হোটেল রুমে মৃদু নীল আলো জ্বলছে। লাইট অফ করা আছে তবুও রুমের ভেতর তেমন অন্ধকার নেই। নীল কালারের ডিম লাইটের আলোতে চমৎকার একটা পরিবেশ তৈরি হলো। রুমের চারপাশটা ভালো করে একবার দেখে নিলো সুধীর। চার ফিট বাই ছয় ফিটের নিচু খাট। খাটের সামনে আয়না। আয়নাটায় চোখ পড়তেই মনে হচ্ছে সঠিক জায়গায় বসিয়েছে হোটেল কতৃপক্ষ । যতটুকু দেয়াল দেখা যায়। নীল রঙের কারুকাজ! আয়নার জন্য দেয়ালটা যেনো একটা ফ্ল্যাটস্ক্রিন পঁয়ষট্টি ইঞ্চি টিভি। রুমটা দেখেই বুঝা
যাচ্ছে হোটেল কতৃপক্ষ ক্রিয়েটিভ।
হোটেল রুমের বিছানায় কি এক অদ্ভুত ভঙ্গিমায় শুয়ে আছে চিত্রা । হঠাৎ চোখ থমকে গেলো, চিত্রার জলপাই রঙের ব্রা-র স্ট্র্যাপে । চিত্রার ট্যালকম পাউডারের মতো ধবধবে সাদা বুকটা দখল করে নিয়েছে আটত্রিশ সাইজের জলপাই কালারের ব্রা টা। স্পাইক করা চুল! মনে হচ্ছে বাবুই পাখির বাসার মতোই শিল্পের কারুকার্যময়। খয়েরী কালারের লিপিস্টিকে ঠোঁট দুটিতে যেন জ্বলন্তআগুন। চিত্রার কপাল জুড়ে টকটকে লালটিপ! দেখে যে কেউ ভাববে কৃষ্ণচূঁড়ার বন। যে কোন পুরুষের মাথা ঘুরে যাবে প্রথম দেখাতেই। অথচ চিত্রা এক বাচ্চার মা! তাঁর সংসার জীবন বারো বছরের, আর সেই কিনা আমাকে বলছে
'তোমার সাথে একদিন ডেট করবো।'
আমি প্রশ্ন করেছিলাম।
'প্রকাশ্য দিবালোকে?'
'না তা করবো না!'
'তো'।
'ক্লোজডোর ডেট 'তোমার রুমে বা কোন আবাসিক হোটেলে।'
একটা মেয়ে বাচ্চা আছে চিত্রার । সেটা, আইনসম্মত। কিন্তু আজকে যেটা গর্ভে ধারণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা প্রেমসম্মত, আজ পাপ পূর্ণ্যের হিসাব মেলানোর সময় নেই চিত্রার কাছে । হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকের কাছ থেকে সুখ প্রাপ্তির সময়। সেই কিশোরী বয়স থেকেই সুধীর ছিলো তাঁর স্কুল ও খেলার সাথি। যৌবনে প্রিয়তম। কলেজে এসেই। স্বপ্নের পুরুষ, সুধীরকে চিরতরে হারায় চিত্রা। সুধীরকে ভালোবেসে জীবন সঙ্গী করে না পেলেও তার চিহ্ন নিজের করে নেবে সারাজীবনের জন্য আজ । অনেকদিন ধরে অতি সূক্ষ্মভাবে প্ল্যান করেছে আজকের এই মূহুর্তের জন্য। মনে মনে ভেবে চিত্রা খিলখিল করে হাসলো।
সুধীর, খাটে বসতেই ডান হাত বাড়িয়ে গালটা একটু ছুঁয়ে দিলো চিত্রা।
'সুধীর, তোমার বউ তো ভীষণ সুইট দেখতে তাই না।'
'হ্যাঁ'।
'তোমরা খুব সুখি কাপল!'
'তো'!
'তো কিছুই না। '
কথাটি বলে একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে চিত্রা। আর ভাবে। সুমিতের সঙ্গে যদি বিয়ে না হতো। তবে সুধীর তো আমাকেই বিয়ে করতো।
সুধীর তো আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলো।
গভীর মায়া মমতায় সুধীর এর মুখখানি টেনে আনলো তার দিকে, বুকে চেপে ধরে চুমু খাচ্ছে উম্মাদ মতো।
হঠাৎ, চিত্রার এমন আচারণে সুধীরের আপাদমস্তক কেঁপে উঠলো। চিত্রা এমন করে জাপটে ধরেছে। মনে মনে আনন্দিত হলেও মৃদু আপত্তি জানিয়ে সুধীর বললো ছাড়ো ছাড়ো না প্লীজ! এমন দুর্ঘটনার জন্য সুধীর মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। কিন্তু চিত্রার তীব্র আর্তনাদ সুধীরের কানে এলো। আর অশুভ প্রেতাত্মা ভর করলো সুধীরকে...!
