বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

লিসবন শহীদ মিনারে প্রবাসীদের ঢল, কঠোর নিরাপত্তা

লিসবন শহীদ মিনারে প্রবাসীদের ঢল, কঠোর নিরাপত্তারনি মোহাম্মদ, লিসবন, পর্তুগাল: মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের ফুলের শ্রদ্ধা জানাতে পর্তুগালের লিসবনের স্থায়ী শহীদ মিনারে ঢল নেমেছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রবাসী বাংলাদেশীদের। পর্তুগালে একুশের দিনের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত রুহুল আমিন সিদ্দিক। পরে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন পর্তুগাল পররাষ্ট্র মনন্ত্রনালয় প্রতিনিধি, আরিয়ারো জয়ন্তা প্রেসিডেন্ট, লিসবন সিটি কপোঃ প্রতিনিধি সহ পর্তুগাল আওয়ামীলীগ, পর্তুগাল বিএনপি, বৃহত্তর নোয়খালী এসোসিয়েশন ইন পর্তুগাল, বৃহত্তর ফরিদপুর এসোসিয়েশন অফ পর্তুগাল, পর্তুগাল বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস এসোসিয়েশন , ইউরোপ প্রবাসী বাংলাদেশী এসোসিয়েশন পর্তুগাল শাখা, বাংলাপিটি পাঠক ফোরাম, পর্তুগাল সাংবাদিক ফোরাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

p1


প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের শিশুরাও শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। একুশ সম্পর্কে ধারনা দেয়া এবং এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে অনেক মা-বাবা তাদের শিশু সন্তানদেরও নিয়ে আসেন শহীদ মিনারে। শহীদ মিনারের প্রাঙ্গন রাষ্ট্রদূত শুভেচছা এক বক্তব্যে বলেন, একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানে প্রতিবাদ করা। একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হয়েছিলো বলেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলতে পারছি। এ জন্য প্রতিটি মুহূর্ত একুশের চেতনা ধারন করা উচিত আমাদের। তিনি একুশের চেতনায় উদ্ভাসিত হওয়ার জন্য সকল প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানান। ধন্যবাদ জানান পর্তুগাল পররাষ্ট্র মনন্ত্রনালয়, আরিয়ারো জয়ন্তা, লিসবন সিটি কপোঃ কে লিসবনে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণে সহযোগিতা করার জন্য। এদিকে একুশের অনুষ্ঠানমালাকে ঘিরে শহীদ মিনারের চার পাশে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে পর্তুগালের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।


p1

ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
১৯৫২ সালের ভাষার জন্য শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ সব শহীদকে স্মরণ করেছেন ফ্রান্সের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মঙ্গলবার প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে একুশ উদ্‌যাপন পরিষদ ফ্রান্স। সেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় প্রায় অধর্শত বাংলাদেশি সংগঠন। সব বয়স আর শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে অস্থায়ী শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
এ সময় বিভিন্ন দেশের নাগরিকদেরও বেদিতে ফুল দিতে দেখা যায়। বেলা সাড়ে ৩টায় অস্থায়ী শহীদ মিনারে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ফিরোজ উদ্দিনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ প্রদান শুরু হয়। পরে একে একে মৌন মিছিল করে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় একুশ উদ্‌যাপন পরিষদ ফ্রান্স, অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন-আয়েবা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফ্রান্স শাখা, ফ্রান্স বাংলা প্রেসক্লাব, স্বরলিপি শিল্পীগোষ্ঠী, ফ্রান্স বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, উদীচী ফ্রান্স সংসদ, প্যারিস বার্তা, এসএ টেলিভিশন দশর্ক ফোরাম ফ্রান্স, বরিশাল বিভাগ অ্যাসোসিয়েশন, বনানী গ্রুপ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ক্লাব, ফেনী সমিতি, মুন্সিগনজ বিক্রমপু অ্যাসোসিয়েশন, সচেতন যুব সমাজ প্যারিস, অ্যাসোসিয়েশনঅব সাইপারি, উত্তরবঙ্গ সমিতি ফ্রান্স, বাংলা ভিশন ফ্যান ক্লাবসহ ফ্রান্সের প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি সংগঠন।


আয়োজক একুশে উদ্‌যাপন পরিষদের প্রধান টি এম রেজা বলেন, "একুশে উদ্‌যাপন পরিষদ সবার সহযোগিতায় কয়েক বছর ধরে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে একুশ উদ্‌যাপন করে আসছে। আগামীতে ফ্রান্সে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হবে। সেখানে আরও বড় পরিসরে একুশ উদ্‌যাপন করা হবে।"এদিকে, বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে ৭টায় দূতাবাসের কর্মকর্তারা অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর  বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সকাল ‍১০টায় ইউনেস্কোতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য দেন ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা, ইউনেস্কো বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এ ছাড়া রাত ১২টা ১ মিনিটে প্যারিসের মেট্রো হোশে ফ্রান্স আওয়ামী লীগ আয়োজিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল ১১টায় উদীচী সংসদ ফ্রান্স আয়োজিত প্যারিসের ওভারভিলায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

জীবনকে উল্টে দেখার কবিতা

জীবনকে উল্টে দেখার কবিতা


চেনাজানা বস্তু, সম্পর্ক, পরিবেশ, পরিস্থিতি যেকোনো কিছুকে এক লহমায় পাল্টে দেওয়া সম্ভব বোধকরি কবিতার মাধ্যমেই। অন্য কোনো আর্ট ফর্মের এত তীক্ষ্ণতা নেই। শব্দকে ধারাল করে তুলতে কবির মতো আর কেউ পারেনও না বোধকরি। যেমন শারমিন রহমান। কেমন অবলীলায় তিনি উল্টেপাল্টে দিতে পারেন দৃশ্যপট, চেনা জমি, কাছের মানুষ, বিশ্বাস, সামাজিকতা। তিনি শুধু ভাঙেনই না, তার গন্তব্যও আছে। এক রোম্যান্টিক জীবন ও জগতের দিকে তার যাওয়া আছে। কামনা ও বাসনা আছে। তিনি আছড়ে ফেলেন পাঠককে নির্মমতায়, যেমন আলগোছে তুলে নিয়ে যান মমতার ওমে। তার ‘লাল স্কার্ফ আর একটা করে ষাঁড়’ ২০১৭ সালের বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বইয়ের নাম, বাইরের প্রচ্ছদ আর ভেতরের কবিতায় এমন একটা সামঞ্জস্য আছে। লড়াই করে জিতে নেওয়ার, লড়াইকে পাশ না কাটিয়ে তাকে মোকাবিলার আবশ্যিকতা নিয়েই যে আমাদের জীবন তা শারমিন রহমানের মতো করে আর কোনো কবিকে কী বলতে শোনা যাচ্ছে ইদানিং কালে? তার বইটি বাজারে এনেছে চৈতন্য প্রকাশনি।
 
শারমিন রহমান ইমেজ নিয়ে খেলা করেন। তার কবিতায় অজস্র ইমেজ পাওয়া যাবে। ইমেজের রূপান্তর ঘটে যায় তার কবিতায়। তারা নিজেদের অপ্রত্যাশিত অর্থ প্রকাশ করে। কত কিছুকে লুকিয়ে থাকে আমাদের পরিচিত ইমেজগুলোর মধ্যে তা শুধু কবির চোখেই ধরা পড়ে। পাণ্ডুলিপিতে তার প্রথম কবিতাটির নাম ‘সুইসাইড নোট’। দুই লাইনের কবিতাটি এমন- ‘দীর্ঘশ্বাসে উড়ে যেতে পারে/এই ভয়ে সুইসাইড নোট লিখি নাই।’ সমাজজীবনে অত্মহত্যার চাইতে এর কারণ উদ্ধারে বেশি চাঞ্চল্য দেখা দেয়। মানুষের দীঘল জীবন ছোট্ট একটি সুইসাইড নোটে এসে পরিসমাপ্তি ঘটে। এ কবিতাকে শুধু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করে রাখবে না পাঠক। কারণ প্রতিনিয়ত ব্যক্তি কোনো না কোনো কিছুর একটা ‘ডেড এন্ড-এ’ পৌঁছায়। পরাজিত হয়। পরাজয়ের কারণে পৌঁছেই সে স্বস্তি পেতে পছন্দ করে। শারমিন ঠিক করেছেন কাউকে স্বস্তি দেবেন না। ফলে তার দীর্ঘশ্বাস অনেক বড়। জীবনের গভীর থেকে উঠে আসা বেদনার সমান সেই শ্বাস। পরের কবিতার নাম ‘এপিটাফ সংক্রান্ত’। এটিও সেই জীবনের কথা বলছে- ‘একটা পাথরকে জানি এপিটাফের সাথে পাঞ্জা লড়ছে।’
জীবনকে দেখার, বোঝার এর কলকব্জায় মরচে পড়ে যাওয়া শারমিন দেখতে পেয়েছেন। সেগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি কবিতা তার আছে। ‘পরিবার বিষয়ক’ কবিতায় আছে- ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় পড়ে থাকতে থাকতে/আর নাড়ী মুচড়ে প্রচণ্ড ব্যাথায় ককিয়ে উঠতে গিয়ে আবিষ্কার করি/পাশের বালিশ জুড়ে শুয়ে আছে ব্যাথার মত সুখ,’। অর্থাৎ, ব্যাথা ও সুখ এই দুই সংসারের পরম অনুষঙ্গ। কিন্তু প্রধানটা কী, সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক আসলে কার সঙ্গে কার, ‘বিবাহ’ যে আমরা বলি তা কার সঙ্গে কার? এ নিয়ে প্রশ্ন করার হিম্মতও আছে তার কবিতায়।
শারমিনের এই বইয়ের অনেকগুলো কবিতা বাঙালি সংসারের মধ্য ঘোরাফেরা করে। কিন্তু তাদের অভিষ্ট দার্শনিক। সেখানে শিল্প অথবা সংসারকে প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয় তার কাছে যা আমরা করছি, যা হচ্ছে তার আসল মানেটা কী? তার এসব কবিতার ইমেজগুলো সাংঘাতিক ব্যঞ্জনা তৈরি করে। অনেক ফাঁকা এটা স্থানে পাঠককে ছুঁড়ে দেয়। হতবিহ্বল করে দেয়। ‘নখ’ কবিতায় আছে- ‘আর যত খানেক দিন/বস্তির মেয়েদের মাথার উকুনের/মত/কিলবিল করত আবেগ,/আমি মনে মনে/মনের আঙুলে/টুশটুশে নখ গজাতাম,/মাথার আগায় বেঁধে রাখতাম/সন্যাসির মতন জটা,/চুল আঁচড়াতাম না/যথাসম্ভব।/আমার সত্যিকারের নখে উকুন কামড়ালে/ব্যাথা পাই।’ আবেগ শিল্প সৃষ্টির তাড়না তৈরি করে ঠিকই কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে সে যায় না। সে সত্যিকারের নখকেও কামড়ে ধরে উকুন হয়ে, ছাড়তে চায় না।
কিম্বা আমরা যে শিল্প করছি তা কোন চোখে? শারমিন বলছেন তা একটা চশমা পরা চোখে। ‘জানলা থেকে চশমাটাকে অনেকভাবে মুছতে চাই,/পারি না।/চশমাটা ভোটের দিনে বৃদ্ধাঙ্গুলির অসহ্যের মত।’ (চশমার ভিতরে শহর।) সবকিছুই তার আসলটাকে হারিয়েছে। চোখ মেললেও আমরা নির্ধারণ করে দেয়া দৃশ্যপট দেখতে পাব। আমাদের কল্পনার ঘর বন্ধ হয়ে গেছে। কবির তাই আর্তি- ‘আমি প্রিয় শহরটার কিছু কিছু ছবি আঁকতে চাই,/কল্পনায়।/পারি না।’ (চশমার ভিতরে শহর)
সহজ বিষয়গুলোই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের শিল্প মহিমাও কমে গেছে। ‘কেননানা/বর্ণ আর ধ্বনির বাইরে/স্পর্শ করি জৈবিক।’ (কবিতাকে ছুটি দিয়ে দিতেই হয়)। বর্ণ ও ধ্বনির যে কারবার তার মধ্যে আমাদের থাকা হচ্ছে না আর। আমরা বড় বেশি জৈবিক চাহিদার দিকে ছুটছি, সেদিকে নিবিষ্ট ফলে শিল্প মহিমা খর্ব হচ্ছে। আমরা টাকা হয়ে যাচ্ছি নিজেরা স্বেচ্ছায় কিম্বা পরিস্থিতির ফেরে পড়ে। বিনির্মিত হচ্ছি। মঞ্চে যা করব বলে উঠছি, ওঠার পর দেখি সেখানে ভিন্ন বাস্তবতা। শেষ পর্যন্ত ‘টাকার মেশিনে আমি/ছাপা হতে থাকি।’ (বিনির্মাণ)
শারমনি রহমান তার বইয়ে অনেক ধরনের কবিতার সমাবেশ ঘটিয়েছেন। প্রাচীন বাংলা পদ বা বচনজাতীয় কবিতা রচনার চল ছিল। ছোট্ট দুই-তিন লাইনে বিষয়গুলো তুলে ধরা হতো। যেমন সুইসাইড নোট কবিতাটির কথা ধরা যাক। অথবা এমন কবিতা তার আরো আছে গুচচ্ছ কবিতা এবং অন্যান্য নামে। কাছাকাছি ধরনের মধ্যে জাপানের হাইকু কবিতার প্রভাবও আমাদের ভাষায় রয়েছে। তার কবিতায় পপ সংস্কৃতির উপস্থিতিটা আছে। বিভিন্ন ইমেজের ব্যবহার, তাদের অর্থকে নিজের মতো করে নির্মাণ করা, প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া, অনেক কিছুকেই না মানা,ভেতরে গভীর ক্রোধ জমা করে রাখা-মোটামুটি পপ কালচারের কবিতাও এই বইয়ে রয়েছে। যেমন- ‘লণ্ঠন’। কবিতাটি এমন, ‘এত কিছু দ্যাখে/এত সূক্ষ/আমার দাদার আমলের খাঁজ কাটুনি মনে হয় তারে।/এত সুন্দর ফুল/ছুঁতে গেলে আবার দিয়ে দিবে/একটা/উপমা। এই নিদারুন ব্যস্ততায় একে কি ডাকি?/ড্রাম্যাটিক রিলিফ?’
পপ কবিতা ইল্যুসন তৈরি করে। একের ভেতর সে অন্যকে দেখতে পায়। যদিও এর সঙ্গে শারমিন রহমান নিজস্বতাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ফিউশন করেছেন। সর্বসাম্প্রতিক কবিতার ধরনের সঙ্গে তিনি তার অভিজ্ঞতা, রুচি ও দর্শনকে গেঁথেছেন। ফলে সেগুলো অন্যের অনুকরণ হয়নি। বরং এই কবি তার উপমা আর কল্পনা দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দেন একের পর এক। মায়াবি এক অনুভূতি জাগে কখনো।
কখনো আমাদের বিভ্রম জাগবে তার কবিতা পড়লে। ‘লিখতে লিখতে চোখ চলে যায় ডান দিকে। হলুদ ব্লাউজ। টশটশে বুক ফেটে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। পাখির খাঁচার মত, অসম্ভব বন্দী তাকে মনে হয়। আমি ঘর খুঁজে খুঁজে খাঁচা পাই বারবার। বারবার এই খাঁচায় আমি ঘর বানিয়েছি।’(জিগলো)। এখানে খাঁচা নিজেই বন্দী। খাঁচার ভেতর যে বন্দী থাকে তার চেয়ে ভীষণ বন্দি খাঁচা নিজেই। কারণ সেও বন্দী। আর খাঁচা দিয়ে ঘর বানিয়ে সেখানে ব্যক্তির বসবাস। কী দারুণ কাব্যিক দৃশ্য আমাদের চোখের সামনে তিনি ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
রয়েছে বিদ্রোহ আর অকপট স্বীকারোক্তিও। ‘কেমন আছে খোদার কসম/কেমন আছে বিদ্যা, মা কালী?/কেমন আছে মাথা ছুঁয়ে বলা/কেমন আছে তিন সত্যি, কেমন আছে?’ (কি তুমি সময় সম্পর্কে?)। এসব সামাজিক বিশ্বাস এখন ফিকে হয়ে গেছে। সহজ, স্বাভাবিক সম্পর্ক ছেড়ে আমরা এখন জগদ্দল বয়ে জীবন কাটাতে ভালোবাসি।
শারমিনের কবিতার অনন্য আরেক দিক হলো দায়বদ্ধতা। তিনি অন্য কবিদের প্রতি দায়বদ্ধ, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, তার ইতিহাসের ও পরিপার্শ্বকে অস্বীকার করেন না । তিনি লেখেন, ‘দুঃসময়ে টুপ করে আম্মার পেটের ভিতর ঢুকে বসে থাকি।/ওখানে আরও আরও হাত পা পেট নাক মুখ গাল মাথা শরীর পেয়ে যাই।’ (আম্মার নেভোযান)।  অথবা আরো আরো কবিদের প্রতিও তিনি নিজেকে যুক্ত দেখতে পান। যেমন শ্রাদ্ধ কবিতায় আছে- ‘শস্যকালে টি-পয়ে চা, কফি এসব তো মজুদ আছে, শুধু তোমাদের প্রিয় কবিদের নাম জানি না বলে আমি শোক করতে পারি না।’
আমরা যে দেখি আমাদের প্রতিবেশ সেখানে থাকে অনেক কিছু। আমরা আবর্জনা জমাই। আমাদের চোখের সামনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে কোনো স্থাপনা। এসবকিছু আসলে মানুষের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করে। এদের প্রত্যেকর ভেতরে থাকে আলাদা আলাদা অর্থ। এরা প্রত্যেকে যুক্ত আমাদের সঙ্গে। এরা ইতিহাসেরই উপজাত, কেউ বন্ধ্যা নয়। প্রত্যেকের গর্ভে রয়েছে অনাগাত। তার ভেতর ঢুঁ মারেন কবি শারমনি রহমান। যেমন তার এই কবিতাটির পড়া যাক, ‘টের পাচ্ছো?/চিমনির পাশে/উর্বরা শুয়ে আছে ছাই/সেখানে প্রাক্তন ধোঁয়ার কুণ্ডুলি।’(গুচ্ছ কবিতা ১)
শারমিন তার কবিতায় জড়ো করেছেন পশ্চিম ও প্রাচ্যের নানা মেটাফোর। কবিতার বিভিন্ন ধরনের কথা তো আগেই বলেছি। দার্শনিকভাবেও তিনি সংসার ও জগতজীবনের আগাপাশতলা ঢুঁড়ে বেরিয়েছেন। তিনি যেন সেই ষাঁড় যার সামনে লাল স্কার্ফ হয়ে জীবন ও দর্শন ঝুলে আছে। আর তিনি প্রাণবন্ত এক ক্ষ্যাপাটে কবি হয়ে এঁফোড়ওফোঁড় করে দিচ্ছেন বাস্তবতা। আর তাতে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে আমাদের সময়ের কী হাল তা। নিজের বহুমাত্রিকতা দিয়ে সময়ের যে প্রতিচ্ছবি তিনি নির্মাণ করেছেন তা বিচিত্র ও সলিড। এই কবি আত্মবিশ্বাসী। তার মনেবলে চীড় ধরে না। ভাষায়ও তিনি বেশ প্রঞ্জল। প্রমিতের মেকিনেসে নিজেকে আটকে রাখেননি। এই বইটি কবিতা বোদ্ধা অথবা পাঠকরা পড়বেন আশা করছি। তাদের অনেক মঙ্গল এতে নিহিত আছে নিশ্চয়।  

‘জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য কোটা থাকা জরুরি’


   
‘জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য কোটা থাকা জরুরি’


উন্নত দেশের উদাহরণ দিয়ে সর্ব ইউরোপীয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা) মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ্ ইনু বলেছেন,  জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য কোটা থাকা জরুরি। ১ কোটির উপরে প্রবাসীর দাবি-দাওয়া আদায়ে তাদের প্রতিনিধি থাকলে অনেক কিছুই সহজ হতো এবং প্রবাসীদের অর্জিত অভিজ্ঞতা দেশের কাজে লাগানো যেত। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়নের গতি আরও বেগবান হতো।

কাজী ইনু জানান, অচিরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয় অবহিত করবেন তিনি। ফ্রান্সের প্যারিসে আয়েবা মহাসচিবের সঙ্গে ইতালি থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেশপ্রিয় নিউজ পরিবারের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানীর বনানী রেস্টুরেন্টে দেশপ্রিয় নিউজের সম্পাদক সোহেল মজুমদার শিপনের সঙ্গে তার এই শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।

এ সময়  কাজী ইনুর সহধর্মিণী নেদী উল্ল্যাহ, ছেলে কাজী রোমান উল্ল্যাহ, দেশপ্রিয় নিউজের উপদেষ্টা সম্পাদক খালেদ গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে আয়েবা মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ্ ইনু প্রবাসী বাংলাদেশির কল্যাণে তার বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা দেশপ্রিয় নিউজ সম্পাদককে জানান। তিনি বলেন, যেকোনো দাবি আদায় ও উন্নয়নের জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

‘ভাষা একটি মাধ্যম মাত্র, জ্ঞানই আসল’

‘ভাষা একটি মাধ্যম মাত্র, জ্ঞানই আসল’
মাতৃভাষা কাকে বলে? উত্তর, "মায়ের মুখনিঃসৃত ভাষাকেই মাতৃভাষা বলা হয়।" মাতৃভাষার এই সংজ্ঞাটি রাষ্ট্রভাষায় দেয়া আছে। রাষ্ট্রভাষা মূলত লিখিত ভাষা যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় যাবতীয় কর্মকাণ্ড সাধিত হয়। আমাদের বোঝার সুবিধার্থে এই সংজ্ঞাটিকে যদি  আরেকটু সহজ করে বলি তাহলে সংজ্ঞাটি দাঁড়ায় "মায়ের মুখের কথাই মাতৃভাষা বা মায়ের ভাষা।" কত সহজ কথা, অথচ হঠাৎ কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, "মাতৃভাষার সংজ্ঞা কি?" সে বিব্রত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে সে যদি হয় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়া প্রাথমিক শ্রেণির কোন ছাত্র/ ছাত্রী। কারণ আমাদের প্রশ্নকারীরাও এমন একটা ভাব নিয়ে প্রশ্ন করেন, যে বেচারা উত্তর দেবেন তিনি জানা জিনিসও গুলিয়ে ফেলেন।

যেমন এমন একটা ভাব নিয়ে বলবেন, "আমরা একটু আপনার আই কিউ পিরীক্ষা করতে চাই!" হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জটিল মুখাবয়ব ধারী কিছু প্রশ্নকারী সহজ সরল একটি প্রশ্নকে জটিল করে তোলার সাথে সাথে যিনি উত্তর দেবেন তার সমস্ত আত্মবিশ্বাস একেবারে শূন্যে নামিয়ে তার হৃদযন্ত্রের বারটা বাজিয়ে ছাড়েন। এবার সমস্ত মিডিয়াতে প্রচার করেন আমাদের জিপিএ ফাইভ পাওয়া ছেলে মেয়েদের একটা সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কোন যোগ্যতা নেই, এদের বাংলা শিক্ষা প্রয়োজন। এইসব প্রশ্নকারীদের দেখে আইনস্টাইনের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো সেদিন। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। হঠাৎ এক সাংবাদিক প্রশ্ন করল-

"স্যার, আপনি কি জানেন ১ মাইলে কত কিলোমিটার?"
আইনস্টাইন বললেন- "না, আমি জানি না।"
সাংবাদিকটি সবিস্ময়ে বললো- "সেকি! আপনি এত বড় বিজ্ঞানী অথচ এটাও জানেন না?"
উত্তরে আইনস্টাইন বললেন- "যে তথ্য রেফারেন্স বই ঘেঁটে দুই মিনিটের মধ্যে বের করা যায় সেই তথ্য মস্তিষ্কে জমা রাখতে যাব কেন? আমি মস্তিষ্ক ব্যবহার করি চিন্তাভাবনার জন্য, অর্থহীন জ্ঞানের গুদাম হিসেবে নয়৷"

যাই হোক বাংলা ভাষা বিষয়ক এবং উচ্চ শিক্ষায় বাংলার আবশ্যকীয়তার আলোচনায় অনেকেই বাংলা ভাষাকে ধ্বংসের এবং বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও আমাদের সাংস্কৃতিক এবং জাতীয় জীবনে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব বর্জনের লক্ষ্যে ইংরেজি বর্জন করে বাংলাকে গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন লেখকরা নানা বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন  বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কিভাবে বিদেশি ভাষা বর্জন করে নিজ ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করেছে। জাতি হিসেবে আমাদের একটা বড় সমস্যা আছে, সেটা হল আমাদের চিন্তায় স্বচ্ছতার অভাব। আমাদের দেশের অর্ধেক বাণিজ্য হয় পশ্চিমের সাথে, আর আমাদের ইংরেজি ভাষা বর্জন করা উচিত? বাংলাদেশের  বৈদেশিক আয়ের অন্যতম রপ্তানি গার্মেন্টস শিল্পের অস্তিত্ব কোথায় থাকতো আজ ইংরেজি ছাড়া? বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভাষা তো বাংলা নয়, হচ্ছে ইংরেজি। আর তাছাড়া  অর্থনৈতিকভাবে আমাদের রাষ্ট্র মোটেই স্বাবলম্বী নয়; বরং তার পরনির্ভরতা বাড়ছে। ঋণ সাহায্য এনজিও তৎপরতার উৎস-সবই রয়েছে বিদেশে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারিত হয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফের নির্দেশ অনুযায়ী, এদের ভাষা বাংলা নয়। তাহলে কিভাবে বলি আমাদের বাংলা শিক্ষায় জোর দিতে হবে,  ইংরেজিতে নয়?

কেন ইংরেজি ভাষায় কি নিজের সংস্কৃতি শেখা যায় না? প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে  বাংলা ইংরেজি দুটো ভাষাকেই শুদ্ধভাবে লেখা এবং পড়ার উপর জোর দেয়া উচিৎ নয়? সেইসাথে শিশুদের সাহিত্য সংস্কৃতির শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের দেশীয় এবং উপমহাদেশীয়  বিভিন্ন কবি, লেখক এবং দার্শনিকদের উপর কিছু প্রাথমিক ধারণা দেয়া যেতে পারে। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষার স্তরে এইসব ছাত্রছাত্রীরাই অন্তত চার থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য প্রজেক্টে কাজ করবে। ধরা যাক মাধ্যমিক স্তরের প্রথম ছয় সপ্তাহের বাংলা  প্রজেক্টের টাইটেল "স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কবি নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা"!  এখন এই প্রজেক্টের মাধ্যমে কবি নজরুল সম্পর্কে পড়বে। এরমধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানবে।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুলের গান এবং কবিতা কিভাবে বাংলার সৈনিকদের সাহস এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো সে সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়েই যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা, সৈনিকদের নাম, হানাদার বাহিনীর নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনাগুলোর একটা প্রতিচ্ছবি তাদের মনে তৈরি হবে। এই একইভাবেই তারা এও জানবে নজরুলের কবিতা আর গান কেবল বাংলার সৈনিকদের নয়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভারতীয় সৈনিকদেরও নানা সময়ে  নানাভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো। ইংরেজিতেই ভূগোল পড়ুক, কিন্তু বাংলাদেশের ভৌগোলিক মানচিত্র, জলবায়ু ইত্যাদি সম্পর্কে পড়াবে।

ইতিহাস যদি ইংরেজিতে হয় হোক, কিন্তু তা ইংরেজি ভাষায় বাংলাদেশের এবং ভারতবর্ষের ইতিহাস হতে হবে। এর পাশাপাশি বিশ্বযুদ্ধ ও বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ের বিবরণ তুলে ধরা হবে। যেমন আয়ারল্যান্ডে প্রাথমিক শ্রেণি থেকে ছাত্র/ ছাত্রীরা আইরিশ ইতিহাসের উপর গ্রুপ প্রজেক্টে কাজ করে। যেসব জায়গায় প্রথম আক্রমণ হয়েছিলো, যেখানে ব্রিটিশ সৈন্যরা আইরিশ সৈন্যদের আক্রমণ করেছিলে সেই স্পটগুলোতে বাচ্চাদের স্কুল বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। জাদুঘরে নিয়ে যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা সংক্রান্ত এন্টিক্স দেখিয়ে সেইসব তথ্য আলোচনা করা হয়। এভাবে পুরো বছরে বাচ্চারা পাঠ্যপুস্তকের সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে মেলানোর চেষ্টা করে। একইসাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি সম্পর্কে শেখানো হয়। এর কারণ নিজের দেশের পাশাপাশি সমস্ত পৃথিবীর জ্ঞান না থাকলে বিশ্বমানের নাগরিক হবার স্বপ্ন দেখা যায় না।

আমাদের মাতৃভাষা যেহেতু বাংলা, সে ভাষা আমরা শিখবোই। স্কুলে বাংলা বিষয় হিসেবে শুদ্ধ বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি শেখানো হবে। আমাদের বুঝতে হবে ভাষা একটা মাধ্যম মাত্র, জ্ঞানই আসল। যেমন একটা টিভি শোতে দেখলাম কয়েকজন স্কুলের ছাত্রছাত্রীকে জিজ্ঞেস করা হল, "বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নাম কি?" কেউ উত্তর দিতে পারলো না। `মোহাম্মদ আবদুল হামিদ` ইংরেজিতে যা, বাংলাতেও তা। তাহলে এটা কি ভাষার অভাবে না নিজের দেশ সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতার অভাবে? বাংলাদেশে ইংরেজি এবং বেসরকারি স্কুল গুলোতে এইচএসসির পর বাংলাকে সিলেবাস থেকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? ভাষা কি? "ভাবের বাহনকে ভাষা বলে", এই ভাব যখন একজন কিশোর বা কিশোরীর অন্তরে দানা বাঁধতে শুরু করলো সে ভাবকে প্রকাশের বাহনটি তার কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হল। এরপর সে ইংরেজিতে সে ভাবকে ব্যক্ত করতে করতে তার ভাবও ইংরেজদের হয়ে ওঠছে। কারণ এই একমাত্র বাংলা ছাড়া আর সবইতো সে ইংরেজিতে এবং ইংরেজি সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করছে। আমাদের বাংলাদেশের ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীরা জানেনা বাংলাদেশের একজন কবি, সাহিত্যিক বা লেখকের নাম। সংস্কৃতি শিক্ষা মানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। দুজনের নামেই আছে ধর্ম পরিচয়। এরপর শিক্ষকের দায়িত্ব বাকি শিক্ষা দেয়া। কি সেই বাকিটুকু? রবীন্দ্রনাথ  বাংলা সাহিত্যে নোবেলজয়ী ছিলেন, জমিদার ঘরের সন্তান ছিলেন। এরপর আস্তে আস্তে বাস্তব জীবনে এসে শিখে উনি অনেক প্রেম করতেন। তাহলে এদিকে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কেমন ছিলেন? সহজ উত্তর রবীন্দ্রনাথের ঠিক উল্টা ছিলেন নজরুল। এই যদি হয় শিক্ষা, তাহলে প্রজন্মকে গিলিয়ে বাংলা খাইয়ে দিলেওকি ওদের গতি হবে?

বাঙালি কবি মধুসূদন দত্ত সৃষ্টি  করেন ইংরেজি কবিতা সনেটের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দের চতুর্দশপদী কবিতা যা দ্বারা বাংলা সাহিত্যে সূচনা হয় এক বিস্ময়কর অবিস্মরণীয় নতুন অধ্যায়ের। এভাবেই সৃষ্টি হয় অমর সাহিত্য ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’, ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’ ইত্যাদি।  হ্যাঁ এ কাজ করতে তাঁকে অবশ্যই নিজের ভাষাকে ও আত্মস্থ করতে হয়েছে। তাহলে বাংলা ইংরেজি দুটোই সমানতালে চলতে হবে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন, "গোটা বিশ্বে বাংলাভাষীর সংখ্যা বিপুল, বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা কোনো অসম্ভব কাজ ছিল না।

আমাদের উচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন বই লেখা, বাইরে যা লেখা হচ্ছে সেগুলো অনুবাদ করার।"। স্যারের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে কিভাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে? কিভাবে নিজেকে এবং নিজের দেশ ও জাতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে? স্যার নিজেইতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম,এ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের চাকরি ছেড়ে যুক্তরাজ্যে গিয়ে আবার গ্র্যাজুয়েশন করে, পিএইচডি নিয়ে তারপর দেশে ফিরেন। আচ্ছা ধরলাম বাংলায় উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা হল। কিন্তু আমাদের গণ্ডি কি কেবল বাংলাদেশ পর্যন্তই। কিভাবে আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হত ইংরেজি ছাড়া? বিশ্বব্যাপী মহান একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত করার ব্যাপারে সর্বাগ্রে যাদের নাম আসে তারা হলেন কানাডার ভাংকুভারে বাসরত প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম। একুশে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে এখন প্রতি বছর `আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস` উদযাপিত হচ্ছে। এই গৌরব ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইংরেজির মাধ্যমেই।

আমাদের একটাই কথা, পশ্চিমা সংস্কৃতি আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে, আর কেবল বাংলা শিখলেই এর সমাধান করা সম্ভব। কই পশ্চিমারাতো তাদের নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের মতো এমন হুমকির মধ্যে থাকে না। কারণ যে ভাষাতেই হোক ওরা নিজের সংস্কৃতিকে শক্তপোক্ত করে শিখে। ওদের এই কৌশলেই আমাদেরও স্বার্থসিদ্ধি করতে হবে। আমাদের নির্বোধ চিত্ত যদি কেবল ওদের খারাপটাই আঁকড়ে ধরতে চায় সে দায় ওদের উপর না চাপানোই ভালো। দুর্বল মাত্রই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে স্বস্তি চায়। একবার ভেবে দেখুনতো পশ্চিমারা আমাদের কিসে আগ্রহী? "ইস্টার্ন মিউজিক, পেশন, উইজডম, স্পিরিচুয়ালিটি!!"

নিজের ভাষা জানা অবশ্যই ভালো কথা, তবে নিজের জীবনের প্রয়োজনটা উপলব্ধি করা তার চাইতেও বড় কথা। আমাদের সে প্রয়োজন যদি ইংরেজি মেটায় তাহলে কেন কেবল বাংলাই গুরুত্ব পাবে? নিজের ভাষার প্রতি প্রীতি জাগাতে আন্তর্জাতিক ইংরেজির উপর কেন দায় চাপানো? আমাদের শিক্ষা যদি জীবনের প্রতিটি চাহিদাকে ধাপে ধাপে পূরণ করতে সক্ষম হয় তাহলে কেন আমরা নিজের শিক্ষাকে গুরুত্ব দেবোনা? সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ইংরেজি এবং বাংলা দুটো ভাষাই পড়া এবং লেখার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রাধান্য পাওয়া উচিত। সেই সাথে কর্মক্ষেত্রেও যার যার শিক্ষা প্রয়োগের গুরুত্বের প্রসারতা বৃদ্ধির ধারাবাহিক প্রচেষ্টা থাকাটাও অপরিহার্য। শিক্ষার্থীর কাছে তার শিক্ষার মূল্যবোধ তৈরি হতে হবে। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে তার শিক্ষা ব্যবহার্যনীয় হতে হবে। সে শিক্ষা যেমন তাকে অতীতের গৌরব এনে দেবে, বর্তমানের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হবে, তেমনি তাকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন  দেখায়ও সহায়তা করবে। তার দৈনন্দিন জীবনের সব চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে তার শিক্ষা। এই শিক্ষার মাধ্যমেই আমাদের আধুনিক মন মানসিকতা আমাদের উগ্রবাদিতার হাত থেকে রক্ষা পাবে, আমাদের সংস্কার, মূল্যবোধ আমাদেরই গোড়ামির শিকার হবে না। আমরা কেবল বাঙালি নয়, মানুষ হবো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বাঙালি হবার স্বপ্ন দেখতে শিখবো। তাই ইংরেজি বাংলা হোক সেই গানটার মতো,

"আয় তব সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি।
নাচিবি ঘিরি ঘিরি, গাহিবি গান"

লেখক : শিক্ষার্থী, ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজ।

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

রক্তাক্ত স্মৃতিময় একুশে ফেব্রুয়ারি

Image result for ফেব্রুয়ারিপৃথিবীর বুকে বিরল ভাষার জন্য জীবন। ভাষার জন্য আত্মত্যাগের মাস ফেব্রুয়ারি। রক্তাক্ত স্মৃতিময় একুশে ফেব্রুয়ারির সেই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপি তাই পালিত হয় 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বাংলা মায়ের সেসব অদম্য শহীদ সন্তানের জানাই গভীর ও বিন¤্র শ্রদ্ধা। ভাষা শুধু ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যমই নয়, মানুষের অস্তিত্বের ধারক-বাহক। মনের ভাবাবেগ প্রকাশ ও পারস্পারিক যোগাযোগ সম্পন্ন হয় এ ভাষার ওপর নির্ভর করেই। তাই এই ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ, সঠিক ব্যবহার অতি প্রয়োজন।


একটি শব্দের সাথে আমরা সকলেই এখন অতি পরিচিত তা হল মাদক। যার ছবলে হারাতে বসেছি একটি সুন্দর পৃথিবী। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ তা গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। উক্ত সমস্যার সমাধান খুঁজতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরও দিশেহারা। তাই সকলের সহযোগিতায় এই সমস্যা সমাধনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। সম্প্রতি সাংবাদিকতার নামে যে চাঁদাবাজির মহড়া চলছে তার   সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি। কারণ একটি সমাজের জন্য অপসাংবাদিকতা বা হলুদ সাংবাদিকতা বিষাক্ত সাপের ন্যায়। এছাড়াও ঢাকাসহ বিশ্বের  বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বই মেলা। প্রতিটি বই মেলাই সুষ্ঠু, সুন্দর ও মনোরম ভাবে সম্পন্ন হোক সেই প্রত্যাশা করি। সেই সাথে বই এর আলোই আলোকিত হোক সবার জীবন। পরিশেষে সকলের জীবনে সুখ-শান্তি নেমে আসুক, আর সাফল্য-সমৃদ্ধির ঘূর্ণিপাকে মুছে যাক সকল হতাশা আর ব্যর্থতার গ্লানি, সেই প্রত্যাশায়- আল্লাহ হাফেজ।
সম্পাদক
আলোকিত চুয়াডাঙ্গা

সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালিত

সিঙ্গাপুর প্রতিনিধিঃ একুশের প্রথম প্রহরে সিঙ্গাপুরে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে সিঙ্গাপুরে কর্মরত প্রবাসীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে ফুল দিয়ে এবং একুশের গানে গানে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অভিবাসীদের একমাত্র বাংলা পত্রিকা বাংলার কন্ঠ সিঙ্গাপুরের উদ্যোগে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে এই শ্রদ্ধা জানানো হয়।

শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলার কন্ঠ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক একে,এম মোহসিন ও শহীদুল ইসলাম পিকলু,বাংলার কন্ঠ সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলম বাবু,বাংলার কন্ঠ কালচারাল ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে অসিত কুমার বাঙ্গালী,প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি(প্রসাস)ও আমাদের বাংলাদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম জুয়েল।সিঙ্গাপুর আওয়ামীলীগ,সিঙ্গাপুর আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগ,সিঙ্গাপুর আওয়ামী যুবলীগ, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য অবস্থানরত গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগ ও বাংলাদেশ সুইমিংপুল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম ভি সাইফ।
সিঙ্গাপুর বিএনপি'র সভাপতি আবদুল কাদের,সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপি'র সভাপতি ফজলুল হক মিলন,সিঙ্গাপুর যুবদল,সাইবার ইউজার দল সিঙ্গাপুর, তালুকদার এন্ড ব্রাদার্স, প্রাইম একচেঞ্জ কোং লিমিটেড, অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেড, ব্রাম্মণবাড়িয়া সমিতি সিঙ্গাপুর, কেবি কেবি পরিষদ, আলিফ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড সহ অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করেন।


শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

পুরুষ নিজেইতো বন্দী, নারীর উষ্ণ চামড়ার খাঁজে!

পুরুষ নিজেইতো বন্দী, নারীর উষ্ণ চামড়ার খাঁজে! - টুইট-ফেস



যখনই কোনো মুহূর্তে কোনো পুরুষকে নিজেকে ছোট করতে দেখি আমার ভিতরে একরকম হাহাকার হয়। নারীর এমন অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য প্রায় স্বাভাবিক। আমি জানি, কেন এমন হয় আমার মধ্যে। পুরুষকে আমি শ্রদ্ধা করতে চাই।


পৃথিবীর প্রতিটি পুরুষকে আমি পৌরুষের সর্বোচ্চ স্তরে দেখতে চাই। কারণ পুরুষত্ব কোনো সহজ ব্যাপার নয়। আমি জানি, পুরুষের অনেক দোষত্রুটি আছে, অন্যায় আছে। কিন্তু তাঁর চাইতেও বড় কথা, একজন নারীর রক্ত-মাংসের শরীরের ঊর্ধ্বে গিয়ে তাঁকে সম্মান করার যোগ্যতা প্রতিটি পুরুষের আছে। কিন্তু তাঁর সেই ঐশ্বর্যময় পৌরুষত্বকে সে প্রতি মুহূর্তে একটা স্থূলতার মধ্যে নিষ্পেষিত করতে থাকে। তাঁর সেই ঐশ্বর্যের ডাক আমি শুনতে পাই। প্রতিটি পুরুষের তাঁর নিজের পদতলে নিষ্পেষিত হয়ে পড়া সেই পৌরুষত্বের হাহাকার, চিৎকার আমার কানে বাজতে থাকে। কেন এমন হয়, আমি জানি না। হয়তো গুরুদেবকে খুঁজি আমি।


আমি চাই, পুরুষ নিজেকে চিনুক, জানুক। তাহলেই আমাদের মুক্তি। পুরুষ নিজেইতো আজ বন্দী, নারীর উষ্ণ চামড়ার খাঁজে। আমারতো মনে হয়, তারই মুক্তি দরকার সবার আগে। আমি জানি, আমার এসব কথা অনেক নারীবাদীর চোখে হাস্যকর মনে হবে। আমি তাদের বলতে চাই, হ্যাঁ আজ এই একুশ শতাব্দীতে, পশ্চিমা দেশে থেকে, তের বছর পশ্চিমা স্বামীর পাশে থেকেই আমি বলছি, পুরুষ, তুমি ছাড়া নারী অপূর্ণ। আমি কোনো হাউজ ওয়াইফ নই, আমি অশিক্ষিত-ভীতু নই। আমি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা আর বিশুদ্ধ জ্ঞানের আধারেই জেনেছি, পুরুষকে বাদ দিয়ে নারী সামনে এগিয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু তাঁর নারীত্বকে সে পিছে ফেলে যাবে। নারী শুধু নারীর একটা খোলস বয়ে বেড়াবে। নারীর সেই খোলস কী করে আগামীর মানুষ গড়ে তুলবে, সেখানেই আমার ভয়!


ফেরদৌসি বিকনের ফেসবুক পোস্ট থেকে

জাপান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীসম্মেলন অনুষ্ঠিত

জাপান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীসম্মেলন অনুষ্ঠিত





ফখরুল ইসলাম, জাপান থেকে: জাপান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে এ সম্মেলন শুরু হয়। পরে সদ্যপ্রয়াত রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং জাপান প্রবাসী মানিক চৌধুরীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাপান স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক নুরুল আমিন রনি। অনুষ্ঠানটি যৌথ পরিচালনা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক কাউসার হাসান লাজু এবং সাহাবুদ্দিন আহমেদ সাবু।

প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মাদ টুটুল, জাপান আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সামসুল আলম ভুট্টো ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাজারুল ইসলাম মাসুম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- মো. আলাউদ্দিন, মীর হোসেন মিলন, ইঞ্জি. জসিম উদ্দিন, ইঞ্জি. হানিফ, জয় ইসালাম, নাজমুল, ফখরুল ইসলাম আজাদ, নাহিদ, সবুজ প্রমুখ।

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মালয়েশিয়ায় বৈধ শ্রমিক হতে নিবন্ধন শুরু বুধবার


মালয়েশিয়ায় বৈধ হওয়ার সুযোগ বিদেশি শ্রমিকদের

মালয়েশিয়ায় বৈধ হওয়ার সুযোগ বিদেশি শ্রমিকদের 
মালয়েশিয়া প্রতিনিধি : মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী কাগজপত্রহীন বাংলাদেশিসহ বিদেশি শ্রমিকরা নতুন করে নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী।
অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় জানানো হয়, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এই নিবন্ধনে নতুন শ্রমিকরা প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য ই-কার্ড (এনফোর্সমেন্ট কার্ড) পাবেন।
ই-কার্ড নিবন্ধন হবে বিনামূল্যে। শুধু পাঁচটি সেক্টরের জন্য ই-কার্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- প্লানটেশন, এগ্রিকালচার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, কনস্ট্রাকশন ও সার্ভিস সেক্টর। মালয়েশিয়ার যেকোনো প্রদেশের অভিবাসন কেন্দ্র থেকে এ নিবন্ধন করতে পারবেন কাগজপত্রহীন শ্রমিকরা।
ই-কার্ডের মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে গত বছর থেকে শুরু হওয়া রি-হায়ারিং পদ্ধতিতে শ্রমিকরা নির্দিষ্ট মালিকের মাধ্যমে বৈধ ভিসা করতে পারবেন।
মালয়েশিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যম 'ডেইলি সান'কে অভিবাসন মহাপরিচালক দাতুক সেরি মুস্তাফার আলী বলেন, 'অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে শ্রমিক সংকটের কারণে সরকার কাগজপত্রহীন শ্রমিকদের নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
অন্যদিকে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদী স্থানীয় 'দি স্টার অনলাইন' পত্রিকাকে বলেন, 'আমরা এই সুযোগ দিচ্ছি যাতে অবৈধ শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যান এবং তাদের কাজে কোন বিঘ্ন না ঘটে।'
যাদের পারমিট নেই, এবং যারা রি-হায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় নিবন্ধন করেননি তারা ই-কার্ডের জন্য নিজ নিজ মালিকের মাধ্যমে নিবন্ধন করে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা।

বই মেলায় স্নিগ্ধা বাউলের ‘রাঙতা কাগজ’



এবার অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় এসেছে স্নিগ্ধা বাউলের কবিতার বই ‘রাঙতা কাগজ’। বইটি প্রকাশ করেছে নিখিল প্রকাশন। জয়তু চাকমার প্রচ্ছদে কবিতার বইটি সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে পাওয়া যাবে ৬৩৬ নম্বর স্টলে। 

লেখিকা বইটি সম্পর্কে বলেছেন, শুভ বসন্ত। আসলেই এ বসন্ত আমার। আজ হাতে পেলাম আমার বসন্ত বাতায়ন। আজ থেকে বই মেলায় পাওয়া যাবে "রাঙতা কাগজ "।

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বইমেলায় তৌহিদুর রহমানের ‘মোনালিসা একটি ছবির নাম’

বইমেলায় তৌহিদুর রহমানের ‘মোনালিসা একটি ছবির নাম’

অমর একুশে বইমেলায় এসেছে সাংবাদিক-লেখক তৌহিদুর রহমানের নতুন বই ‘মোনালিসা একটি ছবির নাম’। প্রকাশ করেছে জ্যোতিপ্রকাশ, পরিবেশক ম্যাগনাম ওপাস (স্টল ৩৮৮-৩৮৯)।
প্রায় পাঁচশ বছর ধরে একটি ছবি নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আর সেই ছবিটির নামই মোনালিসা। এটি বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ছবি। তবে পাঁচশ বছর ধরেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির এই ছবিটিকে নিয়ে ঘিরে রয়েছে গভীর রহস্য। একদিকে যেমন মোনালিসার হাসির রহস্য ভেদের চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে মোনালিসার প্রকৃত পরিচয়ও উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলেছে। এই ছবিটি নিয়ে এখনো চলছে নানা গবেষণা। 
মোনালিসা ছবির নিচে আরো একটি ছবি রয়েছে কি-না। মোনালিসা ভিনগ্রহের মানুষ ছিলেন কি-না। এমনকি যে মহিলার প্রতিকৃতি ভিঞ্চি এই ছবিতে এঁকেছেন, আসলেই কি সেই মহিলা? ভিঞ্চি কি নিজেই মোনালিসার প্রেমে পড়েছিলেন? নেপোলিয়ন কেন তার বেডরুমে মোনালিসার ছবি রেখেছিলেন? সুরক্ষিত ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে মোনালিসা ছবি চুরি হলো কেমন করে? প্রতি বছর লুভ্যর মিউজিয়ামে কেন ৮০ লাখ লোক এই ছবিটি দেখতে যান! এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গবেষকরা।
সেই গবেষণা এখনো থেমে নেই। বিভিন্ন দেশে মোনালিসাকে নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য বই। তবে বাংলা ভাষায় মোনালিসার ওপরে তেমন কোনো বই নেই বললেই চলে। সে কারণে মোনালিসা ছবির বিভিন্ন দিক নিয়ে ‘মোনালিসা একটি ছবির নাম’ বইয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তৌহিদুর রহমান।
সাংবাদিক তৌহিদুর রহমান নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকায় গল্প, উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনী লেখেন। এর আগে তার উপন্যাস ‘শঙ্খচিলের মৃত্যুদৃশ্যের পর’ ও ‘নীল যমুনার জলে’ প্রকাশিত হয়েছে। তার ছোট গল্পের বই ‘জোছনায় অন্ধ যুবক’। লিখেছেন জার্মানির ওপর ভ্রমণ কাহিনী ‘ব্রান্দেনবার্গ গেট’। তৌহিদুর রহমান দৈনিক জনকন্ঠের কূটনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি দৈনিক সংবাদ, আমাদের সময়সহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন।

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সাংঘাতিক আর লোভী কসাইয়ের গল্প

সাংঘাতিক আর লোভী কসাইয়ের গল্প

দুটি পেশার মানুষের জন্য আমার মায়া হয়, রীতিমত করুণা হয়। এরা খুব অসহায়। এরা মার খায়, গালি খায়, মরে যায়। মানুষের উপকার করে। তবু তারা মানুষের ভালোবাসা পায় না। মার খাওয়ার পরও মানুষ বলে, ঠিক হয়েছে। গালি খাওয়ার পরও মানুষ বলে, এটা তাদের পাওনা। এ দুই অসহায় পেশাজীবীরা হলো- সাংবাদিক আর ডাক্তার। এইটুকু পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা ক্ষেপে যাচ্ছেন, নিশ্চয়ই মনে মনে বলছেন, এরা তো সাংঘাতিক আর কসাই। এদের গালি দেয়া, মারা কোনো ব্যাপারই না।
আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন, আপনিও একজন সাংঘাতিক। আপনি তো সাংবাদিকদের পক্ষে লিখবেনই। আসলে আমি নিজে একজন পেশাদার সাংবাদিক না হলে মন খুলে লেখাটা লিখতে পারতাম। কিন্তু এখন কিছু লিখলেই, আপনারা বলবেন, সাংবাদিকদের কিছু হলেই তো আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর সাধারন মানুষ যে মরছে, তখন তো আপনারা চুপ করে বসে থাকেন। এ অভিযোগ সত্যি নয়। আমি আমার একজন সহকর্মীর পাশে থাকবো, এটা তো স্বাভাবিক। তবে আমি নিছক একজন ব্যক্তির পক্ষে লিখি না, আমি সত্যের পক্ষে লেখার চেষ্টা করি।
গত সপ্তাহে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা আধাবেলা হরতালের সময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে পিকেটারদের ওপর চড়াও হয়। আর পুলিশি অ্যাকশনের ছবি তুলতে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হন এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিক। আমি যখন পুলিশি নির্যাতনের শিকা্র মিজানুর রহমানকে নিয়ে লিখেছি। সবাই বাহবা দিয়েছেন। সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। কিন্তু যখন আমাদের দুই সহকর্মীকে নিয়ে লিখলাম, তখনই অনেকে রীতিমত ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অনেকে বললেন, এতদিন আপনারা সরকারের দমন-পীড়ন-গুম-খুনের বিরুদ্ধে লেখেননি বলেই আজ আপনারা হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে বলছেন, সাংবাদিকরা তো সাংবাদিক নয়, সাংঘাতিক; তারা মানুষকে হয়রানি করে, হেনস্থা করে; তারা মার খেয়েছে ভালো হয়েছে। এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিকের বিচারের দাবিতে আমরা যখন রাজপথে মানববন্ধন করতে গেলাম, তখন আবার সেই পুরোনো প্রশ্ন, আপনারা তো এর আগে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ করেননি, এখন কেন মাঠে নেমেছেন? প্রথম কথা হলো, সাংবাদিকরা অ্যাক্টিভিস্ট নয়। মাঠে নেমে প্রতিবাদ করা সাংবাদিকদের কাজ নয়, তারা জনগণকে তথ্য দেবে। তবে মাঠে নেমে প্রতিবাদ না করলেও লেখায়, বলায় সাংবাদিকরা সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। সাংবাদিকদের সবসময় মাঠে থাকতে হয়। এটা তাদের পেশার অংশ। তাই মাঠে নিরাপদে দায়িত্ব পালনের নিশ্চিত করাটা আমাদের যৌক্তিক দাবি। আমরা শুধু সেটুকুই চেয়েছি। কিন্তু সেই দাবি মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আবার সাংবাদিকের রক্তে রঞ্জিত হলো রাজপথ। গত বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের মনিরামপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হন দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল। শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া থেকে ঢাকা আনার পথে মারা যান তিনি। ফেসবুকে শিমুলের মৃত্যুর হন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছি। চেয়েছি সাংবাদিকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ। কিন্তু সেখানেও কেউ কেউ মন্তব্য করেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক কোন পক্ষে ছিলেন? তিনি সেখানে গিয়েছিলেন কেন? কোথাও সংঘর্ষ শুরু হলে সাধারন মানুষ যখন দৌড়ে পালান, সাংবাদিকরা তখন সেখানে ছুটে যান। আর সাংবাদিকরা পক্ষে থাকেন না। তারা তথ্য সংগ্রহ করতে যান। আব্দুল হাকিম শিমুলের রক্তাক্ত দেহের ছবি যৌক্তিক কারণেই আমরা দেখাইনি। তবে তার রক্তাক্ত পরিচয়পত্রটি অনেকে শেয়ার করেছেন। রক্তাক্ত ‘press’ আমাদের শঙ্কিত করে, আতঙ্কিত করে।
ঢাকার সাংবাদিকরা মার খেলে আমরা যতটা প্রতিবাদ করি, ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা মরে গেলেও ততটা করি না। এটাই ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের ট্র্যাজেডি। তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, জীবনের ঝুকি নিয়ে সাংবাদিকতা করেন; কিন্তু আমরা তাদের জীবনটাও বাঁচাতে পারি না। কয়েকদিন আগে প্রথম আলোর প্রধান আলোকচিত্রী জিয়া ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাইরে পাঠিয়ে তার জীবন বাঁচানো গেছে। কিন্তু আহত শিমুলকে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা আনতে একটা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও আমরা করতে পারিনি। অনেকেই ‘মফস্বল সাংবাদিক’ বলে আলাদা বিভক্তি সৃষ্টি করেন। কিন্তু আমি কখনোই এভাবে দেখি না। সবাই সাংবাদিক। কারো পোস্টিং ঢাকায়, কারো সিরাজগঞ্জে। ঢাকার বাইরে বলে অবহলো করার সুযোগ নেই। মোনাজাতউদ্দিন তো ঢাকার বাইরে থেকেই সাংবাদিকদের প্রাতস্মরণীয় হয়েছেন।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আপনাদের অনেক ক্ষোভ তা জানি। আপনাদের অভিযোগে কিছু সত্যতা আছে, তাও মানি। তাও সাংবাদিকরাই কিন্তু এখনও জোর গলায় প্রতিবাদ করেন। বর্তমানে সংসদের বিরোধী দল গৃহপালিত, আর রাজপথের বিরোধী দল অথর্ব। তখন সরকারের অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, দমন, পীড়ন তুলে ধরার একমাত্র উপায় গণমাধ্যম। ভুক্তভোগী মানুষ পুলিশের কাছে যায় না। তাদের ধারণা পুলিশের কাছে গেলে তাদের আরো হয়রানি হতে হবে। প্রতিকার পেতে তারা আসে সাংবাদিকদের কাছে। প্রতিদিন আমাদের অফিসে নানান ধরনের লোকজন আসে বিচিত্র সব সমস্যা নিয়ে। তাদের ধারণা পত্রিকায় বা টিভিতে একটি রিপোর্ট হলেই তার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অনেকে আসে বিভিন্ন ডিসি, এসপি বা ওসির ফোন নাম্বার নিয়ে। একটা ফোন করে দিলেই নাকি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একজন অপরিচিত মানুষকে যে চাইলেই ফোন করা যায় না, এটা তাদের বোঝানো যায় না। প্রতিদিন যারা আসেন, তাদের সবার কথা আমরা শোনার চেষ্টা করি। সম্ভব হলে সাহায্য করারও চেষ্টা করি। কিন্তু তারপরও অনিবার্যভাবে ‘সাংঘাতিক’ গালি শুনতে হয়। এটাকে আমরা পেশার বিড়ম্বনা হিসেবেই মেনে নিয়েছি, এটা আমাদের বোনাস প্রাপ্তি। অনেক খারাপ সাংবাদিক যেমন আছে, তেমনি অনেক বেশি ভালো সাংবাদিকও আছে। আমি দাবি করে বলতে পারি, দেশে ভালো সাংবাদিকের সংখ্যাই বেশি।
সাংবাদিকের মতই আরেক অসহায় পেশাজীবী ডাক্তার। আমরা অসুস্থ হলেই ডাক্তারের কাছে ছুটে যাই। আর সুযোগ পেলেই কসাই বলে গালি দেই। রোগীদের সময় কম দেয়া, ভুল চিকিৎসা, অপ্রয়োজনে টেস্ট করতে দেয়া, বাড়তি টাকা নেয়া- ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযাগ আছে। কিন্তু সব ডাক্তার তো আর কসাই নয়, খারাপ নয়। তাহলে তো এতদিনে আমরা মরে ভুত হয়ে যেতাম। এতদিন তো আম জনতা ডাক্তারদের গালি দিতো। এখন রীতিমত সরকারিভাবে ডাক্তারদের ‘লোভী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবার এসএসসির বাংলা পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন এসেছে, ‘জাহেদ সাহেব একজন লোভী ডাক্তার। অভাব ও দারিদ্র বিমোচন করতে গিয়ে তিনি সবসময় অর্থের পেছনে ছুটতেন। এক সময় গাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পদ, সব কিছুর মালিক হন। তবুও তার চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। অর্থ উপার্জনই তার একমাত্র নেশা।‘ কী অসাধারণ সৃজনশীলতা! দেশে জাহেদ সাহেবের মত ডাক্তার নিশ্চয়ই অনেক আছে। কিন্তু একটি পাবলিক পরীক্ষায় একটি পেশার মানুষদের ঢালাওভাবে লোভী হিসেবে চিহ্নিত করা রীতিমত অপরাধ।
দেশে শুধু যে সাংঘাতিক সাংবাদিক আর লোভী কসাই ডাক্তার আছে তাই নয়; সব পেশাতেই ভালো মন্দ আছে। খারাপ পুলিশ, খারাপ আইনজীবীও আছে। তাই নির্দিষ্ট কোনো পেশাকে গালি দেয়ার জন্য টার্গেট করা ঠিক নয়। তবে আপনারা যদি গালি দিয়ে আরাম পান, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। 
ডাক্তারদের অপমান করলে ডাক্তাররা প্রতিবাদ করেন, সাংবাদিকদের মারলে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করেন; আমি এই প্রবণতার বিরুদ্ধে। অন্যায় সবসময় অন্যায়। এর প্রতিবাদ করতে হবে সবাইকে। সাংবাদিকরা মার খাচ্ছে, আপনি আড়ালে মুখ টিপে হাসবেন; ডাক্তার গালি খাচ্ছে, আপনি আড়ালে মজা নেবেন; তাহলে একদিন আপনিও অন্যায়ের শিকার হতে পারেন। তখন কিন্তু আপনার পাশে কাউকে পাবেন না। তাই সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে সবাইকে, যার যার জায়গা থেকে। বিবেকের ডাকে সাড়া দিতে হবে সবাইকে।
প্রভাষ আমিন : সাংবাদিক, কলাম লেখক।
probhash2000@gmail.com

শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সত্যক সারণি এর ইনপুট (তৃতীয় অধ্যায় ICT - একাদশ দ্বাদশ শ্রেণী)

প্রিয় শিক্ষর্থী বন্ধুরা কেমন আছ? আজকে আলোচনা করব সত্যক সারণীর ইনপুট নিয়ে, জেনে রাখা ভাল সকল গেইট এর সত্যক সারণীর ইনপুট বসানোর নিয়ম একই রকম, সত্যক সারণী করতে হলে তোমাকে প্রথমে যেটা বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে সত্যক সারণী টেবিল এর কলাম কয়টি হবে আর সারি কয়টি হবে?

সত্যক সারণী টেবিলের কলাম কয়টি হবে তা নির্ভর করে কত ইনপুট বিশিষ্ট গেইট এর সত্যক সারণী করবে তার উপর এবং তার সাথে গেইট এর আউটপুট (আউটপুট সর্বদা একটি) এর উপর । অর্থাৎ তুমি যদি 2 ইনপুট বিশিষ্ট গেইট এর সত্যক সারণী কর তাহলে তার কলাম হবে ইনপুট ও আউটপুট এর যোগফল এর সমান । তাহলে 2 ইনপুট বিশিষ্ট গেইট এর কলাম হবে 3 টি (2 টি ইনপুট এর জন্য এবং 1 টি আউটপুট এর
জন্য) । তাহলে আমরা সহজেই বলতে পাড়ি যদি গেইট এর ইনপুট 3 টি হয় তাহলে কলাম 4 টি (3 ইনপুট + 1 আউটপুট)। তারপর টেবিলের সারি, টেবিলের সারি কয়টি হবে তা শুধুমাত্র গেইট এর ইনপুটের উপর নির্ভর করে, অর্থাৎ গেইট এর ইনপুট 2 টি হলে সারি 4 টি (তবে সবর্দা একটি সারি বেশি নিতে হয় হেডিং লিখার জন্য মানে সারি নিতে হবে 5 টি)।

গেইট এর ইনপুট 3 টি হলে সারি 8 (আট) টি (তবে সবর্দা একটি সারি বেশি নিতে হয় হেডিং লিখার জন্য মানে সারি নিতে হবে 9 টি)।যখন টেবিল আকা শেষ হবে তখন টেবিলে ইনপুট এর মান বসাতে হবে, সর্বদা ইনপুট এর সর্বশেষ কলাম থেকে মান বসাতে হয়, ইনপুট এর সর্বশেষ কলামে একটি 1 একটি 0, আবার একটি 1 একটি 0 এই ভাবে পুরো কলাম টি 1 আর 0 দিয়ে পূরন করতে হবে, একটি কলাম বসানো হলে তার বামপাশের কলামে দুইটি 1 দুইটি 0, আবার দুইটি 1
দুইটি 0 এই ভাবে পুরো কলাম টি 1 আর 0 দিয়ে পূরন করতে হবে, তারপর তার বামপাশের কলাম টিতে চারটি 1 চারটি 0, আবার চারটি 1 চারটি 0 এই ভাবে পুরো
কলাম টি 1 আর 0 দিয়ে পূরন করতে হবে । (এক কথায় ইনপুটের সর্বশেষ (ডানদিকের) ঘর থেকে 1 আর 0 বসিয়ে আসতে হবে, প্রথম কলামে একটি 1 একটি 0
করে তার পরের কলামে দুইটি 1 দুইটি 0 করে, তার পরের কলামে চারটি 1 চারটি 0 করে, পরে আটটি, পরে ষোলটি এই ভাবে চলতে থাকবে সকল কলাম পূরণ না হওয়া পর্যন্ত)।

যদি সফল ভাবে ইনপুট বসাতে পার তার পর আউটপুট বসাতে হবে, আউটপুট বসানোর নিয়ম আলাদা, আউটপুট কি হবে সেটা নির্ভর করে কোন গেইট এর আউটপুট বসাবে তার উপর । আজ এই পর্যন্তই,আল্লাহ হাফেজ।
লেখকঃ -এস এম শরীফ, পরিচালক (আইসিটি কোচিং সেন্টার, ত্রিশা, নোয়াদিয়া, শিবপুর, নরসিংদী)