'রাজনীতিবিদরা নির্বাচনের আগে যেখানে খালও নেই সেখানে সাঁকো তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে গেলে নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কথাও ভুলে যান।
ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা,
"অমিতাভ বচ্চন "একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে দেখেছিলেন রাজনীতিবিদরা কিভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। এ কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন এবং ঐ সময়েই eমন মন্তব্য করেন।
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক নির্বাচনী প্রচার অভিযানে ভোটারদের একটি শূন্য কলসি দেখিয়ে বলেছিলেন 'শ্রীলঙ্কা এ শূন্য হাড়ির মতো। তোমরা আমাকে ভোট দাও, আমি এ শূন্য হাড়ি পূর্ণ করে দেবো।' প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে তিনি দেশের অনেক উন্নয়ন করেছিলেন। কিন্তু শূন্য হাড়ি পূর্ণ করতে পারেননি। সম্ভবও নয়। সে কারণে তার পরিণতি আমরা দেখেছিলাম। পরেরবার নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের এ পরিণতি দেখে উপমহাদেশের সমকালীন আরেক রাজনীতিবিদ বেনজির ভুট্টো নির্বাচনকালে বন্দরনায়েকের উল্টো পথে হেঁটেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আপনারা আপনাদের বোনকে শুধু ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তা হবে না। বরং ভোটযুদ্ধে বিজয়ী হবার পর দেশের উন্নয়নের যুদ্ধে আমার পাশে থাকতে হবে।
'৯০ পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসন আমলে বাংলাদেশে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির যে বন্যা দেখা দিয়েছে বাস্তবে উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে খরা। সরকারগুলো প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নের চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আখের গুছিয়েছেন বেশি।
প্রচারণার ঢোল যত বেজেছে, যত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে বাস্তবে প্রকল্পগুলো সে অনুপাতে বাস্তবায়িত হয়নি। চলার পথে অনেক জায়গায় ভিত্তিপ্রস্তরগুলো দাঁত বের করে ভেংছি কাটছে। অন্য প্রকল্পের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমাদের একগুয়েমির কারণে দক্ষিণবঙ্গের কোটি কোটি মানুষ পদ্মা সেতু থেকে বঞ্চিত হয়েছিল এবং যেটার কাজ এখন সরকারের তত্বাবধানে নিজস্ব আর্থায়নে চলছে।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যন্ত্রণা যে কতটা পীড়াদায়ক তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।বলা বাহুল্য যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই এই ব্যবস্থা। (বিশ্বব্যাংক ও দুর্নীতির অভিযোগ সহ অনেক বিষয় জড়িয়ে ছিল)।
যাহোক যে বিষয়ে লিখছিলাম -প্রতিশ্রুতি বা কথারমালা সাজিয়ে একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ মাটি ও মানুষকে নিয়ে জালিয়াতি বা প্রতারণা করে চলেছেন অবলীলায়।
শুধুমাত্র ক্ষমতার মোহে এরা জাতিকে সবকিছু দেবার নামে অদ্ভুত উদভট স্বপ্ন নিয়ে নিজেরা বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতো ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করেন না। সারা বিশ্ব নির্বাচনের ইশতেহারে অলীক সব প্রতিশ্রুতি বাদ দিয়ে বাস্তবতার আলোকে এগুনোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ব্যতীক্রম মনে হবে বাংলাদেশ। এখানে নেতারা জনগণকে বোধহয় অন্য কিছু ভাবেন। যে কারণে তারা আজ অবধি প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। বৈধতার আদলে দেয়া রাজনীতিবিদদের এমন মিথ্যার বেসাতি এখন সাধারণ মানুষও বোঝে। কিন্তু তারা তা বোঝেন না বলে মনে করাটাই স্বাভাবিক।
প্রতিশ্রুতি নামক মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাসী এই রাজনীতি বা এর ধারক-বাহকদের অবস্থান কিন্তু নতুন করে নয়। অথবা কোনো বিশেষ সময়ে সাময়িক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করা নয়। ইতিহাস জানান দেয়, এরকম রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের মূল বা শিকড় হলো জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দখল করা। এরই ধারাবাহিকতা আজকের নেতৃত্ব। তাই তো মানুষ বুঝে নিয়েছে রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি মানে হলো ফাঁকা বুলি। এরা দেশের জন্য বা মানুষের কল্যাণের জন্য নয়। তারা নিজেদের নিয়েই থাকবে। এটাই তাদের নিয়তি বলে জনগণ ধরে নিয়েছে।
পাদটীকা : জাতির সেরা সন্তানরা সব সময় রাজনীতিবিদদের অবাস্তব কথা বা প্রতিশ্রুতি কম করে দেয়ার জন্য জোর দিয়েছেন। প্রকৃত সত্য হলো যে, একজন রাজনীতিবিদের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এমন এক বাস্তব সত্যকে আড়াল করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন বা ক্ষমতার মোহে তারা প্রতিশ্রুতি নামক হাতিয়ারকে ব্যবহার করেন। এতে নেতারা খেলো হয়ে পড়েন। জনগণও আশাহত হয়ে পড়ে। আজ একবিংশ শতাব্দীর স্বর্ণযুগ। মানুষ ঘরে বসে মুহূর্তে সব জানতে পারে। রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের এ টু জেড এখন মানুষের নখদর্পণে। যত কম তত গম আঞ্চলিক এ প্রবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নেতাদের বলবো, বাস্তবতাকে নিয়ে হোমওয়ার্ক করুন। প্রতিশ্রুতি কমান। নিজে বাঁচবেন। দেশও বাঁচবে।
