হঠাৎ
বখতিয়ার রহমান
হঠাৎ রফিক সাহেবের চিঠি এসে গেলো। রফিক সাহেব তার ট্রান্সফারের চিঠি হাতে নিয়ে খুলনা শহরের বয়রাই এসে উঠল গোধূলী সন্ধায়।জাগাটা নতুন, তবুও তাদের বেশ পছন্দ হলো। রফিক সাহেবের এক মেয়ে ও এক ছেলে, মেয়েটার নাম মিরা, আর ছেলেটার নাম হিরা। মিরা ক্লাস টুয়েল মানে ১২ ক্লাসে পড়ে, বাবার বার বার ট্রান্সফারের জন্য মিরার ২ বছর জীবন থেকে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই মিরা এবার এইচ. এস.সি পরিক্ষার্থী। আর হিরা তো হিরাই, ক্লাস এইটে ট্যালেন্ট ফুলিতে বৃত্তি পেয়ে ক্লাস নাইনে। মা গৃহিনী। থাকলো রফিক সাহেব, তিনি সরকারী কর্ম কর্তার বড় অফসার, তাই রফিক সাহেবকে দুই এক বছরের বেশি এক জাগাতে রাখেনা। ট্যানেচ ফারের চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে এ শহর থেকে ও শহর বদলি করে দেয়। নতুন বাসাতে উঠতেই যেন সব কিছু নতুন নতুন লাগছে তাদের কাছে। ঘরটা যেন শাত রঙের রং তুলিতে সাজানো। সারা রাত নতুন বাসা নিয়ে কথা বলা-বলি করতে করতে নিশী কেঁটে ভোরের সোনালী সৃর্য উদাই হলো। শুরু হলো নতুন জীবন।নিজেকে সাজানোর এক হঠাৎ
সময়। যে সময় একবার চলে গেলে তা আর কখনো ফিরে আসেনা। সময়টা ছিলো গরমের, সকালের দক্ষিনা মৃদ্য বাতাসে মিরার দিঘন কালো রেশমী চুল গুলো এলো মেলো ভাবে দুলছে। কানেতে দুলছে কান ফুল ও গোলাপী রঙের ওরনা। হাতে ধরা এক কাফ সকালের গরম কফি। কফির কাফটা হাতে নিয়ে বেলকুনীর এক কোনে দাড়িয়ে ছিলো মিরা। হঠাৎ মিরার দিকে চোঁখ পড়ে যায় পাশের বিল্ডিং এ থাকা নিলয়ের। ভালো নাম আশিকুর রহমান (নিলয়) সবাই নিলয় বলেই ডাকে। নিলয় মিরাকে দেখেই অবাকই হতো বম্ভ হয়ে যায়,মিরার অপরুপ চিহারার কারিসমা দেখে নিলয় যেন টাসকি খেয়ে গেলো। নিলয় মনে-মনে ভাবতে থাকে,আর বলতে থাকে এত সুন্দর মেয়ে এই বাড়িতে থাকে, আমি তো আগে কখনো দেখিনি। তাহলে এতো দিন কোথায় ছিলো, বাহিরে থেকে পড়তো, না নতুন ভাড়াটে। এ রমক উত্তর না জানা অনেক প্রশ্ন নিলয়ের মাথায় চরকির মতো ঘুরতে থাকে এসব কথা ভাবে আর মাথা নিচু করে থাকে, নিলয় মাথা তুলতেই মেয়েটি মানে মিরা আর নেই। হঠাৎ এক পলক দেখে দিয়েই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। নিলয় অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, বাড়িতে তার এক ভাই ও এক বোন, ভাই টা ক্লাস ওয়ানে পড়ে, বোন এবার এইচ. এস.সি পরিক্ষার্থী। মা গৃহিনী, বাবা স্কুল মাষ্টার। সব মিলে তাদের একটা সুখি পরিবার বলা যায়। ইচ্ছার আকাশে ভাবনার বাতাসে, মনের রং তুলিতে সাজানো কথা গুলো যেন বার বার বেঁজে উঠছে। কিছু বলতে ইচ্ছা করছে তার। হঠাৎ দেখা, নাম না জানা অজানা-অচিনা সেই মেয়েটির।
কে তুমি কোথায় থাকো
কোথায় তোমার ঘর,
এক পলকেই ভালো বেসে ফেলেছি
