মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৭

অ্যালগরিদম (৫ম অধ্যায় – তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, একাদশ দ্বাদশ শ্রেনী)

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা,আশা করি সবাই ভাল আছ, আজকে আমি আলোচনা করবো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বইয়ের ৫ম অধ্যায়ের একটি গুরুত্ব্যপূর্ন বিষয় নিয়ে তা হচ্ছে অ্যালগরিদম। অ্যালগরিদম হল কোন সমস্যা সমাধানের ধাপভিক্তিক লিখিত রূপ। সুতরাং আমরা বলতে পাড়ি - “কোন সমস্যা সমাধানের
যৌক্তিক ক্রমানুযায়ী ধাপসমুহের লিখিত রূপকে অ্যালগরিদম বলে ।”
* অ্যালগরিদম করতে হলে তোমাকে যে বিষয় টি ভাল করে বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে- ইনপুট, প্রসেস ও আউটপুট। মনে কর, ২টি সংখ্যা যোগ করার অ্যালগরিদম তুমি করতে চাও - এখানে, ইনপুট হচ্ছে দুইটি সংখ্যা। এখানে প্রসেস হচ্ছে দুইটি সংখ্যাকে যোগ করা।আর আউটপুর হচ্ছে দুইট সংখ্যা যোগকরে যে ফলাফল আসবে তা। যদি এই ইনপুট, প্রসেস ও আউটপুট বুঝে থাক তাহলে এখন তুমি দুইটি সংখ্যা যোগ করার অ্যালগরিদম টি করতে পারবে।
*আমরা আগেই জেনেছি অ্যালগরিদমে সমস্যার সমাধান ধাপে ধাপে করতে হয়,অ্যালগরিদম এর প্রথম ধাপ হল- শুরু (Start) এবং সর্বশেষ ধাপ হল- শেষ (End)
=> দুটি সংখ্যা যোগ করার অ্যালগরিদম <=
ধাপ-১ : Start; (অ্যালগরিদম এর শুরু)
ধাপ-২ : input A, B; (এখানে A, B হচ্ছে দুইটি সংখা, যদি তিনটি সংখ্যা বলত
তাহলে A, B, C এমন তিনটি সংখ্যা input হিসেবে নিতাম)
ধাপ-৩ : Sum = A+B; (এই ধাপটি হল প্রসেস, এখানে Sum না নিয়ে যেকোন নাম
নেয়া যাবে, যেমন Ans, Result. যদি অ্যালগরিদম এ দুইটি সংখ্যা যোগ না করে
গুন করতে বলত তাহলে এই ধাপে + এর পরিবর্তে * চিহ্ন দিতাম, বিয়োগ করতে
বললে – চিহ্ন দিতাম। এই ধাপেই প্রয়োজনীয় সূত্র বসাতে হয়)
ধাপ-৪ : Print Sum; (এটি হচ্ছে Output এর ধাপ, প্রসেস এর মাঝে যেহেতু Sum
ব্যবহার করেছি তাই এখানে Print এর পর Sum দিয়েছি, যদি প্রসেস এর মাঝে Sum
এর পরিবর্তে Result বা Ans নিতাম, তাহলে এইধাপে Print Result বা Print
Ans লিখতাম)
ধাপ-৫ : End; (যখন অ্যালগরিদম এর ইনপর, প্রসেস এবং আউটপুট করা শেষ হবে
তখন অ্যালগরিদম টি শেষ করতে হবে)
নোট :- তোমরা অ্যালগরিদম যেকোন ভাষায় (বাংলা, ইংরেজী) লিখতে পারবা, সমস্যার ধরন অনুযায়ী ধাপ কমবেশি হতে পারে।
আশা করি আজকের এই লিখাটুকু তোমাকে অ্যালগরিদম শিখতে কিছু হলেও সাহায্য
করবে।
# দুটি_সংখ্যা_যোগ
_করার_অ্যালগরিদম :-
ধাপ-১ : Start;
ধাপ-২ : input A, B;
ধাপ-৩ : Sum = A+B;
ধাপ-৪ : Print Sum;
ধাপ-৫ : End;
লেখকঃ এস এম শরিফ
পরিচালক, আইসিটি কোচিং সেন্টার 

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৭

সিঙ্গাপুর সাইবার ইউজার দলের জালিয়াতি কমিটি গঠিত

স্বপন ওয়াহিদ,সিঙ্গাপুর প্রতিনিধিঃ গত ২৯শে জানুয়ারি,২০১৭ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাইবার ইউজার দলের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি এস আলম রাজীব,সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান ও  সাংগঠনিক সম্পাদক আল মাহাদী, সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক খান মুহাম্মদ মনিরের অনুমতি এবং সিঙ্গাপুর যুবদল সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা কামালের সুপারিশে জাতীয়তাবাদী সাইবার ইউজার সিঙ্গাপুর শাখা কমিটির অনুমোদন দেন। নব গঠিত জাতীয়তাবাদী সাইবার ইউজার দল সিঙ্গাপুর শাখার কমিটিতে রাজিব আহমদকে সভাপতি, মাসুদ মিশুকে সাধারন সম্পাদক ও আসলাম শাহরিয়ারকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

নব গঠিত কমিটি নিয়ে সিঙ্গাপুরে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। সিঙ্গাপুর যুবদল সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা কামালের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাইবার ইউজার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ হিসাবে সিঙ্গাপুর সাইবার দল গঠনের জন্য পাঠায় সাইবার ইউজার দল সিঙ্গাপুর শাখার নব গঠিত সভাপতি রাজিব আহমেদ।
এই ব্যাপারে সিঙ্গাপুর যুবদল সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা কামালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- আমি সিঙ্গাপুর সাইবার ইউজার দলের কমিটির ব্যাপারে কোন প্রকার সুপারিশ করিনি এবং আমার স্বাক্ষর রাজিব আহমদ জালিয়াতি করেছে। বাংলাদেশে অবস্থান করছেন সিঙ্গাপুর যুবদল সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই ব্যাপারে জানান-রাজিব আহমদ একজন বিতর্কিত, তার নানা দলীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অনেক অভিযোগ আছে আর সিঙ্গাপুর যুবদল কোন প্রকার সুপারিশ করেনি এবং যুবদল সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতির তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাইবার ইউজার দলের কাছে আমাদের দাবি সঠিক,যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হউক।

সিঙ্গাপুর সাইবার ইউজার দল নেতা এবং সভাপতি পদ প্রত্যাশী কামরুল ইসলাম কামরান বলেন-আমরা অচিরেই সিঙ্গাপুর সাইবার ইউজার দল নব গঠিত কমিটির বিলুপ্তি চাই এবং পুনরায় যাচাই বাচাইয়ের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হউক।

রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৭

পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট দপ্তরে প্রবাসী প্রতিনিধি দলের বৈঠক

লিসবনের অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে পর্তুগিজ প্রেসিডেন্টের সহকারি মারিয়া জোয়াও রুয়েলাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি প্রতিনিধি দল।

ইমিগ্রান্ট সলিডারিটির সভাপতি তিমোতেও মাসেদো ও বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা রানা তসলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন অভিবাসী সংগঠনের নেতারা এই বৈঠকে অংশ নেন।

পর্তুগাল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও সময় স্বল্পতার কারণে প্রেসিডেন্টের সহকারি বৈঠকে অংশ নেন। তিনি বৈঠকের বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে পরবর্তীতে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা রানা তসলিম উদ্দিন বলেন, “অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণে আমরা ধারাবাহিক বৈঠক করে আসছি। প্রত্যেকটা বৈঠকেই কর্তৃপক্ষ আমাদের মানবিক দাবিগুলো বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।”

সলিডারিটি ইমিগ্রান্ট সভাপতি তিমোতেও মাসেদো বলেন, “অভিবাসীদের অধিকার সরকারকে রক্ষা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ না করা হয় ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে। সরকারের উচিৎ মানবিক দিক বিবেচনা করে যারা পর্তুগালে দীর্ঘদিন অবৈধ অবস্থায় থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের সবাইকে বৈধতা দেওয়া।”

বৈঠকে প্রতিনিধি দলের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন -তিমোতেও মাসেদো (সলিডারিটি ইমিগ্রান্ট), আনা বেলা রদ্রিগেস (গ্রুফো টিতরো), রানা তসলিস উদ্দিন (বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন পর্তুগাল), জর্জ দিগিসেস পারগসেলো (কাসা দো ব্রাজিল), ফ্লোরা সিলভা (আলহো ভিভো), আলসিদেস কারভানহো সেনা (কনসিনেট নিগরা) ও ফটো সাংবাদিক এনামুল হক।

গত ১৩ নভেম্বর লিসবনে ৪৯টি সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার অবৈধ অভিবাসীদের গণজমায়েতের মাধ্যমে বিগত অভিবাসী আইন স্থগিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।

শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৭

সিঙ্গাপুরে আছে নিহত সাংবাদিক নহর আলীর পুত্র রিপন

বাবা ছিলেন সাংবাদিক আর তার ছেলে রিকশাওয়ালা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছিলো একসময়।

আসাদুজ্জামান রিপন ওরফে রিপন শেখের বাবা নহর আলী। খুলনা থেকে প্রকাশিত 'দৈনিক অনির্বাণ' পত্রিকার ডুমুরিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। ২০০১ সালের ১৭ এপ্রিল রিপনের বাবাকে নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর থেকে পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসে। নহর আলীর স্ত্রী আসমানী বেগম ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন, মেহেদী হাসান রানা, মেয়ে রেহেনা পারভীন ও হীরা খাতুনকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন।

এ অবস্থায় বড় ছেলে রিপন কিছুদিন খুলনায় এবং পরে ঢাকা শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিষয়টি একজন সংবাদ কর্মীর নজরে আসে। তিনি রিপনকে নিয়ে ২০১৪ সালের ১৬ই নভেম্বর 'নিহত সাংবাদিকের ছেলে ঢাকায় রিক্সা চালক!' শিরোনামে ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন।

রিপোর্টটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশের খ্যাতনামা সাংবাদিকদের। তাদের কয়েকজন মিলে রিপনের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেন। দেশের সিনিয়র সাংবাদিকরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে সিঙ্গাপুরে 'হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি'তে রিপনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে আসাদুজ্জামান রিপন গত বছর জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে কাজে যোগ দেন।

সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অভিবাসীদের বাংলা কাগজ 'বাংলার কণ্ঠ'-এর প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিকপুত্র রিপন জানান, তার বাবাকে হত্যা করার পর খুলনার সাংবাদিকরাও ভয়ে তাদের খোঁজ নিতেন না। খোঁজ নিতেন একজন, তিনি 'খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন'-এর তৎকালীন সভাপতি বেলাল হোসাইন। তিনিও পরে সন্ত্রাসী হামলায় মারা যান।

রিপন শেখ জানালেন, সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে এখন তিনি খুবই ভালো আছেন। নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। গত এক বছরে কর্মকালীন সময়ে আনুষাঙ্গিক খরচের পর সাড়ে চার লক্ষাধিক টাকা দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন রিপন। সেই টাকায় তাদের খুলনার ডুমুরিয়ার বাড়িতে তিন রুমের ইটের পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত অন্যান্য বাংলাদেশিরা জানান, কোম্পানির একজন কর্মঠ ও নিয়মনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কোম্পানির কর্তৃপক্ষসহ রিপন সকলের কাছেই খুব সমাদৃত। পরবর্তী বছরের জন্য তার কাজের চুক্তির মেয়াদও নবায়ন করা হচ্ছে।

ছুটির দিনগুলোতে রিপন সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের অবসর যাপন ও বিনোদন কেন্দ্র বাংলাদেশ সেন্টারে নিয়মিত উপস্থিত হন। তাছাড়া রিপন সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র 'দিবাশ্রম'-এর একজন নিয়মিত সদস্য হিসেবে সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের কবিতা চর্চা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নেন। নতুন বছরের ছুটির দিনে রিপন এসেছিলেন 'দিবাশ্রম'-এর সম্মিলনীতে। সেখানেই এসব বলেন আসাদুজ্জামান রিপন।

লেখক: একে এম মোহসীন, সম্পাদক ও প্রকাশক, 'বাংলার কণ্ঠ' 

রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৭

সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে আলোচিত জনপ্রিয় মডেল নীলিমা নুপুর

আমাদের বাংলাদেশ ডেস্কঃ নীলিমা নুপুর,যার অভিনয়ে মেতেছে বাংলা যার অভিনয়ের স্পর্শ লেগেছে প্রবাসে। মূলত তিনি স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন। সিঙ্গাপুরে চাকুরী নিয়ে কর্মরত আছেন। তবে প্রবাসে কঠিন কর্তব্যের সঙ্গে তার নতুন আরেকটি পরিচয় যোগ হলো তিনি একজন নবাগত মডেল,বিভিন্ন ডকুমেন্টারি পরিচালক ও প্রবাসী মহিলা কবি। তিনি একজন প্রতিবাদী নারীও বটে।এক সময় মেতেছিলাম মোছলে উদ্দিন স্যারের পরিচালনায় কৃষি মন্ত্রনালয়ের নাটক 'সুখের আঙিনা' ও গানে মেতেছিলেন নীলিমা নুপুর।

গান ভালোবাসেন। কণ্ঠেও মাটির সুর খেলা করে। কন্ঠশিল্পী হাসমত রুবেলের কথা-সুর-সংগীতে আসিতেছে ‌‘রুপবতী কন্যা' এলবাম। ফোক ঘরানার এই গানটির ভিডিও নির্মাণ করেছেন। যেখানে মডেল হিসেবেও পাওয়া গেছে তাকে। যা সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশ পেয়েছে। যার জন্য নীলিমা নুপুর প্রশংসাও পাচ্ছেন বেশ।

তার ভাষায়- ‌‌‘গান গাই ও অভিনয় করি আমি প্রাণের টানে। কর্মব্যস্ত জীবন এখন। তাই গান ও অভিনয়ের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও চেষ্টা করেছি গাইতে। শ্রোতা ও দর্শকদের প্রশংসা পেলে গাইবো আরও’।

তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত তিনটি মিশ্র অ্যালবামে গান করার সুযোগ পেয়েছেন। যদিও সঠিক প্রচারণার অভাবে সেগুলো শ্রোতাদের কাছে সেভাবে পৌঁছাতে পারেনি। এদিকে অভিনয় ও গানে শুধু সীমাবদ্ধ নন সংস্কৃতিমনা নীলিমা নুপুর। শিল্পকলা একাডেমি থেকে বহু আগেই নিয়েছেন নাচের তালিম।

অন্যদিকে নীলিমা নুপুরের ভাষায়, ‘আমার পরিবার থেকেই এমন সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ পেয়েছি। নাচ নিয়ে এখন আর স্বপ্ন দেখি না। তবে প্রবাসে কর্তব্যের শতভাগ পালন করার ফাঁকে স্বপ্ন দেখি আজও নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল কিছু উপহার দিতে।’

একুশে বই মেলায় আসছে কবিতার বই এবং মার্চে আসছে গল্প উপন্যাস আবার তিন বছর গোয়েন্দা সংবাদ সংস্থায় কাজও করেছন তিনি একদিকে আবার বাংলাদেশে গরিব অসহায় এতিমদের পাশে থেকে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন বরাবর তার সাধ্যমতো তার সপ্ন মিডিয়াতে কাজের পাশাপাশি মানব সেবাই নিয়োজিত থাকবেন।

শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৭

হ্যাকার ঠেকাবে নতুন ওয়াইফাই


তথ্য প্রযুক্তিতে মানুষ যতটা উন্নত হচ্ছে, সেই সাথে ব্যক্তিগত তথ্যও হ্যাকারদের হাতে চলে যাচ্ছে ততটাই সহজে। হাতে থাকা সাধের স্মার্ট ফোন তো আছেই, ঘরের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ডাটাও থাকছে না নিরাপদ। আর তাই সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছে ৩টি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান।
সিমেনটেক, বিটডিফেন্ডার এবং ইন্টেল যৌথভাবে বিশেষ রাউটার বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা বাড়িতে ব্যবহার করলে হ্যাকারদের হাত থেকে তথ্য চুরির আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পাবে। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই এই রাউটারগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
ফলে কারো ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে তা সহজেই প্রতিহত করবে রাউটারটি। এমনকি রাউটারে নেটের প্রবাহের সময়ও এটি সুরক্ষা দেবে।
শুধু তথ্য প্রযুক্তির সুরক্ষাই নয়, ঘরের সন্তানেরা দিনে কতটা সময় অনলাইনে থাকে রাউটারটি সেটাও লক্ষ রাখবে। এছাড়া কোন সাইটে গিয়ে কি দেখেছে তাও জানা যাবে রাউটারটির মাধ্যমে।
বিটডিফেন্ডারের প্রতিরক্ষা গবেষকদলের প্রধান এলেক্স বালান জানান, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ক্রেতার এমন পণ্যই প্রয়োজন যা তার সুরক্ষার দিকটি দেখবে। তিনি আরো বলেন, ‘সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন দৈনন্দিন জীবন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিণত হবে স্মার্ট ফোনের বিভিন্ন অ্যাপ। কোনোভাবেই তা এড়ানো সম্ভব হবে না।’‘তবে নিরাপত্তার দুর্বলতা থাকলে সেই প্রয়োজনীয়তাই বিপদ ডেকে আনবে।’ সাথে যোগ করেন তিনি।

হিটলারের ‘মাই ক্যাম্প’-এর বিক্রি বেড়েছে জার্মানিতে

বিশ্বযুদ্ধের কুখ্যাত নায়ক জার্মানির অ্যাডল্ফ হিটলারের লেখা বই ‘মাইন ক্যাম্ফ’-এর একটি বিশেষ সংস্করণ  উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি হচ্ছে দেশটিতে। দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, এই বিক্রির পরিমাণ নিয়ে প্রকাশক ও বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও নাৎসি আমলে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদের সঙ্গে বর্তমান বইটির মিল কমই। বইটির প্রচ্ছদও একমদম সাদামাটা। সাদা রঙের মলাটে বাঁধাই বইটিতে হিটলারের কোনো ছবি পর্যন্ত নেই।
সংস্করণটির প্রকাশক আন্দ্রেয়াস ভিরশিং জানিয়েছেন, জার্মান ভাষায় লেখা ইহুদি বিদ্বেষী এই নাৎসি মেনিফেস্টোটির অন্তত ৮৫ হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেছে। আন্দ্রেয়াস ভিরশিং মিউনিখে অবস্থিত সাম্প্রতিক ইতিহাস সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান আইএফজেডের পরিচালক।
গত বছর প্রকাশিত বইটিতে মূল লেখার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমালোচনামূলক টীকাও যুক্ত করা হয়। যার উদ্দেশ্য হলো, হিটলার কেমন বাজেভাবে বইটি লিখেছেন এবং তার বক্তব্য যে অসংলগ্ন তা পাঠকের কাছে তুলে ধরা। বইটিতে বিশেষজ্ঞদের সমালোচনামূলক নানা মন্তব্যও স্থান পেয়েছে।
 
মাইন কাম্ফ-এর বাংলা অর্থ ‘আমার সংগ্রাম’। হিটলারের লেখা তার আত্মজীবনীটি ১৯২৫ সালে জার্মানিতে প্রথম প্রকাশ পায়। পরে ১৯৩৩ সালে এটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের পরাজয়ের পরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ভাষায় এটি প্রকাশ পায়। যদিও জার্মানিতে দীর্ঘদিন এই বই প্রকাশ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল।
সংবাদমাধ্যমকে ভিরশিং জানিয়েছেন, বইটিকে এখন ফরাসি ভাষাতেও প্রকাশের কথা ভাবা হচ্ছে। হিটলার বিদ্বেষপূর্ণ এই বইটির প্রথম সংস্করণ ২০১৬ সালে জার্মানিতে প্রথম প্রকাশিত হয়। সেবার ৪ হাজার কপি ছাপা হলেও একে একে নিঃশেষ হয়ে যায় ৫ম সংস্করণও। বিক্রির বহর দেখে প্রকাশক বলছেন, এ মাসের শেষ দিকে তারা বইটির ৬ষ্ঠ সংস্করণও প্রকাশ করবেন।
অবশ্য বিভিন্ন ইহুদি সংগঠন এমন উত্তেজনাকর বই প্রকাশের সমালোচনা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানির পতন ঘটে। ইতিহাস বলে, পরাজয় নিশ্চিত জেনে হিটলার তার গোপন বাংকারে আত্মহত্যা করেন। সুত্র : বিবিসি।

গণতন্ত্র দিবস অগণতন্ত্র দিবস

 মোস্তফা হোসেইন
 মোস্তফা হোসেইন
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ৫ জানুয়ারিকে স্মরণ করতে চাইছে ঘটা করে। বিপরীতমুখী অবস্থান দুই দলেরই। গণতন্ত্র উদ্ধার হত্যা দিবস আর গণতন্ত্র রক্ষা দিবসই প্রতিপাদ্য। খই ফুটিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্ত করার আকাঙ্ক্ষা দুই দলেরই। টিভি ক্যামেরার সামনে দুই দলের নেতারা যখন ৫ জানুয়ারির ঘটনা বর্ণনা করেন তখন রিকশাওয়ালা আর ক্ষেতে কাজ করা মানুষটি মোটেও বিচলিত হয় না। নেতাদের মুখচ্ছবি টিভিতে দেখার পর সঙ্গত কারণেই একজন সাধারণ মানুষ ফ্ল্যাশব্যাকে তিন বছর আগের ৫ জানুয়ারির দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন। ভাবতে পারেন ওইদিনের গণতন্ত্রটা কেমন ছিল। আর মাত্র তিনটি বছর আগে সেই গণতন্ত্রের চাপ তাকে কতটা সহ্য করতে হয়েছে।

বিএনপি যখন ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা বলে শুরুতে হা করে তাকিয়ে থাকতে হয়। নির্বাকই। কারণ ঘটনা সত্য। কিন্তু যে মুহূর্তে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ওইসময় গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করে এবং হৃত গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে উদযাপনের কথা বলে, খুব হাসি পায়। বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে সন্দেহাতীত। আওয়ামী লীগ তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও এটা সত্য। আবার এও দেখা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার বাসার সামনে বালুর ট্রাক দাঁড়িয়ে গেছে অনড়। কিন্তু যখন দেখি বেগম জিয়াকে সমবেদনা জানানোর জন্য শেখ হাসিনা নিজে ছুটে যান খালেদা জিয়ার পুত্র হারানোর কারণে এবং তাকে ঢুকতে দেওয়া হয় না শুধুই কথিত গণতন্ত্রীয় জেদের জন্য। একটু হোঁচটতো খেতেই হয়। ব্যক্তিগত বিষয় বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। নেতাদের অনেক ব্যক্তিগত বিষয়ও যে গণতন্ত্রের রেখায় চলে আসে। আবার দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপের ঐতিহাসিক দৃশ্যও কি ভুলে যাওয়ার মতো? সেটাওতো ওই সময়কার ঘটনারই একটি অংশমাত্র। কী ভয়ংকর ব্যাঘ্র হুংকার দেখেছি টেলিফোন সংলাপে। গণতন্ত্রটা যে হুংকারের তলে চাপা পড়ে গিয়েছিল।
নির্বাচন মাধ্যমে ক্ষমতার পালা বদলের কথা হচ্ছিল। যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করবে। মিমাংসিত পদ্ধতিকে জটিল করে দিয়ে যে অগ্নি উৎসব করা হলো সারা বাংলায়, সেটাওতো কথিত গণতন্ত্রেরই প্রতীক। বাসে যাত্রী পুড়িয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে নগ্নরূপ এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, সেই গণতন্ত্রকেই কি আবার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে? তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল সেই অগ্নিসন্ত্রাসইতো দমন করেছিল। সেটা যদি হয় গণতন্ত্র হত্যা, তাহলে আর কী বলার আছে।
লক্ষণটা কেমন কেমন লাগছে। অগ্নিবিপ্লবকালে জামায়াতে ইসলামীর পাণ্ডারা মাঠে ছিল। হাতেনাতে ধরাও পড়েছে কিছু। তাদের তাণ্ডব যখন মানুষকে তটস্থ করে দিয়েছিল তখনই বোমার আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে একটা উচ্চারণ মানুষের কানে এসেছে- তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এখনো কি সেই স্বপ্নই দেখা হচ্ছে?
এবছরও জামায়াতিদের উস্কে দেওয়ার জন্যই মনে হয়, বেগম খালেদা জিয়া হুংকার দিলেন- শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, জিয়াউর রহমান। এমন সময় তিনি এই হুংকার দিলেন যখন একজন এমপির গুলিবিদ্ধ লাশ দেখেছে মানুষ। খুলনায় পথচারীর ওপর গুলি হয়েছে। তার আগে হলি আর্টিজান, শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতের কাছে গুলিসহ নানা ঘটনাক্রম চোখে পড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায়ই কি তারা ডাক দিলেন ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবেন?
আর আওয়ামী লীগও বলে দিলো তারা পালন করবে গণতন্ত্র দিবস। দিবসটিকে গুরুত্ববহ করে দিলো একইদিনে নারায়ণগঞ্জে নবনির্বাচিত সিটি কর্পোরেশন মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণের কর্মসূচি। যে নির্বাচনকে আবার বিএনপিই সুষ্ঠু বলে মেনে নিয়েছে সর্বাংশে। এদিকে উভয়ই ঘোষণা দিল তারা সমাবেশ করবে ৫ জানুয়ারি। যেমনটা তিন বছর আগে আমরা দেখতাম এই দেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
এরমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হলো, তারা বিএনপির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেবে না। যুক্তি হিসেবে দেখালো- ৫ জানুয়ারি মনে করিয়ে দেয় অগ্নিসন্ত্রাসের কথা। সুতরাং ওরা যদি এই দিবস পালন করে তাহলে মনে করতে হবে আবারো অগ্নিসন্ত্রাস চালু হোক এটা বিএনপি চায়। আর গণস্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টাই হবে ওই অগ্নিসন্ত্রাসকে।
মাহবুব আলম হানিফের একটি ধমক হোক আর অগ্নিসন্ত্রাস নির্মূলে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের স্মৃতির কারণেই হোক বিএনপি’র হাঁকডাক অনেকটা ঝিমিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা করে ৫ জানুয়ারির সমাবেশকে মহাসমাবেশে রূপান্তরের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এটাও বলছে- বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি এখন শূন্যের দিকে। তাদের পক্ষে আন্দোলন করা আর সম্ভব নয়। এটা আওয়ামী লীগের দম্ভোক্তি কিনা জানি না। তবে শতভাগ মিথ্যা এমনটাও বলার সুযোগ নেই। কারণ একটি ইস্যুভিত্তিক সমাবেশ করতে হলে যে সাংগঠনিক কর্মসূচি আগে থেকে করতে হয় সেই কাজটি কিন্তু বিএনপি করছে না। তাদের বক্তব্য শুধু টিভি ক্যামেরার মধ্যে আটকে আছে। সুতরাং আওয়ামী লীগই যে শুধু সমাবেশ করতে পারবে এটা মনে হতে শুরু করেছে।
এক্ষেত্রে বিএনপি যদি বলে তাদের সমাবেশ করার অনুমতিই দিচ্ছে না সরকার। তখনও কিন্তু কথা থেকে যায়, মাঠে সমাবেশ করতে না দিলে বিকল্প কিছু করার নেই তাদের? এই প্রসঙ্গে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও তার আগে ডেপুটি সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে যখন অন্যদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে নিজে হেলিকপ্টারে চড়ে সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছিলেন, ওই মুহূর্তে অন্যদলগুলো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘরের ভিতরে থেকে রাজনীতি করতে থাকে। মনে থাকার কথা- ওই সূত্রে একসময় পত্রিকাগুলো তাদের এক চতুর্থাংশ সেই ঘরোয়া রাজনীতির সংবাদ প্রচারে অনুমতিও আদায় করে নেয় সামরিক সরকারের কাছ থেকে। এটা কিন্তু হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর ভয়হীন পরিকল্পনার কারণে। সামরিক সরকারও বুঝতে পেরেছিল, ঘরের রাজনীতি বন্ধ করা হলে তার পরিণতি ভালো হবে না।
বিএনপির সেই অভিজ্ঞতা কি তারা ব্যবহার করতে পারে না? ৫ জানুয়ারি পালন বিষয়ে এটা বলছি। মনে হচ্ছে, তারা বড় সমাবেশেই উৎসাহী। সমাবেশের অধিকার না পেলে বিকল্প কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই এটাই প্রমান হয়ে যাচ্ছে। যদি বলা হয় নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ না করে তারা শুধু সমাবেশের কথাকেই জোর দিচ্ছে, তাও কি অসত্য বলে গণ্য হবে? নাকি নৈতিকভাবে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উদযাপন করা সম্ভব হবে না বলে তারা একটা খোঁচা দিয়ে চুপসে গেছে। যাতে পরবর্তীকালে তারা বলতে পারে, আওয়ামী লীগ তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। যেমনটা গত সময়ও তারা বলেছে এবং এখনো সেটাই বলে আসছে। কিন্তু মানুষ তাদের কথা কি শুনছে? তিন বছর ধরে তারা বলে আসছে দেড় শতাধিক এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় পাস করেছে, এই নির্বাচন মানি না। মানুষ কিন্তু মেনে নিয়েছে। সেই সরকার এখনো ক্ষমতাসীন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার মতো শক্তিও বিএনপির এখন নেই। শুধু জনগণ তাদের গ্রহণ করেনি বলেই। এখন তারা ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা চালাচ্ছে সেটাও যে একইভাবে জনগণ গ্রহণ করবে না এটাও প্রায় নিশ্চিত।
 
মোস্তফা হোসেইন : সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।
mhussain_71@yahoo.com

ওড়না বিতর্ক কতটা জরুরি?

আমীন আল রশীদ
আমীন আল রশীদ
আমার মেয়ের বয়স দুই বছর হবে আগামী ২২ জানুয়ারি। তার মা যেসব পোশাক পরেন, তার অনেকগুলোরই নাম সে বলতে পারে। যেমন জামাকে সে ‘দামা’ বলে, প্যান্টকে ‘প্যান্ত’। একইভাবে ওড়নাকে সে ওড়নাই বলে।  স্কুলে যাওয়ার আগেই সে ঘরের এসব নিত্যদেখা জিনিসের নাম জেনে যাচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এই ‘ওড়না’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে একটা বড় ধরনের ক্যাচাল তৈরি হয়েছে।

কয়েকদিন আগে যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে সেখানে প্রথম শ্রেণির বাংলা বইতে ‘ও’ বর্ণটি দিয়ে ‘ওড়না’ পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বেশ তোলপাড় শুরু হয়। যারা এই শব্দটি ব্যবহারের বিরোধী তারা মনে করেন, ওড়না শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি জেন্ডার বৈষম্য প্রকাশ পেয়েছে। তাদের যুক্তি, প্রথম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর বয়স অনুযায়ী এ শব্দটি যথাযথ হয়নি। একধরনের সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।
প্রশ্নটা এ কারণে যে, একজন ছেলেশিশুর জন্য ‘ও-তে ওড়না চাই’ বাক্যটি কতটা জরুরি? ওড়না যেহেতু মেয়েদের পোশাক হিসেবেই ব্যবহৃত, সুতরাং প্রাথমিকের একটি ছেলেশিশুর কাছে এটি প্রাসঙ্গিক নয়। তবে পাল্টা প্রশ্নও করা যায় এভাবে যে, ওড়না কি অশ্লীল শব্দ? তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় শ্রেণি থেকেই স্কুলের ইউনিফর্মের অংশ হিসেবে মেয়েদের ওড়না পরতে হয়। এখানে লিঙ্গবৈষম্যের কোনো ব্যাপার নেই। পুরুষ এবং নারীর মধ্যে শারীরিক যেমন কিছু চিরায়ত পার্থক্য রয়েছে, তেমনি হাজার বছর ধরে পোশাকেও কিছু ভিন্নতা রয়েছে। কাল থেকে পৃথিবীর সব নারী-পুরুষ যদি একই পোশাক পরা শুরু করেন, তাহলে পৃথিবীর চেহারাটা কী দাঁড়াবে? সুতরাং দুই ক্লাস আগেই যদি একটি মেয়েশিশু ওড়না শব্দটি জানে, তাতে কী এমন ধর্মনিরপেক্ষতা বা নারী-স্বাধীনতার ক্ষতি হলো, তা পরিস্কার নয়।
ওড়নাকে স্রেফ একটি পোশাক হিসেবে দেখলে আর কোনো সমস্যা থাকে না। তাছাড়া বাংলাদেশের সামজিক বাস্তবতায় ওড়না শালিনতারও নির্দেশক। কাল থেকে যদি দেশের সব নারী ওড়না পরা বন্ধ করে দেন, সেই দৃশ্য দেখার জন্য কতজন প্রস্তুত আছেন? আবার ওড়না শুধু মেয়েরাই পরে, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং ওড়নাসদৃশ একধরনের পোশাক ‘উত্তরীয়’, যা এই উপমহাদেশের পুরুষেরা পরিধান করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই ওড়না বা উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া একটা সম্মানেরও ব্যাপার। কিন্তু ওড়না নিয়ে এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, অনেকে মনে করেন ওড়না ইসলামি পোশাক। বাস্তবতা হলো নারীর ইসলামি পোশাক বলতে বোঝায় বোরকা বা হিজাবকে। ওড়নার সঙ্গে ইসলামি আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই।
কারো কারো মতে, প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘ও’ বর্ণ দিয়ে ‘ওলকপি’ বা ‘ওলকচু’ বা এরকম কোনো শব্দ লিখলে ভালো হত। কিন্তু শিশুকালে আপনি যদি আপনার সন্তানকে ‘ওড়না’ শব্দটি পড়াতে না চান, তাহলে ওলকচুরমতো একটা গলা চুলকানো সবজির নামই বা শেখাতে হবে কেন? ও দিয়ে আর কোনো শব্দ নেই? ও দিয়ে ওড়না বা ওলকচুর বিকল্প অনেক শব্দ লেখা যায় এবং সেটি ছড়ায় ছড়ায় বলা যায়, যেমন ওজন : ওজন করো সঠিক মাপে; ওড়া: ধানের খেতে ওই পাখিদের ওড়াউড়ি; ওমলেট: ডিমের ওমলেট ভারি মজা; ওষুধ: অসুখ হলে ওষুধ খাও ইত্যাদি।