সুধীর, লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর থেকে টপটপ জল ঝরছিল!
রুমে নেমে এলো ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা। নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া দ্বিতীয় কোন শব্দ কানে আসছিলো না সুধীরের ।
তার কাছে মনে হলো পৃথিবীটাই জনমানবশূন্য! ক্ষুধার্ত বাঘিনী যেমন শিকার শেষে, ভক্ষণ করে ক্লান্ত হয়। তেমনি মরার মতো ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে চিত্রা। অথচ কিছুক্ষণ আগেই এই রুমে বয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড়...
সুমিত আজকাল অবহেলা করে চিত্রাকে কিছুটা অনুমান করতে পারে চিত্রা। কিছুটা বললে ভুল হবে।
সুমিতের অবহেলায় দিনের পর দিন সয়ে যাচ্ছে চিত্রা। তাও কোন সমস্যা হতো না যদি সুমিত মেয়েমানুষ সংক্রান্ত ঘটনা না ঘটাতো। একবার নয় বহুবার বহু মেয়েদের সাথে রাত যাপন করেছে সুমিত! ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন চিত্রাকে বেশ কয়েকবার বলেছে ম্যাডাম সাহেবকে ফেরান। খোঁজ নিয়ে জেনেছে খবর মিথ্যে নয়। সরকারি পানির পাম্পের জলের মতো টাকা ইনকাম করে সুমিত। সেই টাকা সে খরচ করে মেয়েমানুষ আর বিয়ার খেয়ে। সংসারে শুধুই টাকা দিয়ে নিজের দায় শেষ করে। আজকাল নিজেই নিজেকে রক্ষিতা মনে করে চিত্রা। মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা আর মাতাল স্বামীর রাতের বিছানায় মাঝে মাঝে অসহায় হরিণী মনে হয় নিজেকে। সুমিতকে মনে হয় ক্ষ্যাপা ক্ষুধার্ত বাঘ। সুমিতের শারীরিক খিদে মিটিতেই বিছানায় যেতে হয় চিত্রার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও।
এই অস্বস্তিটুকু বাদ দিলে অবশ্যই সুখি থাকার সব উপকরণ আছে চিত্রার জন্য। সুমিতের আচারণ বাধ্য করছে চিত্রাকে সুধীরের কাছে ফিরতে। আজকাল প্রায় রাতেই সুধীরের সাথে ফোনে কথা বলে রাত পার করে চিত্রা। সুমিত যখন ঢাকার বাহিরে যায়। তখন সুধীরের প্রেম জলে ডুবে যায় চিত্রা। কোনদিন সময় দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত এক সাথে কাটায় দুইজন। যদিও সুধীর সংসারে সুখি একজন স্বামী আদর্শবান পিতা। তবুও অতিথ তাকে তাড়া করে নিয়ে যায় চিত্রার কাছে। চিত্রার চাহিদার কাছে পরাজিত হয় সুধীর।
'তোমার সুন্দরী বউ কোথায়?'
'ঘুমায়। '
'ঘুমাওনি এখনো? '
'না'
'সকালে তোমার অফিস নেই! '
'হ্যাঁ আছে!'
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, স্বপ্ন দেখলাম তোমাকে! উঠে দেখি তুমি নেই!
তোমার বউয়ের ঘুম ভাঙলে বুঝবে। এতক্ষণ ধরে কথা বলার মজা।
'সে গভীর ঘুমে।'
'যদি ঘুম ভেঙে যায়?'
'যাবে না। '
'তুমি শিওর? '
'হ্যাঁ।
ফিগার সাইজ ঠিক রাখতে সকাল সকাল উঠে এক্সারসাইজ করতে হয়। তাই আজকের মতো বিদায় সোনা।
'ও সোনা আর কিছুক্ষণ থাকো না গো। '
'ওকে সোনা। '
তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজড আছে সোনা।
'কী সেটা?'
'আমি প্রেগন্যান্ট!'