ভেবো না আমার পর।
নাম কি তোমার সুন্দরী গো
কোন ক্লাসে পড়ো,
এই কথাটার জবাব তুমি
আমায় দিতে পারো।
মুখের কথাটা বলতে বলতেই, হঠাৎ আবার দেখা গেলো মিরার। সময়টা ছিলো বৈশাখীর বিকালের শেষ পান্তের গোধূলী লগ্নে। মিরাকে দেখতে না দেখতেই হঠাৎ আবার হারিয়ে ফেলে নিলয়। নিশী কেঁটে উঠা সকালের সোনার রবি যখন সময়ের টানে হেলিয়া পড়ে বিকালের সর্যায়। তেমনি হারালো মিরা নিজেকে আড়াল করে গোধূলী সন্ধায়। তার পর থেকে মাঝে মাঝে তাদের দেখা হয়, সময়ের ফাঁক-ফুঁকে, শুধু তাকিয়ে থাকে দুজন দুজোনার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে, কিন্তুু কোন কথা না। মনের ব্যকুলতা মনেই থেকে যায়। এভাবেই পার হয়ে যায় কিছু মাস। দেখতে দেখতে প্রায় ১ বছর হতে আসে,মিরার ফাইনাল পরিক্ষা দেওয়ার সময় হয়ে যায়। পরিক্ষার কিছু টিপ্স হেল্প লাগবে বলে মিরা নিলয়ের বাসায় আসে, নিলয়ের বোনের কাছে, কারন নিলয়ের বোন নিলাও পরিক্ষার্থী। এভাবেই মিরা মাঝে মাঝে নিলয়ের বাসায় আসতো তার বোন নিলার সাথে দেখা করার জন্য, তাকে কিছু টিপ্স হেল্প করা বা হেল্প নেওয়ার জন্য, নিলয়ের মত মিরাও নিলয়ের একটু একটু পছন্দ করতো, তাই মিরা প্রায়ই নিলয়ের বাসায় আসতো তার বোন নিলার সাথে দেখা করতে। সেটা একদিন দেখে ফেলে নিলয়, আর তা দেখে নিলয় অনেক খুশি হয়। শুরু হয় না বলা ভালো বাসা বাসি, তাই নিলয় প্রায় প্রতিদিনি মিরার জন্য চিঠি লিখতো, তার পর তার বোন নিলার বইয়ের পাতার ভাঁজে সুন্দর করে রেখে দিতো। নিলয় কোন দিন সামনে আসতো না , নিলয়ের কেন যানি মনে হলো মিরার সামনে যাওয়ার সময় এখনো হয়নি। এটা ভাবতে ভাবতেই ১ বছর হয়ে গেলো অনায়াসে। বইয়ের পাতার ভাঁজ থেকে নিলয়ের দেওয়া চিঠি খানি অবশেষে মিরার হাতে এসে পড়লো। চিঠি পেয়ে মিরা তো বেজায় খুশি,মিরাও যেন চায়ছিলো যে এমনটাই হোক। " তাই হলো অবশেষে " চিঠির উত্তর দেওয়ার জন্য মিরাও একটা মিষ্টি করে চিঠি লিখলো নিলয়ের নামে। সমস্ত আবেগ নিয়ে তাকে এক পলক দেখার জন্য অপেক্ষা করা, কলেজ থেকে আসতে মিরার একটু দেরি হলে অভিমানে চোঁখ দুটি তার ছল- ছল করা, ও রিদয়ের সব টুকু উজাড় করা ভালো বাসা পূর্ন চিঠি দেওয়া। এগুলোর সব কিছু মিরা জানতো, তাই তো সে চিঠিতে এগুলোর উত্তরই লিখেছে। চিঠির উত্তর সাজাতে সাজাতে নিশী কেঁটে ভোর হয়ে যায় মিরার। সকালে বাসা থেকে বের হতেই সামনা সামনি দুজন-দুজনার দেখা হয়ে যায়। তারা কিছু বলতে চেষ্টা করে, কিন্তুু কিছুই বলতে পারেনা, নিশ্চুব হয়ে যায় পাথরের মূর্তির মতো। কিছুক্ষন পর মাথা নিচু করে দুজন-দু - দিকে চলে যায়। সকাল গড়িয়ে বিকাল হয়ে আসলো, রফিক সাহেব বারান্দাতে নিজ চিয়ারে বসে চা- খাচ্ছেন।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ......
রফিক সাহেব বলে উঠল কে.......?
বাইরে থেকে পিওন আওয়াজ করলো আমি স্যার আমি পিওন।
ভিতরে আসুন।
রফিক সাহেব দেখলো একটা চিঠি হাতে পিওনের, চিঠি
দেখেই রফিক সাহেব বুঝে গেছেন যে তার যাওয়ার সময় হয়েছে। তবুও বলে উঠে, এই তো সে দিন ট্যানেচ ফার হয়ে আসলাম। সাথে সাথে বাসার সাবাই কে জানানো হলো, তার বদলির কথা। এমনি তেই প্রায় মাসের শেষ, আগামি তিন দিনের মধ্যে এ বাসা ছেড়ে চট্রোগ্রাম শহরে যেতে হবে। বাসা গুছানোর ভিষন ব্যস্ততায় মিরা আজ দুনি ধরে নিলয়ের বাসায় যেতে পারিনি, এমন কি তার বান্ধবি নিলার সাথেও দেখা করার সুযোগ হয়নি। ওদিকে নিলয় মিরার পথ চেয়ে আছে, আজ দু-দিন যাবত নিলয় মিরার দেখতে পাচ্ছেনা, কোন খোজ খবর নেই, কি হয়েছে তাও জানে না। পরের দিন সকালে ঠিক ১০ টার দিকে তাদের নিজস্ব প্রাইভিট কারে করে চট্রোগ্রাম শহরে রওনা দিলো। সেই মুহুরতে মিরার চলে যাওয়ার বেদনা দায়ক খবরটা নিলয়ের কানে এসে পৌছায়, মিরা বার- বার পিছনে ফিরে ফিরে তাকাতে থাকে। আর অপেক্ষা করতে থাকে তার ভালো বাসার মানুষ নিলয়ের জন্য।
নিলয় তার বেদনা দায়ক ভাঙ্গা মন কে সামনে নিয়ে মিরার দিকে ছুটতে থাকে, নিলয় মিরার কাছে পৌছাতে না পৌছাতেই মিরা তাদের প্রাইভিট কারে উঠে গেছে। কিন্তুু চোঁখ দুটি তার ছল-ছল করছে, হৃদয়ের উজাড় করা সব টুকু ভালো বাসা উদ্দাম সকালে রাগে অনুরাগে পানির ন্যায় ফুটা-ফুটা হয়ে তার বাহারী ওরনাতে পড়ছে।
হঠাৎ জালানার কাঁচ দিয়ে দেখলো নিলয় তার জন্য গাড়ির পিছন পিছন ছুটছে, তবুও যেন কিছুই করার নেই, নিয়মের বাঁধা জ্বালে আটকা পড়া মিরার। নিলয়কে ছেড়ে মিরার চলে যাওয়াতে নিলয়ের বুকে বেদনার ঝড় উঠলো, ভেঙ্গে গেলো সব স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্খা চোঁখের নিমেসেই,সবি হলো যেন হঠাৎ করে। কেন জানি না মিরা আর নিলয়ের জীবন ঘুড়ির কেন সুতো ছিড়ে গেলো, ভালো বাসা শুরুতেই শেষ হয়ে গেলো. শেষ হয়ে গেলো.................#
রচনাকাল: ১২/০১/২০২০ ইং