয়ে নিচ্ছিলো রুনা। ২১ বছর বয়সে বিয়ে। ২২ বছর বয়সে বিধবা! নিয়তির কী নিষ্ঠুর খেলা! অথচ রুনাকে প্রথম দেখেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠিয়েছিল সেলিম। মৌপুর গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল দুইজনের। সেদিন রুনার পরনে ছিলো নীল কালারের কারুকাজ করা কামিজ আর সালোয়ার, খোঁপায় গোঁজা ছিলো বকুল ফুলের মালা, হাত দুইটি মেহেদিতে টকটকে লাল, নাকে কাঁচের নীল ফুল আর কানে ডিজাইন করা নীল রঙের দুল! তাকে দেখে সেলিমের মনে ধরেছিল। রুনা যেন মৌপুর গ্রামের মৌচাকের মৌরানী। সরকারি চাকরি করা এমন জামাই তো হাত ছাড়া উচিত নয়। যদিও সেলিমের বয়স আর রুনার বয়সের ব্যবধান ছিলো ১৫ বছরের। বিয়ের অল্প কিছুদিন পরেই মারা যায় সেলিম। আর রুনার নামে শুরু হয় বদনাম! যেন সেলিমের মৃত্যুর জন্য রুনাই দায়ী। রুনার জন্য বুঝি অপেক্ষা করছে বাকি সময়টুকু বঞ্চনা আর লাঞ্ছনার  অন্ধকার এক ভবিষ্যৎ। কিন্তু না মানুষের কথাদূষণে খুব বেশিদিন অন্ধকারে রাখতে পারেনি রুনাকে। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সেও রুনাকে দেখে মনে হবে বিশ বছর বয়সের তরুণী। তার দিকে তাকালে যে-কোনো পুরুষের চোখ প্রথমে স্থির হবে তার সুডৌল বুকের দিকে, তারপর অপূর্ব সুন্দর মুখের দিকে।
চাকরির সুবাদে সুমনের সাথেে পরিচয় হয় রুনার, তাকে দেখেই ভালো লেগে যায় সুমনের! সেই থেকে তাদের সম্পর্কটা গভীর থেকে আরো গভীরে পৌঁছে যায়। সুমনকে একান্ত করে পাবার পর থেকে । রুনা যেন সেই আগের উচ্ছল তরুণী হয়ে গেছে। তরুণী , রুনার মুখ দেখলে মনে হবে কচি শসা। গোলাপের পাপড়ি যেন ঢেউ খেলে যাচ্ছে তার সারা দেহে। এখন সুমনের স্পর্শে রুনা প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়ে চলে। রুনার কৃষ্ণপক্ষের আঁধার ঘরে। অমাবর্ষার চাঁদ হয়ে মনের জানালার ফাঁক দিয়ে ডুকে আলোয় ঝলমল করে সুমন নামের চাঁদ। সুমনও অফিস শেষে প্রায় রাতে রুনার প্রেমসুদা পান করে বাড়ি ফেরে। সেই রাতের স্বাভাবিক অবস্থাতেও থাকে না সুমন । মদ আর রুনার শরীরের নেশায় বুদ হয়ে থাকে। আর রুনাও যেন নতুন জীবন পেয়েছে সুমনের কাছে এসে !

২য় পর্ব

সকাল বেলা অফিস থেকে আজ ফোন এসেছে! সকাল মানে সকাল ৭টা! বুধবার কোম্পানির চট্টগ্রামে নতুন ব্রাঞ্চের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে একটা জরুরী মিটিং ডেকেছে। মঙ্গলবার সকালে দুদিনের জন্য চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে সুমনকে তাই জানাতে ফোন!সুমনের কাজে অফিস কর্তৃপক্ষ খুশি হয়ে নতুন ব্রাঞ্চের দায়িত্ব দিলো।  ফোনটা রেখেই সুমন ভাবছে রুনার কথা, তাকে সাথে করে চট্টগ্রাম নিয়ে যেতে পারলে অফিসের পর সময় নিজের করে নিতে পারতো। তিন চার দিন রুনাকে আশ মিটিয়ে কাছে পাওয়া যেত । রুনারও ইদানীং খাই এত বেড়ে গেছে যে সে একবার সুমনকে প্রস্তাব দিয়েছিল । দূরে কোথাও দুজনে হারিয়ে যাবে। সেদিন সুমন দুষ্টুমি করে বলে ছিলো দিনে মিটিং আর রাতে রুনার সাথে নিশ্চিন্তে ডেটিং! তবে দুষ্টুমিটাই কী আজ সত্যি হতে যাচ্ছে!
মোবাইল হাতে নিয়ে রুনাকে কল দিলো সুমন। কল বেজেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না! মনে হয় রুনা গভীর ঘুমে অচেতন। কিছুক্ষণ পর সুমন আবার কল দিলো।
'হ্যালো '
'হ্যালো'
'তোমার ঘুম ভাঙলো থাহলে?'
'হ্যাঁ কেনো কোন সমস্যা?'
'না'
'তাহলে এতো সকালে কল দিলা যে?'
'কল দিয়েছি আমার বিয়ের দাওয়াত দিতে।'
'আরে ধ্যাত বলো না'
'আমি মঙ্গলবার চট্টগ্রাম যাচ্ছি '
'বলো কী!'
'হ্যাঁ সত্যি বলছি'
'ওয়াও আমিও যাবো তোমার সাথে!'
'হুম সেজন্য তো কল করা!'
'তাই!'
'হ্যাঁ তাই।'
'লাভ ইউ বেবি'
'লাভ ইউ, রেডি থেকো'
'ওকে বেবি'
'বাই'
'বাই'
কোম্পানি সুমনকে, পুরো প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর বানিয়ে পাঠিয়েছে । এখন কতটা সময় সে বের করতে পারবে সন্দেহ আছে। রুনাও সুমনকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাচ্ছেনা। সুমনের অফিসের কাজের প্রচন্ড চাপ । শুধুমাত্র রাতটুকুই দুইজন দুজনাকে কাছে পায়। বাহিরের পৃথিবী নয় রাতের বিছানাই যে তাদের ভ্রমন করার জায়গা! এ-কদিন ধরে অফিসের কাজের চাপে রুনাকে ঠিকমত সময় দিতে পারেনি সে ।
সুমন আজ ভোর ৫ টায় উঠে পড়লো ঘুম থেকে। কাল শুক্রবার অফিসের কাজ নেই। তবুও ঘুম ভেঙে গেলো! পাশে হাতড়ে দেখলো রুনা নেই।

