মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২০

ভালোবাসা নিখোঁজ -মো.ইউনুছ আলী




ভালোবাসা নিখোঁজ
মো.ইউনুছ আলী
ভালোবাসা কই আছে, তা কোথায় গেলে মিলে? হিংসা নামক দৈত্য বুঝি সব খেয়েছে গিলে! সভ্যতার এই স্বর্ণযুগে 'ভালোবাসা' নিখোঁজ! শান্তিপ্রিয় মানুষগুলা করছে ওটার কি খোঁজ!! খোঁজলে শুধু মিলবে না তা স্বার্থ ছেড়ে আগান, সবার ভেতর তৈরী করুন ভালোবাসার বাগান।★

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২০

নয়নজুলি -বিপ্লব হোসেন মোল্লা




নয়নজুলি

-বিপ্লব হোসেন মোল্লা

বাংলাদেশের সাহিত্য জগৎতে যে  সাহিত্যিকরে অভাব পরিলক্ষিত হয় ,এবং মাঝে মাঝে বিভিন্ন Tv Channel বা প্রত্রিকার Headling এ দৃষ্টি পড়ে । নতুন সাহিত্যিকরা লিখতে চায় । তাদের কলম আছ,লেখার  জন্য সাদা পৃষ্ঠা আছে,লেখার ভাষা আছে,কিন্তু প্রকাশরে মাধ্যম নেই  । সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছে, চলার জন্য পা আছে,দেখার জন্য  চোখ আছে,নেই মানুষের প্রতি দেখানোর মত মূল্যবোধ ।
নয়নজুলি নাম মাত্র ,এর অর্থ হইলো বস্তিজীবন ।সমাজের অগনিত লোকের মত তাহারও সমাজে বসবাস করিয়া থাকে ।শহরের অগনিত দালান-কোঠা,বাস-রিকশা ও জনমানবের ভিড়ে তাহারাও বাঁচিয়া রই । তবে সম্পূর্ন আলাদা ।  কিছু দিন আগের কথা । দিনটি ছিল ২০১৪ সালের মাঝামাঝি । ঢাকা ,মিরপুর ১২নং ,টেকার বাড়ি বস্তিতে আমার সয়ংসম্পূর্ন দেহখান গিয়া দাড়াইল । আমার চোখের সম্মুখে হাজির হইলো অনেক লোক । তাহাদের মধ্যে ঊল্লখেযোগ্য ব্যক্তিত্ব হইলো বস্তির টোকায় । যাহার জন্য আমার এই মানুষিক কথা বা লেখনি । যাহাদের বয়স ১২ বছররে উদ্ধে বা নিম্মে হইতে পারে । গায়ে নাই জামা,পায়ে নাই জুতা,পড়নে লজ্জা স্থান গোপন করিবার মত একখান ছেড়া প্যান্ট । কাধে বস্তা লইয়া হাটিতেছে । আমিয়ো তাহার পিছু পিছু হাটিতে লাগিলাম । টোকায়ের সম্মুখে একটা ডাসবিন,হয়তো তাহার উদ্দেশ্যে হাটিতেছে ।  আমার ভাবনাটি মিথ্যা হইলো না । দেখিলাম ছোট টোকায় ডাসবিনরে মধ্যে গিয়া দাড়াইলো । দাড়াইয়া একটা কাগজ জড়ানো পঁচা নষ্ট খাবার খাইতেছে । আমি তাহার সম্মুখে হাজির হইয়া বলিলাম,ফেলো ! ঐ খাবার খায়লে অসুখ হয়বেনা ? বাচ্চাটি জবাবে বলিলো, অসুখতো আমার একার হইবে না, আমার আরে অনেক বন্ধু আছে তাদেরও হয়বে । এক দমেই বলিল ।
আমি কিছুনা বুঝিতে পাড়িলে এইটুকু  বুঝিতে পাড়িলাম যে,তাহার বিন্দু মাত্র হইলেও বন্ধুর প্রতি প্রেম বা ভালবাসা রইয়াছে । বন্ধুর জন্যে সেও মরিতে পারে । কিন্তু কেন সভ্যতার শ্রেষ্ঠ মানুষ পারেনা ? তাহাকে কাছে ডাকিয়া,মাথায় হাত বুলাইয়া জিঙ্গাসা করিলাম, তোমার নাম কি? নবাব । বলিয়া আমার সম্মুখ হয়তে চলিয়া গেল । আপন নিবাসে  ।

