রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭

ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড পেলেন আফরোজা


ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড পেলেন আফরোজা

নিজস্ব প্রতিবেদক :নারী উন্নয়ন শক্তির নির্বাহী পরিচালক  ড. আফরোজা পারভীন ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ পদক লাভ করেছেন। ভারতের মুম্বাই শহরের তাজ হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে এ পদক প্রদান করা হয়। 
জানা যায়, ভারতের মুম্বাই শহরের তাজ হোটেলে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে নারী উন্নয়ন শক্তির নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ পদক লাভ করেন। নারী উন্নয়নে একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে অবদান রাখায় তাকে এ পদক প্রদান করা হয়। 

ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড স্মিথ তার নাম ঘোষণা করেন। নারী উন্নয়ন শক্তি ১৯৯২ সাল থেকে দুস্থ জনসাধারণের মাঝে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিশু সুরক্ষা, মানবাধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। 
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং ঢাকার চেরি ব্লসম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল ড. সালেহা কাদেরও একই অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

আগামীকাল সিডনিতে 'হোয়াইট রিবন ডে-২০১৭'

সিডনি প্রতিনিধি: আজ ২৫শে নভেম্বর 'হোয়াইট রিবন অষ্ট্রেলিয়া ডে।' পারিবারিক নির্যাতন বন্ধের সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে হোয়াইট রিবন অষ্ট্রেলিয়া ও নবধারা নিউজ'র আয়োজনে আগামীকাল সিডনির একটি স্হানীয় রেষ্টুরেন্টে “হোয়াইট রিবন ডে-২০১৭” অনুষ্ঠিত হবে।

বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। বেড়েছে যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ, অপহরণের ঘটনা। এগুলোর মধ্যে কিছু ঘটনা প্রকাশিত হলেও বেশির ভাগ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায় লোকলজ্জার কারণে।

এসব ঘটনায় নির্যাতিতদের পরামর্শ, বিভিন্ন সহযোগীতা, হটলাইন ও আইনি সুবিধা চাইলে সে জন্য কোথায় যেতে হবে, কার কাছে যেতে হবে সে সম্পর্কে কিছু জানে না। তাই কীভাবে প্রতিকারসহ সুবিধাগুলি পাবেন তা বিস্তারিত জানতে হোয়াইট রিবন অষ্ট্রেলিয়া দল কমিউনিটিতে কাজ করে থাকেন। এই দলে হোয়াইট রিবন অ্যাম্বাসেডর ও হোয়াইট রিবন মেইল এডভোকেটরা কাজ করে থাকেন।

'হোয়াইট রিবন অষ্ট্রেলিয়া ডে-২০১৭' উপলক্ষ্যে হোয়াইট রিবন অ্যাম্বাসেডর আবুল কালাম আজাদ খোকন বলেন,
"এখন থেকে নারী ও শিশু পাচার, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, যৌন নিপীড়ন ও শিশুকে অঙ্গহানি ইত্যাদি বন্ধের অঙ্গীকার করি।"

উল্লেখ্য, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধের সচেতনতা বাড়াতে অষ্ট্রেলিয়াতে প্রতিবছর ২৮শে জুলাই হোয়াইট রিবন নাইটস এবং ২৫শে নভেম্বর হোয়াইট রিবন পালন করা হয়।

প্রত্যেকের প্রায়োরিটি আলাদা। সেটাকে অনুসরণ করার দরকার নেই, অন্তত সম্মান করুন।

প্রতিটা মানুষের প্রায়োরিটি আলাদা। প্রায়োরিটি আলাদা মানে কিন্তু মানুষটা ‘ফালতু’, তা নয়। নিজের প্রায়োরিটি দিয়ে অন্যকে বিচার করতে গেলেই তখন অন্য একজনকে ফালতু বা ‘ইউজলেস’ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সবার চিন্তা এবং গুরুত্বের জায়গাটুকু আলাদা- এটা মাথায় রাখলেই অনেক সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়।

যেমন আমি নিজেকে দিয়েই উদাহরণ দিতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি ক্লাস ও একাডেমিক কাজ থেকে দূরে ছিলাম(ঠিক অতটা দূরে নয়)।কারণ, আমার প্রায়োরিটি ভিন্ন ছিল।একদিকে বিভাগের শিক্ষক ও পরিবেশ সম্পর্কে এক ধরণের বিতৃষ্ণা এবং অন্যদিকে পারিবারিক স্ট্রং ফাইনান্সের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একাডেমিক লাইফ খুবই ভালই কেটেছে।


বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম স্টাডি ট্যুরে যখন সবাই দলবেঁধে আশুলিয়াতে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস এক্সপ্লোরিং করতে তখন আমি সাভারে, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আছি রেড-ক্রিসেন্ট এর কর্মী হিসেবে। আমার কাছে স্টাডি ট্যুরের থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে যাওয়া।

আমি নিজেকে মহৎ প্রমাণের চেষ্টা করছিনা। আমার প্রায়োরিটি যেমন আমার কাছে, আমার বাকি ক্লাসমেটদের প্রায়োরিটি তাদের কাছে। কোনটাকেই মহৎ বা খারাপ বলার সুযোগ নেই।
পুরো ভার্সিটি লাইফে আমি একটাও ল্যাব রিপোর্ট, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট ফাঁকি দেয়নি ।শিখেছি প্রচুর।এমনও হয়েছে যে,কাউকে টাকা
  দিয়ে সাহায্য করতে যেয়ে  প্রতি ইয়ারে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ফাইন দিয়ে। কেন আমি ঠিক সময়ে টাকা দেয়নি? কারণ দুটো। এক- পারিবারিক কারণে আমাকে অনেক সময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে এবং দুই- আমার ক্লাস করতে ভালো লাগতো না!অন্যকে হেল্প করতাম বেশী।পৃথিবীটাকে জানতে চাইতাম ও পৃথিবী হতে শিখতে চাইতাম বেশী।


সাধরণ মানুষের উপকার,পরীক্ষার পরেও যেটুকু সময় পেতাম সে সময়টাতে আমি ক্লাসে না গিয়ে (নতুন সেমিস্টার) পাবলিক লাইব্রেরি কিংবা বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে কাটাতাম। কারণ ক্লাসের লেকচারের থেকে ওটার প্রায়োরিটি আমার কাছে বেশি ছিল। এই সময়টাতে আমি প্রচুর বই পড়েছি, যার গুরুত্ব ‘আমার’ কাছে বস্তাপচা লেকচারের থেকে বেশি ছিল। কিন্তু এর মানে এই না, আমার যে সহপাঠিরা নিয়মিত ক্লাস করেছে তাদের আমি অন্য চোখে দেখব। তাদের কাছে ওটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমার কাছে অন্যটা।


 এ কারণে আমাকেও আমার সহপাঠিরা যদি বাতিল/ইউজলেস/বাজে ছাত্র মনে করে, সেটা তারা মনে করে তাদের প্রায়োরিটির নিরিখে। আর এই কাজটাই আমাদের সব থেকে বড় ভুল।
আমরা মানুষকে বিচার করি আমাদের মানদন্ডের ভিত্তিতে, আমাদের প্রায়োরিটির নিরিখে। কেউ অন্য রকম পোশাক পড়ে, সে উদ্ভট? কেউ সারাদিন গান বাজনা করে, সে নষ্ট? কেউ মেহনতি মানুষের জন্য রাজনীতি করে, সে বাতিল? না। আপনি আপনার পোশাকের স্টাইল দিয়ে বিচার করছেন দেখে তাকে উদ্ভট মনে হচ্ছে।

আপনি তার গানের প্রতি ভালোবাসাটা বুঝতে অক্ষম বলে তাকে নষ্ট মনে হচ্ছে। আপনি ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র সুখটা অনুভব করেননি বলে তাকে বাতিল বলে মনে হচ্ছে। যে যেরকম, সে সেরকম।


প্রত্যেকে যার যার মত করে ‘ইউনিক’। শুধু পোশাক বা ‘অ্যাপিয়ারেন্স’ দেখেই যেমন একটা মানুষের সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক না, একই ভাবে কারো কর্মকাণ্ড দেখেও ভালো বা খারাপের সরলীকরণ করা উচিত নয়। প্রত্যেকের প্রায়োরিটি আলাদা। সেটাকে অনুসরণ করার দরকার নেই, অন্তত সম্মান করুন।

মো:মেহেদী হাসান।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট । 

শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আয়েবার মহাসচিবের সাক্ষাৎ






কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আয়েবার মহাসচিবের সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক :কানাডার রাজধানী অটোয়ায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন আয়েবার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু সম্প্রতি সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন।

অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন আয়েবার উদ্যোগে গত বছরের ১৯ ও ২০ নভেম্বর মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত প্রবাসী ও বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকদের উপস্থিতে গ্লোবাল সামিট অনুষ্ঠিত হয়।

প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষা, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন গঠন করে অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনুকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি গত মাসে আমেরিকা ও কানাডায় সাংগঠনিক সফরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
এ সময় মন্ট্রিয়ালের সংসদ সদস্য মার্ক মিলার ও ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন কানাডার সমন্বয়ক মাইনুর সরকার উপস্থিত ছিলেন।

ফেসবুকের কবি:নারীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও সৌন্দর্য বর্ণনা করার নামই কি কবিতা?

সকল শ্রেণীর লেখক ও লেখার মধ্যে পাঠককে কেবল আধ্যাত্মিক খোরাক দিতে পারে কবি ও কবিতা । লেখালেখির জগতে কবিতা লেখাই সবচেয়ে জটিল-কঠিন ব্যাপার । সবাই যেমন কবি হতে পারে না তেমনি সবাই কবিতার পাঠকও হতে পারে না ।

কবিতা লিখতে যেমন ঈশ্বর প্রদত্ত্ব ক্ষমতা থাকা চাই তেমনি কবিতা বুঝতেও ‍উচ্চমাত্রার ভাষাজ্ঞান থাকা আবশ্যক । কবি তার কবিতায় ফুটিয়ে তোলেন সমাজের সমকালীন চিত্র, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ভবিষ্যত । কবিগণের অন্য সকল পরিচয়ে পূর্বেই তাদের পরিচয় দার্শনিক হিসেবে । কবিতারও বহু প্রকারভেদ হয় । কবিরা সর্ব সময় সমাজের আধ্মাত্মিক গুরু ।



শুধু কবি পরিচয়ে আমাদের দেশে কিংবা দেশের বাইরে অসংখ্য কবি খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেছে । তাদের খ্যাতি ছোঁয়ার ক্ষমতা অন্য শ্রেণীর লেখকদের নাই কিংবা তারা এটা ধারণাও করতে পারবে না । অতীতের অনেক কবির নাম উল্লেখ করা যায় যাদের কবিতা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে । কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে আবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে ।



সমকালীন সময়ের কবিদের বিশেষ করে ফেসবুক সর্বস্ব কিছু কবির ভবিষ্যত নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা হয় । যদিও আমি চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তা করার কর্তৃপক্ষ নই কিন্তু অন্য ভাবনার সাথে এ ভাবনাও জট বেঁধে থাকে । বর্তমান কবিদের কবিতার বৃহদাংশ কেবল নারীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বর্ণনা পাওয়া যায় । নারী দেহের এমন বর্ননা যা চটি গল্পকেও হার মানায় ।

যুগের চাহিদায় হয়ত এসব কবিতাও অস্থায়ী পাঠক প্রিয়তা পাবে কিন্তু নারী দেহের অশালীন বর্ণনার শব্দমালা কবিকে অমর করবে না । কবিতার উপাদ্য হিসেবে নারী কোন যুগেই আলোচনার বাইরে ছিল না কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু কবির কবিতা পড়লে মনে হয় নারীর দেহ বিষয়ক ধারাভাষ্য দেয়া ছাড়া যেন কবিতাই হয়না । এরা নারীর প্রেমে ডুবতে গিয়ে আর উঠে আসতে পারবে এমন সম্ভাবনা দেখাই যাচ্ছে না । কবিতার নামে যদি নারীর দেহের অশালীন বর্ণনা পড়তে হয় তবে সরাসরি চটি গল্প পড়তে দোষ কোথায় ?