৩য় পর্ব

সুমন, রূমের বাইরে এসে দেখলো কেউই ওঠেনি। আহ! ভোরের স্নিগ্ধ বাতাস, কতদিন গায়ে মাখেনি। খুব ইচ্ছে করলো ছাদে উঠে বাতাস লাগাতে। উঠেও গেল ছাদে। সুমন ছাদে উঠে বু্ঝতে পারলো ছাদ সেরকম ব্যবহার হয়না। হয়তো কেউ বেড়াতে এলেই ব্যবহার হয়। এমনিতেও কয়েটা জলের ট্যাংক ছাড়া কিছু নেই সেখানে । ছাদে উঠতেই ভোরের স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে এসে লাগলো সুমনের, চাকরি আর নেশার বাহিরেও যে একটা পৃথিবীর আছে! সেটা আজকে অনুভব করলো সুমন। ধীরে ধীরে হাঁটছে সুমন হঠাৎ কানে এল হালকা গানের শব্দ। প্রথমে ভাবলো মনের ভুল, কিন্তু না, আবারো আসছে। মনে হচ্ছে রুনার গলা। আসছে কোথা থেকে। বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো সুমনের । জলের ট্যাঙ্কের দিকে এগিয়ে গেল সুমন । সাতসকালে সুমনের চোখ দুটি ঝলসে গেল ! রুনা প্রায় অর্ধনগ্ন, পাতলা হাউসকোট গায়ে, রুনার পড়নে শুধু হাফ প্যান্ট। সুমনের মাথায় আগুন ধরে গেল রুনাকে দেখে । জলের ট্যাঙ্কে হেলান দিয়ে পরম স্নেহে রুনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ‘ ঠোঁটে ঠোঁটে রেখে পাখি যেভাবে তার বাচ্চাদের আদার খাওয়ায় সেভাবে ঠোঁট রেখে। দুহাতে রুনার গলা জড়িয়ে ধরে জোরে চাপ দিয়ে সুমনের বুকের সাথে রুনাকে মিলিয়ে নিলো । হাউসকোটের ভেতরে থাকা তুলতুলে নরম মাংসদ্বয়  যেন দুইজন মিশে যাবার মাঝে বাঁধা সৃষ্টি করছে!
'সুমন কি করছো?'
'কেউ তো এসে পরতে পারে।'
বলে সুমনের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো রুনা।
সুমন হাতছানি দিয়ে রুনাকে কাছে ডাকলো।
'কেউ আসবে না।'
'দেখবেও না ডার্লিং!'
গত তিনরাত ধরে বিছানায় আমার রুনা আমাকে যে কি চরম সুখ দিচ্ছে তা বলার নয়,
তুমি এসো, বলে সুমন তার কোলে তুলে নিলো রুনাকে। তারপর সুমনের মাথার চুলে রুনার আঙুল দিয়ে বিলি কেটে বললো,
‘অনেক হয়েছে।'
রাতে বিছানায় সুমনের সাথে যা ঘটেছে তা ভেবে ভোরের আলোয় রুনা ইতস্তত করতে লাগলো দেখে রুনাকে ধরে টেনে সুমন তার বুকে জড়িয়ে ধরলো।
'আমাকে ছাড়ো তাড়াতাড়ি।'
সবাই উঠে পড়বে বলে রুনা ট্যাঙ্কে হেলান দিয়ে হেলে গেল একটু। সুমন রুনার সামনে বসে রুনার ঠোঁটে মুখে গালে চুমুর পর চুমু দিয়ে যাচ্ছে । রুনাও মিষ্টি করে হাসলো সুমনের দিকে তাকিয়ে।
‘অসভ্য ছেলে'
রাতে এতবার আদর দিলাম তাও আবার সকাল সকাল!
'রাক্ষস একটা।'
বলে লজ্জায় সুমনের বুকে মুখে লুকিয়েছে রুনা ।
'ও রুনা সুইটহার্ট!'
আমার জান বলে সুমন চোখ বন্ধ করে রুনার ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রণয়নে ঝড় তুলতে লাগলো।
Share: