সিডনি (অস্ট্রেলিয়া) প্রতিনিধিঃ পারষ্পারিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি আর সার্বিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে এবার রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের এক্স-ক্যাডেটদের প্রথম পুনর্মিলনী। গত ১৪ই এপ্রিল শুক্রবার থেকে ১৬ই এপ্রিল রবিবার (তিন দিন ব্যাপী) ক্যানবেরাতে এক্স-ক্যাডেটরা স্বপরিবারে উদযাপন করে তাঁদের প্রথম পুনর্মিলনী। বাংলা নববর্ষের আমেজ আর এক্স-ক্যাডেটদের মিলনমেলা তিনটি দিনকে আনন্দ-উল্লাসে পরিপূর্ণ করে তুলেছিল নিঃসন্দেহে। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং পরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় তাদের অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এবং সংগঠনটিকে আরো এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানের তিন দিনের পর্বে ছিলো- এক্স-ক্যাডেটদের অপরাপর পরিবারের সাথে পরিচিত পর্ব, আড্ডা,পিঠা পর্ব,বারবারকিউ, সাধারন মিটিং,ক্যানবেরাতে বাস ট্যুর, ফটো সেশন এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস সঙ্গীত পরিবেশন করেন সবশেষ দিনটিতে। এভাবেই রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের এক্স-ক্যাডেটদের প্রথম পুনর্মিলনীর সুন্দর মুহূর্তগুলি কেটে যায়। উল্লেখ্য, বিগত ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়াতে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের এক্স-ক্যাডেটদের প্রতিষ্টিত হয়। Old rajshahi cadets association(ORCA) http://orcaaustralia.org.au
শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির গ্লেনফিল্ডে বৈশাখ মেলা অনুষ্টিত
সিডনি (অস্ট্রেলিয়া) প্রতিনিধিঃ আঁধার কেটে যাক, আসুক আলো, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে বৈশাখের উৎসবের আনন্দে মেতে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। আর এই প্রাণের ছোঁয়া পেতেই সাব্বির এলাহী তান্না ও তাসলিমা আহমেদ (মুন্নি) সিডনির গ্লেনফিল্ডে বৈশাখ মেলার আয়োজন করে। বাংলা নববর্ষ এখন আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসবও। প্রতিবছর এ উৎসব বহু মানুষের অংশগ্রহণে এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ ছাড়া এত বড় সর্বজনীন উৎসবের উপলক্ষ বাঙালির আর নেই। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে জাতিসত্তার পরিচয়কে নতুন তাৎপর্যে উপলব্ধি করে গৌরববোধ করে। এই গৌরব ও চেতনাই বাঙালিকে প্রেরণা জোগায় আপন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
মেলায় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশী পরিবারগুলো। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই মেলা চলে। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের দেশীয় বিভিন্ন রকমারী খাবারের আয়োজন ছিল। আপ্যায়ন তালিকায় ছিল ভাত,পোলাও, রকমারী ভর্তা, পান্তা-ইলিশ,মাছ, মাংস এবং রকমারী মিষ্টি ও দধি।মেলাতে শিশুদের ও মহিলাদের কিছু খেলার আয়োজন ছিল। বিজয়ীদের পুরষ্কারও প্রদান করা হয়।আয়োজকরা তান্না ও মুন্নি বলেন, “ এ উৎসবটি বাঙালির জীবনাচার, চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে একাকার হয়ে। বাংলা নববর্ষ তাই কেবল আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর কোনো উৎসব নয়; তা বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শেকড় সন্ধানের মহান চেতনাবাহী দিন।”সবশেষে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং "বাংলা নববর্ষ-১৪২৫" আগাম দাওয়াত জানিয়ে মেলার সমাপ্তি টানা হয়।
শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭
নারী পুরুষ মিলেইতো নারীর মুক্তি নাকি?
পুরুষ যুগ যুগ ধরে যা গ্রহণ করে এসেছে নারী তাই দিয়ে আসছে.......
নারী পুরুষ মিলেইতো নারীর মুক্তি, নাকি? নারী একা অথবা পুরুষ একা চিৎকার করে কিছুইকি হবে? কোন নারী ফেইসবুকে একটা হট পিকচার আপলোড করলেই অমনি পুরুষের প্রশংসায় সেই পোস্ট এবং সেই নারীর ইনবক্স ভর্তি হয়ে যায়। তাহলে বেচারি নারী আর করবে কি? মগজটাকে পকেটে ঢুকিয়ে চেহারাটাকে শো অফ করে। এর কারনটা অত্যন্ত সিম্পল। নারী পুরুষের জন্মই হয়েছে একে অন্যকে চাইতে। পুরুষ নারীকে চাইবে, আর নারী পুরুষকে তাঁকে চাওয়াবে। পুরুষ যুগ যুগ ধরে যা গ্...রহণ করে এসেছে, তাই নারী দিয়ে এসেছে পুরুষকে। প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, সন্তান, সংসার সবই। তাইলে নারী পুরুষ মিলে আজ নতুন করে কার মুক্তির কথা, কিসের মুক্তির কথা বলে বুঝিনা!! কিসের এতো আন্দোলন?
অনাদিকাল ধরেই পুরুষের একটা অবস্হান তৈরী এসেছে, সাথে নারীর ও। পুরুষ নারীকে ভালোবাসবে, নারীরা ভালোবাসাবে। পুরুষ চাইবে, নারী চাওয়াবে। পুরুষ নেবে, নারী দেবে। এখন কথা হোলো শুরু থেকেই গিভ এন্ড টেক কিন্তু এক রকমই চলছিলো। এবার পুরুষ নারীকে শর্ত দিয়ে বসলো, 'তুমি যদি তোমাকে সব পুরুষকে দাও তাহলে আমি তোমাকে চাইনা!' নারীতো মহা টেনশনের পড়ে গেল!! কারণ সেওতো একইভাবে শুধু সেই এক পুরুষকে একান্তই নিজের করে চায়। নারীকে চাওয়া যেমন পুরুষের রক্তের ভিতর, পুরুষকে তাঁকে চাওয়ানোও তেমনই নারীর রক্তের ভিতর।
এভাবে নারী পুরুষ একে অন্যকে চাইতে চাইতে, প্রেম, ভালোবাসা, জীবন, বেঁচে থাকার এইসব খেলা খেলতে খেলতে দুজনে আজ এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। আজকের নারী পুরুষ হঠাৎ করে, নিজের শিক্ষা-দিক্ষা, বিবেক-বুদ্ধি, আদর্শ, নৈতিকতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীর সাহায্যে নতুন করে নিজেকে একটা অবস্থানে বসাতে চাইছে এটা ঠিক, চাওয়া উচিত ও বটে। তবে ব্যাপারটা হলো কি এই নতুন অবস্হানটা নারী পুরুষ কারোরই মগজের ঠিক জায়গামতো বসছে না। অন্তত নারীর না। তাই আজকালের নারী মগজের ধোলাই বাদ দিয়ে, চেহারাটাকে বাজারে খাওয়ানোর চেষ্টা করাটাকেই বেশী লাভজনক মনে করছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা নারীকে আজকের এই অবস্থানে পুরুষের আকাঙ্ক্ষাই বসিয়েছে। বুঝা কঠিন নয় যে দুর্গতি দুজনেরই হয়েছে। এর সমাধান ও তাই দুজনকে মিলেই করতে হবে।
এভাবে নারী পুরুষ একে অন্যকে চাইতে চাইতে, প্রেম, ভালোবাসা, জীবন, বেঁচে থাকার এইসব খেলা খেলতে খেলতে দুজনে আজ এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। আজকের নারী পুরুষ হঠাৎ করে, নিজের শিক্ষা-দিক্ষা, বিবেক-বুদ্ধি, আদর্শ, নৈতিকতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীর সাহায্যে নতুন করে নিজেকে একটা অবস্থানে বসাতে চাইছে এটা ঠিক, চাওয়া উচিত ও বটে। তবে ব্যাপারটা হলো কি এই নতুন অবস্হানটা নারী পুরুষ কারোরই মগজের ঠিক জায়গামতো বসছে না। অন্তত নারীর না। তাই আজকালের নারী মগজের ধোলাই বাদ দিয়ে, চেহারাটাকে বাজারে খাওয়ানোর চেষ্টা করাটাকেই বেশী লাভজনক মনে করছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা নারীকে আজকের এই অবস্থানে পুরুষের আকাঙ্ক্ষাই বসিয়েছে। বুঝা কঠিন নয় যে দুর্গতি দুজনেরই হয়েছে। এর সমাধান ও তাই দুজনকে মিলেই করতে হবে।
আমরা মানুষেরা জীবনের যেদিকটায় মনোযোগ দিবো আমাদের জীবনের সেইদিকই বেশী বিকশিত হবে। একজন মানুষের জলন্ত বিশ্বাসে, মনোযোগের ফলে মরুভূমি শহর হয়ে যায়। তাহলে নিজের এই মনোযোগকে কি নারী কেবল বাহ্যিক আর শারীরিক সৌন্দর্য বর্ধনে কাজে লাগাবে কিনা এই সিদ্ধান্ত নারী একা নিতে পারবেনা, এখানে পুরুষের ও ভূমিকা আছে। ওই যে বললাম, "পুরুষ যুগ যুগ ধরে যা গ্রহণ করে এসেছে তাই নারী দিয়ে এসেছে পুরুষকে।" পুরুষালী কামনা বাসনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবু শুধু শরীরের সৌন্দর্য বর্ধন করে পুরুষকে তুষ্ট রাখতে পৃথিবীতে কোন নারীর জন্ম হয়নি। সুতরাং, কেবল পুরুষের কামনা বাসনা পুরণের স্থুলতা থেকে নারীকে পুরুষ মুক্তি দিক, নিজেও মুক্তি পাক। কারণ আজকের এই প্রযুক্তির যুগে যখন হাত বাড়ালেই বাহ্যিক সৌন্দর্য হাতের মুঠোয় ধরা পড়ছে, তখন এই স্থুল বাহ্যিক সৌন্দর্য আর নারী পুরুষ কারো পক্ষেই যথেষ্ট নয়। সো ইটস টাইম টু ওয়েইক আপ।
লেখক : -ফেরদৌসি বিকন,ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭
জরিনার কাবিননামা -কবি জেসমীন আলম মিনমিন
জরিনার কাবিননামা
-কবি জেসমীন আলম মিনমিন
টাকার কাছে বাঁধা ছিলো,জরিনার কাবিননামা
আর বাসর রাত,গারর্মেনটস মালিকের ওভার টাইমে...
তাই বলে কি ভালবাসার সাত কাহন
সুখ পাখি সাত রঙ্গে
মাখবে না আবীর রং ?
কিশোরী জরিনা দেখেছে ক্ষুধা কি?
হাডডি ছোয়া বাবার রিকশা চালানো,
এদো কাদা মাখা স্যাঁতস্যাতে বস্তি ঘরের আবহাওয়া
পচা পানতা খেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম ।
বারো ছুঁই ছুঁই জরিনার প্রথম কাজ ছিলো
আমাদের বাসায় হাড়ি ,পাতিল মাজার,
বলেছিলো,আফা ,আমনে কতো সুন্দর !
বই খাতা আছে,আমার নাই।
সেই জরিনা চৌদ্দতে গারর্মেনটস শ্রমিক,
পাশাপাশি আরো হাজার হায়েনার লোলুপ দৃষ্টি
এড়িয়ে ধরেছিলো ছমিরের হাত,
বিয়ের ফুল পুরোপুরি ফুটেছিলো
জরিনার নাম হয়েছিলো বিবাহিতা,
হয়নি কাবিননামা,হয়নি বাসর রাত।
-কবি জেসমীন আলম মিনমিন
টাকার কাছে বাঁধা ছিলো,জরিনার কাবিননামা
আর বাসর রাত,গারর্মেনটস মালিকের ওভার টাইমে...
তাই বলে কি ভালবাসার সাত কাহন
সুখ পাখি সাত রঙ্গে
মাখবে না আবীর রং ?
কিশোরী জরিনা দেখেছে ক্ষুধা কি?
হাডডি ছোয়া বাবার রিকশা চালানো,
এদো কাদা মাখা স্যাঁতস্যাতে বস্তি ঘরের আবহাওয়া
পচা পানতা খেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম ।
বারো ছুঁই ছুঁই জরিনার প্রথম কাজ ছিলো
আমাদের বাসায় হাড়ি ,পাতিল মাজার,
বলেছিলো,আফা ,আমনে কতো সুন্দর !
বই খাতা আছে,আমার নাই।
সেই জরিনা চৌদ্দতে গারর্মেনটস শ্রমিক,
পাশাপাশি আরো হাজার হায়েনার লোলুপ দৃষ্টি
এড়িয়ে ধরেছিলো ছমিরের হাত,
বিয়ের ফুল পুরোপুরি ফুটেছিলো
জরিনার নাম হয়েছিলো বিবাহিতা,
হয়নি কাবিননামা,হয়নি বাসর রাত।
নারী পুরুষ মিলেইতো নারীর মুক্তি নাকি?
পুরুষ যুগ যুগ ধরে যা গ্রহণ করে এসেছে নারী তাই দিয়ে আসছে.......
নারী পুরুষ মিলেইতো নারীর মুক্তি, নাকি? নারী একা অথবা পুরুষ একা চিৎকার করে কিছুইকি হবে? কোন নারী ফেইসবুকে একটা হট পিকচার আপলোড করলেই অমনি পুরুষের প্রশংসায় সেই পোস্ট এবং সেই নারীর ইনবক্স ভর্তি হয়ে যায়। তাহলে বেচারি নারী আর করবে কি? মগজটাকে পকেটে ঢুকিয়ে চেহারাটাকে শো অফ করে। এর কারনটা অত্যন্ত সিম্পল। নারী পুরুষের জন্মই হয়েছে একে অন্যকে চাইতে। পুরুষ নারীকে চাইবে, আর নারী পুরুষকে তাঁকে চাওয়াবে। পুরুষ যুগ যুগ ধরে যা গ্...রহণ করে এসেছে, তাই নারী দিয়ে এসেছে পুরুষকে। প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, সন্তান, সংসার সবই। তাইলে নারী পুরুষ মিলে আজ নতুন করে কার মুক্তির কথা, কিসের মুক্তির কথা বলে বুঝিনা!! কিসের এতো আন্দোলন?
অনাদিকাল ধরেই পুরুষের একটা অবস্হান তৈরী এসেছে, সাথে নারীর ও। পুরুষ নারীকে ভালোবাসবে, নারীরা ভালোবাসাবে। পুরুষ চাইবে, নারী চাওয়াবে। পুরুষ নেবে, নারী দেবে। এখন কথা হোলো শুরু থেকেই গিভ এন্ড টেক কিন্তু এক রকমই চলছিলো। এবার পুরুষ নারীকে শর্ত দিয়ে বসলো, 'তুমি যদি তোমাকে সব পুরুষকে দাও তাহলে আমি তোমাকে চাইনা!' নারীতো মহা টেনশনের পড়ে গেল!! কারণ সেওতো একইভাবে শুধু সেই এক পুরুষকে একান্তই নিজের করে চায়। নারীকে চাওয়া যেমন পুরুষের রক্তের ভিতর, পুরুষকে তাঁকে চাওয়ানোও তেমনই নারীর রক্তের ভিতর।
এভাবে নারী পুরুষ একে অন্যকে চাইতে চাইতে, প্রেম, ভালোবাসা, জীবন, বেঁচে থাকার এইসব খেলা খেলতে খেলতে দুজনে আজ এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। আজকের নারী পুরুষ হঠাৎ করে, নিজের শিক্ষা-দিক্ষা, বিবেক-বুদ্ধি, আদর্শ, নৈতিকতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীর সাহায্যে নতুন করে নিজেকে একটা অবস্থানে বসাতে চাইছে এটা ঠিক, চাওয়া উচিত ও বটে। তবে ব্যাপারটা হলো কি এই নতুন অবস্হানটা নারী পুরুষ কারোরই মগজের ঠিক জায়গামতো বসছে না। অন্তত নারীর না। তাই আজকালের নারী মগজের ধোলাই বাদ দিয়ে, চেহারাটাকে বাজারে খাওয়ানোর চেষ্টা করাটাকেই বেশী লাভজনক মনে করছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা নারীকে আজকের এই অবস্থানে পুরুষের আকাঙ্ক্ষাই বসিয়েছে। বুঝা কঠিন নয় যে দুর্গতি দুজনেরই হয়েছে। এর সমাধান ও তাই দুজনকে মিলেই করতে হবে।
আমরা মানুষেরা জীবনের যেদিকটায় মনোযোগ দিবো আমাদের জীবনের সেইদিকই বেশী বিকশিত হবে। একজন মানুষের জলন্ত বিশ্বাসে, মনোযোগের ফলে মরুভূমি শহর হয়ে যায়। তাহলে নিজের এই মনোযোগকে কি নারী কেবল বাহ্যিক আর শারীরিক সৌন্দর্য বর্ধনে কাজে লাগাবে কিনা এই সিদ্ধান্ত নারী একা নিতে পারবেনা, এখানে পুরুষের ও ভূমিকা আছে। ওই যে বললাম, "পুরুষ যুগ যুগ ধরে যা গ্রহণ করে এসেছে তাই নারী দিয়ে এসেছে পুরুষকে।" পুরুষালী কামনা বাসনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবু শুধু শরীরের সৌন্দর্য বর্ধন করে পুরুষকে তুষ্ট রাখতে পৃথিবীতে কোন নারীর জন্ম হয়নি। সুতরাং, কেবল পুরুষের কামনা বাসনা পুরণের স্থুলতা থেকে নারীকে পুরুষ মুক্তি দিক, নিজেও মুক্তি পাক। কারণ আজকের এই প্রযুক্তির যুগে যখন হাত বাড়ালেই বাহ্যিক সৌন্দর্য হাতের মুঠোয় ধরা পড়ছে, তখন এই স্থুল বাহ্যিক সৌন্দর্য আর নারী পুরুষ কারো পক্ষেই যথেষ্ট নয়। সো ইটস টাইম টু ওয়েইক আপ।
লেখক : -ফেরদৌসি বিকন,ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
এভাবে নারী পুরুষ একে অন্যকে চাইতে চাইতে, প্রেম, ভালোবাসা, জীবন, বেঁচে থাকার এইসব খেলা খেলতে খেলতে দুজনে আজ এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। আজকের নারী পুরুষ হঠাৎ করে, নিজের শিক্ষা-দিক্ষা, বিবেক-বুদ্ধি, আদর্শ, নৈতিকতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীর সাহায্যে নতুন করে নিজেকে একটা অবস্থানে বসাতে চাইছে এটা ঠিক, চাওয়া উচিত ও বটে। তবে ব্যাপারটা হলো কি এই নতুন অবস্হানটা নারী পুরুষ কারোরই মগজের ঠিক জায়গামতো বসছে না। অন্তত নারীর না। তাই আজকালের নারী মগজের ধোলাই বাদ দিয়ে, চেহারাটাকে বাজারে খাওয়ানোর চেষ্টা করাটাকেই বেশী লাভজনক মনে করছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা নারীকে আজকের এই অবস্থানে পুরুষের আকাঙ্ক্ষাই বসিয়েছে। বুঝা কঠিন নয় যে দুর্গতি দুজনেরই হয়েছে। এর সমাধান ও তাই দুজনকে মিলেই করতে হবে।
আমরা মানুষেরা জীবনের যেদিকটায় মনোযোগ দিবো আমাদের জীবনের সেইদিকই বেশী বিকশিত হবে। একজন মানুষের জলন্ত বিশ্বাসে, মনোযোগের ফলে মরুভূমি শহর হয়ে যায়। তাহলে নিজের এই মনোযোগকে কি নারী কেবল বাহ্যিক আর শারীরিক সৌন্দর্য বর্ধনে কাজে লাগাবে কিনা এই সিদ্ধান্ত নারী একা নিতে পারবেনা, এখানে পুরুষের ও ভূমিকা আছে। ওই যে বললাম, "পুরুষ যুগ যুগ ধরে যা গ্রহণ করে এসেছে তাই নারী দিয়ে এসেছে পুরুষকে।" পুরুষালী কামনা বাসনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবু শুধু শরীরের সৌন্দর্য বর্ধন করে পুরুষকে তুষ্ট রাখতে পৃথিবীতে কোন নারীর জন্ম হয়নি। সুতরাং, কেবল পুরুষের কামনা বাসনা পুরণের স্থুলতা থেকে নারীকে পুরুষ মুক্তি দিক, নিজেও মুক্তি পাক। কারণ আজকের এই প্রযুক্তির যুগে যখন হাত বাড়ালেই বাহ্যিক সৌন্দর্য হাতের মুঠোয় ধরা পড়ছে, তখন এই স্থুল বাহ্যিক সৌন্দর্য আর নারী পুরুষ কারো পক্ষেই যথেষ্ট নয়। সো ইটস টাইম টু ওয়েইক আপ।
লেখক : -ফেরদৌসি বিকন,ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ -ফেরদৌসি বিকন
"প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী।
কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ!"
বাংলা মাসের কত তারিখ আজ? বাংলা মাসের হিসাব এখন আর আমরা বাঙালিরা রাখি না। ষড়ঢঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বঙ্গদেশের জলবায়ুকে ষড়ঋতুর ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। বছর ঘুরে আসে এই ছয়টি ঋতু। এগুলো হচ্ছে বসন্ত, গ্রীষ্ম, হেমন্ত এবং শীত ঋতুর সাথে বর্ষা ও শরৎ ঋতু। বাংলা সনের মাসগুলোর উপর ভিত্তি করেই এই ঋতু বিভাজন করা হয়েছে। প্রতিটি ঋতুতে নানা গন্ধ, বর্ণের ফুলের সৌরভে সুবাসিত হয়ে থাকে এদেশের মাঠ, ঘাট, বাড়ির আঙিনা। বঙ্গদেশের ঋতু বৈচিত্রকে ধারণ করবার কারণে বাংলা সনের জনপ্রিয়তা এসেছে।
গ্রীষ্ম ষড়ঋতুর প্রথম ও বসন্ত ষড়ঋতুর শেষ ঋতু। ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটে শীত চলে যাবার পর এবং গ্রীষ্ম আসার আগে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় তাপমাত্রা বাড়তে থাকে কারণ পৃথিবী সূর্যের দিকে হেলে থাকে। পৃথিবীর অনেক প্রান্তে এই ঋতুতে ফুল ফুটে, গাছে নতুন পাতা গজায়, নতুন গাছের জন্ম হয়। প্রকৃতির সাথে প্রতিটি মানুষের এক রহস্যময় অলৌকিক অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ আছে যা হয়তো তার নিজের অলক্ষ্যে তারই অস্তিত্বের সাক্ষর বহন করে চলেছে। তাই হয়তো কালের প্রবাহে ধীরে ধীরে এই ধরণী মা’ই তাঁকে আবার কাছে টেনে নেয়। ধরণী মায়ের রাঙা ঋতু বসন্তের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে ফোটা একটি অসাধারণ কাব্যময় ফুলের কথা মনে পড়ে গেলো। সে ফুলগুলো নাকি ভারি রসিক। একটাই আবদার তাদের, কোন সুন্দরী তার ছোট্ট, সুন্দর পা দিয়ে গাছটিকে আঘাত না করলে তার ফুলগুলো ফুটবেই না।
কি এই ফুলের নাম? রাবণ সীতাকে চুরি করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়ে কোন কাননে বন্দী করে রেখেছিলো? "অশোক কাননে", হ্যাঁ এই ফুল "অশোক ফুল"। "অশোক" অর্থ "শোক নেই", অর্থাৎ আনন্দ। অশোক সেই ফুল, যা দেখলে মন আনন্দে ভরে ওঠে এর সৌন্দর্যে, বৈভবে ও রাজকীয় প্রস্ফুটনে। গাছটির কুড়ি ও ডালপালা থেকে লাল ও হলুদ রঙের থোকা থোকা ফুল বেরোয়। গাছটি ছায়াঘন ও যেকোন বাগানের অনিন্দম ঐশ্বর্য। কেমন হোতো আমাদের সকলের বাড়ির আঙিনায় যদি থাকতো এমন একটি অশোক গাছ? আমাদের সকল শোক হরণ করে নিতো পারতো যদি সেই ঐশ্বর্যময়ী অশোক গাছটি!!
কিন্তু মানুষের শোক যেমন চিরস্থায়ী নয়, সুখ, দুঃখের অবসান আছে, তেমনি অশোক ফুল আর বসন্ত ঋতুর ও অবসান হয়। বসন্ত ঋতু শেষেই আসে গ্রীষ্ম। গ্রীষ্ম হলো বছরের উষ্ণতম ঋতু, যা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করে। এই সময় সূর্যের প্রচণ্ড তাপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভূমি, পানি শুকিয়ে যায়, অনেক নদীই নাব্য হারায়, জলশূন্য মাটিতে ধরে ফাটল। গ্রীষ্মকালের শেষার্ধ্বে সন্ধ্যাসমাগত সময়ে ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তথা বাংলাদেশে এসময় গাছে গাছে বিভিন্ন মৌসুমী ফল দেখা যায়, যেমন: আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি।
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ জুড়ে গ্রীষ্মকাল। পহেলা বৈশাখ, বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস। বৈশাখ ষড় ঋতুর প্রথম ঋতু গ্রীষ্মের প্রথম মাস। বৈশাখের প্রথম দিন থেকে বাঙালি-জীবনে নতুন বছরের সূচনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে ওঠে উৎসবে মুখরিত। বাঙালী মানেই উৎসব, তথা "বারো মাসে তেরো পার্বণ।" তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী। কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া সে বৃহৎ।" রবীন্দ্রনাথ নববর্ষ উৎসবে নতুন মাত্রা এনেছিলেন। দিনটি ছিল তাঁর কাছে সুপ্তির অন্ধকার থেকে নব জাগরণের দিন। এ কথা তাঁর বহু লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। নববর্ষ উৎসব পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয় হতে থাকে স্বদেশ চেতনার জাগরণ কালে এবং বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের কিছু বছর আগে থেকে। পরে শান্তিনিকেতনে পহেলা বৈশাখ পালন করা হত কবির জন্মদিনে।
বাঙালি সংস্কৃতিতে বাংলা সনের ব্যবহার এখন আর পূর্বের পর্যায়ে নেই। নাগরিক জীবন যাপনের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ব্যবহার এখন কেবল কৃষিজীবীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কৃষিজীবীরা এখনো বীজতলা তৈরি, বীজ বপন, ফসলের যত্ন, ফসল তোলা ইত্যাদি যাবতীয় কাজে বাংলা মাসের ব্যাপক ব্যবহার করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সামজিক অনুষ্ঠানগুলো, যেমন বিয়ে, গৃহপ্রবেশ, অন্নপ্রাশন, সাধভক্ষণ, জামাই ষষ্ঠী, ভাই ফোঁটা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের দিন নির্বাচনে বাংলা মাসের দিনকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। উৎসব পার্বণ যেমন পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি এগুলোও বাংলা মাস নির্ভর। শহরে মানুষরা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সাম্প্রতিক কালে পহেলা বৈশাখকে একটি সার্বজনীন ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবের রূপ দিতে সচেষ্ট এবং অনেকখানি সফলও বলা যায়।
বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে। সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে এদিন উদযাপন করা হয় প্রতি বছরের এপ্রিল ১৪ তারিখে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে তা উদযাপন করা হয় সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে। এটি পাশ্চাত্যের বর্ষপঞ্জির মতন নির্দিষ্ট নয়। ভারতের বাঙালিরা নতুন বছর উদযাপন করে এপ্রিল ১৪ বা ১৫ তারিখে। ভারতের সমস্ত বঙ্গভাষী অধ্যুষিত অঞ্চলে সনাতন নিরয়ণ (জ্যোর্তিমণ্ডলে তারার অবস্থানের প্রেক্ষিতে গণিত, সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর প্রকৃত সময়ই নিরয়ণ বর্ষপঞ্জি) বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই বর্ষপঞ্জি ক্রান্তীয় বা সায়ন বর্ষপঞ্জি (যেমন সংস্কারকৃত বাংলা সন এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি) থেকে ভিন্ন। এই উভয় ধরনের বর্ষপঞ্জির মধ্যে সময়ের যে গাণিতিক পার্থক্য রয়েছে তার কারণেই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নতুন বর্ষ শুরুতে দিনের পার্থক্য হয়।
ইতিহাস বলে বাংলায় নববর্ষ উৎসবের প্রচলন হয়েছিল মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে। হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বার মাস অনেককাল আগে থেকেই পালিত হতো। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত।
ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।
একটি সমাজের বিচিত্র মানুষের আত্মিক ও বস্তুতান্ত্রিক তারতম্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, তাদের চিন্তা-চেতনা, তাদের অনুভূতিগত বৈচিত্র- ইত্যাদি সবকিছুর সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে সংস্কৃতি। অর্থাৎ সংস্কৃতির মাঝে লুকিয়ে আছে জীবনযাপন পদ্ধতি, জীবনের বিচিত্র অবস্থা, মানুষের মানবিক অধিকার, তাদের মূল্যবোধের ধারা, তাদের আবহমান ঐতিহ্য ও বিশ্বাস ইত্যাদি। আশেপাশের পৃথিবীর ব্যাপারে মানুষের মাঝে যেসব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, সংস্কৃতি সেগুলোকে দিক-নির্দেশনা দেয় এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যগুলোকে সুস্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলে। সংস্কৃতি মানুষকে বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ জীবন দান করে, বিবেচনা শক্তি দেয় এবং মানুষের মাঝে নৈতিকতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা মূল্যবোধের শিক্ষা পাই এবং নিজেকে অন্যদের মাঝে পরিচিত করে তোলার সুযোগ পাই কিংবা নিজেদের মধ্যকার সীমাবদ্ধতাগুলোকে অতিক্রম করার সুযোগ পাই। এই সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী সংস্কৃতি একটি সমাজের নির্দিষ্ট স্বরূপ নির্ণয় করে এবং মূল্যবোধ, বিশ্বাস, শিল্প-সাহিত্য এবং সাধারণ আচার-আচরণ পদ্ধতিগুলোর উপাদান গঠনে সহযোগিতা করে।
এই যে মূল্যবোধের কথা বলা হলো, এই যে ঐতিহ্যের কথা বলা হলো, এগুলো শিল্পের বিভিন্ন কাঠামোর মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং ধীরে ধীরে সবার কাছে পরিচিত হয়ে পড়ে। এভাবেই একটি জাতির শিল্প, তাদের ঐতিহ্য ও রীতি-আচারগুলোর সাথে পরিচিত হবার প্রভাবশালী একটি মাধ্যমে পরিণত হয় সংস্কৃতি। বাঙালি হিসেবে নিজেকে এবং নিজের সংস্কৃতজ্ঞ মন মানসিকতাকে তখনই সংকুচিত মনে হয় যখন দেখি চারদিকে পুলিশ-র্যা বের তিন-চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থান করছে বাঙালি সংস্কৃতি এখন। ছায়ানট, উদীচী ইত্যাদির মতো কিছু শিল্প-সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফুরান প্রাণের জোয়ারে যদি না ভেসে যেত রমনার বটমূল, বকুলতলাসহ আরো অনেক জায়গা, তাহলে কী হতো বাংলাদেশের বাঙালিত্বের? চোখে পড়ার মতো কিছু থাকত কি তার?
মুখে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি বলে বলে ফেনা উঠিয়ে ফেললেও কোনো কাজ হবে না অন্তরে তার সঙ্গে সততা যুক্ত না হলে। এসব সমস্যার সমাধান লাভ করা যায় সহজে একমাত্র বাঙালি সংস্কৃতির আন্তরিক নিবিড় চর্চা ও সেবার মধ্য দিয়ে। কারণ বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির সে ঐতিহ্য-শক্তি রয়েছে। গৌড় নামে বা গৌড়ের মধ্যে হোক, বা আলাদাভাবে হোক, `বঙ্গ` নামে একটি অঞ্চলের নাম চলে আসছে সুদূর বৈদিক যুগ থেকেই। যদি ধরে নিই একাত্তরে তারই অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন `বাংলাদেশ` নামে, তাহলে তেমন কাল্পনিক কিছু বলা হবে না।
সেকালের সুহ্ম, সমতট, গৌড়, বরেন্দ্রী, বঙ্গ ইত্যাদি অঞ্চলের কম-বেশি মানুষ যারা ঘনীভূত হয়েছেন বিশেষত বঙ্গ অঞ্চলে, তাদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে তারাই পরবর্তীকালে `বাঙালি` নামে পরিচিত হন। আবার এমন মতও রয়েছে- গৌড়, বরেন্দ্রী, বঙ্গ ইত্যাদি জনপদ মিলে যে বৃহত্তর জনপদ গড়ে ওঠে তারই নাম হয়েছে আবার `বঙ্গ`। সে বঙ্গের অধিবাসীরাই হলেন `বাঙালি`। স্থান, পরিচয় ও আগমন ভেদে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সম্মিলনে তৈরি হয়েছে এ বাঙালি জাতি। এ জাতির রক্তে রয়েছে আর্য, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, ভোটচীনা, সেমিটিক রক্ত। ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, সম্প্রদায় বা অন্য কোনো পরিচয় দ্বারা যত বিভক্তিই তৈরি হোক না কেন এ সমাজে, শুনতে বিরক্তিকর মনে হলেও অনেকের কাছে, রক্তের একটি ঐক্য বা আত্মীয়তা রয়েছে অন্তর্লীনভাবে প্রায় সবার মধ্যেই। একে আবিষ্কারের মোক্ষম উপায় হলো অত্যন্ত আন্তরিক ও আয়তভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং সেই সঙ্গে ক্রমাগত বাঙালি সংস্কৃতির জীবিত-মৃত যাবতীয় ঐতিহ্যের উদ্ঘাটন উন্মোচন, যথাসময়ে যথাস্থানে সেগুলোর পালন।
স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশে পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালি সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রতিবাদে ১৩৭৫ বঙ্গাব্দে (১৯৬৫ সালে) রমনা পার্কে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। রবি ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মধ্যে দিয়ে স্বাগত জানায় বৈশাখকে। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে। ১৯৭২ সালের পর থেকেই মূলত এটি জাতীয় উৎসব হিসেবে স্বীকৃত হয়। ১৯৮০ সালে এই উৎসবকে আরো এক ধাপ বাড়তি রংয়ের ছোঁয়া দিতে প্রচলন হয়েছে বৈশাখী শোভাযাত্রার।
এছাড়া এইদিনে বাংলা একাডেমি, নজরুল ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, নজরুল একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানই উদযাপন করে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান বৈশাখী মেলা। কোনো কোনো জায়গায় এই মেলা চলে পুরো সপ্তাহ জুড়ে। এক হিসেবে দেখা গেছে, সারা বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ ও বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২০০টি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পান্তা- ইলিশ বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সব জেলায়।
এসব মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগীতি ও লোকনৃত্য পরিবেশন করা হয়। সেখানে পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, গাজীর গান, আলকাপ গান তো থাকেই, থাকে যাত্রাপালার আয়োজনও। কোথাও কোথাও পথনাট্য উৎসবও হয়ে থাকে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, সার্কাস বৈশাখী মেলার বিশেষ আকর্ষণ। শিশু- কিশোরদের জন্য আরো থাকে বায়োস্কোপ। শহরাঞ্চলে নগর সংস্কৃতির আমেজেও এখন আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। সবচেয়ে রঙচঙে ও আনন্দঘন নববর্ষ উদযাপিত হয় ঢাকায়। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় রমনার বটমূলে। ছায়ানটের শিল্পীরা বৈশাখের আগমনী গান গেয়ে স্বাগত জানান নববর্ষকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলায় একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি বৈশাখী উৎসবের আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে বই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ইত্যাদি শহরে নববর্ষ উপলক্ষে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমির বইয়ের আড়ং এসব বইমেলার মধ্যে সবচেয়ে বড়। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি অঞ্চলে বাংলা নববর্ষ ও চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা আয়োজন করেন ‘বৈসাবি’। চাকমাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম বিজু, মারমাদের সাংগ্রাইং, আর ত্রিপুরাদের বৈসুক। বৈসুক, সাংগ্রাইং ও বিজু- এই তিনটির নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বৈসাবি শব্দটি। তাই ওই অঞ্চলের বর্ষবরণ উৎসবকে একসঙ্গে এখন বলা হয় বৈসাবি। বছরের শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন, এই তিনদিন মিলেই বৈসাবির মূল আয়োজন। পুরনো বছরকে বিদায় দিতে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে সেই আদি কাল থেকেই পালন করে আসছে পাহাড়িরা এই উৎসব। এদিন তারা বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী মেলার আয়োজন করে।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষ কিছু আনন্দ এবং স্মৃতিকে আপন করে নেয়। আর এ আপন করে নেওয়ার বিভিন্ন স্তর এবং সময়ের পথ ধরে সংস্কৃতির বিকাশ। প্রতিটি জাতি ও সভ্যতা সংস্কৃতির মাধ্যমে খুঁজে পায় তার নিজস্ব অনুভূতি এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। এ স্মৃতিময় জীবনের মাঝেই বাঙালি জাতি খুঁজে পায় এক নতুন জীবনের আস্বাদ, জীবন চলার পথের উপাদান, প্রেরণা আর উদ্দীপনা। বাঙালি জাতি হিসেবে, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রধান উৎসব হল পহেলা বৈশাখ।
লেখক : -ফেরদৌসি বিকন,ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
বাংলা মাসের কত তারিখ আজ? বাংলা মাসের হিসাব এখন আর আমরা বাঙালিরা রাখি না। ষড়ঢঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বঙ্গদেশের জলবায়ুকে ষড়ঋতুর ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। বছর ঘুরে আসে এই ছয়টি ঋতু। এগুলো হচ্ছে বসন্ত, গ্রীষ্ম, হেমন্ত এবং শীত ঋতুর সাথে বর্ষা ও শরৎ ঋতু। বাংলা সনের মাসগুলোর উপর ভিত্তি করেই এই ঋতু বিভাজন করা হয়েছে। প্রতিটি ঋতুতে নানা গন্ধ, বর্ণের ফুলের সৌরভে সুবাসিত হয়ে থাকে এদেশের মাঠ, ঘাট, বাড়ির আঙিনা। বঙ্গদেশের ঋতু বৈচিত্রকে ধারণ করবার কারণে বাংলা সনের জনপ্রিয়তা এসেছে।
গ্রীষ্ম ষড়ঋতুর প্রথম ও বসন্ত ষড়ঋতুর শেষ ঋতু। ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটে শীত চলে যাবার পর এবং গ্রীষ্ম আসার আগে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় তাপমাত্রা বাড়তে থাকে কারণ পৃথিবী সূর্যের দিকে হেলে থাকে। পৃথিবীর অনেক প্রান্তে এই ঋতুতে ফুল ফুটে, গাছে নতুন পাতা গজায়, নতুন গাছের জন্ম হয়। প্রকৃতির সাথে প্রতিটি মানুষের এক রহস্যময় অলৌকিক অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ আছে যা হয়তো তার নিজের অলক্ষ্যে তারই অস্তিত্বের সাক্ষর বহন করে চলেছে। তাই হয়তো কালের প্রবাহে ধীরে ধীরে এই ধরণী মা’ই তাঁকে আবার কাছে টেনে নেয়। ধরণী মায়ের রাঙা ঋতু বসন্তের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে ফোটা একটি অসাধারণ কাব্যময় ফুলের কথা মনে পড়ে গেলো। সে ফুলগুলো নাকি ভারি রসিক। একটাই আবদার তাদের, কোন সুন্দরী তার ছোট্ট, সুন্দর পা দিয়ে গাছটিকে আঘাত না করলে তার ফুলগুলো ফুটবেই না।
কি এই ফুলের নাম? রাবণ সীতাকে চুরি করে লঙ্কায় নিয়ে গিয়ে কোন কাননে বন্দী করে রেখেছিলো? "অশোক কাননে", হ্যাঁ এই ফুল "অশোক ফুল"। "অশোক" অর্থ "শোক নেই", অর্থাৎ আনন্দ। অশোক সেই ফুল, যা দেখলে মন আনন্দে ভরে ওঠে এর সৌন্দর্যে, বৈভবে ও রাজকীয় প্রস্ফুটনে। গাছটির কুড়ি ও ডালপালা থেকে লাল ও হলুদ রঙের থোকা থোকা ফুল বেরোয়। গাছটি ছায়াঘন ও যেকোন বাগানের অনিন্দম ঐশ্বর্য। কেমন হোতো আমাদের সকলের বাড়ির আঙিনায় যদি থাকতো এমন একটি অশোক গাছ? আমাদের সকল শোক হরণ করে নিতো পারতো যদি সেই ঐশ্বর্যময়ী অশোক গাছটি!!
কিন্তু মানুষের শোক যেমন চিরস্থায়ী নয়, সুখ, দুঃখের অবসান আছে, তেমনি অশোক ফুল আর বসন্ত ঋতুর ও অবসান হয়। বসন্ত ঋতু শেষেই আসে গ্রীষ্ম। গ্রীষ্ম হলো বছরের উষ্ণতম ঋতু, যা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করে। এই সময় সূর্যের প্রচণ্ড তাপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভূমি, পানি শুকিয়ে যায়, অনেক নদীই নাব্য হারায়, জলশূন্য মাটিতে ধরে ফাটল। গ্রীষ্মকালের শেষার্ধ্বে সন্ধ্যাসমাগত সময়ে ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তথা বাংলাদেশে এসময় গাছে গাছে বিভিন্ন মৌসুমী ফল দেখা যায়, যেমন: আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি।
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ জুড়ে গ্রীষ্মকাল। পহেলা বৈশাখ, বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস। বৈশাখ ষড় ঋতুর প্রথম ঋতু গ্রীষ্মের প্রথম মাস। বৈশাখের প্রথম দিন থেকে বাঙালি-জীবনে নতুন বছরের সূচনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে ওঠে উৎসবে মুখরিত। বাঙালী মানেই উৎসব, তথা "বারো মাসে তেরো পার্বণ।" তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী। কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া সে বৃহৎ।" রবীন্দ্রনাথ নববর্ষ উৎসবে নতুন মাত্রা এনেছিলেন। দিনটি ছিল তাঁর কাছে সুপ্তির অন্ধকার থেকে নব জাগরণের দিন। এ কথা তাঁর বহু লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। নববর্ষ উৎসব পরবর্তী সময়ে জনপ্রিয় হতে থাকে স্বদেশ চেতনার জাগরণ কালে এবং বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের কিছু বছর আগে থেকে। পরে শান্তিনিকেতনে পহেলা বৈশাখ পালন করা হত কবির জন্মদিনে।
বাঙালি সংস্কৃতিতে বাংলা সনের ব্যবহার এখন আর পূর্বের পর্যায়ে নেই। নাগরিক জীবন যাপনের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ব্যবহার এখন কেবল কৃষিজীবীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কৃষিজীবীরা এখনো বীজতলা তৈরি, বীজ বপন, ফসলের যত্ন, ফসল তোলা ইত্যাদি যাবতীয় কাজে বাংলা মাসের ব্যাপক ব্যবহার করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সামজিক অনুষ্ঠানগুলো, যেমন বিয়ে, গৃহপ্রবেশ, অন্নপ্রাশন, সাধভক্ষণ, জামাই ষষ্ঠী, ভাই ফোঁটা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের দিন নির্বাচনে বাংলা মাসের দিনকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। উৎসব পার্বণ যেমন পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি এগুলোও বাংলা মাস নির্ভর। শহরে মানুষরা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সাম্প্রতিক কালে পহেলা বৈশাখকে একটি সার্বজনীন ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবের রূপ দিতে সচেষ্ট এবং অনেকখানি সফলও বলা যায়।
বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে। সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে এদিন উদযাপন করা হয় প্রতি বছরের এপ্রিল ১৪ তারিখে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে তা উদযাপন করা হয় সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে। এটি পাশ্চাত্যের বর্ষপঞ্জির মতন নির্দিষ্ট নয়। ভারতের বাঙালিরা নতুন বছর উদযাপন করে এপ্রিল ১৪ বা ১৫ তারিখে। ভারতের সমস্ত বঙ্গভাষী অধ্যুষিত অঞ্চলে সনাতন নিরয়ণ (জ্যোর্তিমণ্ডলে তারার অবস্থানের প্রেক্ষিতে গণিত, সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর প্রকৃত সময়ই নিরয়ণ বর্ষপঞ্জি) বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই বর্ষপঞ্জি ক্রান্তীয় বা সায়ন বর্ষপঞ্জি (যেমন সংস্কারকৃত বাংলা সন এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি) থেকে ভিন্ন। এই উভয় ধরনের বর্ষপঞ্জির মধ্যে সময়ের যে গাণিতিক পার্থক্য রয়েছে তার কারণেই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নতুন বর্ষ শুরুতে দিনের পার্থক্য হয়।
ইতিহাস বলে বাংলায় নববর্ষ উৎসবের প্রচলন হয়েছিল মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে। হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বার মাস অনেককাল আগে থেকেই পালিত হতো। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত।
ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।
একটি সমাজের বিচিত্র মানুষের আত্মিক ও বস্তুতান্ত্রিক তারতম্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, তাদের চিন্তা-চেতনা, তাদের অনুভূতিগত বৈচিত্র- ইত্যাদি সবকিছুর সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে সংস্কৃতি। অর্থাৎ সংস্কৃতির মাঝে লুকিয়ে আছে জীবনযাপন পদ্ধতি, জীবনের বিচিত্র অবস্থা, মানুষের মানবিক অধিকার, তাদের মূল্যবোধের ধারা, তাদের আবহমান ঐতিহ্য ও বিশ্বাস ইত্যাদি। আশেপাশের পৃথিবীর ব্যাপারে মানুষের মাঝে যেসব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, সংস্কৃতি সেগুলোকে দিক-নির্দেশনা দেয় এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যগুলোকে সুস্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলে। সংস্কৃতি মানুষকে বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ জীবন দান করে, বিবেচনা শক্তি দেয় এবং মানুষের মাঝে নৈতিকতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা মূল্যবোধের শিক্ষা পাই এবং নিজেকে অন্যদের মাঝে পরিচিত করে তোলার সুযোগ পাই কিংবা নিজেদের মধ্যকার সীমাবদ্ধতাগুলোকে অতিক্রম করার সুযোগ পাই। এই সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী সংস্কৃতি একটি সমাজের নির্দিষ্ট স্বরূপ নির্ণয় করে এবং মূল্যবোধ, বিশ্বাস, শিল্প-সাহিত্য এবং সাধারণ আচার-আচরণ পদ্ধতিগুলোর উপাদান গঠনে সহযোগিতা করে।
এই যে মূল্যবোধের কথা বলা হলো, এই যে ঐতিহ্যের কথা বলা হলো, এগুলো শিল্পের বিভিন্ন কাঠামোর মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং ধীরে ধীরে সবার কাছে পরিচিত হয়ে পড়ে। এভাবেই একটি জাতির শিল্প, তাদের ঐতিহ্য ও রীতি-আচারগুলোর সাথে পরিচিত হবার প্রভাবশালী একটি মাধ্যমে পরিণত হয় সংস্কৃতি। বাঙালি হিসেবে নিজেকে এবং নিজের সংস্কৃতজ্ঞ মন মানসিকতাকে তখনই সংকুচিত মনে হয় যখন দেখি চারদিকে পুলিশ-র্যা বের তিন-চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থান করছে বাঙালি সংস্কৃতি এখন। ছায়ানট, উদীচী ইত্যাদির মতো কিছু শিল্প-সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফুরান প্রাণের জোয়ারে যদি না ভেসে যেত রমনার বটমূল, বকুলতলাসহ আরো অনেক জায়গা, তাহলে কী হতো বাংলাদেশের বাঙালিত্বের? চোখে পড়ার মতো কিছু থাকত কি তার?
মুখে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি বলে বলে ফেনা উঠিয়ে ফেললেও কোনো কাজ হবে না অন্তরে তার সঙ্গে সততা যুক্ত না হলে। এসব সমস্যার সমাধান লাভ করা যায় সহজে একমাত্র বাঙালি সংস্কৃতির আন্তরিক নিবিড় চর্চা ও সেবার মধ্য দিয়ে। কারণ বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির সে ঐতিহ্য-শক্তি রয়েছে। গৌড় নামে বা গৌড়ের মধ্যে হোক, বা আলাদাভাবে হোক, `বঙ্গ` নামে একটি অঞ্চলের নাম চলে আসছে সুদূর বৈদিক যুগ থেকেই। যদি ধরে নিই একাত্তরে তারই অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন `বাংলাদেশ` নামে, তাহলে তেমন কাল্পনিক কিছু বলা হবে না।
সেকালের সুহ্ম, সমতট, গৌড়, বরেন্দ্রী, বঙ্গ ইত্যাদি অঞ্চলের কম-বেশি মানুষ যারা ঘনীভূত হয়েছেন বিশেষত বঙ্গ অঞ্চলে, তাদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে তারাই পরবর্তীকালে `বাঙালি` নামে পরিচিত হন। আবার এমন মতও রয়েছে- গৌড়, বরেন্দ্রী, বঙ্গ ইত্যাদি জনপদ মিলে যে বৃহত্তর জনপদ গড়ে ওঠে তারই নাম হয়েছে আবার `বঙ্গ`। সে বঙ্গের অধিবাসীরাই হলেন `বাঙালি`। স্থান, পরিচয় ও আগমন ভেদে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সম্মিলনে তৈরি হয়েছে এ বাঙালি জাতি। এ জাতির রক্তে রয়েছে আর্য, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, ভোটচীনা, সেমিটিক রক্ত। ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, সম্প্রদায় বা অন্য কোনো পরিচয় দ্বারা যত বিভক্তিই তৈরি হোক না কেন এ সমাজে, শুনতে বিরক্তিকর মনে হলেও অনেকের কাছে, রক্তের একটি ঐক্য বা আত্মীয়তা রয়েছে অন্তর্লীনভাবে প্রায় সবার মধ্যেই। একে আবিষ্কারের মোক্ষম উপায় হলো অত্যন্ত আন্তরিক ও আয়তভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং সেই সঙ্গে ক্রমাগত বাঙালি সংস্কৃতির জীবিত-মৃত যাবতীয় ঐতিহ্যের উদ্ঘাটন উন্মোচন, যথাসময়ে যথাস্থানে সেগুলোর পালন।
স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশে পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালি সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রতিবাদে ১৩৭৫ বঙ্গাব্দে (১৯৬৫ সালে) রমনা পার্কে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। রবি ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মধ্যে দিয়ে স্বাগত জানায় বৈশাখকে। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে। ১৯৭২ সালের পর থেকেই মূলত এটি জাতীয় উৎসব হিসেবে স্বীকৃত হয়। ১৯৮০ সালে এই উৎসবকে আরো এক ধাপ বাড়তি রংয়ের ছোঁয়া দিতে প্রচলন হয়েছে বৈশাখী শোভাযাত্রার।
এছাড়া এইদিনে বাংলা একাডেমি, নজরুল ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, নজরুল একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানই উদযাপন করে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান বৈশাখী মেলা। কোনো কোনো জায়গায় এই মেলা চলে পুরো সপ্তাহ জুড়ে। এক হিসেবে দেখা গেছে, সারা বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ ও বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২০০টি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পান্তা- ইলিশ বৈশাখী মেলার প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সব জেলায়।
এসব মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগীতি ও লোকনৃত্য পরিবেশন করা হয়। সেখানে পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, গাজীর গান, আলকাপ গান তো থাকেই, থাকে যাত্রাপালার আয়োজনও। কোথাও কোথাও পথনাট্য উৎসবও হয়ে থাকে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, সার্কাস বৈশাখী মেলার বিশেষ আকর্ষণ। শিশু- কিশোরদের জন্য আরো থাকে বায়োস্কোপ। শহরাঞ্চলে নগর সংস্কৃতির আমেজেও এখন আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। সবচেয়ে রঙচঙে ও আনন্দঘন নববর্ষ উদযাপিত হয় ঢাকায়। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় রমনার বটমূলে। ছায়ানটের শিল্পীরা বৈশাখের আগমনী গান গেয়ে স্বাগত জানান নববর্ষকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলায় একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি বৈশাখী উৎসবের আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে বই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ইত্যাদি শহরে নববর্ষ উপলক্ষে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমির বইয়ের আড়ং এসব বইমেলার মধ্যে সবচেয়ে বড়। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি অঞ্চলে বাংলা নববর্ষ ও চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা আয়োজন করেন ‘বৈসাবি’। চাকমাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম বিজু, মারমাদের সাংগ্রাইং, আর ত্রিপুরাদের বৈসুক। বৈসুক, সাংগ্রাইং ও বিজু- এই তিনটির নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বৈসাবি শব্দটি। তাই ওই অঞ্চলের বর্ষবরণ উৎসবকে একসঙ্গে এখন বলা হয় বৈসাবি। বছরের শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন, এই তিনদিন মিলেই বৈসাবির মূল আয়োজন। পুরনো বছরকে বিদায় দিতে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে সেই আদি কাল থেকেই পালন করে আসছে পাহাড়িরা এই উৎসব। এদিন তারা বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী মেলার আয়োজন করে।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষ কিছু আনন্দ এবং স্মৃতিকে আপন করে নেয়। আর এ আপন করে নেওয়ার বিভিন্ন স্তর এবং সময়ের পথ ধরে সংস্কৃতির বিকাশ। প্রতিটি জাতি ও সভ্যতা সংস্কৃতির মাধ্যমে খুঁজে পায় তার নিজস্ব অনুভূতি এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। এ স্মৃতিময় জীবনের মাঝেই বাঙালি জাতি খুঁজে পায় এক নতুন জীবনের আস্বাদ, জীবন চলার পথের উপাদান, প্রেরণা আর উদ্দীপনা। বাঙালি জাতি হিসেবে, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রধান উৎসব হল পহেলা বৈশাখ।
লেখক : -ফেরদৌসি বিকন,ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
সন্ধ্যায় দেখা নরসুন্দা -কবি ফখরুল হাসান
সন্ধ্যায় দেখা নরসুন্দা
-কবি ফখরুল হাসান
এসেছো নীরবে নির্রঝরে বৈশাখী হাও...
আবার চলে গেলে রংধনুর আবির ছড়িয়ে ।
কে গো তুমি মায়াবিনী ?
হ্নদয় মন্দিরে ঘন্টা বাজালে ;
পথিকের পথ চলা কাশ ফুলে সাজালে !
ঐ মায়াবী হরিণী চোখের মায়া জালে জড়ালে ।
গোলাপের পাপড়িতে চোখ দুটো সাজালে
নিস্পাপ মুখ দেখেছে কবির অপলক চোখ ।
লাজলজ্জা ভুলে গিয়ে ঐ চোখে রেখেছি দুইটি চোখ ,
ঐ ময়ূরী চোখের গভীরে বহুকাল ডুবে ছিলো মন ।
এমন কি ডুবে ছিলো , মন পবনের প্রেমের ডিঙি নাউ
কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে তোমার ঐ চোখ ভাষা পড়ে
অমাবস্যার অন্ধকারের মতো , রাতের নরসুন্দাকে দেখেছি চোখে ।
নিদ্রায় বিভোর ক্লান্ত দেহে বিছানায় আশ্রয় নেয় মায়াবী ঐ চোখ ।
তন্দ্রাজাগরণে বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি ঐ চোখেই পৃথিবী থেমে গেছে ।
অন্তহীন পথের পথিক , চোখের পাপড়িতে গন্তব্য পেয়েছে ।
ঝিনুকের মুক্তার মত দুটো চোখ যখন খোল !
ভুলে যায় আত্মঘাতি জঙ্গী ধর্মের নামে ভুল জিহাদের কথা ।
দুর্লভ উর্বশী তুমি , অমূল্য মায়াবী চোখের মায়া হরিণী ।
য়া হয়ে ,
-কবি ফখরুল হাসান

আবার চলে গেলে রংধনুর আবির ছড়িয়ে ।
কে গো তুমি মায়াবিনী ?
