হানিফ মোহাম্মদ। অন্তর্মুখী একজন মানুষ। সূর্যের মতো নিজেকে পুড়িয়ে জীবন জাগাতে ভালবাসেন।
.
ঢাকা জেলার ডেমরা শিল্পাঞ্চলে জন্ম ২৫ নভেম্বর একটি বাম প্রগতিশীল শ্রমিক পরিবারে। পিতা মরহুম ইদ্রিশ আলী ছিলেন লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের প্রকৌশল বিভাগের শ্রমিক, মাতা হনুফা বেগম সাদামাটা গৃহকর্ত্রী।
.
বাওয়ানী আদর্শ বিদ্যালয়, ডেমরা থেকে এস,এস,সি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করে ভর্তি হোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বি,এসসি'তে। প্রথম বর্ষ সমাপ্ত করেই ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবনযুদ্ধে। সেই থেকে অবিরাম চলছে যুদ্ধ।
.
১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং যোগ দেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)এ।
.
কর্মক্ষেত্রে স্কাইল্যান্ড এন্ড ফ্যাম লিঃ সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।বর্তমানে বেসরকারি সাহায্যসংস্থা সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
.
কবিতা, নাটক আর রাজনীতি নিয়েই তার কর্মমুখর জীবন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই লেখলেখির শুরু। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে যাচ্ছেন বিভিন্ন পত্রিকায় এবং লিটলম্যাগে। ১৯৮৮ সালে তার যৌথ কাব্যগ্রন্থ 'অনীক' প্রকাশিত হয়।
.
ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জের তালেপুর গ্রামে পূর্বপুরুষের ভিটায় তার বর্তমান আবাস।
.
কবি হানিফ মোহাম্মদ মুখোমুখি হয়েছেন আমাদের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক, কবি ও সাংবাদিক ফখরুল হাসানের।
.
ফখরুল হাসান :-- পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য কাব্যগ্রন্থটির নাম রাখার বিশেষ কি কোন কারণ আছে? বাজারে প্রচলিত আছে কবিতার পাঠক কম। কারণ কবিতা অনেকেই বোঝেনা। তার উপরে আপনার কবিতার বইটির নাম বেশ কঠিন। তার পেছনে কি কোন রহস্য লুকিয়ে আছে?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- পাঞ্চজন্য হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ শাঁখ বা শঙ্খ যা অসুরের হাড় থেকে তৈরি। আমার মনে হয় সমাজ থেকে অসুরনিধনের লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই পাঞ্চজন্য-ধ্বনি এখনো খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। আমার এই পাঞ্চজন্য বেজে উঠবে পদ(কবিতা)কে আশ্রয় করে। সার্বিক অসুর নিধনের এই লড়াইয়ে পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য সামান্যতম ভূমিকা রাখতে পারলেও আমার এই প্রয়াস সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।
.
ফখরুল হাসান :-- আমি যতটা জানি কবি হানিফ মোহাম্মদ অন্তর্মুখী একজন মানুষ। বাম ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই দল বা ক্ষমতার কাছে পরাজিত নয় অন্য কবিদের ন্যায়। সেক্ষেত্রে কতটা চাপা ক্ষোভ, পাঠক আপনার কবিতায় পাবে?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- ক্ষোভ নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কবিতা লিখি। কবিতা আমার কাছে যতোটা শিল্প তারচে বেশি হাতিয়ার। এর মানে এই নয় যে শিল্পের সাথে আপোষ করেছি, বরং শিল্পের প্রতি যথার্থ সম্মান রেখেই কবিতাকে আমি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সামাজিক বঞ্চনা আর সমাজের নানাবিধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে শঙ্খধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে পারে এই গ্রন্থে। বাকিটা পাঠক মূল্যায়ন করবে।
.
ফখরুল হাসান :-- বাজারে তো আরো হাজার হাজার কবিতার বই আছে। বিখ্যাত কবিদের কবিতার বই রেখে আপনার পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য কেন কিনবে পাঠক?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- কঠিন প্রশ্ন। আসলে সব কবিতাই লেখা হয়ে গেছে। কবিতার জন্য নতুন কোনো বিষয় নেই। একই বিষয় নিয়ে রবীন্দ্রনাথ তার মতো করে লিখেছেন, জীবনানন্দ লিখেছেন তার মতো করে। হানিফ মোহাম্মদও লিখছেন তার মতো করেই। এইযে নিজস্ব প্যাটার্ন, ভঙ্গি বা ধরণ এটাই পাঠককে কবিতা পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমি মনে করি, আমি যে নিজস্ব স্বর তৈরি করার চেষ্টা করেছি তা প্রজন্মের পাঠকের ভাল লাগবে। আর এই ভিন্নস্বর বা ভঙ্গির কারণেই পাঠক পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য পড়ে আনন্দ পাবেন বলে আমি মনে করি।
.
ফখরুল হাসান :-- আপনার প্রায় কবিতায় রেনু নামে একটি নারী চরিত্র আছে। আপনার পাঠক কে কি সেই নারী সম্পর্কে কিছু বলবেন?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- পদাশ্রিত পাঞ্চজন্যে রেনু সিরিজের কোনো কবিতা নেই। তবু প্রশ্ন যেহেতু এসেছে তো বলি, আমি সাধারণত রোমান্টিক কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। একটা বিশেষ প্রেক্ষাপটে আমার মনে হলো বয়স্ক নর-নারীর যে মনস্তত্ত্ব বা তাদের সম্পর্কের যে রসায়ন তা নিয়ে বাংলাসাহিত্যে সেভাবে কোনো কাজ হয়নি। সেই চিন্তা থেকেই 'প্রিয় রেনু' সিরিজের উদ্ভব। যেখানে রেনু একজন মধ্যবয়সী নারী কিন্তু মনের দিক থেকে যে এখনো খুবই চঞ্চলা অথচ সামাজিক দায়ও সে এড়াতে পারে না। মোটামুটি এই হচ্ছে রেনুর ইতিবৃত্ত।
.
ফখরুল হাসান :-- আপনার বই প্রকাশ করতে প্রকাশক আপনাকে কতটা সহযোগিতা করেছে যখন এক শ্রেণীর প্রতারক প্রকাশকদের প্রচারে নতুনরা না বুঝে প্রতারিত হচ্ছে।
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- প্রথমত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'অনুপ্রাণন প্রকাশন' থেকে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সম্পূর্ণ প্রকাশকের ইচ্ছায় এবং তাদেরই বিনিয়োগে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রতারণা বা অন্যকোনো অনিয়মের কোনো অবকাশই ছিলো না।
.
ফখরুল হাসান :-- তার মানে, শত বা হাজার বইয়ের ভিড়েও পাঠক একটি ভালো পাঠ উপযোগী বই পাচ্ছে? এটাই বলছেন?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- আমি আমার সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং পাঠকের ভাল লাগবে এটাই আমার বিশ্বাস। বাকিটা কেবল সময়ের হাতেই ছেড়ে দেয়া যায়।
.
ফখরুল হাসান :-- আমি যতটুকু জানি, কবি হানিফ মোহাম্মদ এর নিজস্ব একটা পাঠক মহল আছে। আমার মাধ্যমে তাদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ বা বার্তা আছে কি?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- কবিতার এখন ঘোর ক্রান্তিকাল। চারদিকে বিনোদনের এতোবেশি চমকপ্রদ আয়োজন যে কবিতার দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসুত কমই বলা চলে। এর মাঝেও যারা কবিতা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, ভাবেন বা চর্চা করেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। যারা আমার কবিতা ভালবাসেন যারা আমার কবিতা পড়েন, একজন নগণ্য কবিতা-শ্রমিক হিসেবে আমি তাদের কাছে ঋণী, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
.
ফখরুল হাসান :-- শ্রদ্ধেয় কবি, শত ব্যস্ততার মাঝে আমাকে সময় দেয়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
.
হানিফ মোহাম্মদ :--আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