তবে ওতে ওড়না হবে নাকি ওমলেট-সেই বিতর্ক রেখে একটা সাদামাটা প্রশ্ন করি পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা এবং শিক্ষাবিদদের কাছে। তা হলো, সামগ্রিকভাবে আমাদের শিশুদের আমরা আসলে কী পড়াচ্ছি? আমার মতো যারা মফস্বলের স্কুলে পড়েছেন, তাদের সবার অভিজ্ঞতাই মোটামুটি অভিন্ন। যেমন আমাদের শিক্ষকরা আমাদের বর্ণ পরিচয় শেখাতে গিয়ে মূর্ধণ্য ষ-কে বলতেন পেটকাটা মূর্ধণ্য ষ। ধ-কে শিখিয়েছেন কান্ধে বাড়ি ধ। র-কে শিখিয়েছেন ব-এ শূন্য র আর ড়-কে শিখিয়েছেন ড-এ শূন্য ড়। ছোটবেলা থেকেই যদি আমাদের র ও ড়-এর উচ্চারণ অনুযায়ী শেখানো হত, তাহলে বড় হয়ে উচ্চারণের আলাদা ক্লাস করে এগুলো শিখতে হত না।
তিনটি শয়ের (শ, ষ, স) উচ্চারণে যে কোনো পার্থক্য নেই, এই কথা যদি আমাদের শৈশবেই শেখানো হত, তাহলে শয়ের উচ্চারণ নিয়ে বড় হবার পরও আমাদের বিভ্রান্তি থাকত না। বাস্তবতা হলো, এখনও আমরা যাদের বলি শিক্ষক বা জাতি গঠনের কারিগর-তাদের কত শতাংশ আসলে এই কাজের যোগ্য, সেই প্রশ্ন আমি সচেতনভাবেই রাখছি। আমাকে যারা পড়িয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখেই এ প্রশ্নটি রাখলাম।
ছোটবেলায় আমরা অংক করতে গিয়ে শিখেছি দুধের সাথে পানি মেশানো যায়, আমরা শিখেছি কীভাবে সুদ খেতে হয়, বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে ওঠানামার মতো হাস্যকর বিষয়ও আমাদের শেখানো হয়েছে। অথচ অংক শেখানোর জন্য এর চেয়ে অনেক ভালো বিষয় রয়েছে।
যেমন আমরা শিখেছি অ-তে অজগর ওই আসছে তেড়ে। অথচ খুব কম মানুষের ভাগ্যেই সারা জীবনে অন্তত একবার অজগর দেখার সৌভাগ্য হয়। জঙ্গলে তো দূরে থাক, আমাদের দেশের খুব অল্প সংখ্যক মানুষই চিড়িয়াখানায় গিয়ে অজগর দেখেছেন। অথচ অ-তে অজগর ছাড়া আরও অনেক ভালো ও সুন্দর শব্দ রয়েছ, যেগুলো ব্যবহার করলে শিশু বয়সেই কাউকে অজগরের মতো একটা ভয়ঙ্কর প্রাণির নাম শেখাতে হয় না।
একটা উদাহরণ দিই, একজন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক তার একটি বইয়ে ধানসিঁড়ি নদীর পরিচয়ে লিখেছেন, নদীটি বরিশাল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ ধানসিঁড়ি নদীর অবস্থান বরিশাল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠি জেলায়। কোনো শিশু যখন বইয়ে এই তথ্য পড়বে এবং বড় হয়ে যখন সে জানবে যে  ধানসিঁড়ি নদী আসলে বরিশাল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যায়নি-তখন ওই লেখক সম্পর্কে তার কী ধারণা হবে? এরকম অজস্র ভুল আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সন্তানদের শেখাচ্ছি। সুতরাং আলাদা করে ওড়না শব্দটি নিয়ে এখন যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় এখন সামগ্রিক শিশুশিক্ষা ও শিশুপাঠ্য নিয়েই আমাদের প্রশ্ন তোলা উচিত।
 
আমীন আল রশীদ : যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর

সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ-সৈয়দ আবুল হোসেন

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন।এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি পরিবর্তনডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে- ‘সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ’
মানুষের জীবনের সবচেয়ে সাফল্যের কারণ হচ্ছে- নিজের কাছে নিজের জবাবদিহি উপস্থাপনের মানসিক সদিচ্ছা ও নিয়ামক মূল্যবোধের প্রয়োগ। জবাবদিহি নিজের কাছে না থাকলে, সে সফল হতে পারে না। এই কারণে নিজেকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। কেবল মানুষের জীবনের বেলায় নয়, সরকারের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। একটি সফল সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ করা। আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করেছি, তাদের নেতৃত্ব এবং আয়-ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছি। একই সঙ্গে তাদের কাজের অগ্রগতি এবং তাদের দায়িত্ব পর্যবেক্ষণও করছি। সুতরাং যখন কোনো কর্মকর্তা ভুল করে অথবা কোনো অন্যায় করে, তখন কী অবস্থার সৃষ্টি হয় এক্ষেত্রে এবং তাকে কতবার সুযোগ দেওয়া যায়?

এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, আমাদের নিয়ম বা আইনের মাধ্যমে এবং তা সরকারি কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমস্যার সমাধান করা। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, ব্যক্তিপর্যায়ের অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিত।

কৌশলগত পরিকল্পনার অগ্রগতির পরিমাপ করাই হচ্ছে প্রথম ধাপের পর্যবেক্ষণ। আমরা ব্যাপকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করি, যার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়গুলোর পরিকল্পনার বাস্তবায়নের হাজার হাজার অগ্রগতির সূচক পরিমাপ করা যায়। আর এভাবে, আমি নিজে যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন সরাসরি মন্ত্রণালয়গুলোর কাজের অগ্রগতির খোঁজখবর নিতাম। মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতির পরিমাপ করার জন্য তার নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। সরকারের উচ্চমহল থেকে এটা করা দরকার যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের কাজের যে অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রেরণ করে তার ত্রুটি চিহ্নিত করে মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা যাতে তারা দ্রুত তাদের কাজের ত্রুটিগুলো দূর করতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে মাঠপর্যায়ের। যার অর্থ হচ্ছে- গ্রাহক সেবার পর্যবেক্ষণ বা খোঁজখবর নেওয়া। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের গোপন ক্রেতা ও গ্রাহক থাকতে হবে। তারা গ্রাহক-সেবার মানের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে এবং প্রতিটি মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদন বিচার-বিশ্লেষণ করে যে ভুল-ত্রুটি পায়, তা দ্রুত সমাধান করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেবে।

সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণের জন্য প্রচুর প্রতিবেদন গ্রহণ করতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তৃতীয় স্তরের পর্যবেক্ষণ শেষ না হয়। সরকারের এমন কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে যিনি ব্যক্তিগতভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করবেন। সরকারি কাজের প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির খোঁজখবর নেবেন। আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাককালীন তা করেছি। সরকারি কাজে বাস্তবায়িত কিছু সফল নীতির সঠিক বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাই এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করি। কাজের অগ্রগতির পর্যবেক্ষণ শুধু অফিস থেকে হবে, সেটা আমি বিশ্বাস করি না। মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে কাজের মান সম্পর্কে নতুন নতুন ধারণা দেয়, নীতি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাওয়া যায়। যেখানে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি।

চতুর্থ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মহাহিসাবনিরীক্ষা অধিদফতর এ কাজটি করে থাকে। হিসাবনিরীক্ষা অধিদফতরের প্রতিবেদন সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষ বিচার-বিশ্লেষণ করে, যদি কোনো ভুল-ত্রুটি পায়, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এই হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

আমি মনে করি, সরকারের কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে কিনা এজন্য ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলের মতো একটি কাউন্সিল করা দরকার, যারা কাজের পঞ্চম স্তরের পর্যবেক্ষণ করবে। এটা অতিরিক্ত ও ভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে এবং আমাদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এ কাউন্সিলের সকল পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের চলমান উন্নয়ন এবং অগ্রগতির মাধ্যমে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কাউন্সিলের প্রায় সকল পরামর্শ অনুমোদন করতে হবে। এটা করা জরুরি মনে করছি। আশা করছি সরকার তা করবে। আমি আরও বলতে চাই, আমাদের সকল কার্যক্রমের এবং আন্দোলনের একটাই জাতীয় লক্ষ্য, তা হচ্ছে আমাদের নাগরিকদের সুখে, শান্তিতে এবং নিরাপদে রাখা। এটা শুধু অর্থ দিয়ে সম্ভব নয়; তার সঙ্গে প্রয়োজন মূল্যবোধ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার।

মানুষ মাত্রই ভুল করে। আর তাই, মাঝে মাঝে আমাদের কাজের ভুল হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা কোনো কাজে অবহেলা, অবজ্ঞা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করার চেষ্টা করি না। এটাই আমাদের প্রত্যয় এবং দৃঢ়সংকল্প, যা আমাদের বিবেচনাবোধকে জাগ্রত রাখে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পূর্বে কয়েকবার সুযোগ দেওয়া যায়।

ভুল করেই মানুষ শেখে। যখন মানুষ ব্যর্থ হয়, তৎক্ষণাৎ সে বুঝতে পারে না, কিসে তার ভুল হয়েছে। পরবর্তীকালে তার ভুল বুঝতে পারে। অতএব, একজন ব্যক্তি তার ভুল থেকেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এর অর্থ এই নয় যে, ইচ্ছাকৃত ও সহজে ভুল করে যাক। তবে এটা ঠিক- কিছু ভালো কর্মকর্তা, যারা কাজপাগল ও পরিশ্রমী তাদের জন্য কিছুটা নমনীয়তা প্রয়োজন। কাজ করে বলেই ভুল হয় এবং যে বেশি কাজ করবে তার ভুলও বেশি হবে। আমি পুনরায় বলছি, মানুষ মাত্রই ভুল করে। তবে ভুলের ভয় থাকা ভালো। কারণ ভুলের ভয় শুদ্ধতা ও সৃজনশীলতার পথ দেখায়। তবে সেটা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। নতুন নতুন সৃজনশীল কাজ করতে হবে। একজন মানুষ এ জীবনে যতটুকু কাজ করার সুযোগ পায় তার প্রতিটাতে সৃজনশীল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করা দরকার।

যারা কাজে ভুল করে, তাদের প্রতি আমি অত্যন্ত নরম আচরণ করি। তবে, যারা কোনো কাজই করে না, প্রচেষ্টাও চালায় না, তাদের প্রতি আমি অত্যন্ত কঠোর। আমাদের কর্মকর্তৃবৃন্দ ভুল করার ভয়কে অতিরঞ্জিত করুকÑ সেটা আমি পছন্দ করি না। কেননা ভুলের ভয় আমাদের কর্মকর্তাদের সৃষ্টিশীল, উদ্ভাবনক্ষম হতে এবং বদলাতে সাহায্য করে না। যারা কিছু ভুল করে, তারা আরও পরিশ্রমী এবং উৎপাদনশীল হয়। অপরদিকে, যারা অলস ও ভয়কাতুরে তাদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। যারা ভুল হওয়ার ভয়ে কোনো কাজ করে না তারা বদ্ধ জলাশয়ের মতো অবশেষে কেবল গন্ধই উৎপাদন করে।

উদ্ভাবন-শক্তি একজন সরকারি কর্মকর্তাকে একইসঙ্গে নেতা ও ত্রাতায় পরিণত করতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ভাবন-শক্তিকে বিকশিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অবশ্য এখন সরকার ‘এ টু আই’ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও সাধারণ জনগণের মাঝে উদ্ভাবন-শক্তির বিকাশ ঘটানোর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। এটাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

রাজনীতিবিদগণের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণও জনগণের সেবক। সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সকল সময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। তাই আমি বলি, আপনারা যে যেখানেই কাজ করবেন, আপনাদের সামনে থাকবে শুধু বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ। আপনাদেরকে আপনাদের প্রিয় মাতৃভূমির ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে। জানতে হবে আমাদের পূর্বসূরিরা কী অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করে এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। এলাকার উন্নয়ন নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তৃবৃন্দের ওপর। তাঁদের মনে রাখতে হবে, শুধু রুটিনমাফিক কাজ করাই যথেষ্ট নয়। মাঠপর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের উদ্ভাবন-শক্তি থাকতে হবে এবং তাঁদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোন কাজটি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত তা খুঁজে বের করতে হবে।