তখন ভাবিতে লাগিলাম সমাজ আাজ কোথায় দাড়িয়েছে?এত নামি দামি মানুষরে মূল্যবোধ,দায়িত্ব-কর্তব্য কোথায় প্রতিমায়িত হইয়াছে? অন্নের জন্য যে মানুষ দেশ ত্যাগ করে বিদেশে যায় । অন্নের জন্য যে টোকায় পথের পর পথ হাটতে থাকে ।সেই অন্ন কেন ডাসবিনে? অনাহারিকে অন্নের জন্য যেখানে দুই টাকা ভিক্ষা দেওয়া যায়না,সেখানে পথে পড়ে থাকা অগনিত সিগারেটরে ফিলটারি বুঝিয়া দেয় মানুষ আজ কি হইয়াছে? মানুষ আজ অমানুষে পরিনত  হইয়াছে তাহা এ থেকে স্পষ্ঠ ধারনা পাওয়া  যায় ।
পথে পরোক্ষ করিলে দেখা যায় যে,একটা কাঠের বাকস বা রশিদ লইয়া আল্লা, God,ভগবান বা প্রভুর নাম লইয়া চাঁদা উঠানো হয় । যাহাকে এর দায়িত্বে রাখা হয় তাহার বাকসের নিচে তালা ঝুলিয় দেওয়া হয় ।এ থেকে বোঝা যায় যে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহ বা প্রভুর নিকট হইতে চুরি করিতে পারে । এখন প্রশ্ন হইলো প্রভু কি দেখে না? প্রভুর কি অভাব আছে ? কি ঐ টাকা প্রভুর উপকারে আসিবে ? ঐ উত্তোলনকৃত অর্থ যায় মসজদি,মন্দির বা গীর্জা কমিটির সভাপতির বাম পকেটে । ঐ টাকা দিইয়া টোকায়দের জন্য কিছু করিলে কি বড় কোন ক্ষতি হইবে? ক্ষতি হইবে । সভাপতির ।

এক সাধুর মুখে শুনিয়াছিলাম‌‍‌‍‍‍ "মানুষরে মাঝেই প্রভুর অবস্থান‌‌‌‌"তবে কেন মানুষ অসহায়,অনাহারি ও দুঃখগ্রস্থ মানুষরে উপকারে আসে না? তাহারা কেন শোষণ করিতে ব্যস্থ রয় ? নয়নজুলি সম্পর্কে বলতে যাইয়া একথা না বলিয়া পারিলাম না ।যাহার নাম কবিতা আকারে বলিলে টোকায় হয়তো এর সন্ধেহ নাই ।
বিধি তুমি জন্ম দিলে
মানুষ করে এই ভবে,
অনেক বেথা আছে বুকে
সব মানুষের অন্তরে ।
কেউ থাকে অষ্ঠোলিকায়
কেউ ফুটপাতে,
কেউ খায় সোনার থালায়
কেউ পদ্ম পাতে ।
তাদের তুমি করেছ বড়
তাদের অনেক সুখে,
টোকায়রা সব অনাহারে
থাকে পথ ঘাটে ।
কলমিলতা,আলুর দম,মুড়ি ভাজা খেয়ে
জীবনটাকে গড়ে তুলে;
লাথি ঝাটা নিয়ে ।
দিয়েছ তুমি অনকে সম্মান
ধনী তাহার নাম,
টোকায় বলে নাই কি
ভাই তাহার কোন মান ?
ধনীর বাচ্চার হাতে কলম
পিঠে বই-খাতা,
টোকায়রে হাতে ভাঙ্গা বোতল
পিঠে লাঠির ঘা !
টোকায় ওরা নয়তো ভবে
পরিস্থির শিকার
নতুন জীবন জন্ম দিতে
বলি দেশের মূলকর্মকর্তার !
একই ভাবে জন্ম দিলে
ভিন্ন কেন সাজ?
ধনী বলে ওরা রঙ্গীন
টোকায় না কি জ্ঞান বিবেকহীন ?
ধনীও মানুষ টোকায়ও মানুষ
কিসে সে টোকায় ?
এমন জীবন দিলে
বিধি তুমি কোন হিংসায় ?
এই লেখনিতে শুধু মাত্র টোকায় সম্পর্কে নিম্মকথা বলিলাম তাহা না । সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিকোনরে দিকে লক্ষ্য করিলে দেখিতে পায়বেন যে,মানুষ শুধু তাহার মুল্যবোধ হারায় নাই । হারিয়েছে তাহাদের যথার্থ মর্যাদা ও গৌরবময় সম্মান । কেননা তাহারা নিজের লাভ ক্ষতিটি মুল্যায়ন করিয়া থাকে ।
নিজরে দায়িত্ব-কত্যর্বকে অবমাননা করিয়া ,নিজের স্বার্থ নিয়া মগ্ন রই । তাহারা শোষন করিতে করিতে মনুষ্যত্ব জ্ঞান হারিয়ে অমানুষরে মত আচরন করিতে থাকে । তাই বলিয়া আমি তাহাকে অমানুষ বলি নাই,সে ভাবিলে হওয়া আবশ্যক !

