মো.আক্তারুজ্জামান, নবীনগর প্রতিনিধি:
সারা দেশের ন্যায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয় করনের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত ভাবে চলছে।
সেই সাথে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় নবীনগর উপজেলায় গড়ে উঠা কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো টানা প্রায় ১ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে তৃণমুল পর্যায়ে ভেঙ্গে পড়েছে ফিনিক্স পাখি খ্যাত কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক লোকজন সর্দি, জ্বর, ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কাংঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় তাদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের লোকজন জেলা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে তাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, গত ২২ জানুয়ারী কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচপিদের চাকুরি জাতীয় করনের দাবিতে নবীনগরে ৩ দিনের অবস্থান কর্মসুচি শেষ হয়। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ রেখে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান কর্মসুচি পালন করেন। এরপর ঢাকায় কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২৫ জানুয়ারী থেকে সিএইচপিরা লাগাতার অনশন কর্মসুচি পালন শুরু করে। এতে পৌর শহরসহ উপজেলার ৪৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, মানুষের দোড় গড়ায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধিনে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করে। এরপর থেকে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির হাতের নাগালে পৌছে যায় স্বাস্থ্য সেবা। এ উপজেলার পৌরসভাসহ ২১টি ইউনিয়নে ৪৮ টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়।
প্রতিটি ক্লিনিকে ১জন স্বাস্থ্য সহকারী, ১জন পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ সহকারী ও ১জন প্রোভাইডার নিয়োগ দেওয়া হয়। নির্মাণের পর তারা সর্দি, কাশি, জ্বর, পেটব্যাথা, আমাশয়, টিকাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। সেইসাথে দেওয়া হচ্ছে ঔষধপত্রও। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১মাস ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয় করনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করায় চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা শতশত রোগীরা পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।
উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গ্রামের মুঞ্জু মিয়া বলেন, সিএইচসিপি যোগদানের পর থেকে আমি নিয়মিত গ্যাষ্টিকের ঔষধ ও পেসার চেক করি। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে পারছিনা।বড়িকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি আজিজুল মেম্বার জানান,কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্হ্য সেবায় সাধারণ জনগন সন্তুষ্ট।তাই বঙ্গবন্ধু স্বপ্নকে টিকিয়ে হলে সিএইচসিপিদের চাকুরী রাজস্ব করা জরুরী।
থোল্লাকান্দি গ্রামের লতিফা বেগম বলেন জ্বর ও ঠান্ডায় ভোগায় ক্লিনিকে এসে দেখি বন্ধ। এভাবে দুদিন চলে যাওয়ায় অবস্থা বেশী খারাপ হয়ে যায়।উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্রেক্স নবীনগর দূরে হওয়ায় পরে সলিমগঞ্জ বাজারে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়।
নোয়াগ্রামের সেলিনা বেগম,জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে পেট ব্যাথায় ভোগছেন। কিন্তু পয়সা না থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেননা।
পৌর শহরের আলমনগর গ্রামের তাসলিমা বেগম বলেন, প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী আসছেন এই কেন্দ্রে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় অনেক কথা শুনতে হচ্ছে।
উপজেলা সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, এই চাকুরী স্থায়ী হওয়ার আশায় অন্য কোন চাকরির চেষ্টা করিনি। চাকুরী জাতীয়করন না হওয়ায় আমরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছি। আমাদের অধিকাংশ কর্মীদের সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে।
উপজেলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছি। চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় একপ্রকার মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন,বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প অফিস আমাদের চাকুরী রাজস্ব করনের আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মালেকর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন তাদের আন্দোলনের কারণে ক্লিনিকগুলো বন্ধ আছে। আমি তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার চেস্টা করছি।