জীবনানান্দ, রবীনন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদ্দিনের মত কবিদের জন্ম দেখতে চাই । বর্তমান কবিদের চেয়ে এরা কি নারীর বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা কম দিতে পারতেন ? অথচ তারা শালীনভাবে যেমন প্রেমের কবিতা লিখেছেন তেমনি লিখেছেন দ্রোহের কবিতা । সমাজ সংস্কারে তাদের কবিতা রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা । রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাস এবং পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের কবিতায় উঠে এসেছে বাংলা মায়ের সৌন্দর্যের বর্ণণা ।

বর্তমান কবিদের কলমে মায়ের অর্থ্যাৎ নারীর লুকানো সৌন্দর্য ঠিকই প্রকাশ পায় কিন্তু বাংলা যেন শুধুই উপেক্ষার নাম । সস্তা পাঠক প্রিয়তা অর্জন এবং উঠতি তরুণ-তরুণীর জৈবিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে যারা কবি হিসেবে পরিচিত হন তাদের উদ্দেশ্য বিফল হবে না কিন্তু অমর কবির তালিকায় নাম লেখানো বোধহয় সম্ভবও হবে না । কবিতার সেই অতীত ধারা আবার কবিদের কলমে ফিরে আসুক ।

নজরুল-রবীন্দ্রনাথ আজও উপেক্ষিত নয় কিংবা কোনদিন উপেক্ষিত হবেও না বরং যারা আজ গর্ব করছে তাদের কবিতা দু’পাঁচ জনে পড়ছে বলে তারাই একদিন কালের স্রোতে ভেসে যাবে; চিরতের মুছে যাবে তাদের নাম । কেউ কেউ বলে, কবিতার অশ্লীলতা কোন অশ্লীলতাই নয় । কথা হচ্ছে, অশ্লীলতার প্রকারভেদ করা চলে না । কোন যুগেই অশ্লীলতা সম্মানের আসনে আরোহন করেনি কিংবা করবেও না বোধহয় কোনদিন ।

মোঃ মেহদী হাসান।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট । 

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের বন্ধু নাবেল আল মাসরি



 সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বন্ধু





নিজস্ব প্রতিবেদক :  সিঙ্গাপুর পুলিশের স্পেশাল কনস্টেবল করপোরাল (সিপিএল) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাবেল আল মাসরি। এই তরুণ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে সাহায্য করেছেন। সেই কৃতিত্বের কথা মলাটবন্দী হয়েছে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকাশিত একটি বইয়ে। প্রতিবেদন হয়েছে সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমস পত্রিকায়। বাংলাদেশে বেড়াতে এসে শোনালেন আরও অনেক কথা। নাবেল আল মাসরির অভিজ্ঞতা থাকছে ছুটির দিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে।
প্রথমেই বললেন, ‘আমি একটু ইনট্রোভার্ট (অন্তর্মুখী)।’ এমন একটা বাক্য দিয়েই নাবেল আল মাসরির সঙ্গে আলাপের শুরু। তবে সংশয় কেটে গেল খানিক পরেই। বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা আর ব্যক্তিজীবনের নানা কথা যেভাবে এগোল, এরপর এই তরুণকে আর যা–ই বলা হোক, অন্তর্মুখী বলা যায় না।
আলাপে ঢোকার আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণের কথা একটু বলে নেওয়া যাক। নাবেল আল মাসরি সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্সের (এসপিএফ) স্পেশাল কনস্টেবল করপোরাল (সিপিএল)। অস্থায়ী এ পেশায় তিনি জড়িয়েছেন গত বছরের এপ্রিলে। তবে বছর দেড়েকের মধ্যেই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন তিনি। কেমন সেটা?
যানজট ঠেলে উত্তরা থেকে কারওয়ান বাজারে আসার ধকল ততক্ষণে সামলে নিয়েছেন। প্রশ্ন শুনে একহারা গড়নের নাবেল চোখ থেকে কালো রোদচশমা খুলে হাতে নিলেন। বললেন, ‘আমি সিঙ্গাপুরের ওল্ডল্যান্ড ইস্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করি। সেখানে বাংলাদেশি নির্মাণ ও জাহাজশ্রমিকদের বসবাসের অনেক ডরমিটরি রয়েছে। আমি ডরমিটরিগুলোতে যাই, আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে সচেতন করি।’ এক সপ্তাহের জন্য ঢাকায় এসেছেন। ১২ নভেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে বসেই কথা হলো।
নাবেল বলতে শুরু করেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকদের ভাষাগত কারণে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যা হতো। অনেকে হয়রানির মধ্যে পড়তেন, সমস্যার কথাও বুঝিয়ে বলতে পারতেন না।’
নাবেলের মতো বাংলাভাষী একজন পুলিশ কর্মকর্তা পেয়ে শ্রমিকেরা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার কথা খুলে বলার সুযোগ পেলেন, জানতে পারলেন প্রশাসনের নিয়মকানুনও। এখন নাকি ওল্ডল্যান্ড এলাকায় টহলে বের হলেই বাংলাদেশি শ্রমিকেরা এগিয়ে আসেন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। নিজেদের নানা সমস্যার কথা অনায়াসে বলেন। বাংলা বলার সুবিধা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
তবে ‘জনপ্রিয়’ শব্দটা শুনে নাবেল ইতস্তত করতে থাকেন। ‘আমার জায়গায় অন্য কোনো বাঙালি থাকলে হয়তো এমনটাই করতেন। এনএসে (ন্যাশনাল সার্ভিস) আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি পরিবারের ছেলে ঢুকেছে, তারা অন্য দায়িত্ব পেয়েছে। আমি কমিউনিটি এনগেজমেন্টের দায়িত্ব পেয়েছি, এটা আমার ভাগ্য বলা যায়।’ বলেন নাবেল।
পুলিশ বিভাগে নাবেল কাজ করছেন নাগরিক কর্তব্য হিসেবে। সিঙ্গাপুরের প্রত্যেক পুরুষ নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে দুই বছর সরকারি সংস্থায় চাকরি করতে হয়। এটাকে বলে ন্যাশনাল সার্ভিস (এনএস)। এই চাকরিটা করতে হয় ‘ইউনিফর্মড সার্ভিস’ বা দেশটির আর্মড ফোর্স, সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স, সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্সের মতো সংস্থার হয়ে। শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করে তিনি কোন চাকরির যোগ্য।
ডরমিটরিগুলোতে হাজারখানেক শ্রমিক থাকেন। নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। চুরি ও মাদক ব্যবসার দায়েও অভিযুক্ত হন শ্রমিকেরা। নাবেলের দায়িত্ব বিভিন্ন ডরমিটরিতে গিয়ে অপরাধমূলক এসব কাজের শাস্তি সম্পর্কে জানানো। মতবিনিময়ের এই কাজটি নাবেল করেন ‘ক্রাইম প্রিভেনশন টক’ নামে। এই আয়োজনের মাধ্যমে ডরমিটরির সব শ্রমিককে ডাকা হয়। প্রচারপত্র ও হ্যান্ডমাইকে সচেতন করা হয়। সেই সঙ্গে জানানো হয় জঙ্গিবাদ, ফটকাবাজদের কাছে প্রতারিত না হওয়ার উপায় সম্পর্কেও।

