বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ফখরুল হাসান এর ছোট গল্প 'নিষিদ্ধ চিহ্ন'


হোটেল রুমে মৃদু নীল আলো জ্বলছে। লাইট অফ করা আছে তবুও রুমের ভেতর তেমন অন্ধকার নেই। নীল কালারের ডিম লাইটের আলোতে চমৎকার একটা পরিবেশ তৈরি হলো। রুমের চারপাশটা ভালো করে একবার দেখে নিলো সুধীর। চার ফিট বাই ছয় ফিটের নিচু খাট। খাটের সামনে আয়না। আয়নাটায় চোখ পড়তেই মনে হচ্ছে সঠিক জায়গায় বসিয়েছে হোটেল কতৃপক্ষ । যতটুকু দেয়াল দেখা যায়। নীল রঙের কারুকাজ! আয়নার জন্য দেয়ালটা যেনো একটা ফ্ল্যাটস্ক্রিন পঁয়ষট্টি ইঞ্চি টিভি। রুমটা দেখেই বুঝা
যাচ্ছে হোটেল কতৃপক্ষ ক্রিয়েটিভ।

হোটেল রুমের বিছানায় কি এক অদ্ভুত ভঙ্গিমায় শুয়ে আছে চিত্রা । হঠাৎ চোখ থমকে গেলো, চিত্রার জলপাই রঙের ব্রা-র স্ট্র্যাপে । চিত্রার ট্যালকম পাউডারের মতো ধবধবে সাদা বুকটা দখল করে নিয়েছে আটত্রিশ সাইজের জলপাই কালারের ব্রা টা। স্পাইক করা চুল! মনে হচ্ছে বাবুই পাখির বাসার মতোই শিল্পের কারুকার্যময়। খয়েরী কালারের লিপিস্টিকে ঠোঁট দুটিতে যেন জ্বলন্তআগুন। চিত্রার কপাল জুড়ে টকটকে লালটিপ! দেখে যে কেউ ভাববে কৃষ্ণচূঁড়ার বন। যে কোন পুরুষের মাথা ঘুরে যাবে প্রথম দেখাতেই। অথচ চিত্রা এক বাচ্চার মা! তাঁর সংসার জীবন বারো বছরের, আর সেই কিনা আমাকে বলছে
'তোমার সাথে একদিন ডেট করবো।'
আমি প্রশ্ন করেছিলাম।
'প্রকাশ্য দিবালোকে?'
'না তা করবো না!'
'তো'।
'ক্লোজডোর ডেট 'তোমার রুমে বা কোন আবাসিক হোটেলে।'

একটা মেয়ে বাচ্চা আছে চিত্রার । সেটা, আইনসম্মত। কিন্তু আজকে যেটা গর্ভে ধারণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা প্রেমসম্মত, আজ পাপ পূর্ণ্যের হিসাব মেলানোর সময় নেই চিত্রার কাছে । হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকের কাছ থেকে সুখ প্রাপ্তির সময়। সেই কিশোরী বয়স থেকেই সুধীর ছিলো তাঁর স্কুল ও খেলার সাথি। যৌবনে প্রিয়তম। কলেজে এসেই। স্বপ্নের পুরুষ, সুধীরকে চিরতরে হারায় চিত্রা। সুধীরকে ভালোবেসে জীবন সঙ্গী করে না পেলেও তার চিহ্ন নিজের করে নেবে সারাজীবনের জন্য আজ । অনেকদিন ধরে অতি সূক্ষ্মভাবে প্ল্যান করেছে আজকের এই মূহুর্তের জন্য। মনে মনে ভেবে চিত্রা খিলখিল করে হাসলো।
সুধীর, খাটে বসতেই ডান হাত বাড়িয়ে গালটা একটু ছুঁয়ে দিলো চিত্রা।

'সুধীর, তোমার বউ তো ভীষণ সুইট দেখতে তাই না।'
'হ্যাঁ'।
'তোমরা খুব সুখি কাপল!'
'তো'!
'তো কিছুই না। '
কথাটি বলে একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে চিত্রা। আর ভাবে। সুমিতের সঙ্গে যদি বিয়ে না হতো। তবে সুধীর তো আমাকেই বিয়ে করতো।
সুধীর তো আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলো।

গভীর মায়া মমতায় সুধীর এর মুখখানি টেনে আনলো তার দিকে, বুকে চেপে ধরে চুমু খাচ্ছে উম্মাদ মতো।
হঠাৎ, চিত্রার এমন আচারণে সুধীরের আপাদমস্তক কেঁপে উঠলো। চিত্রা এমন করে জাপটে ধরেছে। মনে মনে আনন্দিত হলেও মৃদু আপত্তি জানিয়ে সুধীর বললো ছাড়ো ছাড়ো না প্লীজ! এমন দুর্ঘটনার জন্য সুধীর মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। কিন্তু চিত্রার তীব্র আর্তনাদ সুধীরের কানে এলো। আর অশুভ প্রেতাত্মা ভর করলো সুধীরকে...!

সুধীর, লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর থেকে টপটপ জল ঝরছিল!
রুমে নেমে এলো ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা। নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া দ্বিতীয় কোন শব্দ কানে আসছিলো না সুধীরের ।
তার কাছে মনে হলো পৃথিবীটাই জনমানবশূন্য! ক্ষুধার্ত বাঘিনী যেমন শিকার শেষে, ভক্ষণ করে ক্লান্ত হয়। তেমনি মরার মতো ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে চিত্রা।  অথচ কিছুক্ষণ আগেই এই রুমে বয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড়...

সুমিত আজকাল অবহেলা করে চিত্রাকে কিছুটা অনুমান করতে পারে চিত্রা। কিছুটা বললে ভুল হবে।
সুমিতের অবহেলায় দিনের পর দিন সয়ে যাচ্ছে চিত্রা। তাও কোন সমস্যা হতো না যদি সুমিত মেয়েমানুষ সংক্রান্ত ঘটনা না ঘটাতো। একবার নয় বহুবার বহু মেয়েদের সাথে রাত যাপন করেছে সুমিত! ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন চিত্রাকে বেশ কয়েকবার বলেছে ম্যাডাম সাহেবকে ফেরান। খোঁজ নিয়ে জেনেছে খবর মিথ্যে নয়। সরকারি পানির পাম্পের জলের মতো টাকা ইনকাম করে সুমিত। সেই টাকা সে খরচ করে মেয়েমানুষ আর বিয়ার খেয়ে। সংসারে শুধুই টাকা দিয়ে নিজের দায় শেষ করে। আজকাল নিজেই নিজেকে রক্ষিতা মনে করে চিত্রা। মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা আর মাতাল স্বামীর রাতের বিছানায় মাঝে মাঝে অসহায় হরিণী মনে হয় নিজেকে। সুমিতকে মনে হয় ক্ষ্যাপা ক্ষুধার্ত বাঘ। সুমিতের শারীরিক খিদে মিটিতেই বিছানায় যেতে হয় চিত্রার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও।
এই অস্বস্তিটুকু বাদ দিলে অবশ্যই সুখি থাকার সব উপকরণ আছে চিত্রার জন্য। সুমিতের আচারণ বাধ্য করছে চিত্রাকে সুধীরের কাছে ফিরতে। আজকাল প্রায় রাতেই সুধীরের সাথে ফোনে কথা বলে রাত পার করে চিত্রা। সুমিত যখন ঢাকার বাহিরে যায়। তখন সুধীরের প্রেম জলে ডুবে যায় চিত্রা। কোনদিন সময় দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত এক সাথে কাটায় দুইজন। যদিও সুধীর সংসারে সুখি একজন স্বামী আদর্শবান পিতা। তবুও অতিথ তাকে তাড়া করে নিয়ে যায় চিত্রার কাছে। চিত্রার চাহিদার কাছে পরাজিত হয় সুধীর।

'তোমার সুন্দরী বউ কোথায়?'
'ঘুমায়। '
'ঘুমাওনি এখনো? '
'না'
'সকালে তোমার অফিস নেই! '
'হ্যাঁ আছে!'
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, স্বপ্ন দেখলাম তোমাকে! উঠে দেখি তুমি নেই!
তোমার বউয়ের ঘুম ভাঙলে বুঝবে।  এতক্ষণ ধরে কথা বলার মজা।
'সে গভীর ঘুমে।'
'যদি ঘুম ভেঙে যায়?'
'যাবে না। '
'তুমি শিওর? '
'হ্যাঁ।
ফিগার সাইজ ঠিক রাখতে সকাল সকাল উঠে এক্সারসাইজ করতে হয়। তাই আজকের মতো বিদায় সোনা।
'ও সোনা আর কিছুক্ষণ থাকো না গো। '
'ওকে সোনা। '
তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজড আছে সোনা।
'কী সেটা?'
'আমি প্রেগন্যান্ট!'

ছোট গল্প 'মৃত বৃক্ষ' শফিক নহোর

অনেকদিন
ধরে বোয়ালমাছ খাবার বায়না ধরেছে মিনু, ও চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা । আজ চলতি মাসের একুশ তারিখ । হাতের অবস্থা বড়ই নাজুক । মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, বেতন হাতে পেলে তুমি যা-যা খেতে চাও? সব এনে দিবো ,চিন্তা করো না। ‘এখন খাবার দাও ?' আমার অফিসে যাবার সময় হলো । ভিলেন মার্কা অভদ্র একজন অফিসার আছে ,সবসময় মানুষের পিছনে একটা পিন বিধিয়ে দেবার পায়তারা চলে অবিরাম ।‘কাকে কি ভাবে পিন দিবে !'আস্তাগফিরুল্লাহ মানুষ কী তাই এত খারাপ হয় । এ অফিসে চাকরি না হলে হয়তো বুঝতাম না ।সকালে বউ রসুনের পাতা দিয়ে টমেটো ভর্তা করেছে ,আহা কি স্বাদ ।গরম ভাতের সঙ্গে হালকা একটু বলরাম কাকার হাতের তৈরিকরা ঘি, ঢেলে নিলাম ।স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে-গেল ।বউ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে বলছে,

- এই শুনছো,
-হ্যাঁ বল,
-আমাদের তো একদিনও চিড়িয়াখানা নিয়ে গেলে না । এ সময় চিড়িয়াখানা যেতে নেই । লোকমুখে শুনেছি , ছেলেমেয়ে দেখতে না-কি বানরের মত হয় । ও আল্লাহ্ তুমি এসব কি বলও ।হুম সত্যি বলছি গো বউ ।তা না হলে তোমাকে নিয়ে যাবো না কেন ? তুমি আমার একমাত্র আদরের লক্ষিসোনা বউ । আমার খাওয়া শেষ, বউয়ের শাড়ির আঁচল দিয়ে হাত মুছে খাঁটের উপর বসলাম । বউ আমার শরীর ঘেঁসে বসলো । আচ্ছা তুমি এত তাড়াতাড়ি অফিসে যাচ্ছো কেন ? তাড়াতাড়ি মানে, বেলা ন'টা বাজতে চললো । আমরা তো আর সরকারি অফিসে চাকরি করিনা । বেলা বারটার সময় গেলেও সমস্যা নেই ।" কোম্পানির চাকরি এক টাকার ভিতর থেকে ষোল টাকা বের করে । অনেক -ই আছে , রসুনের চোচা ভাজি করে খায় ।"




অফিসে শেষে বাসায় ফিরতে আমার একটু দেরি হলেই, ফোন । তুমি এখনো আসছো না কেন ?' কলিঙদের সঙ্গে আড্ডা বাদ দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলা সেই পুরাতন পথ ধরে ।অলিগলি পার হয়েই যখন বাসার খুব কাছে যাই, হাতে করে বউ,বাচ্চার জন্য কিছুই নিয়ে যেতে পারিনা । মাস শেষে সংসারের খরচ, নিজের ওষুধ ,মিনুর ওষুধ বাসা-ভাড়া ,বাজার এ সব শেষ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে  ।এখানে পানি পর্যন্ত কিনে খেতে হয় । এর নাম আজব শহর ঢাকা । আহা রে ! আগে মনে করতাম ঢাকা মানেই সুখের নগরী । এখন মনে হয়ে এ নগর থেকে দূরে সরে থাকাই ভাল । ভয়ে পরিচিত কারও কাছে বাসার ঠিকানা দেইনা । বাসায় একজনকে নিয়ে এসে কি খেতে দিবো ।এত টানাটানির ভিতর সংসার করতে হচ্ছে । এইট পাশ মানুষ এই ডিজিটাল যুগে কত টাকার বেতনে চাকরি করবে ! কত টাকা হলে যমুনা ফিউচার পার্কে সিনে কমপ্লেক্স বাংলা সিনেমা দেখতে যাওয়া হবে । বউ খুব আহ্লাদ করে একদিন বলেছিল, এই তুমি না আগে বলতে, 'ঢাকা নিয়ে গেলে আমাকে বড় পর্দায় সিনেমা দেখাবে মিথ্যাবাদী '। আমাকে তো সিনেমা দেখাতে নিলে না । সিনেমা দেখতে হয়না । আল্লাহ্ গুণা দিবে । মিনুকে জীবনে কত গুলো মিথ্যা কথা বলেছি , শুধু মাত্র অভাবে পরে, মা বলতো ,বাজান রে! কখনো মিথ্যা কথা বলিস না । মা'দুটি মিথ্যা কথা বলি বলেই সুখে সংসার করছি ।

ডাক্তার দেখানোর পর,একটা ধাক্কা খেলাম ।পুষ্টি হীনতায় ভুগছে , তার পরে মিনুর প্রস্রাবে ইনফেকশন ।পায়ে পানি লেগে গেছে ।ডাক্তার ফুল বেড রেস্ট থাকতে বলেছে । পেটের বাচ্চার উপর বিশেষ একটা প্রভাব পড়বে তা, শুনার পর মনটা খারাপ হয়ে গেল । শাক সবজি,ফলমূল তেমন খাওয়ানো হয়নি ।তার পরে যে বিষয়টা সব চেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে,' অল্প বয়সে মা হওয়াটা '।বড় আপা বলেছিল__, অল্প বয়সী মেয়েকে বিয়ে না করতে গ্রামের লোকজন বন্ধু অনেক-ই বলেছিল না করতে , কিন্তু পরিবেশটা এমন হয়েছিল সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি । মিনুরা গরীব মানুষ , অসহায় পরিবার । বাবা নেই, মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। মামার বাড়ি থেকে লেখাপড়া কোন মত বিয়ে দিতে পারলে তাঁরা একটা নিঃশ্বাস নিতে পারে ।এমন একটা পর্যায়ে চলে আসছিল তখন আমি নিজেই জানার পরেও একটা ভুল করলাম ।
দ্বিতীয় ভুল হয়েছিল, মিনুর পেটে যখন সন্তান আসে ।তখন আমি চেয়েছিলাম, ওকে দুনিয়াতে না আনতে , এ কথা মা' শুনে, আমাকে প্রচণ্ড বকাবাজি করেছে । এক পর্যায়ে আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছে ।' এমন পাপ কাজ করতে তোর লজ্জা করে না হারামজাদা'।বংশের আলো আসছে আর তুই তা নিভিয়ে দিতে চাস পাজি কোথাকার । খবরদার আমার সামনে আসবি না কিন্তু ? মায়ের কড়া শাসন । আমি লজ্জায় ঘর থেকে বের হয়ে চলে আসলাম সেদিন । কি সব গাছারা ওষুধ খেয়েছিল মিনু ।

 পরিবারের কথা শুনে পরে বুঝলাম সত্যি অল্প বয়সী মেয়েকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি ।এটা মারাক্তক ভুল অপরাধ ও বটে।ভুয়া জন্ম নিবন্ধন নিয়ে মিনুর বিয়ে হয় । মিনুর বয়স তখন ষোল বছর ।কলেজে পড়ে । এখনো কোন কোন গ্রামে ষোল বছর বয়স মানে অনেক বয়স । মেয়ে মানুষ ঘরে রাখলে খারাপ হয়ে যাবে, পরে আর বিয়ে হবে না । চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে । কত ধরণের কিচ্ছাকাহিনি শুনতে হয়েছে, মিনুর ।চোখ গড়িয়ে জল পড়তেই আমার চোখ চলে গেল মিনুর দিকে । আহারে ! বিচারি । এখন ওর মনে হচ্ছে হয়তো মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটা ওর একটা অভিশাপ ।
আমি মিনুর পাশে গিয়ে বসলাম,সুদীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে আমাকে বলছে, আমার উপর কি তুমি রাগ করে আছো । ধূর পাগলী বউয়ের উপর রাগ করতে নেই । আমি মৃদু হেঁসে ওর হাতের সঙ্গে আমার অপারগ আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলাম,পুলকিত হল ।এ সময় মেয়েরা একটু ভালবাসা চায় , সহানুভূতি পেতে ভাল লাগে ।এ সময় বাঙালি মেয়েরা সাধারণত মায়ের বাড়িতে থাকে । আমিও মনে মনে ভাবছি, ওকে কিছুদিন পর রাজবাড়ি পাঠিয়ে দিবো । আমাকে বলছে, তুমি কিন্তু আমার সঙ্গে থাকবে । আমাদের যেদিন সন্তান হবে সেদিন তুমি আমার পাশে থাকবে । আমার প্রচণ্ড ভয় করে । আমি ঠোঁটের কিনারে হালকা হাসি মেখে বললাম, আমি থাকলে তোমার ভয় করবে না । গৃহপাতালক শিশু বাচ্চার মত জবাব দিল না ।বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরতেই মনে হলো আমার অপূর্ণতা দূরে চলে গেল ।

রাতে শাশুড়ি ফোন দিয়ে বললো...
-বাবা, মিনুর, অবস্থা খুব বেশি ভালো না । তুমি  দ্রুত রওনা দাও । আমি ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এখনো ন'দিন বাকি ডাক্তার যে তারিখ দিয়েছিল..,
আমি রাতেই রওনা হলাম ।বাসা থেকে অনেক দূর চলে এসেছি , পকেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম মোবাইল ফোন ভুলে রেখে এসেছি । আবার ফিরে গেলাম । মোবাইল নিয়ে আসবার পথে অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল । হ্যাঁ বলতেই ওপাশ থেকে ভিজা কণ্ঠে কান্নার আওয়াজ মনভার হয়ে গেল। আমি বোকা মানাব পরিণত হলাম।কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না । ভোরে হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার চোখ ভিজে ঝাপসা হয়ে ওঠছে, শাশুড়ি আমাকে ভিতরে আসতে বললো । অপারেশন থিয়েটার থেকে মিনুকে বের করে নিয়ে আসছে ।সাদা ফ্যাঁকাসে দেখাচ্ছে ।এত মায়া হচ্ছিল ।মনে হচ্ছে মিনুকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখি । ডাক্তার জানিয়ে দিল ।
-বাচ্চা ও মাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি । আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম ।ভিতর থেকে পোড়া বারুদের গন্ধ বের হতে লাগলো নিজেকে পোড়া ধূপ শিখার মত মনে হতে লাগলো...!
ঘরে এলইডি বাল্ব লাগানো তবুও অন্ধকার লাগছে আমার কাছে , ছোট একটা রুম দুটি বাতি জ্বলছে তবুও কত অন্ধকার ।এ ঘরে বাতি না জ্বালালেও আলোকময় হয়ে থাকতো সব সময় ।মিনু ছিল আমার জীবনে একটি আলোকিত বাতির মত । আজ সংসারে অভাব নেই । মানিব্যাগের কোনায় টাকা ভর্তি বোয়ালমাছ কিনতে চাইলেই পারি!
‘আমাকে কতদিন ধরে বলেছিল বোয়ালমাছ খাবে ।মাটির নিচে রান্নাকরা বোয়াল মাছের তরকারির ঘ্রাণ কি আজ  মিনু পাবে !’
ছয়-নয় ভাবতেই, পিছন থেকে আমার শাশুড়ি আমাকে ডাকছে,অশ্রু ভেজা চোখে আনান্দের ঢেউ এসে পড়লো...
-মিনু মরেনি !
আমি বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম , বুঝে ওঠতে পারছি না কি বলবো । চারিদিকে মৃদু বাতাস , পরিবেশ কেমন শান্ত হয়ে গেল । তারকারাজি আকাশ থেকে নৃত্যময় অবস্থায় নেমে আসছে, আমাকে প্রেমময় চাঁদ আলিঙ্গন করছে । আমি তার বুকে নতজানু হয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলাম ! ।‘আত্মা বেঁচে থাকে মানুষের মত একটি রূপ নিয়ে অনন্তকাল ।'

মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

লেখক হিসেবে সাইমের প্রথম আত্মপ্রকাশ

সাহিত্য প্রতিবেদক:
 নতুন লেখকদের কবিতা সংকলন, হিমু পরিবারের প্রযত্মে তারুণ্যের মিছিল। কবিতা সংকলনে প্রথমবারের মত খায়রুল ইসলাম সাইমের পৃন্টেড হরফে নতুন দুটি কবিতা বের হয়। চরিত্রহীন এবং লাশের জবানবন্দি। আধুনিক সমাজের রূপরেখার পটভূমি রোমান্টিসিজম এর মিলন থাকায় কবিতা দুটো তরুণ সমাজে ব্যাপক সমাদৃত হয়। খায়রুল ইসলাম সাইমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, " আমি এখনো ভালো লেখক হয়ে উঠিনি। তবে চেষ্টা করছি আরো পড়ার, আরো জানার, আরো ভালো লেখার। সকলের ভালোবাসা আর দোয়া থাকলে, ইনশাল্লাহ আমি লিখে যাব।  গল্প, কবিতাই হচ্ছে সমাজের প্রতিচ্ছবি, হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।"
কবি খায়রুল ইসলাম সাইম এর
 লেখা  একটি কবিতা তুলে ধরা হলো

 "চরিত্রহীন"

এ শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে,
যখন নেড়ে কুকুর জুটিকে অসভ্য ভংগিতে প্রণয় করতে দেখি,
অজান্তেই ভাবি, তুমি আর আমি, লোক চোখে  এমনটাই ছিলাম বুঝি!!
তোমার হৃদয়ে নাকি আজ নবপ্রেমের ঘনঘটা,
চলছে নাকি ভালোবাসাবাসি..!!
তোমার নব্যজুটি, আমি কিন্তু ঠিক তেমনটাই দেখি।।

এটাকে কি জেলাসি বলবে..!!
নাকি আমার ভালোবাসাটাই শুদ্ধ ও খাঁটি..!!
কি জানি..!! বানিয়ে বললাম হয়ত,
বলবে, নির্ঘাত স্বার্থপর আমি।

মধ্যবিত্ত ঘরে জন্মানোই যেখানে আজন্মের পাপ,
সেখানে ধরে রাখা কি আমার কর্ম..!!
ওরে বাপরে বাপ..!!
অভাব-মৃত্যু-জড়া, ভাবাই যায়না এসব ছাড়া।
তার উপর তোমায় ভালোবাসা!!
সেকি কম সাহসীকতা!!
ধরে রাখতে পারিনি, মানছি সে ব্যর্থতা।
প্রেম কি একার ছিল!! ভাগ তো পাবেই কিছুটা।
আমি মস্তিষ্কহীন, বিবেকহীন,
মানবতা বর্জিত মানুষ।
তুমি বলেছিলে অধিকারহীন।
সহ্য হয়না তোমার অপরাধ।
কি করব আমি..?? আমি স্কন্ধহীন।

তবুও আমায় নিয়ে একটা উপন্যাস লিখো বন্ধু।
যার আংগুলের ভাজ ছেড়ে, নব হাতের স্পর্শে শোভিত হয়েছো,
তাকে নিয়েই নাহয় উপন্যাস লিখলে একদিন।
তোমার ভাষায় তার নাম দিয়ো,
              "চরিত্রহীন"।


নবীনগরে ৩০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গ্রেপ্তার-১

মোঃআক্তারুজ্জামান,নবীনগর:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আব্দুল রহিমের নেতৃত্বে এএসআই ইউসুফ সহ সংগীয়ফোর্সের সহায়তায় উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের কুলাসিন গ্রামে রবিবার (২৪/০২)দিবাগত রাতে মাদকের বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৩০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ মাদক ব্যবসায়ী দিলীপ দও কে গ্রেপ্তার করেছে সলিমগঞ্জ ক্যাম্পের পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত আসামী উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নে
কুলাসিন গ্রামের মৃত সুধন দত্তের ছেলে দিলীপ দত্ত(৫০) সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মো.আব্দুর রহিম জানান,দিলীপ দত্ত কে কুলাসিন গ্রামের মিন্টু মিয়ার দোকানের সামনে থেকে ৩০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গ্রেফতার করেন।

নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)রনোজিত রায়,সাংবাদিকদের বলেন,উপরোক্ত আসামী কে মাদকের নিয়মিত মামলা রুজু করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।



সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

হিমু কে উৎসর্গ করে কবি সাইম এর নতুন কবিতা "অনেক বছর পর"


সাহিত্য প্রতিবেদক:

কিরে কেমন আছিস?
ভালো আছিস? না মরে গেছিস?
সেই যে কবে দেখা হলো !!
দপ্তরি শেষ ঘন্টা দিল।
চিনেছিস আমাকে?
আমি মৃন্ময়, ছিলাম ক্লাশের ফার্স্ট বয়।
এক বেঞ্চিতে বসতাম, গণিতে ভয় পেতাম।

 আছিস কেমন? চল চায়ের দোকানটায় বসি।
আমি আজকাল এ এলাকায় খুব আসি।
মনে আছে? কৈশরে লিমার পেছন ঘুরতাম।
ওর বাবা দেখলে কি দৌড়টাই না দিতাম।
সব কুকর্মের সাক্ষী ছিলি তুই।
এই তো সেদিনকার কথা, হাত বাড়ালেই যেন ছুই।

স্কুলের পেছন সিগারেট খাওয়ার কথা মনে আছে?
সেবার মনা স্যারের কাছে ধরা খেলে,
প্রাণের মায়ায় দৌড় দিলে।
দিলাম ছুট নদীর দিকে।
ঝাপ দিলেম অথৈ জলে।
তুই আর আমি,
সেই শৈশবের সাথী।
কিরে? চুপ কেন? আছিস কেমন?
কাজের চাপে চুপসে গেছিস,
তাই কি তোকে লাগছে এমন?



তুই ত গেছিস শহর ছেড়ে,
আমার কথা খেয়াল আছে!!
গেল বর্ষায় দাদা গেল, পরের বার বাবা।
মাকে নিয়েই চলছে জীবন, সময় ধরা বাধা।

ইরিনের কথা মনে আছে?
রোজ বেলা সম্বন্ধ আসে।
আমায় বলে নিয়ে যাও।
যা খাও, তাই খাওয়াও।
আমার কি আর সাধ্য!!
মায়ার বাধায় বাধ্য।
আছি বেশ জঞ্জালে।
চলছে জীবন সেই তালে।
অহিনকুল বেড়াজালে।
বাবার অভাব দুকূলে।

আছিস তো তুই ভালো?
আমায় নিয়ে ভাবিস না,
দেখিস ঠিকই সামলে নেবো।
বেশ করেছিস ফিরে এসে।
যাবি নাকি সেই মাঠে?
নাহয় চল নদীর ধারে।
জানিস? নদীর জল  শুকিয়ে গেছে।
 যেখানে শৈশবটা অস্ত গেছে।

---- খায়রুল ইসলাম সাইম---
উৎসর্গ: মাজহারুল ইসলাম হিমু

সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

বইমেলায় এসেছে নুসরাত সুলতানার "ছায়া সহিস"

বুক রিভিউ- "ছায়া সহিস" নিয়ে আজিজ ইসলাম

নুসরাত সুলতানা বর্তমান সময়ের আধুনিক বাংলা সাহিত্যের  এক আলোচিত নাম। ফেসবুক কেন্দ্রিক বিভিন্ন সাহিত্যিক গ্রুপগুলোতে নিয়মিত তার পদচারণা।

 সহজ সাবলীল শব্দে গভীর বিষয়কে উপস্থাপন করে যে পাঠক মনে দাগ কাটা যায় তা নুসরাত সুলতানার কবিতা পড়ে অতি সহজে অনুধাবন করা যায়। তার কবিতায় মূলত গ্রামবাংলার মুগ্ধ প্রকৃতি, সংগ্রামী জীবনধারা, প্রেম, অভিমান, নারীত্ব, দেশ প্রেম, শিশু অধিকার আর এক বিদ্রোহী সত্ত্বাকে খুঁজে পাই। প্রচলিত বিধি বিধানের অসঙ্গতিকে তার কবিতায় আমাদেরকে চোখে  আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে বারবার ভেঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন রুপে তার কবিতায় হাজির হয়েছেন। তার কবিতায় জীবনের সকাল শাখায় বিচরণ পরিলক্ষিত হয়।

বিভিন্ন সাহিত্যিক গ্রুপে পাঠক সমাদৃত নির্বাচিত এক গুচ্ছ কবিতা নিয়ে এবারের একুশের বইমেলায় এসেছে তার প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ "ছায়া সহিস" "রচয়িতা "প্রকাশনা থেকে। এর আগে বিভিন্ন সংকলনে তার লেখা প্রকাশিত হয়ে বহুবার পাঠক সমাজে প্রশংসিত হয়েছেন।
আপনাদের শুভকামনা, অনুপ্রেরণা,উৎসাহই কবির আগামীর পথ চলার অনুপ্রেরণা। কবিতা পড়ুন "ছায়া সহিস" এর, আশা করি আশাহত হবেনা !

বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী  উদ্যানে (গেট দিয়ে ঢুকেই হাতের বামে) "পাঠক সমাবেশ প্যাভেলিয়ন ২" এ কাব্যগ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে। যারা সংগ্রহ করতে চান।

বইয়ের নাম ~ ছায়া সহিস
ধরন ~ কাব্যগ্রন্থ
কবি ~ নুসরাত সুলতানা
প্রকাশক ~ রচয়িতা
মূল্য ~ ১৭০.০০ টাকা (২৫% কমিশন)

সাফল্য কামনা করছি কবি নুসরাত সুলতানার "ছায়া সহিস" কাব্যগ্রন্থের।

বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে আফরোজা ইয়াসমিন মুক্তার কাব্যগ্রন্থ "মেঘবাড়িতে রোদ"।

অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে ঢাকায় এবার হাওলাদার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আফরোজা ইয়াসমিন মুক্তা এর  একক কাব্যগ্রন্থ  "মেঘ বাড়ি‌তে রোদ"বই‌টি পাওয়া যা‌বে হাওলাদার প্রকাশনীর ১১৭ ও১১৮ নং স্ট‌লে। এছাড়া স্টে‌ডিয়া‌মে অনু‌ষ্ঠিত চট্টগ্রাম বই‌মেলা‌তেও হাওলাদার প্রকাশনী‌তে পাওয়া যা‌বে বই‌টি।
কবি অাফ‌রোজা ইয়াসমীন মুক্তা ৪ সে‌প্টেম্বর চট্টগ্রা‌মে জন্মগ্রহণ ক‌রেন। বাবা মরহুম মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী জাতীয় গো‌য়েন্দা বিভা‌গের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছি‌লেন। মা ফ‌রিদা বেগম একজন গৃ‌হিনী। অাফ‌রোজা ইয়াসমীন মুক্তা লেখাপড়া ক‌রে‌ছেন রসায়ন  শ্রা‌স্ত্রে। বর্তমা‌নে অাবৃ‌ত্তি‌শিল্পী হি‌সে‌বে তারু‌ণ্যের উচ্ছ্বা‌সের সা‌থে যুক্ত অা‌ছেন।

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

"মৌনতায় ধ্বংস " শেখ ফরহাদ রহমান

ছলছল আঁখীমেলে, একবুক নীলকষ্টের আহাকার নিয়ে তাকিয়ে ঐ সর্বহারা স্বকরূন সুরে করে যায় আর্তনাত মানবতার তরে।
টলেনা মমতায় মন, আত্মা, বিবেক পাথর মূর্তি তোমরা আমরা সবে নয়তো বিচলিত মৃত্যুর মহামিছিলে।
মৌনতায় মহাবিপদ আপাদ মস্তক  পৃথিবীময়
হিংস্র হায়েনা আসতে পারে তোমার আমার জনপদে,
প্রতিবাদে প্রতিহত যদি না করা যায় কাঁদবে ওদের মত সহসায়।
ধর্ম, বর্ণে গোত্রে কিবা আসে যায় মনুষত্য সেতো এক ধারায় প্রবাহিত, ছুঁড়ে ফেলো প্রতিহিংসা জরা;
আর বলি হে হিন্দু, মুসলিম,খৃষ্টান  আছে যতো ধর্মপ্রাণ প্রবাহিত রক্ত ধমনীতে তোমার আমার সেতো চীরকালই লাল।
আগমন, বিচরনে প্রকৃয়াই নাইতো ব্যাবধান তবে কেন রচ বিজ ব্যাবধান,
ক্ষণীকের পৃথিবীতে কিসের এত দম্ভ, পরিশেষে মৃত্যুই যদি হয় শেষ ঠিকানা;
ঠাকুর, পুরহিত, পোপ, ইমাম কোথায় তোমাদের অবস্থান কোন সে হিমাতলে?
খুলে ফেলো ঐ লেবাসি মিথ্যা অহংকার যদি নাপারো বাঁচাতে মানবতারে।
মসনদ ছেড়েছো মৃত্যুর ভয়ে, গোপনে করেছো আতাত নিশ্চয় !
জেনেরাখো পৃথিবীবাসী তোমার, আমার মৌনতায়
ধ্বংস হবে আবাসন।

শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

১৫ ফেব্রুয়ারী নরসিংদী মাতাতে আসছে সেরা ব্যান্ড দল

জহিরুল ইসলাম:
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারী নরসিংদী নতুন শিল্পকলা একাডেমীতে নরসিংদী জেলা মাতাতে  আসছে বাংলাদেশের সেরা ব্যান্ড দল।
এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শামীম নেওয়াজ।  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল।ব্যান্ড এডভার্ব এর গিটারীস্ট লিংকন জানায় নরসিংদীতে এই প্রথম আমাদের ব্যাতিক্রম এই আয়োজন। মানুষ ব্যান্ড দল কে অনেক ভালোবাসে। মুক্ত মঞ্চে ব্যান্ড দলের গানের মজা বেশি পায় না। এই কারনে আমাদের নতুন উদ্যোগ। আশা করি যারা আসবে তারা অনেক আনন্দ পাবে। আমরা আমাদের সেরা গান গুলা উপহার দিবো দর্শকদের।
এই  অনুষ্ঠান টি যারা মাতাবে তারা হলেন বাংলাদেশের সেরা ব্যান্ড দল সুতরাং,মাহটিম সাকিব,ব্যান্ড চাতক,ব্যান্ড ওয়ার,ব্যান্ড এডভার্ব,ব্যান্ড শহরবন্দী।
অনুষ্ঠানের টিকেট এর মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে  পাঁচ শত টাকা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য দুই শত পঞ্চাশ টাকা। যোগাযোগের জন্য:01681881292
টিকেট প্রাপ্তির স্থান :
cuitar shop,facefood,KAC,IASJ spicy chicken,Stylus Restaurant,Fries park,Swiss Dessert&pastry Shop,Ekushe Club,আসন সংখ্যা সীমিত,আপনারা সবাই  টিকেট সংগ্রহ করে আসন নিশ্চিত করুন। 

মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কবিতা আমার কাছে যতোটা শিল্প তার চেয়ে বেশি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। কবি হানিফ মোহাম্মদ

হানিফ মোহাম্মদ। অন্তর্মুখী একজন মানুষ। সূর্যের মতো নিজেকে পুড়িয়ে জীবন জাগাতে ভালবাসেন।
.
ঢাকা জেলার ডেমরা শিল্পাঞ্চলে জন্ম ২৫ নভেম্বর একটি বাম প্রগতিশীল শ্রমিক পরিবারে। পিতা মরহুম ইদ্রিশ আলী ছিলেন লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের প্রকৌশল বিভাগের শ্রমিক, মাতা হনুফা বেগম সাদামাটা গৃহকর্ত্রী।
.
বাওয়ানী আদর্শ বিদ্যালয়, ডেমরা থেকে এস,এস,সি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করে ভর্তি হোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বি,এসসি'তে। প্রথম বর্ষ সমাপ্ত করেই ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবনযুদ্ধে। সেই থেকে অবিরাম চলছে যুদ্ধ।
.
১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং যোগ দেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)এ।
.
কর্মক্ষেত্রে স্কাইল্যান্ড এন্ড ফ্যাম লিঃ সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।বর্তমানে বেসরকারি সাহায্যসংস্থা সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
.
কবিতা, নাটক আর রাজনীতি নিয়েই তার কর্মমুখর জীবন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই লেখলেখির শুরু। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে যাচ্ছেন বিভিন্ন পত্রিকায় এবং লিটলম্যাগে। ১৯৮৮ সালে তার যৌথ কাব্যগ্রন্থ 'অনীক' প্রকাশিত হয়।
.
ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জের তালেপুর গ্রামে পূর্বপুরুষের ভিটায় তার বর্তমান আবাস।
.
কবি হানিফ মোহাম্মদ মুখোমুখি হয়েছেন আমাদের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক, কবি ও সাংবাদিক ফখরুল হাসানের।
.
ফখরুল হাসান :-- পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য কাব্যগ্রন্থটির নাম রাখার বিশেষ কি কোন কারণ আছে? বাজারে প্রচলিত আছে কবিতার পাঠক কম। কারণ কবিতা অনেকেই বোঝেনা। তার উপরে আপনার কবিতার বইটির নাম বেশ কঠিন। তার পেছনে কি কোন রহস্য লুকিয়ে আছে?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- পাঞ্চজন্য হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ শাঁখ বা শঙ্খ যা অসুরের হাড় থেকে তৈরি। আমার মনে হয় সমাজ থেকে অসুরনিধনের লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই পাঞ্চজন্য-ধ্বনি এখনো খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। আমার এই পাঞ্চজন্য বেজে উঠবে পদ(কবিতা)কে আশ্রয় করে। সার্বিক অসুর নিধনের এই লড়াইয়ে পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য সামান্যতম ভূমিকা রাখতে পারলেও আমার এই প্রয়াস সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।
.
ফখরুল হাসান :-- আমি যতটা জানি কবি হানিফ মোহাম্মদ অন্তর্মুখী একজন মানুষ। বাম ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই দল বা ক্ষমতার কাছে পরাজিত নয় অন্য কবিদের ন্যায়। সেক্ষেত্রে কতটা চাপা ক্ষোভ, পাঠক আপনার কবিতায় পাবে?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- ক্ষোভ নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কবিতা লিখি। কবিতা আমার কাছে যতোটা শিল্প তারচে বেশি হাতিয়ার। এর মানে এই নয় যে শিল্পের সাথে আপোষ করেছি, বরং শিল্পের প্রতি যথার্থ সম্মান রেখেই কবিতাকে আমি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সামাজিক বঞ্চনা আর সমাজের নানাবিধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে শঙ্খধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে পারে এই গ্রন্থে। বাকিটা পাঠক মূল্যায়ন করবে।
.
ফখরুল হাসান :-- বাজারে তো আরো হাজার হাজার কবিতার বই আছে। বিখ্যাত কবিদের কবিতার বই রেখে আপনার পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য কেন কিনবে পাঠক?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- কঠিন প্রশ্ন। আসলে সব কবিতাই লেখা হয়ে গেছে। কবিতার জন্য নতুন কোনো বিষয় নেই। একই বিষয় নিয়ে রবীন্দ্রনাথ তার মতো করে লিখেছেন, জীবনানন্দ লিখেছেন তার মতো করে। হানিফ মোহাম্মদও লিখছেন তার মতো করেই। এইযে নিজস্ব প্যাটার্ন, ভঙ্গি বা ধরণ এটাই পাঠককে কবিতা পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমি মনে করি, আমি যে নিজস্ব স্বর তৈরি করার চেষ্টা করেছি তা প্রজন্মের পাঠকের ভাল লাগবে। আর এই ভিন্নস্বর বা ভঙ্গির কারণেই পাঠক পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য পড়ে আনন্দ পাবেন বলে আমি মনে করি।
.
ফখরুল হাসান :-- আপনার প্রায় কবিতায় রেনু নামে একটি নারী চরিত্র আছে। আপনার পাঠক কে কি সেই নারী সম্পর্কে কিছু বলবেন?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- পদাশ্রিত পাঞ্চজন্যে রেনু সিরিজের কোনো কবিতা নেই। তবু প্রশ্ন যেহেতু এসেছে তো বলি, আমি সাধারণত রোমান্টিক কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। একটা বিশেষ প্রেক্ষাপটে আমার মনে হলো বয়স্ক নর-নারীর যে মনস্তত্ত্ব বা তাদের সম্পর্কের যে রসায়ন তা নিয়ে বাংলাসাহিত্যে সেভাবে কোনো কাজ হয়নি। সেই চিন্তা থেকেই 'প্রিয় রেনু' সিরিজের উদ্ভব। যেখানে রেনু একজন মধ্যবয়সী নারী কিন্তু মনের দিক থেকে যে এখনো খুবই চঞ্চলা অথচ সামাজিক দায়ও সে এড়াতে পারে না। মোটামুটি এই হচ্ছে রেনুর ইতিবৃত্ত।
.
ফখরুল হাসান :-- আপনার বই প্রকাশ করতে প্রকাশক আপনাকে কতটা সহযোগিতা করেছে যখন এক শ্রেণীর প্রতারক প্রকাশকদের প্রচারে নতুনরা না বুঝে প্রতারিত হচ্ছে।
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- প্রথমত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'অনুপ্রাণন প্রকাশন' থেকে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সম্পূর্ণ প্রকাশকের ইচ্ছায় এবং তাদেরই বিনিয়োগে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রতারণা বা অন্যকোনো অনিয়মের কোনো অবকাশই ছিলো না।
.
ফখরুল হাসান :-- তার মানে, শত বা হাজার বইয়ের ভিড়েও পাঠক একটি ভালো পাঠ উপযোগী বই পাচ্ছে? এটাই বলছেন?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- আমি আমার সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং পাঠকের ভাল লাগবে এটাই আমার বিশ্বাস। বাকিটা কেবল সময়ের হাতেই ছেড়ে দেয়া যায়।
.
ফখরুল হাসান :-- আমি যতটুকু জানি, কবি হানিফ মোহাম্মদ এর নিজস্ব একটা পাঠক মহল আছে। আমার মাধ্যমে তাদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ বা বার্তা আছে কি?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- কবিতার এখন ঘোর ক্রান্তিকাল। চারদিকে বিনোদনের এতোবেশি চমকপ্রদ আয়োজন যে কবিতার দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসুত কমই বলা চলে। এর মাঝেও যারা কবিতা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, ভাবেন বা চর্চা করেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। যারা আমার কবিতা ভালবাসেন যারা আমার কবিতা পড়েন, একজন নগণ্য কবিতা-শ্রমিক হিসেবে আমি তাদের কাছে ঋণী, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
.
ফখরুল হাসান :-- শ্রদ্ধেয় কবি, শত ব্যস্ততার মাঝে আমাকে সময় দেয়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
.
হানিফ মোহাম্মদ :--আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ

ছোট গল্প "জীবন" আব্দুল্লাহ আল ওয়াসিব


জীবনে যত বার এগিয়েছি ঠিক তত বারেই পিছন ফিরে তাঁকিয়েছি। জীবনের সিন্ধান্ত গুলো কোথাও না কোথাও গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে। জীবনের এক সময় সেই ধাক্কা গুলো প্রকট রুপ ধারণ করেছে। ধাক্কা গুলো খাওয়ার পরে জীবন হয়তো থমকে গেছে, জীবনের স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে।  নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফিরি ভূল গুলোর মাঝে।  মাঝে মাঝে মনে হয় যদি জীবনে পিছন ফিরে তাঁকাতে না হতো তাহলে আজ হয়তো বহুদুর এগিয়ে যেতাম। জীবন যখন থম যায় তখন নিজেকে পরাজিতদের কাঁতারে বসাতে হয়। তবে যদি ধাক্কা গুলো স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে, জীবনকে এগিয়ে নিতে পারি তাহলে ভূল হওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে। আবার সেই ভুল গুলোকে মূল চালিকা শক্তি হিসাবে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারি। তাহলে হয়তো জীবনে বাকি পদক্ষেপ গুলো গুলো সঠিক ভাবে নিতে পারবো। যদি ভূল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি তবেই সম্ভব।  আর এই জীবন নামক যুদ্ধে সবাই জয়ী হতে চায়। হয়তো কেউ পায় আবার কেউ পায় না। কিন্তু তাদের জীবন থেমে থাকে না। জীবন যুদ্ধ সবাই টিকে থাকে কেউ জয়ী কেউবা পরাজয়ী হয়ে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বেঁচে থাকার নামই "জীবন"।