হ্নদয় মন্দিরে ঘন্টা বাজালে ;
পথিকের পথ চলা কাশ ফুলে সাজালে !
ঐ মায়াবী হরিণী চোখের মায়া জালে জড়ালে ।
গোলাপের পাপড়িতে চোখ দুটো সাজালে
নিস্পাপ মুখ দেখেছে কবির অপলক চোখ ।
লাজলজ্জা ভুলে গিয়ে ঐ চোখে রেখেছি দুইটি চোখ ,
ঐ ময়ূরী চোখের গভীরে বহুকাল ডুবে ছিলো মন ।
এমন কি ডুবে ছিলো , মন পবনের প্রেমের ডিঙি নাউ
কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে তোমার ঐ চোখ ভাষা পড়ে
অমাবস্যার অন্ধকারের মতো , রাতের নরসুন্দাকে দেখেছি চোখে ।
নিদ্রায় বিভোর ক্লান্ত দেহে বিছানায় আশ্রয় নেয় মায়াবী ঐ চোখ ।
তন্দ্রাজাগরণে বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি ঐ চোখেই পৃথিবী থেমে গেছে ।
অন্তহীন পথের পথিক , চোখের পাপড়িতে গন্তব্য পেয়েছে ।
ঝিনুকের মুক্তার মত দুটো চোখ যখন খোল !
ভুলে যায় আত্মঘাতি জঙ্গী ধর্মের নামে ভুল জিহাদের কথা ।
দুর্লভ উর্বশী তুমি , অমূল্য মায়াবী চোখের মায়া হরিণী ।
স্তব্ধতা -কবি ফখরুল হাসান
স্তব্ধতা
-কবি ফখরুল হাসান
-কবি ফখরুল হাসান
মধুমাসের ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক যেন তোমার হাসি মুখে...
এই হাসির জন্য ঘোষণা করতে চেয়েছিলাম তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ।
পাড়ি দিতে চেয়েছিলাম জিরো ডিগ্রির
তেরো নদী আর সাত সমুদ্র ।
এই হাসির জন্য ঘোষণা করতে চেয়েছিলাম তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ।
পাড়ি দিতে চেয়েছিলাম জিরো ডিগ্রির
তেরো নদী আর সাত সমুদ্র ।
টিনের চালের বৃষ্টির শব্দের মতো হাসি দেখতে
সহস্রবার হয়েছি বারো ভূঁইয়াদের শ্রেষ্ঠ বীর ঈশা খাঁ
তাজমহলের রূপকার সম্রাট শাহ্জাহান
লাইলীর মজনু আর শিরীর ফরহাদ ।
সহস্রবার হয়েছি বারো ভূঁইয়াদের শ্রেষ্ঠ বীর ঈশা খাঁ
তাজমহলের রূপকার সম্রাট শাহ্জাহান
লাইলীর মজনু আর শিরীর ফরহাদ ।
এক চিলতে পদ্ম ফোঁটা হাসির জন্য
জল্লাদের কাছে নিজেকে উৎস্বর্গে ছিলাম প্রস্তুত
জাতিসংঘে বহুবার আবেদন করেছিলাম
একটি প্রেমময় হাসি দিবস চাই ।
জল্লাদের কাছে নিজেকে উৎস্বর্গে ছিলাম প্রস্তুত
জাতিসংঘে বহুবার আবেদন করেছিলাম
একটি প্রেমময় হাসি দিবস চাই ।
কদমের মতো মনোহর হাসির জন্য মরু সাহারায়
বানাতে চেয়েছিলাম সীমাহীন সাগর ।
ডেকে দিতে চেয়েছিলাম চাঁদের ঐ মুখ
হিমালয়ে ওড়াতে চেয়েছিলাম তুষার এর মতো শুভ্র হাসির পতাকা ।
আকাশে উড়িয়ে ছিলাম হাজার রঙের প্রণয়ের ঘুড়ি ।
বানাতে চেয়েছিলাম সীমাহীন সাগর ।
ডেকে দিতে চেয়েছিলাম চাঁদের ঐ মুখ
হিমালয়ে ওড়াতে চেয়েছিলাম তুষার এর মতো শুভ্র হাসির পতাকা ।
আকাশে উড়িয়ে ছিলাম হাজার রঙের প্রণয়ের ঘুড়ি ।
অথচ হাসিহীন তোমাকে দেখে
আজ আমার পৃথিবী স্তব্ধ ।
হাসিহীন তুমি গ্রন্থিত চোরাকাঁটা অথবা মৃত লাশ
আজ ঠোঁটে জমা পৃথিবীর সমস্ত মেঘ
চোখে এখন মৃত্যুর পরোয়ানা
জীবন যেন বেদনার আলপনার নীল সীমানা প্রাচীর ।
আজ আমার পৃথিবী স্তব্ধ ।
হাসিহীন তুমি গ্রন্থিত চোরাকাঁটা অথবা মৃত লাশ
আজ ঠোঁটে জমা পৃথিবীর সমস্ত মেঘ
চোখে এখন মৃত্যুর পরোয়ানা
জীবন যেন বেদনার আলপনার নীল সীমানা প্রাচীর ।
নির্বাসনে জঙ্গীবাদ -কবি ফখরুল হাসান
নির্বাসনে জঙ্গীবাদ
-কবি ফখরুল হাসান
-কবি ফখরুল হাসান
কাফনের কাপড়ে ডাকা হচ্ছে যখন অসাম্প্রদায়িকতা ...
নির্মম-বর্বর হত্যাকাণ্ডের নীলনকশার জঙ্গীবাদকে
কৌশলে পাঠালে নির্বাসনে ।
মৌলবাদীদের তৎপরতা ও সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলার জন্য। সুপরিকল্পিতভাবে প্রণয় করলে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ।
তোমার নিরন্তর প্রচেষ্টা হবে না ভূলুণ্ঠিত ।
নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎভাবনায়
পালন করলে বীরোচিত কর্তব্য ।
নিত্যসঙ্গি হয়ে আছে অসাম্প্রদায়িক মৃত্যুর দ্রুত
কিন্তু বিধাতার ইশারায় বারবার আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে ।
সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক দ্বৈতনীতির কারণে
অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবিদের কাছে তুমি হলে মীরজাফর !
প্রশ্ন তুলবো না রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর বিচক্ষণতা নিয়ে ।
কৈশোরেই রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু হিসাবে পেয়েছ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ।
কৌশল নীতির কারণে প্রজন্মের কাছে ভবিষ্যতে উদ্ভাসিত হবে স্বমহিমায় ।
উদারনৈতিকতা অসাম্প্রদায়িক সাম্য-মৈত্রীর
চিরন্তন আদর্শে উদ্ভাসিত হবে তোমার নাম ।
নির্মম-বর্বর হত্যাকাণ্ডের নীলনকশার জঙ্গীবাদকে
কৌশলে পাঠালে নির্বাসনে ।
মৌলবাদীদের তৎপরতা ও সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলার জন্য। সুপরিকল্পিতভাবে প্রণয় করলে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ।
তোমার নিরন্তর প্রচেষ্টা হবে না ভূলুণ্ঠিত ।
নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎভাবনায়
পালন করলে বীরোচিত কর্তব্য ।
নিত্যসঙ্গি হয়ে আছে অসাম্প্রদায়িক মৃত্যুর দ্রুত
কিন্তু বিধাতার ইশারায় বারবার আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে ।
সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক দ্বৈতনীতির কারণে
অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবিদের কাছে তুমি হলে মীরজাফর !
প্রশ্ন তুলবো না রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর বিচক্ষণতা নিয়ে ।
কৈশোরেই রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু হিসাবে পেয়েছ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ।
কৌশল নীতির কারণে প্রজন্মের কাছে ভবিষ্যতে উদ্ভাসিত হবে স্বমহিমায় ।
উদারনৈতিকতা অসাম্প্রদায়িক সাম্য-মৈত্রীর
চিরন্তন আদর্শে উদ্ভাসিত হবে তোমার নাম ।