এসব তো আছেই। নাবেল প্রশংসিত হয়েছেন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য। নাবেল বলেন, ‘ডরমিটরিতে মাদকের ব্যবসা করার জন্য তিনজন বাংলাদেশি শ্রমিক অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দেশে ফেরার জন্য বিমানবন্দরে এসে হাওয়া হয়ে যান।’

লাপাত্তা হওয়া এই তিন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতেই গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কাজ করেন নাবেল। পালিয়ে গিয়েও মাদকের ব্যবসা চালাতে থাকেন আগের মতো। পুলিশ কোনোভাবেই কূলকিনারা করতে পারছিল না। তবে জানতে পারে, তিনজন তাঁদের এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। সেই বন্ধুকে ধরা হয়। কিন্তু তাঁর ভাষাজ্ঞানের কারণে বিপত্তিতে পড়ে গোয়েন্দা পুলিশ। তখনই ডাক পড়ে নাবেল আল মাসরির। তিনি বলেন, ‘আমি ভদ্রলোককে বোঝাই। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঠিকানা জানতে চাই। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন না। একসময় তাঁকে অভয় দিই। ধীরে ধীরে তিনি সব বলে দেন।’ ধরা পড়েন তিন মাদক ব্যবসায়ী।


সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সার্ভিস (এনএস) ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে চলতি বছর (প্রতিষ্ঠাকাল: ১৪ মার্চ ১৯৬৭)। এ উপলক্ষে এভরিডে গার্ডিয়ানস: ফিফটি ইয়ারস অব ন্যাশনাল সার্ভিস ইন সিঙ্গাপুর’স হোম টিম নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইয়ে মলাটবন্দী হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পথচলার নানা সাফল্যগাথা। সেখানেই জায়গা হয়েছে নাবেলের কৃতিত্বের কথা। ‘আ বেঙ্গলি ব্রিজ’ শিরোনামে নাবেলের ওপর প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে বইটির ৯৪-৯৭ পৃষ্ঠায়। ৩ নভেম্বর বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং। শুধু স্মরণিকায় নয়, তাঁকে নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমস পত্রিকাও।

১৯৯৫ সালে নাবেল আল মাসরির জন্ম সিরাজগঞ্জে। সেখানেই কেটেছে এক বছর। ১৯৯৬ সালে মা মোর্শেদা তাজনীমের কোলে করে চলে যান সিঙ্গাপুর। নৌযান প্রকৌশলী বাবা আবদুল হান্নান ছিলেন আগে থেকেই সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। সিঙ্গাপুরের স্কুলেই তাঁর হাতেখড়ি। ২০০৫ সালে পেয়েছেন নাগরিকত্ব। সিঙ্গাপুর পলিটেকনিক থেকে যন্ত্র প্রকৌশলে পড়েছেন। বাধ্যতামূলক এই নাগরিক কর্তব্য শেষ করে ভর্তি হতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে পর্বও অনেকটা গোছানো। নাবেল বললেন, ‘সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে যান্ত্রিক নকশা (মেকানিক্যাল ডিজাইন) বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার পছন্দের বিষয়। এ বিষয়েই স্নাতক হতে চাই।’


আপাতত তাঁর পরিকল্পনা বাংলাদেশের কক্সবাজার ঘিরে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ঘুরে দেখতেই এবার বাংলাদেশে আসা। নাবেল বলেন, ‘আসার সময় ট্যুর প্ল্যান করেই এসেছি। তিন দিনের জন্য কক্সবাজার যাব, ইচ্ছেমতো ঘুরব। বলা যায় শুধু কক্সবাজারে যাব বলেই একা চলে এসেছি।’

সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের ৫৩ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

রকি পাটোয়ারি,সিঙ্গাপুর প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)'র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ৫৩ তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে গত ২০শে নভেম্বর সিঙ্গাপুর যুবদল সিঙ্গাপুরের স্থানীয় রয়েল রোডের বাংলাদেশ সেন্টার, সিঙ্গাপুরে।

সিঙ্গাপুর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব ইসমাইল হাছানের পরিচালনায় দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে তারেক রহমানের সুসাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে সিঙ্গাপুর যুবদলের  সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কেক কেটে একে অপরের প্রতি কেক খাওয়াইয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন জনাব গিয়াস উদ্দিন সরকার সিঙ্গাপুর বিএনপি নেতা ও প্রধান উপদেষ্টা সিঙ্গাপুর যুবদল।

বিশেষ অতিথি জনাব এডভোকেট মামুন অর রশিদ মামুন দপ্তর  সম্পাদক ফরিদপুর জেলা বিএনপি। আরো উপস্তিত ছিলেন সিঙ্গাপুর  যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইব্রাহিম মিয়া, সহ-সভাপতি নাদিম জাহান আজিম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন,  যুগ্ম মহাসচিব ওয়াসিম শিকদার,পলাশ মাহমুদ, নূরুজ্জামান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের জিকু, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ রবিউল হক, কর্ম সংস্থান বিষয়ক সম্পাদক আক্তার সরকার, আইন বিষয়ক সম্পাদক আক্তার অভি, মোহাম্মদ রিপন, রাকিবুল, আবুল বাসার, মোহাম্মদ আমিন, মামুন হোসেন, গাজী মনির, রুবেল হোসেন, সাহেদ ভুইয়া, মিজান, আওলাদ সহ অনেক নেতা কর্মী উপস্থিত হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

ওয়ান ইলেভেনের অজানা কথা-১ :সত্যি খালেদাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন মান্নান ভূঁইয়া?


ওয়ান-ইলেভেন। ১১ জানুয়ারী ২০০৭ এ সেনাবাহিনী সমর্থিত বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে। এইদিনটিকে ওয়ান-ইলেভেন বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে রাজনীতিবিদদের জন্য একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো প্রধান দু’টি দলের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়ায় দেশ যখন স্থবির হয়ে পড়ে তখন ওয়ান-ইলেভেন আসে। 


রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ সাধারণ জনগন প্রথমে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। তারা স্বস্তি পেয়েছিলেন। দেশের সেনাবাহিনী প্রথম বারের মতো সংবিধান স্থগিত করে সেনা শাসন জারি না করে দেশের সুশীল ব্যক্তিদের দিয়ে অরাজনৈতিক সরকার গঠন করে দেয়। স্বচ্ছ রাজনীতিবিদরা মনে করেছিলেন, ওয়ান-ইলেভেন দেশের রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং সংস্কারের নামে প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে পারষ্পরিক অনাস্থা, সন্দেহ, অবিশ্বাসের জন্ম হয়। যার রেশ এখনও কাটেনি।


ওয়ান-ইলেভেনের ফখরুদ্দিন -মইন ইউ সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়েছিলো। নেতাদের বিভক্ত করার পাশাপাশি ওয়ান-ইলেভেনের সরকার দলের নেতাদের মধ্যে পারষ্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি করেছিলো। সে সময় দুই দলের নেতাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে নির্যাতন থেকে বাঁচতে নিজ নিজ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন নেতারা। শুধু তাই নয়, কারাবন্দি নেতারা তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি যে সব বিষোদগার করতেন তা আবার সংবাদ মাধ্যমে চলে আসতো। 

এখনও ইউটিউবে সার্চ দিলে তাদের কথার রেকর্ড পাওয়া যায়। সংস্কারের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের মধ্যে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়াসহ কেউ কেউ সন্দেহ, অবিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।
ওয়ান-ইলেভেনের সমাপ্তি ঘটে ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ক্ষমতায় যাওয়ার কারণে সংস্কারপন্থী নামে পরিচিত নেতারা আওয়ামী লীগের খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি। তবে ক্ষমতাবঞ্চিত বিএনপির মধ্যে সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দিয়ে দলটির ব্যাপক ক্ষতি করেছে।এখনও খালেদা জিয়া পন্থী ও সংস্কারপন্থী বিভেদ অটুট রয়েছে। সে কারণে সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ কোন কর্মসূচিতেই সফলতা দেখাতে পারেনি দলটি।


২০০৭ সালের ২৫ জুন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। তাকে সমর্থনকারী নেতারা সংস্কারপন্থী বলে বিএনপিতে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেরই ৩ সেপ্টেম্বর মান্নান ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন ও দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে বহিষ্কার করা হয়। মহাসচিব করা হয় তৎকালীন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত অ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে।

 কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের মহাসচিবকে বহিষ্কৃত তিন নেতাকে বাদ রেখে দলের বাকি সবাইকে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার সে সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করাতে ব্যর্থ হন।


ওয়ান-ইলেভেনের সরকার প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ও অভিজ্ঞ নেতাদের দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়ায়। এতে করে তাদের প্রতি শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব, অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি হয়। এই সুযোগে দলের মধ্যে দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকা নেতাদের পাশাপাশি দ্বিতীয় সারি ও তৃণমূলের নেতারা সামনে চলে আসে।


ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে একজন সক্রিয় সংবাদ কর্মী হিসেবে সংবাদ সংগ্রহ করেছি। সে সময় সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পন্থী এবং সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতাদের কাছ থেকে তাদের যার যার নিজস্ব অবস্থানের ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করেছি। তাদের ভাবনাগুলো জানার চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করেছি। ওই সময়ে মান্নান ভূইয়ার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আমার কথা হতো। বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে তাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে বিব্রত করেছি। তারই রেশ ধরে হয়তো তিনি একান্তে অনেক কথা বলেছেন।একান্তে বলা এসব কথা কখোনো প্রকাশ করা হয়ে উঠেনি। 

তবে কেন তিনি এমন একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার একটা ব্যাখ্যা আমাকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন । এটা হতে পারে নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার এমনও হতে পারে বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে আমার করা বিব্রতকর প্রশ্ন থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্ঠা করেছেন।সে সময়ের মান্নান ভূইয়ার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জানতে পারা কিছু বিষয় পাঠকের জন্য তুলে ধরছি।

দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পৃথক বিএনপি করার পক্ষে একটা যুক্তি তিনি আমার কাছে খোলসা করেছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে এ বিষয়ে তার একটা ভাবনা ছিলো। তিনি জানতেন ওয়ান-ইলেভেনের উদ্দেশ্য কী? তিনি বলেছিলেন ফখরুদ্দিন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তাদের পরিবারকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। একই ভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া।

এই দু:সময়ে বিএনপির মহাসচিব হিসেবে তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রক্ষা করতে চেয়েছেন। তবে তা করতে গিয়ে তিনি যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন সেটা মান্নান ভূইয়াকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দলের বাইরে রাখতে চেয়েছেন। যাতে তাদের জেলবাস বা দেশত্যাগে বাধ্য করা না হয়। এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমাকে বলেছেন। 

সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি দলের নেতাদের তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। কারণ সে সময়ে সদ্য সাবেক বিএনপির ১১৬জন সংসদ সদস্য বিএনপি না করার অঙ্গীকার করে সরকারের একটি সংস্থার কাছে ফ্যাক্স করেছিলেন। তাদেরকে তখন ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তারা ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভালো ভাবেই পাওয়ার পার্টি হয়ে যেতো এবং বিএনপি ক্ষতিগ্রস্থ হতো। সে অবস্থা থেকে বিএনপিকে রক্ষা করতে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। 

তিনি বিএনপিতে সংস্কার প্রস্তাব আনেন। শুধু তাই নয়, সে সময় যারা যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন তারাও নাকি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আলাদা দল করার জন্য তিনি সময় ক্ষেপণও করেছিলেন।
দীর্ঘ ১১ বছর বিএনপির মহাসচিব থাকার পর ওয়ান-ইলেভেনে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন মান্নান ভূঁইয়া। দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন। 

বহিষ্কারের বিষয়টি তিনি জানতে পারলেও আমলে নেননি। কারণ ভেতরে ভেতরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন না কোন মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন। তবে ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর যখন তাকে কোর্টে নেওয়া হয় তখন তিনি আইনজীবিদের মাধ্যমে মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার ও অ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বহিষ্কারের বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি।


ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ৬ মার্চ রাতে ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের বাসভবন থেকে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। মান্নান ভূইয়া তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, তারেক রহমান আটক হবার আগেই মান্নান ভূঁইয়া তারেক রহমানকে দেশের বাইরে চলে যেতে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। পাল্টা বার্তায় তারেক রহমান তাকে জানিয়েছিলেন রাজনীতি যেহেতু করেন তাই প্রয়োজনে জেলে যাবেন কিন্তু দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে চলে যাবেন না।


আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এবং অন্য সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপনকারীরা স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, তারা দল ভাঙার জন্য তাদের সংস্কারের কথা বলেননি। দলকে অরাজনৈতিক, অসাধু ব্যবসায়ী ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করে রাজনীতিবিদদের মর্যাদা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের চর্চা জোরদার করে বংশানুক্রমিক (অরাজনৈতিক, অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত) ধারা রহিত করে দলকে জনগণের দলে পরিণত করা। যোগ্যতা থাকলে একজন কৃষক-মজুরের ছেলে-মেয়েও যাতে দলের নেতা-নেত্রী হতে পারেন সেই জন্য সংস্কার প্রস্তাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তেমন দলই গড়তে চেয়েছিলেন। তাদের জীবদ্দশায় দল দুটি রাজনীতি ও আদর্শকেই মূল্য দিয়েছে বেশি। 

শহীদ জিয়াউর রহমান রাজনীতির একটি চিরায়ত সত্য প্রায়ই উচ্চারণ করতেন যে, 'ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।' কিন্তু বিএনপি এখন চলছে উল্টো পথে। এখন দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়, আরও বড় বিশেষ বিশেষ পরিবার।


আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া তার খসড়া সংস্কার প্রস্তাবের শুরুতেই বলেছিলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর অদূরদর্শিতা, ব্যর্থতা ও হঠকারিতার কারণে দেশে সৃষ্টি হয়েছিল গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। এ অবস্থায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নিয়ামক ভূমিকায় বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশকে সেই মহাসংকট থেকে রক্ষা করেছে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ সারা দেশে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মাথা হেট করে চলতে হচ্ছে। তাদের হতাশা ও উদ্বেগ দূর করতে এবং বিরাজমান পরিস্থিতির হাত থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে রক্ষার জন্য সংস্কারের আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলকে সময়ের দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার বিকল্প নেই।


সংস্কার প্রস্তাবে আরও বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্রের অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ সংশোধন করে তিনি জাতীয় কাউন্সিলকে অধিকতর ক্ষমতাশালী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী না রেখে তার সব সিদ্ধান্ত কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদন অপরিহার্য করার কথা বলেছিলেন। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছিল, সর্বস্তরের কমিটিতে কর্মকর্তা নির্বাচনে দলীয় নেতৃবৃন্দের পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের অন্তর্ভুক্তিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এও বলা হয়েছিল, সব ধরনের মনোনয়ন দেওয়ার সময় প্রার্থীদের সম্পদের হিসাব দলের কাছে দাখিল করতে হবে এবং দলের পক্ষ থেকে একটি কমিটির মাধ্যমে সম্পদের সত্যাসত্য যাচাই করা হবে। দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের জন্য দুই মেয়াদে ছয় বছর সময় নির্ধারণ করার কথা বলেছিলেন যাতে নতুন জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ করে দেওয়া যায়।


পরিশেষে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দলে পরিবারতন্ত্র বিকাশের চেষ্টা, দুর্নীতি, আত্মীয়করণের অশুভ পদক্ষেপ, মনোনয়ন বাণিজ্য, লুটপাট, চাটুকারিতা ইত্যাদি অশুভ প্রবণতা এবং একনায়কতান্ত্রিক পন্থার ব্যক্তি কর্তৃত্ব এই মৌলিক যুগান্তকারী সংস্কার প্রস্তাবের ফলে চিরতরে দল থেকে বিদায় নেবে।

দলে ফেরানোর উদ্যোগ :
ওয়ান-ইলেভেনের পরে দলের একটি অংশ মান্নান ভূইয়াকে দলে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মান্নান ভূঁইয়াকে একটি লিখিত আবেদনও করতে বলেছিলেন তার শুভাকাঙ্খীরা। কিন্তু তিনি ছিলেন সিদ্ধান্তহীনতায়। খালেদা জিয়ার সামনে যাওয়ার মতো নৈতিক মনোবল তার ছিলো না। সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত মান্নান ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠরা চেষ্টা করলেও পরে ব্যর্থ হন তারা।


উল্লেখ্য ২০০৭ সালের ২৫ জুন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। তাকে সমর্থনকারী নেতারা সংস্কারপন্থী বলে বিএনপিতে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেরই ৩ সেপ্টেম্বর মান্নান ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হলে সংস্কারপন্থীরা তার নেতৃত্বে তৎপরতা চালাতে থাকেন। কার্যত তখন থেকেই বিএনপিতে সংস্কার ও খালেদাপন্থী দুটি ধারা তৈরি হয়। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহাসচিব হওয়ার পর বিভেদ আরও বাড়ে। কারণ তিনি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠনের নামে সংস্কারপন্থীদের বিতাড়িত করেন। ফলে মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকরা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। 

তবে বিএনপি চেয়াপারসন ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর সংস্করপন্থী প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ভোল পাল্টিয়ে মূলধারায় ফেরত আসেন। এরপরেও প্রায় অর্ধ শতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও নেতা বিএনপির বাইরেই থেকে যায়। তারা বিএনপির কর্মকান্ড এবং কমিটিতেও আসতে ব্যর্থ হন। এ তালিকায় উল্লেখ যোগ্যদের মধ্যে মেজর জে. (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, আশরাফ হোসেন, শাহ মো. আবুল হোসাইন, শহিদুল হক জামাল, জহিরউদ্দিন স্বপন, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নজির হোসেন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, এসএ সুলতান টিটু, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, নুরুল ইসলাম মনি, শামীম কায়সার লিঙ্কন, ইলেন ভুট্টো, আলমগীর কবীর, আবু হেনা, আবদুল গণি (মেহেরপুর), দেলোয়ার হোসেন খান দুলু (ময়মনসিংহ), আতাউর রহমান আঙ্গুর (নারায়ণগঞ্জ), আব্দুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা), আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান (জয়পুরহাট), মেজর জে. (অব.) আনোয়ারুল কবীর তালুকদার (জামালপুর), এমএম শাহীন (মৌলভীবাজার), ফজলে আজিম (নোয়াখালী). শাম্মী শের (মুন্সীগঞ্জ), একেএম আনোয়ারুল হক, (ময়মনসিংহ) শাহরিয়ার আক্তার বুলুসহ অনেকের নাম রয়েছে। দীর্ঘদিন দলে ফেরার আশায় থেকে সংস্কারপন্থী অনেক নেতা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে চলে গেছেন। এরপরেও তারা অন্য দলে যোগদান করেন নি।


সংস্কারপন্থীরা নানা চাপে পড়ে দলের সিস্টেমে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল ছেড়ে যেতে চাননি কেউই। এর প্রমাণ তারা ১০ বছরে নানাভাবে দিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই বিএনপি প্রধান তাদের আবার কাছে টানছেন। সংস্কারপন্থী এক নেতা জানান, বিশেষ পরিস্থিতিতে সংস্কারের প্রক্রিয়ায় জড়াতে হয়েছিল। সঙ্গত কারণে দলীয় প্রধানের কাছ থেকে ১০ বছর দূরে থাকতে হয়েছে।


মান্নান ভূইয়া ১৯৪৩ সালের ৩ জানুয়ারি নরসিংদীর শিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং কয়েক হাজার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে তিনি নরসিংদীর শিবপুরসহ বিশাল এলাকা মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।


স্বাধীনতার পর মান্নান ভূঁইয়া ন্যাপের কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং নরসিংদীতে কৃষক সমিতি সংগঠিত করেন। তিনি দীর্ঘসময় মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬-১৯৭৭ সালে মান্নান ভূঁইয়া ন্যাপ থেকে বের হয়ে আসেন এবং ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি m

ইউপিপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৭৯ সালে ইউপিপি থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহবায়ক মনোনীত হন। এছাড়া তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন। মান্নান ভূঁইয়া ১৯৮০-এর দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

 তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নরসিংদী-৩ (শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপির মহাসচিব মনোনীত হন। মান্নান ভূঁইয়া ১৯৯৬ সালে এবং পুনরায় ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মান্নান ভূঁইয়া ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব ছিলেন।


মান্নান ভূঁইয়া দেশের সবকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেন এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে লিয়াজো রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।


ফুসফুসের ক্যান্সারে ২০১০ সালের ২৮ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন মান্নান ভূঁইয়া। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

লেখক: রেজাউল করিম লাভলু, সিনিয়র সাংবাদিক।

শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৭


নতুন প্রজন্মের এ কেমন বিজয় দিবস: রকি পাটোয়ারী


নতুন প্রজন্মের এ কেমন বিজয় দিবস 
রকি পাটোয়ারী
-----------------------
বছর ঘুরে আসে ফিরে
বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে,
মোদের কাঙ্ক্ষিত মহান বিজয় দিবস
হৃদয়ে তাই লাগে দোলা।

বিজয় দিবস আসে আনন্দ উল্লাস ভরে
নেতা নেত্রীদের ফুলের তোড়ার ভারে,
যেন চলে যায় বিমর্ষ চিএে তড়িঘড়ি করে।

রাত যখন ঠিক বারটা
ঘড়ির কাটায় কাটায়,
ফুল দেবে, কে আগে কে পরে,
এ হুলস্থুল হুড়াহুড়ি আর ধাক্কা ধাক্কির জ্বালায়,
শহীদের আত্মা মেকি হেসে ফিরে যায় লজ্জায়,
আর যেন বলে যায় একি হচ্ছে সোনার বাংলায়।

মোদের তরে বিজয়ের এ বার্তা
এই যে অমর স্বাধীনতা,
এনে দিতে যারা দিয়ে গেল প্রান
এমনি করে বছরে একদিন কিছু ফুল দিয়ে, দিতে চাই কি মোরা তাদের রক্তের প্রতিধান।

শহীদের আত্মা আজ কেঁদে কেঁদে ফিরে,
 আর প্রশ্ন রেখে যায় নতুন প্রজন্মের তরে,
কোথায় হারালো আজ সেই স্বাধীনতা
যার জন্য দিয়েছি প্রান মোরা।

স্বাধীনতা একি শুধু মুখের বুলি
শুধুই রূপ কথা,
বাস্তবে তাকি শুধুই মেকি
শুধুই ভাষন আর বক্তৃতা।

--------সমাপ্ত------

রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

ছাত্রছাত্রীদের ল্যাপটপ অনুদান করেন কবি ওবাইদুল হক


রাঙ্গুনিয়া সংবাদ দাতা ঃ
রাঙ্গুনিয়া সাহাব্দীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য  গতকাল একটি ল্যাপটপ দান করেন রাঙ্গুনিয়া সাহাব্দীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র কবি ওবাইদুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্কুল কমিটির সদস্য জনাব ইসমাইল তালুকদার, কামাল হোসেন, সনজিত কুমার, প্রমুখ, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিনিয়র সহ-প্রধান শিক্ষক, নিজাম উদ্দিন,তুষার দাস,ইকবাল হোসেন,সহ উপস্থিত সবার হাতে ল্যাপটপ হস্থান্তর করেন। পরে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে তাদের প্রাথমিক ধারনা দেয়া হয়। এতে ছাত্রছাত্রীরা বেশ আনন্দ উপভোগ করেন। এদিকে কবির সাথে একান্ত কথা বলে জানতে চাওয়া হয় কি উদ্দ্যেশে এই অনুদান। তিনি জানান, বাংলাদেশে অধিকাংশ ছেলেদের প্রবাসে পাড়ি হয়, কিন্তু কারিগরি দক্ষতা না থাকার কারনে অনেকেই জীবনের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে পারছেনা। আগামী প্রজন্ম তাঁরা বিদেশে গিয়ে অনেক শিক্ষিত লোক লেভারের কাজ করতে হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা না থাকার কারনে। কবি ওবাইদুল হক মনে করেন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের অবশ্যই লেখা পড়ার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিশ্বের ভিবিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশের ছেলে গুলো সেই দক্ষতার জন্য হিমশিম খাচ্ছে। তিনি আরো মনে করেন বাংলাদেশ সরকার যদি প্রতিটি বিদ্যালয়ে কম্পিউটারের জন্য সু-ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অারো দ্বিগুন করতে পারত। পাশাপাশি দেশের সুনাম অর্জন করতে পারত।তাই সকলে যদি এরকম উদ্দ্যেগ গ্রহন করে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের শেখার সুযোগ করে দিতে পারে তাহলে আমাগীর বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নত দেশের মানের সমান। এটাই প্রত্যাশা করেন কবি ওবাইদুল।

শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৭

নিজের প্রকৃতির সাথে জগতভাব না মেশালে জীবন অর্থহীন, দর্শনহীন।

সুখ যেখানে আছে, দুঃখ থাকে তার কাছে মানুষ সর্বদা ভবিষ্যতের আশায় বর্তমানকে অতিক্রম করে। তাই কল্পনার আবর্তে তার বসবাস। চরম বাস্তবতা হচ্ছে ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস; যেখানে বিধি বাম। আর পরম বাস্তবতা হচ্ছে ভাগ্যের আনুকূল্য; যেখানে বিধি ডান।

 যা চলে গেছে তা অতীত। আর যা হবে তা ভবিষ্যত্। ভবিষ্যত্ মাত্রই কল্পনা। সুতরাং বর্তমান অবস্থাই জীবন। আর মানুষ সেই অতীত, বর্তমান এবং অনাগত ভবিষ্যতের ধারক, বাহক। নিজেকে নিয়ে মানুষের এত চিন্তা ভাবনা, এটা সাময়িক নয়। অনাদিকাল থেকেই মানুষ নিজেকে নিয়েই চিন্তা করে, ভাবে। 

নিজেকে সবসময় প্রমান করতে চায় তার লক্ষ্যমানে। নিজেকে না চিনলে অন্যকে বোঝা যায়না, প্রকৃতির আশ্চর্য সৌন্দর্যও উপলব্ধি করা যায়না, কাউকে ভালবাসা যায়না। যে নিজেকে জানেনা, চেনেনা সে তাকে সামলেও রাখতে পারেনা, অন্যকে কষ্ট দেয়, নিজে সংশয়ে থাকে, মানুষকে করুনার বেড়াজাল দিয়ে আটকে রাখার ভ্রান্ত চেষ্টা করে।

 লালনের কথায়ই আছে, "আপোনারে চিনতে পারলে, যাবে অচেনারে চেনা। "

মানুষ আমরা কখনই নিজের জন্য বাঁচিনা। মানুষ বলে মানুষ স্বার্থপর কিন্তু আদৌ কি মানুষ স্বার্থপরতাকেই আজীবন বেছে নেয়! সম্ভব নয়। অন্তত একটা সময় কিংবা শেষ সময়েও মানুষ তাকে পুরোপুরি চিনতে পারে, জানতে পারে এবং এই চেনা-জানা-শোনা নিজেকে অন্যজনের প্রতি দ্বায়িত্বশীল হতে শেখায়, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে তোলে। 

এরকম মানুষের সংখ্যা কম নয় যারা নিজেদের জানতে চায়, বুঝতে চায়, চিনতে চায় তবু অনেকেই এই বোধের বাইরে নিজেদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এরা স্বার্থপর কিন্তু একটা সময় আসে যখন এই আচ্ছন্নতাকে ছাপিয়ে প্রকাশিত হয় হতাশা, যন্ত্রনা। যাপিত জীবনের মানে, এর দর্শন লুক্কায়িত আছে প্রতিটি মানুষের জীবনানুভবে, চেতনায়। 

তাই নিজেকে লুকিয়ে না রেখে নিজের কাছে প্রকাশিত হওয়া, নিজের মধ্যে নিজেকে লালন করাই একজন প্রথিতযশা মানুষের লক্ষ্যন। এই আবিষ্কার শুধু নিজের জন্য নয় বরং সবার মংগলের জন্য। নিজের প্রকৃতির সাথে জগতভাব না মেশালে জীবন অর্থহীন, দর্শনহীন।


মোঃ মেহেদী হাসান।
সাংবাদিক  ও কলামিস্ট।