দেশের কীভাবে উন্নয়ন করা যেতে পারে- সরকারি কর্মকর্তাদের এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাঁদের কাজ করতে হবে। অবশ্য এজন্য তাঁদের দায়িত্ব ও ক্ষমতাকেও তেমনভাবে সজ্জিত করতে হবে। বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তৃবৃন্দ যে নীতির আওতায় কাজ করেন তাতে উদ্ভাবন-শক্তি বিকাশের সুযোগ তেমন একটা নেই। তাই সরকারের উচিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ভাবন-শক্তির বিকাশমূলক কার্য সম্পাদনে উৎসাহমূলক নীতি প্রণয়ন করা।

মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৭

বিদায় বর্ষের স্মরণে সহিদুল ইসলামের কবিতা


হে বন্ধু বিদায়
-কবি সহিদুল ইসলাম 

আর ডেকোনা বন্ধু, ভেসো না চোখের জলে,
যাচ্ছি ফিরে, ধীরেধীরে, স্মৃতির অন্তরালে।
জড়াইয়ো না মায়ার জালে দাওহে বন্ধু বিদায়,
সময়ের কাছে আজিকে বন্ধু বড়ই অসহায়।

বুঝে নাবুঝে, করেছি ভুল মনেরই সংগোপনে,
সবিনয়ে আমি চাইছি ক্ষমা আত্নসমর্পনে।
ভুল বুঝে অভিশাপ  বন্ধু দিয়োনা কভু আমায়,
সময়ের কাছে আজিকে বন্ধু বড়ই অসহায়।

তোমাদের যত দিয়েছি যাতনা বন্ধু জনে জনে,
ক্ষমিও অন্যায় বন্ধু ওগো, রেখোনা ওসব মনে।
বিদায় বেলায় অবুঝ আঁখি বুঝ মানেনা হায়,
সময়ের কাছে আজিকে বন্ধু বড়ই অসহায়।

রাগ করেছি, সময়ে আবার করেছি অভিমান,
রিক্ত আমি, শপথ করেছি রাখতে সবার মান।
মায়ার বাঁধন সহজেই কি ছিন্ন করা যায়?
সময়ের কাছে আজিকে বন্ধু বড়ই অসহায়।

প্রয়াস ছিল, বন্ধুর পথ সদা করিতে মসৃণ,
তবু যেন তোমাদের কাছে রইলো আমার ঋণ।
করি মিনতি জড়িওনা মোরে বিদ্বষের হিস্যায়,
সময়ের কাছে আজিকে বন্ধু বড়ই অসহায়।

ভুলে যাও সব বেদনা-যাতনা, দু:খ আছে যত,
জীবনটা আজ ভরে উঠুক শান্তিতে অবিরত।
রাত পোহালে নব প্রভাত ভরবে নয়া আভায়
সময়ের কাছে আজিকে বন্ধু বড়ই অসহায়।

অব্যক্ত যত যাতনা মনে আরো আছে গ্লানি,
শোধাই ওগো বন্ধু আজি শান্তির অভয় বাণী।
সুখে থেকো তুমি ভাল থেকো, বিদায় বন্ধু বিদায়,
সময়ের কাছে আজিকে বন্ধু বড়ই অসহায়।

কবি পরিচিতিঃ সহিদুল ইসলাম, সিঙ্গাপুর প্রবাসী কবি ও লেখক।

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়া অ্যাম্বাসেরডর হিসাবে আবুল কালাম আজাদ খোকনের নিয়োগ

আমাদের বাংলাদেশ,অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধিঃ আবুল কালাম আজাদ খোকন হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়া অ্যাম্বাসেরডর হিসাবে নিয়োগ পেলেন এ মাসে। তিনি হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়ার মেইল এডভোকেট হিসাবে কাজ করেছেন কয়েক মাস। এরপর হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়ার বোর্ডের সব ধরনের কার্যক্রম সন্পন্ন হওয়ার পর বোর্ডের সর্বোচ্চ পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত নভেম্বর'২০১৬তে সিডনিতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে সম্মান প্রদর্শন পুর্বক গ্রাজুয়েশন সাটিফিকেট প্রদান করা হয় এবং হোয়াইট রিবন অ্যাম্বাসেরডর কোট পিন পড়িয়ে দেন বোর্ডের কর্মকর্তা পিটারসন ওপিএ। তারপরে অ্যাম্বাসেরডর হিসাবে শপথ গ্রহন করেন আবুল কালাম আজাদ।

অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে তিনিই  প্রথমবারের মতো হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়া অ্যাম্বাসেরডর হিসাবে সন্মানজনক অবৈতনিক নিয়োগ পেলেন। হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়ান ডে ২৫শে নভেম্বর। আর এই দিবসকে সামনে রেখে অ্যাডভান্স ডাইভারসিটি সার্ভিসেস গত ১৯ নভেম্বর সিডনিতে একটি সাংবাদিক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করেন হোয়াইট রিবনের আমন্ত্রণে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাম্বাসেরডর পিটারসন।

গোটা বিশ্বে ডোমেষ্টিক ভায়োলেন্স নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এর আনুপাতিক হাড় বেশী। নারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে শারীরিক বা মানুষিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। আর এই নির্যাতন প্রতিহত করাই হল হোয়াইট রিবন মেইল এডভোকেট এবং হোয়াইট রিবন  অ্যাম্বাসেরডর এর নৈতিক কাজ।

বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে (চাইনিজ,নেপালিজ,পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী) মোট ২০ জন মেইল এডভোকেট এবং ৪ জন অ্যাম্বাসেরডর নিয়োগ দেওয়া হয়। তারমধ্যে নতুন ৩ জন বাংলাদেশী হোয়াইট রিবন মেইল এডভোকেট হিসাবে শপথ নেন যথাক্রমে-সাইফুল ইসলাম শরীফ(রনি), মনজুর আহমদ খান এবং আ. ফ. ম. মারুফ। শুধুমাত্র একজন জন বাংলাদেশী হোয়াইট রিবন অ্যাম্বাসেরডর হন। আর আবুল কালাম আজাদ খোকনই প্রথম অ্যাম্বাসেরডর।

এ প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ খোকনের অনুভূতি-"আমি হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়া মেইল অ্যাম্বাসেডর হিসাবে অত্যান্ত খুশী। এখন আরো সুন্দর কাজের প্রত্যাশা বেড়ে গেল। ধন্যবাদ হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়া ও এডিএস এবং সবাইকে।

বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্হিত ছিলেন এস বি এস রেডিও চ্যানেলের সিনিয়র সাংবাদিক আবু রেজা আরেফিন, যমুনা টেলিভিশনের অষ্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি হাসান তারেক, চ্যানেল আই টেলিভিশনের অষ্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি বাবু আসওয়াদ, মুক্তমঞ্চ সম্পাদক আল নোমান শামীম, নবধারা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ খোকন এবং সুপ্রভাত সিডনীর প্রতিনিধি। নৈশ্য ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্তি হয়।