শোষনরে কথা বলিতে যাইয়া শোষন ও শাসন গ্রস্থ এক প্র্রতিছবি তুলিয়া ধরিতে হয় ।
যাহাকে সভ্যতার সমাজ নীচ,হীন সুনামে আখ্যা দিইয়া জনম্মুখে আকর্ষনিয় করিয়া রাখিয়াছে । তাহাকে আমি আমার মাথায় করিয়া রাখিলাম ।যেমনটি মাথায় সাদা টুপি বা পাগড়ি । যাহার নাম ইংরেজিতে বলিলে Adulterous, এবং সোজা বাংলায় বেভিচারী বা ব্যেশ্যা । মাথায় রাখিলাম বলিয়া কাহারো কাহারো মনে প্রশ্ন হয়তে পারে, কোন কারণে মাথায় রাখা হয়লো,বা কেন ?
যাহার ছোট একটা উত্তর হইলো মহিলারা মায়ের জাত । তাহার মত কোন না কোন মায়ের গর্ভে হয়তে আমার মত ক্ষুদ্র অমানুষরে জন্ম হইয়াছে । মায়ের গর্ভ হইতে জন্ম লাভের পর মানুষ  আছিলাম । কিন্তু যুগরে সঙ্গে চলিতে চলিতে বিভিন্ন অপকর্ম করিয়া অমানুষ হয়তে বাকি আছে কিনা সন্ধেহ ।
যাইহোক বেভিচারী হয়লো,নিজের দেহকে বিবাহের পূর্বে এবং বিবাহের পরে পর পুরুষ বা স্বামি ছাড়া অন্য পুরুষের নিকট কাম ক্ষুধা মিটানের লিপসা । অন্য ভাবে বলিলে,নিজের দেহকে অর্থরে বিনিময়ে অন্যের নিকট বিক্রি করাকে ব্যেশ্যবৃত্তি বলা হয় ।কেউ সাধ করিয়া ব্যেশ্যা হয় কি ? সমাজের অমর্যাদা,শোষন ,হীন অপদস্থ ও যন্ত্রনার বংশ্রবত্তি হইয়া ব্যেশ্যা কর্মটি বাছিয়া লইতে হয় । সমাজে তথা  সারা বিশ্বে তারাই শোষিত বা নির্যাতিত হয়, তাহারা হইলো , I know that man is powerful on chinless and helpless. গ্রামে বা শহরে য কোন স্থানে মহিলারা অসহায় হইয়া,কাহারো নিকট সাহায্য কামনা করিয়া থাকে তাহলে,তাহাকে সাহায্য করিতে বিরত হয় আধুনিক বা পুরুষ শাসিত সমাজ । তাহাকে একা পাইয়া কুপ্রস্তাব দিতে দিধা রাখেনা এই মানুষ রুপের অমানুষেরা । ঐ ব্যক্তি ভাবে না,মনেও করেনা  ঐ বয়স্ক ঐ ব্যক্তির কো বোন,খালা বা আত্মীয় রহিয়াছে । ঐ ব্যক্তি অসহায় ও দূর্বল মহিলার প্র্রতি রাক্ষুসে হইয়া ওঠে এবং তাহার মুখে লজ্জার কালি লেপে দেয় । ঠিকতখনি আমাদের জাতি ধর্মের সম্রাট যথা: মুসলিমরে ঈমাম,হিন্দুর পুরহিত ,খিষ্ট্ররে ফাদার ইত্যাদি তাহাকে ব্যেশ্যা খ্যাতি দিইয়া গ্র্রাম হয়তে তাড়িত করে । তাহারা তখন শ্বান্তনা না জানিয়ে ধর্মরে বুলি শোনাতে ব্যস্ত হয় । তখন ঐ ব্যক্তি বাধ্য হইয়া বলিতে থাকে,
আমি চায় না মান,চায় না খ্যাতি
চায় না ধর্মের চাবিকাঠি ।
‌ চায় না আমি অধিকার
যেথা নেই মানুষ হয়ে বাঁচার কোন অধিকার‍!
যে ধর্ম মানুষকে বাঁচার পথ দেখাতে পারেনা ,মর্যদা দিতে পারে না;শুধু মাত্র অপবাদ দিতে পারে সেই ধর্মের দরকার কি ?
যাহাকে সকলেই ব্যেশ্যা বলিয়া সমন্ধণ করে তাহাকে আমি ফুলদানি বলিয়া নিচ করিবো না । কেননা ফুলদানিতে একটা কিংবা দুইটা ফুল থাকিতে পারে । তাহার সৌরভ ঐ দুই প্রকার তাহার বেশি হয়বে না আবশ্যক ।তাই তাহাকে আমি পুষ্পবাগিচা বলিতে দিধা করিলাম না ।তাহার মাঝে হরেক  রকম সৌরভ বিদ্যামান থাকিবে তাহা মিথ্যা নয় । যেখানে হাজারো ফুলের সমাগম ,দেখিতে অপরুপ সৌন্দর্য । যাহাতে হাজারো ঝরা ফুল মাটিতে লুটাইয়া রই । পথচারির  পায়ের আঘাতে ধুলার  মত মটিতে মিশে একাকার হইয়া যায় । আবার সৌন্ধর্য ছড়ায়,সৌরভ ছড়ায় । যাহার গন্ধে সমস্থ পথচারি সতেজ সুগন্ধ নিয়া দিনের প্রথমভাগ শুরু করে । তাহা কয়জনের কপালে জোটে ? হাজারো পর্যটক যেমন পার্কে যাইয়া,মালিককে টাকা দিইয়া ফুল না নিইয়া ,সুগন্ধ নিয়া বাহির হয়  । কোন লাভ লোকসানের কথা চিন্তা করে না । তবে কেন আমার পুষ্পবাগিচায় গিয়া, ফুল নিতে সাধ জাগে ? কনে তাহাকে স্পর্শ করিতে হয় ? পার্ক দেখিবার মত কইরা বাহির হওয়া যায় না ?

অমার এই‌‍ ‌‍‌‌"নয়নজুলি" লেখনি কাউকে মুখস্ত করিতে হইবে না ,প্রত্রিকায় প্রকাশ করিতেও হইবে না । শুধু মাত্র মানুষের মনে অনুভূতি জাগানোর ব্যবস্থা করিলেই হইবে ।
বাস্তবতা প্রকাশ করিতে গিয়া, কলমের খোজায় একথা বাহির হইয়া যায় যে,সমাজের জাতি ধর্মেরে সম্রাটের হাতে গড়া ব্যেশ্যা পল্লীতে তাহারা ঘর বরাদ্ধ কইরা,গ্রাম হইতে তাড়িত মহিলার সঙ্গে যৌন সঙ্গমে আকৃষ্ট হইয়া রই । কাল্পনিক বা মনের আবেগ হইতে বলিনাই । নিজের চোখে এড়িয়ে না যাওয়া ঘটনা হইতে একথা বলিতে হয় যে,
জাতি ধর্মের সম্রাটের হিত
করে গীদ,বলে সে ধার্মীক
লোভ যখন ঐ নাভির নিচে
মসজিদ মন্দিরে আর যাস নে ।
কি হবে তর করে পূজা ?
করিস না আর নামাজ রোজা
যা এখান থেকে সর
এই জগৎতে তোরাই বড় চোর !
সমাজে যাহারা মানুষকে অমানুষ হিসেবে সুনামটি প্রদান করিয়া থাকে,তাহারা ঐ অমানুষের সঙ্গে বিভিন্ন ছলাকলায়  সুসম্পর্ক রাখিতে চেষ্টা করিয়া থাকে । সফলও হয় ।তাহারা মাথায় টুপি,গলে যীশুর চিহ্ন কিংবা মন্দিরে পূজা মগ্ন বা বিভিন্ন বেশভূষা ধারন করিয়া দোষটি গোপন করিয়া রই ।  আতপ চাউলের ময়দা ও গোলআলুর মত ঠাই কইরা নেই । মর্যাদায় রাজসিংহাসনো লাভ করে ।তাহাদের নিকট ধর্ম হইল খাঁসি ছাগলের মাংস ও চিতই পিঠার মত । যাহা পেটে থাকিলে ধর্ম রই, না থাকিলে ধংস হয় । ধর্মের নাম ব্যবহার কইরা,ধর্মকে ভ্রমে পরিনত করা এই জাতিধর্মের সম্রাটদের মূলনীতিতে পরিণত হইয়াছে ্ পুরোপুরি না হইলেও বিন্দু মাত্র বাকি রাখে নাই ।
আমার এই নয়নজুলি" নিয়া লিখিতে লিখিতে অনেক অসভ্য কথা বলিয়া ফেলিয়ছি । সত্য না ভাবিয়া, মিথ্যা ভাবিয়া বাস্তবতা দিয়া প্র্রমাণ করিয়ো। সত্য হইলে সত্যবাদি না বলিয়া,মিথ্যা হইলে মিথ্যাবাদি বলিলে আমি সার্থক হইবো ।
পরিশেষে, হীন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করিয়া সকলকে  মানুষ হিসেবে মান্য করাই একজন বিবেকমান মানুষের নেতিক দায়িত্ব। লেখক  কোন ধর্মকে আঘাত করার উদ্দেশ্য গদ্যটি লেখেনি, কেননা ধর্মের স্থান সবকিছুর উপরে। কিন্তু ধর্মের নামে যাহারা মানব সমাজকে ধংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে,তাদের অনুধাবনের জন্য গদ্যটি রচিত।

মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে তারানার গল্প -শরীফ সাথী


মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে তারানার গল্প


শরীফ সাথী



অল্প করে গল্প বলার অভ্যাস ছিল তারানার,

থেমে থেমে বলতে পারতো টাকার ভিতর বারানার।
দিন গোনা মাস নেই মনে তার জন্ম ষাটের কবে?
বয়স খুবই কম ছিল তার সাত না আটের হবে।
মায়ের হাতের রান্না খেয়ে বাবার বুকে ঘুম দিতো,
বাবার কত হাসি মুখের আদর সোহাগ চুম নিতো।
বলতো বাবা, আমরা আছি পরাধীন এক দেশ নিয়ে,
শোষণ দূষণ শাসন ভরা কষ্ট ব্যথা ক্লেশ নিয়ে।
স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ব স্বপ্ন চোখে উঁকি দেয়,
একাত্তরে শেখ মুজিবের ডাকে বাবা ঝুঁকি নেয়।
আকাশ বাতাস ভারী তখন বড্ড ভয়াল রাত ছিল,
চারিদিকে নির্মমতার দংশনী সংঘাত ছিল।
সবার চোখে সাগরের জল কখন জানি ছেঁয়ে গেছে,
বুকের মাঝে রক্ত নদীর উতলা ঢেউ বেয়ে গেছে।
বিকট শব্দের মাঝে হঠাৎ কান্নাকাটির আওয়াজে,
আহাজারি আকুতি আর কত কিছু পাওয়া যে।
করুণ কণ্ঠে বোনের ডাকা আর্তনাদের দুখ দেখেছি,
ছেলে হারা কত মায়ের শোকবিহ্বল মুখ দেখেছি।
মেঠো পথে সবুজ মাঠে রক্তে ভেজার ছাপ দেখেছি,
বিবর্ণমুখ পাগলীনির খোকারে সংলাপ দেখেছি।
সুদীর্ঘ পথ ন' মাসের এক ইতিহাসের নতুন রবি,
উদিত হয় বাংলাদেশে চিত্রিত হয় বঙ্গ ছবি।
বাংলা জুড়ে বিজয় এলো লাল সবুজের বৃষ্টি হল,
সার্বভৌমের স্বাধীনতা অবশেষে সৃষ্টি হল।
যুদ্ধে যাওয়া বাবার কথা মনে পড়ে খুব আমার,
নিরব হয়ে আজও আমি খুঁজে দেখি ডুব আঁধার।
যুদ্ধে যাওয়ার আগে যেমন দেখেছিল দৃষ্টি ভরে,
যুদ্ধ শেষে আর ফেরেনি ডাকেনি আর মিষ্টি করে।

শরীফ সাথী
গীতিকার বাংলাদেশ বেতার

মৃত্যুচ্ছায়া -ব্রজকিশোর রজক














মৃত্যুচ্ছায়া

ব্রজকিশোর রজক

মৃত্যুর পরে দেখেছি ছায়াটি তার
বেআব্রু চিতে ঘরে এসে বাঁধে প্রিয়ে।
সহস্র রিপু বেঁধে রেখে আছে মন
ছিল সব তবু, গেছে বোধহয় নিয়ে।

দেখেছি মৃত্যু কত অসহায় প্রানে
প্রেমভরে ডাকে পীড়িত-কান্না দেহে,
বঞ্চিত তবু রয়ে যায় কৃপা চেয়ে
ডোবে না মৃত্যু অশ্রুকনার মোহে।

চারিদিকে ওই আলোর ভেতরে এসে
মৃত্যুছায়ারা ঘুরে ফেরে নাচে হাসে,
চন্ডাল মাতা স্তন্যমাতনে মেতে
শিশুদের রাখে বুভুক্ষু করে পাশে।

রাত্রির কোলে আলো ও আঁধার নাচে
চাঁদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা খেলে,
বালির ভেতরে ডুবে যায় নদী এসে
ওই তো পৃথিবী ক্রমশ পিছিয়ে চলে।

কার দেশে কে দ্বেষ নিয়ে বেঁচে থাকে
কার কুলুপে কাজল পেড়েছে দুখে
কার চোখে কে এঁকে দেয় কালো রাত
মৃত্যুছায়ারা বাসা বাঁধে কার সুখে।।



টাঙ্গিনোয়াদা, হুড়া, পুরুলিয়া
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২০

কবি এম.রেজাউল করিম রকি এর কবিতা 'টাকার খেল'











টাকার খেল
এম.রেজাউল করিম রকি

টাকার কাছে হারছে সবে টাকায় যেনো সব,
টাকার কাছে বিকিয়ে মন হারিয়ে ফেলে রব।
টাকা যাদের গৌরব বাড়ে মান কমাবে শেষে,
বোকা মানুষ পেলেই টাকা চতুর হয়ে হাসে।
টাকার যতো রঙের খেলা দেখতে বাকি নাই,
টাকায় মেলে সনদ শিক্ষা তাইতো টাকা চাই।

টাকায় হারে মামলা লড়ে ফতুর হয়ে ফিরে,
আরেক বেটা মামলা জিতে ছল চাতুরী করে।
টাকায় দিয়ে মেয়ের বিয়ে জামাই কিনে আনে,
টাকায় ঝরে বিয়ের ফুল টাকায় কষ্ট টানে।
টাকায় গড়ে নেতা হাজার টাকা বানায় কবি,
টাকায় মেলে সম্মানী আজ মিথ্যে ফুটায় রবি।

আমরা সবে টাকার দাসী টাকা মোদের রাজা,
টাকার কাছে ঠকে মানব নির্দোষী পায় সাজা।
টাকার আছে গতীরে ভাই ঘুরছে ভবে টাকা,
টাকার তলে পিষ্ট হয়েই মরছে ভাগ্য চাকা।
টাকা হাতের ময়লা জানি আজকে তব
আছে,
কালযে টাকা ছুড়ে ফেলবে থাকবে তুমি নিছে।

টাকায় জোটে কোরমা ভালে টাকায় কিনে গাড়ি,
ক্ষুধার্ত রাখে টাকায় পথে নামায় ছেড়ে বাড়ি।
টাকায় খেলা টাকায় মেলা টাকা ফুটায় ফুল,
টাকা ভাঙছে মন মানুষে টাকা বুঝায় ভুল।
লিখতে গেলে টাকার কথা মাথায় লাগে তেল,
দেখছি আমি টাকার কীর্তি দেখি টাকার খেল।

রচনাকাল:-১৫/০৯/২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ।

কবি শরীফ সাথীর একগুচ্ছ কবিতা


মুজিব নামের ফুল


-শরীফ সাথী

গোপালগঞ্জের টুঙ্গি পাড়ায়
যেথায় যেতে মনকে তাড়ায় ৷
মুজিব নামের ফুল ফুটেছে
খোকা খুকির দল ছুটেছে
দু'চোখ ভরে দেখতে তাঁকে
বাবা মায়ের সঙ্গে,
বিশ্ব সেরা সুবাস মাখা
লাল সবুজের চিত্র আঁকা
নতুন স্বপ্নের দিগন্ত চাষ
এমন মধুর ফুলের আবাস
মমতারি অন্তরঙ্গে
আমার সোনার বঙ্গে ৷৷


বিশ্বকবি
-শরীফ সাথী

দু ঠোঁট ভরে মিষ্টি হেসে
পুষ্পে সুবাস মেখে কলি,
এই বাঙালির ভালোবেসে
উঠল ফুটে গীতাঞ্জলি।
বাস্তবতার জ্ঞান আলোকে
লিখে হলেন বিশ্বকবি,
জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ি
আলো হয়ে এসে রবি।
বঙ্গবাসীর ঐতিহ্য রূপ
লেখা সত্তায় বিকাশ ঘটায়,
জগত চেনে বাংলা ভাষা
বিশ্বকবির আলোকছটায়।
গান কবিতা গল্প নাটক
কালজয়ী সব সৃষ্টি তার,
নোবেল পাওয়া অমর সাধক
মায়া ভরা দৃষ্টি তার।

-শরীফ সাথী

একাত্তরের ছাব্বিশে মার্চ,
চতুর্দিকে স্বাধীন সুবাস।
মিষ্টি মায়া পরিবেশে,
স্বাধীন সোনার বাংলাদেশে।
উৎফুল্লতায় সব জনতার
এই বাঙালির প্রতি ঘরে,
ঊর্ধ্বমূখী সবার হাতে
লাল সবুজের নিশান ওড়ে।

অনন্তকালেও তুমি -বিপ্লব হোসেন মোল্লা

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  (ছবি সংগৃহীত)









অনন্তকালেও তুমি
     -বিপ্লব হোসেন মোল্লা
                               
বিনম্র শ্রদ্ধা হে আমার নেতা
শুধু শতবর্ষে নয়,অনন্তকালেও তুমি
লাল সবুজ পতাকা।
তুুমি প্রদীপের উজ্জল আলো
তুমি সমুদ্র স্রতের স্পষ্ট হুংকার
বাংলা আমার।
১৯৫২ এর ভাষার দাবিতে তুমি সেই হরতাল,
এনেছো ছিনিয়ে,দিয়েছো গাইতে
অ আ ক খ বর্ণমালার গান।
তুমি বলেছিলে বাঙ্গালীর মুক্তির কথা
            তুমি সেই ছয়-দফা।
তুমি গনউভ্যুথানের অন্ন খোঁজা দূত
তুমি শতকষ্টে পাওয়া একমুঠো সুখ।
তুমি সেই ২৫শে মার্চের বিপ্লবী সূচনা
দিয়েছো তুমি স্বাধীনতার ঘোষনা।
তুমি কোটি কোটি জনতার প্রাণ,
হাজারো পাখির কিচিমিচির গান
জয় বাংলা, জয় বাংলা'র স্লোগান।
তুমি বাংলা'য় প্রথম বক্তা জাতিসংঘের
 তুমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
                 সমগ্র বিশ্বের।

রচনাকাল:০১/০১/২০২০

বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২০

ভাষান্তরিত কবিতা


বদরুজ্জামান আলমগী: শিল্পযাত্রায় নানা ঘরানার চিহ্নঅঙ্কিত এক কবি। মাচাদো আধুনিক- তারমধ্যেই আবার প্রতীকবাদিতা, রোম্যান্টিকতা, এবং তাওবাদী স্থিতধী ধ্যানমগ্নতাও দুর্লক্ষ্য নয়। অনেক বিদ্যার জাহাজ, জ্ঞানী লোকেরা মেধার ঔদ্ধত্যে সবকিছু নির্দিষ্টভাবে জেনে ফেলে; কিন্তু মাচাডোর জানা ছিল না- নির্দিষ্টতা কী! মাচাদো কোন বোঝকে আগাম ধরে নিতে পারতেন না, তাঁর জিজ্ঞাসায় শিশুচিত্তের ঝকমকানি থাকতো। তাঁর যদি মনে জাগতো যে, একটি চিনাবাদামের পাতা কীভাবে সকালের দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভাববিনিময় করে- এই কথাটি লিখবেন- তাহলে তিনি বিহানকালে একটি বাদাম ক্ষেতের আল ধরে হেঁটে যেতেন।
মার্কিন কবি আয়রন জনখ্যাত রবার্ট ব্লাই উত্তর অ্যামেরিকার কবিতার বাইরে ভিনদেশি কবিতায় আগ্রহ, মনোযোগ ও সম্মাননার কারণে রীতিমতো প্রবাদপ্রতিম। মাতস্যু বাশো, ইয়োসা বুসন, মাসাউকা শিকির হাইকু থেকে উমর খৈয়ামের রুবাই, জালালউদ্দিন রুমির সুফী প্রগাঢ়তা কী আন্তোনিও মাচাদোর জগত- সবখানেই রবার্ট ব্লাইকে পাওয়া যাবে।
হাওয়া, প্রসন্ন দিন
হাওয়া, আর একটি প্রসন্ন দিন
ছুঁঁয়ে গেল আহা ফুলের সুবাস!
আমি দিয়েছি জুঁই মৌমৌ শোভা
আমাকে দাও সকল গোলাপ।
গোলাপ যে নেই আমার কানন
রুক্ষ শুকনো পুষ্পে কুসুমে বারণ।
নিষ্প্রাণ চারা-ই আমি নেবো ছলছল
মরা হলুদ পাতা, আর এক আঁজলা জল।
বাতাস বহে শনশনে দূর বহুদূর
আমি শুধাই বিচলিত নিজেরে ঘোর-
খুঁজে দেখো কী এমন করেছো তুমি
যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ফুলের দয়াল ভূমি?
Antonio Machado: The Wind, One Brilliant day
ঘুমে খোয়াবের জাল
ঘুমের নিগূঢ়ে গতরাতে স্বপ্ন খোলে তার কপাট
মনউচাটনের ভ্রান্তিবিলাস,
বসন্ত ফুটতে থাকে- পরাণের গহীন অজানায়
জয়জয়ন্তী হৈহৈ বসন্ত আমার।

হৃদয় উছলি বইতে থাকে
আচানক প্র¯্রবণের খচিত ধারা
নয়া পানির দৈবাৎ ফোয়ারা যেনবা
মন কেমন-করা আনন্দধ্বনি!
এমন কাউসারি জল আগে কখনো চেখেও দেখিনি!
ঘুমের নিগূঢ়ে গতরাতে স্বপ্ন খোলে নিজ পাট
মন গুনগুন ভ্রান্তিবিলাস-
হৃদমন্দিরে উলুধ্বনি- মধুক্ষরা চাক
সোনালি ডানার মৌমাছি ঘরামী
উড়েঘুরে বানায় রূপালি কাঁকই
আর অমৃত মধুরস।
এমনি ঘুমঘোর গতরজনীর আনন্দ ভুল-
আলোক উদ্গাতা সূর্যদেব ‘প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন’
রৌদ্র মদিরা ধ্বনি
আর আঁখিবন্ধনে জমে ওঠে জলবিন্দু স্ফটিক।
নিদ্রার গুমরে
বিগত নিশি খোয়াবের বিচ্ছুরণে ফুটতে থাকে,
আর
প্রাণের ভিতর হিয়ার ভাঁজে লুকিয়ে থাকে মাবুদ!
স্পেনিশ থেকে ইংরেজি ভাষান্তর: রবার্ট ব্লাই। Antonio Machado: Last night as I was sleeping  
সংগৃহীত