বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১৮

এক অভাবনীয় দৃশ্য :- স্বকৃত নোমান

ফখরুল হাসান:- এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। মনে হচ্ছে ফকনার, হুয়ান রুলফো কিংবা গার্সিয়া মার্কেজের গল্পের মঞ্চায়ন হচ্ছে বাংলাদশে। রং সাইড দিয়ে যাওয়ার সময় একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে বাচ্চারা। একজন মেয়রের গাড়ি আটকে দিয়েছে। মেয়র পুলিশকে ফোন দিচ্ছেন। পুলিশ বলছে, আমাদের কিচ্ছু করার নেই। কী অভাবনীয় ঘটনা! প্রতিটি গাড়ির কাগজপত্র চেক করছে বাচ্চারা। বাদ যাচ্ছে না পুলিশ-র‌্যাবের গাড়িও। অসীম ক্ষমতাধর পুলিশ-র‌্যাব তাদের গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। রাজধানীর যানবাহনগুলো কী সুন্দর লাইন ধরে চলছে। অবৈধ চালকরা রাস্তায় গাড়ি বের করার সাহস পাচ্ছে না। আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে বাচ্চারা। তাদের এই আন্দোলন সফল হবে। যদি না কোনো অশুভ শক্তি, যদি না কোনো মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী সফলতা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।

বাংলাদেশ পথ হারাবে না। লাইনে এসে যাবে। তরুণ প্রজন্মই লাইনে উঠিয়ে দেবে। একদিন এই তরুণরাই শুরু করবে ভেজাল-বিরোধী আন্দোলন। প্রতিটি হোটেলে, প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি দোকানে হানা দিয়ে ভেজাল পণ্য যাচাই করবে তারা। ভেজালকারীদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। একদিন এই তরুণরাই শুরু করবে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন। প্রতিটি দুর্নীতিবাজকে নাজেহাল করে ছাড়বে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। তরুণ সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে, পচে গেছে―এগুলো মুরুব্বিদের গালভরা বাজে কথা। বরং উল্টোটাই ঘটেছে এদেশে। মুরুব্বিদেরকেই পথ দেখাচ্ছে, পথ দেখাবে বাচ্চারা।

বাঙালি এমনই। কথা বলে না। চুপ করে থাকে। যেন তারা অন্ধ, যেন তারা বধির, যেন তারা অসাড়। কিন্তু যখন দেওয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে যায়, তখন তারা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে। যেমন জ্বলে উঠেছিল ঊনসত্তরে, যেমন জ্বলে উঠেছিল একাত্তরে, যেমন জ্বলে উঠেছিল স্বৈরাচার-বিরাধী আন্দোলনে, যেমন জ্বলে উঠেছিল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে, যেমন জ্বলে উঠেছে যানবাহন-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে। সুতরাং, সাধুর মুখোশধারীগণ, সাবধান।
Share: