প্রবন্ধ
কবি হওয়ার সাধনা
-ফয়সাল আহমেদ
কবি হওয়ার আবেগ অনেকের মধ্যে কাজ করে। অনেকে চেষ্টা বা সাধনা করে কিন্তু সকলের সাধনার প্রতিফলন ঘটে না। সৃষ্টির জন্য দরকার সৃষ্টিশীল প্রতিভা, সৃদ্ধির জন্য দরকার কঠিন সাধনা তবেই সম্ভব হয় কবিতার ভূবনে প্রবেশ করা। সততা, নিষ্ঠা, গভীর মনোনিবেশ অতঃপর একজন শুদ্ধসত্তার মালক হতে হয়, তবে কবিতাকে ছুয়ে দেখা যায় মাত্র। শুদ্ধ চর্চার ফলে পবিত্র সত্তায় আলালোর বিকীরণ ঘটে। সেই আলোয় উদভাসিত হয়ে আত্মিক শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হয়। সেই শক্তির বলে জগৎকে দেখার আলাদা দৃষ্টি থাকতে হয় কবির। দেশ, জাতি, সমাজকে নতুন সম্ভাবনা স্বপ্ন দেখানো কবির কাজ। নিজেকে মানব কল্যাণে নিবেদিত করা কবি সাধকের কাজের বাইরে নয়। প্রকৃত লেখক সুনাম অর্জন বা বাহবা পাবার জন্য লেখো না, মানব কল্যাণকে প্রভাবিত করার জন্য লেখে। ইচ্ছা বা সখের বসে লেখালেখি করলেই কয়েকটি কবিতা লিখলেই বা কবিতার প্রচারে পাগল হলে কবিতার পাগল হওয়া যায় মাত্র কিন্তু কবিতার দূরদর্শী সাধক হওয়া যায় না। অনেকেই অল্পতেই কবি পরিচিতি পেতে চাই কিন্তু প্রকৃত কবিরা কবি পরিচয় পাবার আশায় থাকেনা, কাজের মাধ্যমে এমনিতেই পরিচয় আসে। কবির কাজ নিয়ে আত্নসমালোচনা থাকা দকোর কবির শুদ্ধভাবে কবিতা রচনা করা হচ্ছে কিনা সেদিকে ধ্যান ধাকতে হয়,যদি তা সম্ভব না হয়ে থাকে সুদুর সময়ে কিভাবে সম্ভব হবে তা নিয়ে আত্নসমালোচনা
মূলক চেতনা থাকতে হয় সাধকের। বাংলাদেশের আবহাওয়া জলবায়ু ভাবুকমনা ও কবি হওয়ার জন্য। আবেগ সৃষ্টি করে। এ দেশকে বলা হয় বাউল, কবি, সাধবের দেশ। এ দেশের মাটি জল হাওয়া অত্যন্ত প্রনোদনা সৃষ্টি করে কবি হওয়ার জন্য। কিন্তু সকলে কবি হয়ে ওঠেনা। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি”। কাল ও যুগের ধারাবাহিকতায় খুব কম সংখ্যক প্রকৃত কবি। কবি হওয়ার জন্য শৈশব থেকে স্বপ্ন সাধনা থাকতে হয়। সূর্য উদয়ের সময় যেমন নতুনদিনের সূত্রপাত হয়। তেমনি জীবনের প্রভাতবেলায় এ বিচিত্র পথে চলার আবেগ থাকতে হয়। নিজেকে তৈরি করতে হয় স্বপ্নের পথে চলার উপযুক্ত করে। বিচিত্র সাহিত্য সম্পর্কে জানতে হয় এবং অধ্যয়ন এর মাধ্যমে নিজেকে নতুনভাবে আবিস্কার করতে হয়। প্রাচীন থেকে আজ অব্দি আধুনিক যুগ পর্যন্ত সব প্রধান কবির কবিতা পড়ে ভাবশক্তি সম্ভাবনা সম্পর্কে অনুধাবন করতে হয়। আপন সত্ত্বায় সেই সবনাকে প্রশন করে নিজের কথা বলার আলাদা কৌশল, লেখার ধারা, ভাবার গভীরতা তৈরি করতে হয়। মানুষের জীবন প্রবাহ না পাওয়ার ব্যর্থতা পাওয়ার আশা-আকাঙ্খ, ভালবাসা অনুভুতি সম্পর্কে জানতে হয়। মানুষের ধর্ম, বর্ণ, কর্মধারাও, দেখতে হয় মন খোলা দৃষ্টিতে। সাধারন মানুষের দৃষ্টির অগোচরে যা এড়িয়ে যায়, কবির দৃষ্টিতে তা ধরা পড়ে। সমাজ সংসারে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা কবি ধারণ করবে মনের গভীরে । লৌকিক ও সামাজিক জীবনই সষ্টির মহাউপকরণে পরিপূর্ণ। জীবনের নানা চিত্র কাব্যর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে। কাব্যতে ছবি, ফুটিয়ে তুলতে হয় আপন হাতের পরশে জাদুর মত। সেই চিত্র ফুটে ওঠে প্রতিটি কথা, ভাষা ও পস্থির মাধ্যমে । কখনো বাস্তব কখনও আবার কল্পনায় ভর করে হাটা যায় অনেক দুর। তবে লেখকের সেই পথ চলার রুপ বুঝাতে হয় প্রকাশ্যে। যে প্রকাশ ঘটে মনের গভীরে থেকে, যা হৃদয় হতে হৃদয় ছুয়ে যায়, কবির মন থেকে ছড়িয়ে পড়ে হাজার মনে। তেমনি আপন সত্তায় ভর করে ভাবনার জগৎতে কবি সত্ত্বা ভাবের বিচরণ করে, অতঃপর কবি আত্মঅতিক্রমে জেগে ওঠে মহা সাধক হয়ে।।#