মোঃ মেহেদী হাসান।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা,
"অমিতাভ বচ্চন "একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকে দেখেছিলেন রাজনীতিবিদরা কিভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। এ কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন এবং ঐ সময়েই eমন মন্তব্য করেন।
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক নির্বাচনী প্রচার অভিযানে ভোটারদের একটি শূন্য কলসি দেখিয়ে বলেছিলেন 'শ্রীলঙ্কা এ শূন্য হাড়ির মতো। তোমরা আমাকে ভোট দাও, আমি এ শূন্য হাড়ি পূর্ণ করে দেবো।' প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে তিনি দেশের অনেক উন্নয়ন করেছিলেন। কিন্তু শূন্য হাড়ি পূর্ণ করতে পারেননি। সম্ভবও নয়। সে কারণে তার পরিণতি আমরা দেখেছিলাম। পরেরবার নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের এ পরিণতি দেখে উপমহাদেশের সমকালীন আরেক রাজনীতিবিদ বেনজির ভুট্টো নির্বাচনকালে বন্দরনায়েকের উল্টো পথে হেঁটেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আপনারা আপনাদের বোনকে শুধু ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তা হবে না। বরং ভোটযুদ্ধে বিজয়ী হবার পর দেশের উন্নয়নের যুদ্ধে আমার পাশে থাকতে হবে।
'৯০ পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসন আমলে বাংলাদেশে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির যে বন্যা দেখা দিয়েছে বাস্তবে উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে খরা। সরকারগুলো প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নের চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আখের গুছিয়েছেন বেশি।
প্রচারণার ঢোল যত বেজেছে, যত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে বাস্তবে প্রকল্পগুলো সে অনুপাতে বাস্তবায়িত হয়নি। চলার পথে অনেক জায়গায় ভিত্তিপ্রস্তরগুলো দাঁত বের করে ভেংছি কাটছে। অন্য প্রকল্পের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমাদের একগুয়েমির কারণে দক্ষিণবঙ্গের কোটি কোটি মানুষ পদ্মা সেতু থেকে বঞ্চিত হয়েছিল এবং যেটার কাজ এখন সরকারের তত্বাবধানে নিজস্ব আর্থায়নে চলছে।
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যন্ত্রণা যে কতটা পীড়াদায়ক তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।বলা বাহুল্য যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই এই ব্যবস্থা। (বিশ্বব্যাংক ও দুর্নীতির অভিযোগ সহ অনেক বিষয় জড়িয়ে ছিল)।
যাহোক যে বিষয়ে লিখছিলাম -প্রতিশ্রুতি বা কথারমালা সাজিয়ে একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ মাটি ও মানুষকে নিয়ে জালিয়াতি বা প্রতারণা করে চলেছেন অবলীলায়।
শুধুমাত্র ক্ষমতার মোহে এরা জাতিকে সবকিছু দেবার নামে অদ্ভুত উদভট স্বপ্ন নিয়ে নিজেরা বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার মতো ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করেন না। সারা বিশ্ব নির্বাচনের ইশতেহারে অলীক সব প্রতিশ্রুতি বাদ দিয়ে বাস্তবতার আলোকে এগুনোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ব্যতীক্রম মনে হবে বাংলাদেশ। এখানে নেতারা জনগণকে বোধহয় অন্য কিছু ভাবেন। যে কারণে তারা আজ অবধি প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। বৈধতার আদলে দেয়া রাজনীতিবিদদের এমন মিথ্যার বেসাতি এখন সাধারণ মানুষও বোঝে। কিন্তু তারা তা বোঝেন না বলে মনে করাটাই স্বাভাবিক।
প্রতিশ্রুতি নামক মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাসী এই রাজনীতি বা এর ধারক-বাহকদের অবস্থান কিন্তু নতুন করে নয়। অথবা কোনো বিশেষ সময়ে সাময়িক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করা নয়। ইতিহাস জানান দেয়, এরকম রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের মূল বা শিকড় হলো জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দখল করা। এরই ধারাবাহিকতা আজকের নেতৃত্ব। তাই তো মানুষ বুঝে নিয়েছে রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি মানে হলো ফাঁকা বুলি। এরা দেশের জন্য বা মানুষের কল্যাণের জন্য নয়। তারা নিজেদের নিয়েই থাকবে। এটাই তাদের নিয়তি বলে জনগণ ধরে নিয়েছে।
পাদটীকা : জাতির সেরা সন্তানরা সব সময় রাজনীতিবিদদের অবাস্তব কথা বা প্রতিশ্রুতি কম করে দেয়ার জন্য জোর দিয়েছেন। প্রকৃত সত্য হলো যে, একজন রাজনীতিবিদের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এমন এক বাস্তব সত্যকে আড়াল করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন বা ক্ষমতার মোহে তারা প্রতিশ্রুতি নামক হাতিয়ারকে ব্যবহার করেন। এতে নেতারা খেলো হয়ে পড়েন। জনগণও আশাহত হয়ে পড়ে। আজ একবিংশ শতাব্দীর স্বর্ণযুগ। মানুষ ঘরে বসে মুহূর্তে সব জানতে পারে। রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের এ টু জেড এখন মানুষের নখদর্পণে। যত কম তত গম আঞ্চলিক এ প্রবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নেতাদের বলবো, বাস্তবতাকে নিয়ে হোমওয়ার্ক করুন। প্রতিশ্রুতি কমান। নিজে বাঁচবেন। দেশও বাঁচবে।
মোঃ মেহেদী হাসান।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।