বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১৮

সনেট কবিতা কোরবানি কবি মোঃ আঃ কুদদূস




দিকে দিকে আজ শুনি, আহা কী আনন্দ!
পশুরা জবেহ হতে তৈরি প্রভূ রাহে
আমরাও প্রস্তুত আজ নানান উৎসাহে
প্রাণে প্রাণে বহে কত সুখ-সুর-ছন্দ!
নিঃস্বরাও তো ভরপূর আনন্দ-উল্লাসে
বহু দিন পরে আজ মাংস-রুটি খাবে
ধনীরা সবে খুশি মনে গোশত বিলাবে
কোলাকুলিতে ব্যস্ত হবে নামাজ শেষে।

মহানন্দে একাকার, সব মুসলমান
সুখ-দুঃখ ভাগ করে ভুলিয়া বিবাদ
ভাই ভাই তারা আজ নেই বিসম্বাদ
ভোগে নয় ত্যাগে সুখ- তাদের ঈমান।
সকল দ্বারে পৌঁছুক-ত্যাগের সংবাদ
পশু নয় পশুত্বকে- করো কোরবান।


মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

তোমার প্রিয় কবি আঞ্জুমন আরা কবিতা


নাইবা হলাম আপন তোমার নাইবা গেলাম কাছে,
এই পোড়া মন রাখবো জমা তোমার হিয়ার মাঝে।

সোনার শেকল দিলাম খুলে ঐ রাঙা চরণে,
চাইনা হতে জীবন সাথী ডাক দিও মরণে।

তোমার কাছে আসবো ফিরে যখন হবে ভোর,
তন্দ্রা এসে ভিড়লে চোখে খুলে রেখো দোর।

পাখির সাথে বন্ধু হয়ে দোলোন চাঁপার ডালে,
রইবো ফুঁটে তরু শাখে নাচবো হাওয়ার তালে।

মৌমাছিরা তুলবে মধু আমার বক্ষ চিরে,
ভ্রমর হয়ে গুন গুনিয়ে রাখবো তোমায় ঘিরে।

খিরকি ছুঁয়ে যে সমীরণ শীতল করে মন,
আমার স্মৃতি তেমনি ঘিরে রইবে সারাক্ষণ ।

নিশীথ রাতে একটু আলোর ঝলক যদি পাও,
ওটাই আমি তোমার প্রিয় বসত সুদূর গাঁও।

সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮

মনি রায় ঘোষ এর অনু গল্প অতৃপ্তি

অতৃপ্তি
#মনি_রায়_ঘোষ

সারাদিন ঘরের কাজ করে সন্ধ্যের পর যেটুকু টাইম পায় ততটুকু সময় হাতে খাতা কলম নিয়ে বসে মিলি।
সব দায়িত্ব পালন করে নিজের দিকে তাকানোর আর সময় হয়না ওর।
বাবা মা ভালো ছেলে দেখে নিজেদের ঘাড় থেকে বোঝা নামিয়েছে।একবার জানতেও চায়নি ও কি চায়।এমনকি এই বিয়েতে মত আছে কিনা সেটাও একবার জানতে চায়নি।খুব অভিমান হয় ওর বাবা মা এর ওপর।বড় লেখিকা হওয়ার ইচ্ছে ছিল ওর।কিন্তু আজ লেখার সময় টুকু বার করতে ও হিমসিম খায়।সন্ধ্যে বেলা লিখতে বসলেও নানান দিক থেকে নানান কথা ভেসে আসে।নানান ধরনের মন্তব্য পেরিয়ে লেখার ইচ্ছেটাই চলে যায়।
মিলির স্বামী বলে কি হবে এসব ছাইপাশ লিখে।ইনকাম তো হয়না এক পয়সাও।মিলির জানা ছিলনা মানুষ সবকিছু কি টাকার জন্য করে?
যার স্বপ্নের মর্যাদা বাবা মা দিতে পারেনি অন্যরা তার কথা ভাবতে যাবেই বা কেন।
আজ মিলির শ্বশুর বাড়িতে অনেক লোক।সবাই সমবেদনা জানাতে এসেছে।মিলির নিথর দেহ টা ঘিরে অনেকেই মিলির সুখ্যাতি করছে।স্বামী শ্বশুর শাশুড়ি সবাই দুঃখে ফেটে পড়ছে।আত্মহত্যা করলে তো আর পুলিশ কিছু করতে পারেনা।
তাই কারো কোন শাস্তি হয়নি।একরাশ অতৃপ্তি নিয়ে মিলি চলে গেছে।কেউ ছুঁয়ে দেখেনি ওর না পাওয়া গুলোকে।ওর স্বপ্নের কথা কেউ জানতে চায়নি কখনো।তাই ও কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে নিজের স্বপ্ন গুলো নিয়ে পারি দিয়েছে অজানার দেশে।

রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

মনি রায় ঘোষ এর কবিতা গুচ্ছ

মনি রায় ঘোষ
যদি বলতে
------------------------------

যদি বলতে পাশে আছো তুমি তবে দুর্গম পথও আমি হেসে পেরোতাম।
যদি বলতে ভালবাসো আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি হতাম।
যদি চোখে চোখ রেখে আশ্বাস দিতে তবে বিশ্বাসের বেড়াজালে তোমায় জড়িয়ে নিতাম।
যদি একবার বলতে পাশে আছো থাকবে সারাজীবন।
তবে সবকিছু ভুলে নিজেকে তোমার হাতে সপে দিতাম।

আমার স্বপ্নের বিছানা
--------------------------------

আমার স্বপ্নের বিছানা তেও রোদ পড়ে দুপুর বেলা।
খোলা জানালা দিয়ে দেখি অকাল বর্ষন।
কখনো বা ভেজা তুলোর মত মেঘ ঝড়ে পড়ে।
কতটা বাস্তব কতটা কল্পনা সেসবের ধার ধারিনা।
রাগ দুঃখ আবেগ আর একরাশ অভিমান নিয়ে রঙ্গমন্চে উঠি।
হাজার কবিতার ভিড়ে আমি আমার কবিতা খুঁজি।
হঠাত নিজেকে দেখে চমকে উঠি হাজার কবিদের ভিড়ে।
আমার স্বপ্নের আঙিনায় হঠাৎ করেই এক পশলা বৃষ্টি ঝরে।
আমি চোখ বন্ধ করে ভিজি।
চোখ মেললেই যদি বাস্তবের কড়া রোদ গায়ে এসে পড়ে,
সেই ভয়ে গুমড়ে থাকি।
স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি নিজেকে খুঁজি।

ফিরে এসো একটিবার
-----------------------------------

যদি যৌবনে আর বসন্ত না আসে,
যদি বয়সের খাঁদে পরে হারিয়ে যায় রুপ লাবণ্যের ভাস্কর্য।
যদি শরীরের শুভ্রতা জীর্ণতায় পরিনত হয় তবে কি সমস্ত ভালোবাসা ছেড়ে যাবে আমায়?
যদি শিরা উপশিরা গুলো উত্তাপ হারায় যদি কামনা বিলুপ্ত হয় গোধূলির নিয়ন আলোয় তবে কি সব প্রেম চাপা পড়ে যাবে ধ্বংসস্থুপের অন্তরালে।
শুধু কি ভালোবাসার টানে তুমি কি ফিরবে না সেদিন?
যদি এলোমেলো বেশে অপেক্ষা করি
যদি তোমার জন্য আহত পাখির মত ছটফট করি
যদি বলি একটিবার আমায় জরিয়ে ধরো।
কমলা রঙের রোদ পেরিয়ে নয়
রেশমী চুলের কস্তুরী গন্ধে মাতাল হয়ে নয়...
এই সাদামাটা রুপ জৌলুস হীন আমার জন্যই একটি বার ফিরে এসো শুধু আমার হয়ে।

শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮

ফেলনা ছোট গল্প মাহমুদ নোমান



হার না মানা কয়লাকালো শরীরের কাঁধ ঘুরিয়ে, ধবধবে সাদা কাফনের রঙের শাড়িটি প্যাঁচানো। পথিকের কৌতূহলী আড়চোখের দৃষ্টি এড়ায় না। কেননা মাথার প্রায় চুল সাদা হলেও ব্লাউজ ছাড়া অংশটুকুতে বোঝা যায় শরীরের বাঁধন আজো অনড় জীবনের তাগিদ ও কর্মে। এখানে বয়স কেবল ঠেস্ দিয়ে আছে।

সন্ধ্যা নাগাদ কৃষ্ণচূড়া গাছের ফাঁকে,একটু পুবে জেল গেইটের আশপাশে বাতি জ্বলে উঠে। আর রাস্তার উত্তরে বিখ্যাত মাজারের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে রঙ বেরঙের বাতির চিকিমিকি বাহার! অথচ মাঠের পশ্চিমে পথচারী চলাচলপথে জীর্ণ কাঁথা বিছিয়ে,  সাত-আট মাসের বুকের বাচ্চাটিকে শুয়ে রেখেছে আলেয়া। জায়গাটিতে আলো নেই,আবার অন্ধকারও না। একটা মশার কয়েলের ধোঁয়া ও ক্ষীণ আলোয় বাচ্চাটি আকাশে হাত-পা ছুঁড়ছে বালিশহীন। গায়ে একটা সুতোও নেই। এদের জন্য তবে গরমকাল আশির্বাদ!

বাচ্চাটিকে পিছ দিয়ে মনের সুখে বিড়ি ফুঁকছে আলেয়া,ভাবলেশহীন। ভাঙা দেয়ালের উপর থেকে এক মধ্যবয়স্ক পুরুষের চেয়ে থাকা শাড়ির ভেতর ঢুকতে চায়,হয়তো মুখে কুত্তার মতো লালা গিলছে। আলেয়া হঠাৎ হঠাৎ ঘাড় বাঁকিয়ে ডান হাতে বাচ্চার মুখ টেনে টেনে আদর করে, ও সোনা, ও যাদু...আমার রা - জা,আমার মা- নিক...
বাচ্চাটি মুখের কাছে মায়ের হাত পেয়ে দু'হাতে জাপটে টেনে একগাল হাসিতে, মুখে পুরে আঙ্গুল চুষতে থাকে। আলেয়া মুচকি হেসে বলে উঠে, ও মা - আমার কলিজার  ক্ষিধা লাগলো বুঝি। আহা।
আদর করতে করতে বুকে নিয়ে দুধ তুলে দেয়। দেয়ালের উপর থেকে পুরুষটি চিলিবিলি করে বাচ্চার দুধপান দেখতে চাচ্ছে। আর বাচ্চাটি হয়তো পর্যাপ্ত দুধ না পেয়ে পেট মোচড়িয়ে মোচড়িয়ে কঁকিয়ে কেঁদে উঠছে।
আলেয়া চৈত্রের কাঠফাটা রোদে পুড়ে,ঘামে ভিজে সারাদিনের কাটুনিতে, এসব মালুম না হলেও কেবল গা- মরা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। প্রতিদিন দুইবেলা রাস্তার মোড়ে গ্যাস পাম্পের থমে, দুটি আন্ডি ডেক্সি দিয়ে ভাত বেচে। এক প্লেট মাত্র ত্রিশ টাকা । আন্ডি ডেক্সি একটাতে ভাত ও অন্যটাতে পাঁচমিশালী তরিতরকারি। বাসন নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ হাটু মুড়ে খাবার খেয়ে যায়। এখানে সবাই যেন তাড়া খাওয়া মাছি। এ খোলা জায়গায় পথচারীর সম্মুখে খাবার খেতে এতোটুকু মাথায় চিড় ধরছে না। এখানের সবাই সুখি এ খাবারে...
সন্ধ্যা ঘনায়ে এলে চারদিকের নানারঙের বাতিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে আলেয়া। তাকিয়ে থাকাতে আরামবোধ হয়। তার বুকে দুধ নেয়,অথচ দুধের পিটার কাছের দোকানে কাঁচের গ্লাসে গ্লাসে। বাচ্চার বিভিন্ন দুধের কৌটা,খেলনার দিকে তাকিয়ে থাকাতে আনন্দ! কোনো পথচারী পুরুষের হাতে দেখলে হিংসে হয়। অথচ নারীর হাতে দেখলে আলেয়ার ভেতর আনন্দ আসে কর্ণফুলির নদীর দু'কূল ছাপিয়ে। কখনো কখনো বুক চাপিয়ে কান্না।
মশার কয়েল জ্বলা প্রায় শেষের দিকে,তেমন রাতও। আলেয়ার বুকে উঠে আসে এক মনুষ্য প্রাণী,রেঁদা পোকার মতো। শুরু হলো খাবলা খাবলি। আধামরার মতো আলেয়া চুপচাপ। সে বুঝে গেছে কে আসতে পারে। তবে চপচপে ভেজা  মোটা কাপড়ের, দরমের মতো শরীরে চাপে আলেয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে চেঁচিয়ে মনুষ্যটারে বুক থেকে ফেলে দেয়।
মনুষ্যটি দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বলে - খানকী মাগী এতো দেমাগ দেহস্ ক্যান...?
আলেয়া ক্যাৎ হয়ে পড়া মনুষ্যটার কলার টেনে মুখের কাছে এনে বলে- শালা,খেতে এলি যখন ইউনিফর্ম খুলে আসতে পারলি না...?
' ইউনিফর্ম তোরে কী করে...?
' পুরো বাংলাদেশ চুদতে আসে মাগীরপুত...
' তাড়াতাড়ি দে খানকি
' আগে ইউনিফর্ম খোল্
মনুষ্যটি আর না পেরে ইউনিফর্ম খুলে তার মকসুদ পূরণ করে। আলেয়ার বুকে হিসহিসানি,ধড়পড়াতে ধড়পড়াতে শান্ত হয়। এলিয়ে পড়ে। ইউনিফর্ম গায়ে দিয়ে চলে যেতে পা বাড়াতে আলেয়া তড়িৎগতিতে তার পা জাপটিয়ে ধরে।
' ঐ শালা,টেয়া দিবি না...?
' কাল নিস্
' সেটার বেইল নাই, সূর্য উঠলে তোরে আমি চিনি না। টেয়া দে আমার
মনুষ্যটি প্যান্টে হাত ঢুকানোর আগে ও পরেও জানে,তার একটা এক হাজারি নোট ছাড়া আর একটা পয়সাও নেই। তাই টাকা দিতে এতো গড়িমসি। প্যান্টে হাত ঢুকিয়ে রেখেছে,হাত বের হতে চাচ্ছে না। হঠাৎ মোড় ঘুরিয়ে একটা টহলরত পিকআপ তাদের দিকে আসছে। হেডলাইটের আলো পড়তে সে টাকাটা ছুঁড়ে দিলে,আলেয়া পা ছাড়ে। মনুষ্যটি নিচুস্বরে খানকী মাগী বলে দৌড়ে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়িটিকে স্যালুট দেয়।

০২.

কয়েকদিন পরে মাঠটিতে ঐতিহ্যবাহী বলি খেলাকে কেন্দ্র করে পুরো নগরীটা উৎসবে সাজে সাজ। বালুর উপর দুটো উদোম গায়ের ধস্তাধস্তি। ঘামের দেদারসে জলপতন। একজনকে আরেকজন বগলে চাপিয়ে দাঁত খেচে উপস্থিত কৌশলে বালিতে শুয়ায়ে দিতে চায়। এটা যেন রাষ্ট্রে- রাষ্ট্রে,সমাজে - সমাজের রাজনীতির যুতসই স্থিরচিত্র। চারদিকে গোলায়ে বাঁশ বাঁধায় উপচেপড়া দর্শকের চিল্লাচিল্লি। হৈ চৈ। বেয়ারিং পার্টির মানুষগুলো ফোলা ফোলা পেশির সর্বশক্তি দিয়ে ঢোল পিটাচ্ছে আর বাঁশিওয়ালারা গাল ফুলিয়ে অজিরানি বাজিয়ে চলছে। এখানে শিল্প ও শিল্পীর মাস্তানি। আলেয়ার থাকার জায়গায় হাত পাখা,চালন - কুলা বেচাবেচি। ক্রেতারা দু'হাতে হাতপাখা বাতাস করে করে কিনছে। স্তূপাকার  রংঅলা চনামনার টেং,তিলের হাজা,গজা,টপি - আমিত্ত্বের পসরা তের্পাল দিয়ে ছাউনি দেওয়া একেকটা দোকান। মাঠের একপাশে দু' তিনটা নাগরদোলা, খেলনাপাতির জিনিসের দোকান। আলেয়া ছেলেকে কোমরে নিয়ে মেলার দক্ষিণ পাশ থেকে পুতুল ও একটা বন্দুক কিনে প্লাস্টিকের। ফ্যাকাশে মুখে এদিকওদিক চাইতে চাইতে হেঁটে কিছু দূরে দক্ষিণ - পশ্চিমে মার্কেটের পিছনের দেয়াল ঘেঁষে বসে। তখন মাগরিবের আজান হচ্ছে পাশের মসজিদ থেকে। মাথায় আঁচলা টেনেটুনে বন্দুক উঁচিয়ে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে সগৌরবে বলতে থাকে - কেউ জানে না,তোর বাপ কি। সবাই ভয় পায়,সবাই সালাম দেয়। তোর বাপ তো ইয়া বড়...
ছেলেকে হাসাতে গিয়ে হঠাৎ বুক চেপে ধরে আলেয়া,পরাণটা নড়েচড়ে বুঝি। মুখ মলিন হয়। জীবনের ঘানি টানতে টানতে অবসাদে পেয়েছে আজ।
তবুও চোখের জল চোখে থেকে গেল আলেয়ার,বেয়ে পড়ে না। হয়তো ছেলেটি বড় হতে হতে আলেয়া আর থাকবেও না এ পৃথিবীতে। বলতে পারবে না তার বাপ আছে,বলতে পারবে না সে অনাকাক্ষিত,অসাবধানে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল...

শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮

নীলিমা নীলুর কবিতা সুখের দহন




সুখের দহন
নীলিমা নীলু

এখন সব থেকে বেশি দরকার সুশীতল হাওয়ায়
তুমি খুলে দিলে খিল এক ঝটকায়

কখনো বসন্ত যদি দোলায় পল্লব এই নিলিমায়
তুমি তো আছো আমার চোখের অন্তঃতায়

জেগে আছে নীল আকাশ, লাল  জবা, কত পাখি
আজ হৃদয় বড় বেশি শুকাতুর বেদনায়।

আমাকে কি দেবে  কেবল আঘাত?
নাকি  দেবে হিমঝরা সুখের জলধি

আর কত পারি দেবো একাই নিরবধি
শুধু কি দু:খ দিবে?

তবে ভেবে নিবো এ আমার সুখের দহন..
কাঁদি জীবনে কত যে রুদন অবেলায়।

মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮

দরিদ্র ও মেধাবী ছাএ-ছাএীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে নরসিংদী সদর থানা ছাএলীগ

আসলাম ভুইয়া:
সারা বাংলাদেশ জুড়ে যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এর নামে চলছে সরকার বিরোধী সহিংসতা আর সকল দোষারপ এর স্বীকার হচ্ছে জাতির পিতার নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঠিক এই সময়টাতেই নরসিংদী সদর থানা ছাত্রলীগ কতৃক আয়োজন করা হলো ছাত্র/ছাত্রী দের মধ্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরন সহ শোকাবহ আগষ্ট এর আলোচনা সভা  এবং এই অনুষ্ঠান প্রামান করে দেয় ছাত্রলীগ সব সময় ছাত্র/ছাত্রী বান্ধব।
উক্ত অনুষ্ঠান  এ প্রধান অতিথি হিসেবে  উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী যুবলীগ এর বিপ্লবী সাধারন সম্পাদক, ভি.পি মাহমুদুল হাসান শামীম নেওয়াজ উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাজী মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ এর সভাপতি এম এ মোমেন চৌধুরী,  প্রধান আলোচক নরসিংদী  জেলা ছাত্রলীগ এর সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু,  বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সাবেক সহ-সম্পাদক নাদিম উদ্দিন সোজাল, সভাপতিত্ব করেন নরসিংদী সদর থানা ছাত্রলীগ এর সভাপতি সারোয়ার হোসেন ফয়সাল, সঞ্চালনা করেন নরসিংদী  সদর থানা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ শামীম এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন    যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শামীম খান,  নরসিংদী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এর সাধারন সম্পাদক ও নরসিংদী সদর থানা ছাত্রলীগ এর অন্যতম ছাত্রনেতা অনিক দাস তুষার,  বেলায়েত আহামেদ, রানা মিয়া প্রমুখ।।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সরোয়ার হোসেন ফয়সাল বলেন,
মানবিক কাজে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত,,
 মানবিক কাজ মানেই এক অনাবিল শান্তির ছোয়া,  সেই মানবিকতার জায়গা থেকে আসে নির্স্বাথ ভালোবাসা।  আমরা ছাএলীগ সমাজের অসহায় গবির ও এতিম দের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি এবং সামনে আরো বেশি করে করতে চাই। এজন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।

দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।।

বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১৮

নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা

জহিরুল ইসলাম :
নিরাপদ সড়কের দাবী ও নৌমন্ত্রী সাজাহান খানের ক্ষমা চাওয়া সহ ৯ দফা দাবীতে নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) সকাল ১১ টা থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এসময় বিভিন্ন দাবী সম্বলিত প্লেকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দেয় তারা। জরুরি রোগী বহনকারী এম্বুলেন্স ছাড়া সব ধরণের যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছোট বড় সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। দমকল বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সকলন ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। এতে কিশোরগঞ্জ, সিলেট, বিবাড়িয়া, ভৈরব, নেত্রকোনা জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীবাহি শত শত বাস আটকা পড়েছে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ জানালে ৯ দফা দাবী বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও বিচার দাবী করে তারা। এর আগে নরসিংদী প্রেসক্লাব গেইট এলাকায় মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।

আপনার পক্ষেই সম্ভব ওদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনা :- ড. মাসুদুজ্জামান

ফখরুল হাসান -: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিজের মুখে ঘোষণা দিয়ে ওদের দাবি মেনে নিন। আপনার পক্ষেই সম্ভব ওদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনা। আমি নিশ্চিত, আপনি নিজেও হয়তো জানতেন না রাস্তায় লাইসেন্সবিহীন কত চালক গাড়ি চালায়। গতকাল ও আজ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের গাড়ি আটক করে দেখিয়ে দিচ্ছে লাইসেন্সবিহীন কত চালক গাড়ি চালায়। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে এইসব শিক্ষার্থীর জন্য গর্ব অনুভব করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, আপনি নিজে এইসব নৈরাজ্য বন্ধের ঘোষণা দিন। ওরা ক্লাসে ফিরে যাক। আপনি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীরা কোনো সহিংসতা না করে শান্তিপূর্ণভাবে সবধরনের যন্ত্রচালিত গাড়ির চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। পরীক্ষা করে লাইসেন্স না পেলে বা মেয়াদ-উত্তীর্ণ লাইসেন্স পেলে সেইসব গাড়ি আটক করে পুলিশকে জানাচ্ছে। পুলিশ সেইসব চালকের বিরুদ্ধে মামলা করছে। যেসব ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের কয়েকজন : (১) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুটি গাড়ি। (২) প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের গাড়ির চালক। (৩) পুলিশের একটি ভ্যানের চালক। (৪) সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের একটি বাস। (৫)  উইনার পরিবহনের একটি বাস। (৬) বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে এভাবে লাইসেন্স চেক করছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভিং ও ফিটনেস লাইসেন্স আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছে। এ সময় তাদের কোনো ধরনের বাধা দেয়নি ট্রাফিক পুলিশ। বরং সহায়তা করেছে, মামলা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বুঝিয়ে দিল খোদ রাজধানীতেই রথি-মহারথি ক্ষমতাধরদের কত কত গাড়ির চালকের লাইসেন্স নাই। রাস্তায় মূল দুর্ঘটনা তো ঘটে এই কারণেই। ভেবে অবাক হচ্ছি, আমরা যারা গাড়ির মালিক, তারা কী ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকলেও তাকে গাড়ি চালাতে দেবো? খোদ সরকারি গাড়ির ড্রাইভারেরও যদি লাইসেন্স না থাকে, তাহলে রাস্তায় তো কোনো শৃঙ্খলাই নাই, বলতে হবে। এরকম ড্রাইভাররা তো মানুষ খুন করবেই। রাস্তায় যাতে লাইসেন্সবিহীন কোনো চালক গাড়ি না চালায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিজের মুখে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিন যে যানচলাচলে সবধরনের শৃঙ্খলা ফিরিযে আনার জন্য আপনি সবকিছু করবেন। ওদের আশ্বস্ত করুন। আপনার পক্ষেই কেবল সম্ভব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনা।

