সুখ যেখানে আছে, দুঃখ থাকে তার কাছে মানুষ সর্বদা ভবিষ্যতের আশায় বর্তমানকে অতিক্রম করে। তাই কল্পনার আবর্তে তার বসবাস। চরম বাস্তবতা হচ্ছে ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস; যেখানে বিধি বাম। আর পরম বাস্তবতা হচ্ছে ভাগ্যের আনুকূল্য; যেখানে বিধি ডান।
যা চলে গেছে তা অতীত। আর যা হবে তা ভবিষ্যত্। ভবিষ্যত্ মাত্রই কল্পনা। সুতরাং বর্তমান অবস্থাই জীবন। আর মানুষ সেই অতীত, বর্তমান এবং অনাগত ভবিষ্যতের ধারক, বাহক। নিজেকে নিয়ে মানুষের এত চিন্তা ভাবনা, এটা সাময়িক নয়। অনাদিকাল থেকেই মানুষ নিজেকে নিয়েই চিন্তা করে, ভাবে।
নিজেকে সবসময় প্রমান করতে চায় তার লক্ষ্যমানে। নিজেকে না চিনলে অন্যকে বোঝা যায়না, প্রকৃতির আশ্চর্য সৌন্দর্যও উপলব্ধি করা যায়না, কাউকে ভালবাসা যায়না। যে নিজেকে জানেনা, চেনেনা সে তাকে সামলেও রাখতে পারেনা, অন্যকে কষ্ট দেয়, নিজে সংশয়ে থাকে, মানুষকে করুনার বেড়াজাল দিয়ে আটকে রাখার ভ্রান্ত চেষ্টা করে।
লালনের কথায়ই আছে, "আপোনারে চিনতে পারলে, যাবে অচেনারে চেনা। "
মানুষ আমরা কখনই নিজের জন্য বাঁচিনা। মানুষ বলে মানুষ স্বার্থপর কিন্তু আদৌ কি মানুষ স্বার্থপরতাকেই আজীবন বেছে নেয়! সম্ভব নয়। অন্তত একটা সময় কিংবা শেষ সময়েও মানুষ তাকে পুরোপুরি চিনতে পারে, জানতে পারে এবং এই চেনা-জানা-শোনা নিজেকে অন্যজনের প্রতি দ্বায়িত্বশীল হতে শেখায়, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে তোলে।
এরকম মানুষের সংখ্যা কম নয় যারা নিজেদের জানতে চায়, বুঝতে চায়, চিনতে চায় তবু অনেকেই এই বোধের বাইরে নিজেদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এরা স্বার্থপর কিন্তু একটা সময় আসে যখন এই আচ্ছন্নতাকে ছাপিয়ে প্রকাশিত হয় হতাশা, যন্ত্রনা। যাপিত জীবনের মানে, এর দর্শন লুক্কায়িত আছে প্রতিটি মানুষের জীবনানুভবে, চেতনায়।
তাই নিজেকে লুকিয়ে না রেখে নিজের কাছে প্রকাশিত হওয়া, নিজের মধ্যে নিজেকে লালন করাই একজন প্রথিতযশা মানুষের লক্ষ্যন। এই আবিষ্কার শুধু নিজের জন্য নয় বরং সবার মংগলের জন্য। নিজের প্রকৃতির সাথে জগতভাব না মেশালে জীবন অর্থহীন, দর্শনহীন।
মোঃ মেহেদী হাসান।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।