এক অভাবনীয় দৃশ্য :- স্বকৃত নোমান

ফখরুল হাসান:- এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। মনে হচ্ছে ফকনার, হুয়ান রুলফো কিংবা গার্সিয়া মার্কেজের গল্পের মঞ্চায়ন হচ্ছে বাংলাদশে। রং সাইড দিয়ে যাওয়ার সময় একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে বাচ্চারা। একজন মেয়রের গাড়ি আটকে দিয়েছে। মেয়র পুলিশকে ফোন দিচ্ছেন। পুলিশ বলছে, আমাদের কিচ্ছু করার নেই। কী অভাবনীয় ঘটনা! প্রতিটি গাড়ির কাগজপত্র চেক করছে বাচ্চারা। বাদ যাচ্ছে না পুলিশ-র‌্যাবের গাড়িও। অসীম ক্ষমতাধর পুলিশ-র‌্যাব তাদের গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। রাজধানীর যানবাহনগুলো কী সুন্দর লাইন ধরে চলছে। অবৈধ চালকরা রাস্তায় গাড়ি বের করার সাহস পাচ্ছে না। আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে বাচ্চারা। তাদের এই আন্দোলন সফল হবে। যদি না কোনো অশুভ শক্তি, যদি না কোনো মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী সফলতা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।

বাংলাদেশ পথ হারাবে না। লাইনে এসে যাবে। তরুণ প্রজন্মই লাইনে উঠিয়ে দেবে। একদিন এই তরুণরাই শুরু করবে ভেজাল-বিরোধী আন্দোলন। প্রতিটি হোটেলে, প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি দোকানে হানা দিয়ে ভেজাল পণ্য যাচাই করবে তারা। ভেজালকারীদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। একদিন এই তরুণরাই শুরু করবে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন। প্রতিটি দুর্নীতিবাজকে নাজেহাল করে ছাড়বে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। তরুণ সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে, পচে গেছে―এগুলো মুরুব্বিদের গালভরা বাজে কথা। বরং উল্টোটাই ঘটেছে এদেশে। মুরুব্বিদেরকেই পথ দেখাচ্ছে, পথ দেখাবে বাচ্চারা।

বাঙালি এমনই। কথা বলে না। চুপ করে থাকে। যেন তারা অন্ধ, যেন তারা বধির, যেন তারা অসাড়। কিন্তু যখন দেওয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে যায়, তখন তারা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে। যেমন জ্বলে উঠেছিল ঊনসত্তরে, যেমন জ্বলে উঠেছিল একাত্তরে, যেমন জ্বলে উঠেছিল স্বৈরাচার-বিরাধী আন্দোলনে, যেমন জ্বলে উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে, যেমন জ্বলে উঠেছে যানবাহন-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। সুতরাং, সাধুর মুখোশধারীগণ, সাবধান।

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

নরসিংদীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: 
বাস চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে মানব-বন্ধন করেছে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দ সহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা।  
উক্ত মানব-বন্ধন থেকে ঘাতক বাসের চালক ও মালিকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এরকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি “নিরাপদ সড়ক চাই” স্লোগানে মুখরিত হয় প্রেসক্লাব এলাকা।

উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের প্রতিযোগিতার বলি হয়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী, আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। তারা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনটি বাসের দুই চালক ও দুই হেলপারকে আটক করেছে র‌্যাব-১। সোমবার তাদের আটক করার বিষয়টি র‌্যাবের এক বার্তায় জানানো হয়।
চালকদের আটক করলেও সুস্থ বিচার কার্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে। সুস্থ বিচার কার্য প্রক্রিয়াধীন করতে নরসিংদীতেও সোচ্ছার ছাত্র সমাজ। সুস্থ বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগানে মুখরীত প্রেসক্লাব অঙ্গন।
এ সময় মানব বন্ধনটি অশৃঙ্খল ও ভাংচুর না করার সতর্কতায় নরসিংদী পুলিশ সুপার সাইফুল্লা আল মামুনের নেত্রীত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সদর থানার তিনজন এএসআই , সাত জন কনস্টেবল সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা।