বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল -বিপ্লব হোসেন মোল্লা


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল
-বিপ্লব হোসেন মোল্লা


একটি গল্প বৃহৎ অল্প
১৩০৬ বাংলা,আঠারোশ নিরানব্বই
আসিয়া ছিলো পৃথিবীতে
১১ই জ্যৈষ্ঠ,২৪শে মে
সে মোর কবি কাজী নজরুল।
কর্মক্ষেত্রে মুয়াজ্জিন লেটোগানের দলে
রুটির দোকানে কাজ করেছে অন্ন পাবে বলে।
অন্যায় অবিচার রুখতে
দিয়েছে প্রেমময় গানের সুর
সে মোর কবি কাজী নজরুল।

সব্যসাচী, কমল কাটা, সাম্যবাদী
অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, বিদ্রোহী
সন্ধা, সন্ধাতারা, ফাল্গুনী
ধুমকেতু, ঈশ্বর, প্রভাতী, নারী।
মৃত্যুক্ষুধা, বনগীত, কুলি-মজুর
সে মোর,সত্য কবি কাজী নজরুল।

তুমি বিদ্রোহী আমি অবাধ্য
আমি বুঝিনা কোথায় সুখের সমুদ্র
বুঝিনা কোনটা সত্য-মিথ্যা
বুঝিনা কোনটা বেদ-গীতা।
বুঝিনা কে ঘাতক কে বিচারক
বুঝিনা কে সুজন্মা কে জারজ
বুঝিনা কে রক্ষক কে ভক্ষক
বুঝিনা কেমনে জীবন স্বার্থক।
বুঝিনা কোনটা আলো আধার
বুঝিনা কোনটা মানবাধিকার
বুঝিনা কোনটা দায়িত্ব কর্তব্য
বুঝিনা কেমন মনুষ্যত্ব।
আমি বুঝি তুমি ফুল বকুল
তুমি মোর কবি কাজী নজরুল ।

আমি বুঝিনা কোনটা ঠিক-বেঠিক
বুঝিনা কে ধর্মিক কে অধার্মিক ।
বুঝিনা কে হিন্দু কে বৌদ্ধ
বুঝিনা কে মুসলিম কে খ্রিষ্ট
বুঝিনা কোন বিধাতা শ্রেষ্ট !
তুমি সমগ্র জনতার কুল
তুমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল।
২৯শে আগস্ট গিয়াছো চলি
মোদের পর করি
জ্বালা শুধু জ্বালা নয়, নিদারুণ
তুমি মোর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল।

(২৯ শে আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে-
"কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদ" ও আমার শকাহত শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করা কবিতা,)
(কোন জাতি বা ধর্মকে আঘাত করা বা কোনন মানুষকে আঘাত করা এই কবিতা বা কবির উদ্দেশ্য নই)

কবি এ.আই রানা চৌধুরীর কবিতা ‘কেমন বাঙালি’


কেমন বাঙালি
এ.আই রানা চৌধুরী


বাংলাতে না বলি কথা
বাঙালি কেমন তবে?
বাংলার বুকে জন্মে মোরা
বাঙালি হবো কবে?
কথায় কথায় ইংরেজিতে
অনেকে বলে কথা,
এসব শুনে হৃদয় আমার
পেয়েছে হাজার ব্যথা।
রফিক সালাম কেন তবে
বিলিয়ে দিলো রক্ত?
আমরা এমন জাতি হায়রে
একুশেই শুধু ভক্ত।
হাজার হাজার সালাম জানাই
একুশে ফেব্রুয়ারি,
অন্তরে নই বাঙালি যে
বাঙালি বেশ যে ধরি।


রচনা কাল: ০৪/০২/২০২০খ্রিঃ

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কবি হিমু রাশেদের কবিতা ‘পতিতা আমি’


পতিতা আমি
হিমু রাশেদ

মানুষ...নয়! পতিতা আমি ।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
মানুষ হতে ইচ্ছে হয় সখের জীবন-করাত।
পতিতা হওয়ায় এথেকে মুক্তি দেয় খুুব সহজে আমায়।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
সতি; সেতো কেতোনা ছল-চাতুরী,টাল-বাহানা নীতি প্রঙ্গা চুুরি।
আমার সেতো খোলা দোকান; পয়াস দিলেই মিলবে রসদ হাড়ী।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
সাজো তুমি কার জন্যে? বাহিরে-অন্তরবাসে।
বলিবে; স্বামীর নজর যেনো আসে।
বলি; চোখ শুধু তার কপালেই? অন্যরা অন্ধকারে!
আমি সাজি সবার হয়ে।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
আমি কাজকরি- দেহ, রক্ত ঘাম ঝরায়ে সর্বে সজ্যে,
তার তুলনা সুধইু কৃষক দিন মুজুর দ¦য়ে।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
চাকুরীর দোহায় বাহির হও সাত সকালে,
ফেরো সান্ধোপরে,
বসকে খুশি রাখাতে, মায়নে বাড়াতে, 
কতোনা রঙ্গিন চেহারায় থাকো ঘোরে।
আমার সেতো সস্তা ক্রিম
স্বল্প কাপুড়ের জামা, 
আর একটু চোখে চোখ রাখলেই শিধে সখা।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
অভিনয় করতে করতে বড়ই কøান্ত তুমি।
আর আমার অভিনয় একই; সে পতিতা আমি।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
বুঝলাম তোমার আয় হালাল,তারপরও মসজিদ
গীরজা উপসনালয়ে দানে; হাজির তুমি।
আমার আয় হারাম তারপরও কখনও যায়না- 
মসজিদ গীরজা উপসানলয়ে আমি।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
ভক্ষনে তুমি বড়ই কৃপনও বটে-
 নিজে খাবার অন্যকে খায়িয়ে ভাবো ;বেজায় সুখে।
নিজে খেলে গায়ে লাগবে, আয়ে আসবে জস।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
ঘুুস, দূর্নীতি, চোরাকারবারী ঝণঞ্জায়
গড়ো দালান কোটা;চড়ো বড়ো বড়ো গাড়ী।
আমার আছে ফুট পথ, বস্তী, কখনও পরিতক্ত তোমাদেরই বাড়ী।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
সভ্য বলে করেন যারা দাবি। 
যানেন কিনা তারা ? 
তাহাদের আর্শিবাদে সৃষ্টি হলেম এ পতিতা আমি।
তোমাদের মনরঞ্জণে উজাড় থাকি আমি।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
রক্তে রংএ যাইনা কারা চেনা;
তবে কেনো আমায় করো ঘৃণা।
আমি তোমাদেরই কারো না কারো সন্তান 
কারো বোন ,কারো মা,কারো ভগ্নি-
 হয়তো কারো ছিলাম স্ত্রী নয় প্রিয়োসী।
আমি তোমাদেরই! বাহিরের কেহ নয়। 
আবারও বলি; আমি তোমাদেরই প্রয়োজনে সৃষ্টি।
নিজেকে চরমভাবে ঘৃণা করলেও পতিতাকে নয়!
পতিতাই যে দিয়েছে; তোমাদের মাঝে বেচে থাকার সেই ঠাই।
মরেও,,এখনও  বেচে আছি,,,,,,,,,।
 তাই মানুষ নয়; পতিতা বলেই গর্ববোধকরি।

'ফিরে এসো' এ বিশ্বাস দেলোয়ার




ফিরে এসো

 এ বিশ্বাস দেলোয়ার

আমার খেয়ালে,আমার যতনে
বসতি ছিলো হৃদমাঝারে
খুব কাছের,চিরোচেনা মুখ
ভুলে থাকতে সবকিছু।

আত্মা থেকে আত্মার সঞ্চার পথ
খুব সহজেই বোধগম্য
অবাধ আসা যাওয়া ছিলো
ইচ্ছের অনুকুলে।

কোন অভিমানে চলে গেলে
দুরে…..বহুদূরে
হৃদয়ের পথ ধরে
আরো দূরে….।

এখনোও…………….
ফিরে দেখি অশুণ্য স্মৃতিচারনে
চেয়ে থাকি পথপানে
ফিরে এসো সেই পথ ধরে।

শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

নুরুল আলম বাকুর কবিতা 'বাংলা আমার মাতৃভাষা '


বাংলা আমার মাতৃভাষা 
নুরুল আলম বাকু


বাংলায় হাসি বাংলায় কাঁদি

বাংলায় জীবনের সুরতান বাঁধি
বাংলায় গাই গান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বাংলায় রচি প্রেমের পদবলি
বাংলায় বলি বিরহের কথাকলি
বাংলায় গাই জীবনের জয়গান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

নিদ জাগরনে
অনুভব অনুরননে
বাংলা করে পরম শান্তিদান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বাংলা আমার হৃদয়ের কলতান
যুগ যুগ ধরে দিয়েছে সম্মান
বাংলা ভাষা জুড়ায় যে প্রাণ
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বাংলাস্রোতে ভেসে যাক জ্বরা
বাংলাস্নানে সুচি হোক ধরা
বাংলা দানুক নতুন প্রাণ
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে
দামাল ছেলেরা উদার মনে
সালাম রফিক জব্বার বরকত
অকাতরে দানিল প্রাণ
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

মায়ের ভাষা রক্ষার তরে
বীরেরা জীবন উৎসর্গ করে
রাখলো দেশের মান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

যতদিন রবে
বাংলা এ ভবে
ততদিন যেন অনাদর অবহেলায়
তাদের এ ত্যাগ হয়না কভু ম্লান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

'হঠাৎ' বখতিয়ার রহমান


হঠাৎ
বখতিয়ার রহমান

হঠাৎ রফিক সাহেবের চিঠি এসে গেলো। রফিক সাহেব তার ট্রান্সফারের চিঠি হাতে নিয়ে খুলনা শহরের বয়রাই এসে উঠল গোধূলী সন্ধায়।জাগাটা নতুন, তবুও তাদের বেশ পছন্দ হলো। রফিক সাহেবের এক মেয়ে ও এক ছেলে, মেয়েটার নাম মিরা, আর ছেলেটার নাম হিরা। মিরা ক্লাস টুয়েল মানে ১২ ক্লাসে পড়ে, বাবার বার বার ট্রান্সফারের  জন্য মিরার ২ বছর জীবন থেকে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই মিরা এবার এইচ. এস.সি পরিক্ষার্থী। আর হিরা তো হিরাই, ক্লাস এইটে ট্যালেন্ট ফুলিতে বৃত্তি পেয়ে ক্লাস নাইনে। মা গৃহিনী। থাকলো রফিক সাহেব, তিনি সরকারী কর্ম কর্তার বড় অফসার, তাই রফিক সাহেবকে দুই এক বছরের বেশি এক জাগাতে রাখেনা। ট্যানেচ ফারের চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে এ শহর থেকে ও শহর বদলি করে দেয়। নতুন বাসাতে উঠতেই যেন সব কিছু নতুন নতুন লাগছে তাদের কাছে। ঘরটা যেন শাত রঙের রং তুলিতে সাজানো। সারা রাত নতুন বাসা নিয়ে কথা বলা-বলি করতে করতে নিশী কেঁটে ভোরের সোনালী সৃর্য উদাই হলো। শুরু হলো নতুন জীবন।নিজেকে সাজানোর এক হঠাৎ

সময়। যে সময় একবার চলে গেলে তা আর কখনো ফিরে আসেনা। সময়টা ছিলো গরমের, সকালের দক্ষিনা মৃদ্য বাতাসে মিরার দিঘন কালো রেশমী চুল গুলো এলো মেলো ভাবে দুলছে। কানেতে দুলছে কান ফুল ও গোলাপী রঙের ওরনা। হাতে ধরা এক কাফ সকালের গরম কফি। কফির কাফটা হাতে নিয়ে বেলকুনীর এক কোনে দাড়িয়ে ছিলো মিরা। হঠাৎ মিরার দিকে চোঁখ পড়ে যায় পাশের বিল্ডিং এ থাকা নিলয়ের। ভালো নাম আশিকুর রহমান (নিলয়) সবাই নিলয় বলেই ডাকে। নিলয় মিরাকে দেখেই অবাকই হতো বম্ভ হয়ে যায়,মিরার অপরুপ চিহারার কারিসমা দেখে নিলয় যেন টাসকি খেয়ে গেলো। নিলয় মনে-মনে ভাবতে থাকে,আর বলতে থাকে এত সুন্দর মেয়ে এই বাড়িতে থাকে, আমি তো আগে কখনো দেখিনি। তাহলে এতো দিন কোথায় ছিলো, বাহিরে থেকে পড়তো, না নতুন ভাড়াটে। এ রমক উত্তর না জানা অনেক প্রশ্ন নিলয়ের মাথায় চরকির মতো ঘুরতে থাকে এসব কথা ভাবে আর মাথা নিচু করে থাকে, নিলয় মাথা তুলতেই মেয়েটি মানে মিরা আর নেই। হঠাৎ এক পলক দেখে দিয়েই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। নিলয় অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, বাড়িতে তার এক ভাই ও এক বোন, ভাই টা ক্লাস ওয়ানে পড়ে, বোন এবার এইচ. এস.সি পরিক্ষার্থী। মা গৃহিনী, বাবা স্কুল মাষ্টার। সব মিলে তাদের একটা সুখি পরিবার বলা যায়। ইচ্ছার আকাশে ভাবনার বাতাসে, মনের রং তুলিতে সাজানো কথা গুলো যেন বার বার বেঁজে উঠছে। কিছু বলতে ইচ্ছা করছে তার। হঠাৎ দেখা, নাম না জানা অজানা-অচিনা সেই মেয়েটির।

কে তুমি কোথায় থাকো
কোথায় তোমার ঘর,
এক পলকেই ভালো বেসে ফেলেছি
ভেবো না আমার পর।
নাম কি তোমার সুন্দরী গো
কোন ক্লাসে পড়ো,
এই কথাটার জবাব তুমি
আমায় দিতে পারো।
মুখের কথাটা বলতে বলতেই, হঠাৎ আবার দেখা গেলো মিরার। সময়টা ছিলো বৈশাখীর বিকালের শেষ পান্তের গোধূলী লগ্নে। মিরাকে দেখতে না দেখতেই হঠাৎ আবার হারিয়ে ফেলে নিলয়। নিশী কেঁটে উঠা সকালের সোনার রবি যখন সময়ের টানে হেলিয়া পড়ে বিকালের সর্যায়। তেমনি হারালো মিরা নিজেকে আড়াল করে গোধূলী সন্ধায়। তার পর থেকে মাঝে মাঝে তাদের দেখা হয়, সময়ের ফাঁক-ফুঁকে, শুধু তাকিয়ে থাকে দুজন দুজোনার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে, কিন্তুু কোন কথা না। মনের ব্যকুলতা মনেই থেকে যায়। এভাবেই পার হয়ে যায় কিছু মাস। দেখতে দেখতে প্রায় ১ বছর হতে আসে,মিরার ফাইনাল পরিক্ষা দেওয়ার সময় হয়ে যায়। পরিক্ষার কিছু টিপ্স হেল্প লাগবে বলে মিরা নিলয়ের বাসায় আসে, নিলয়ের বোনের কাছে, কারন নিলয়ের বোন নিলাও পরিক্ষার্থী। এভাবেই মিরা মাঝে মাঝে নিলয়ের বাসায় আসতো তার বোন নিলার সাথে দেখা করার জন্য, তাকে কিছু টিপ্স হেল্প করা বা হেল্প নেওয়ার জন্য, নিলয়ের মত মিরাও নিলয়ের একটু একটু পছন্দ করতো, তাই মিরা প্রায়ই নিলয়ের বাসায় আসতো তার বোন নিলার সাথে দেখা করতে। সেটা একদিন দেখে ফেলে নিলয়, আর তা দেখে নিলয় অনেক খুশি হয়। শুরু হয় না বলা ভালো বাসা বাসি, তাই নিলয় প্রায় প্রতিদিনি মিরার জন্য চিঠি লিখতো, তার পর তার বোন নিলার বইয়ের পাতার ভাঁজে সুন্দর করে রেখে দিতো। নিলয় কোন দিন সামনে আসতো না , নিলয়ের কেন যানি মনে হলো মিরার সামনে যাওয়ার সময় এখনো হয়নি। এটা ভাবতে ভাবতেই ১ বছর হয়ে গেলো অনায়াসে। বইয়ের পাতার ভাঁজ থেকে নিলয়ের দেওয়া চিঠি খানি অবশেষে মিরার হাতে এসে পড়লো। চিঠি পেয়ে মিরা তো বেজায় খুশি,মিরাও যেন চায়ছিলো যে এমনটাই হোক। " তাই হলো অবশেষে " চিঠির উত্তর দেওয়ার জন্য মিরাও একটা মিষ্টি করে চিঠি লিখলো নিলয়ের নামে। সমস্ত আবেগ নিয়ে তাকে এক পলক দেখার জন্য অপেক্ষা করা, কলেজ থেকে আসতে মিরার একটু দেরি হলে অভিমানে চোঁখ দুটি তার ছল- ছল করা, ও রিদয়ের সব টুকু উজাড় করা ভালো বাসা পূর্ন চিঠি দেওয়া। এগুলোর সব কিছু মিরা জানতো, তাই তো সে চিঠিতে এগুলোর উত্তরই লিখেছে। চিঠির উত্তর সাজাতে সাজাতে নিশী কেঁটে ভোর হয়ে যায় মিরার। সকালে বাসা থেকে বের হতেই সামনা সামনি দুজন-দুজনার দেখা হয়ে যায়। তারা কিছু বলতে চেষ্টা করে, কিন্তুু কিছুই বলতে পারেনা, নিশ্চুব হয়ে যায় পাথরের মূর্তির মতো। কিছুক্ষন পর মাথা নিচু করে দুজন-দু - দিকে চলে যায়। সকাল গড়িয়ে বিকাল হয়ে আসলো, রফিক সাহেব বারান্দাতে নিজ চিয়ারে বসে চা- খাচ্ছেন।

হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ......
রফিক সাহেব বলে উঠল কে.......?
বাইরে থেকে পিওন আওয়াজ করলো আমি স্যার আমি পিওন।
ভিতরে আসুন।
রফিক সাহেব দেখলো একটা চিঠি হাতে পিওনের, চিঠি
দেখেই রফিক সাহেব বুঝে গেছেন যে তার যাওয়ার সময় হয়েছে। তবুও বলে উঠে, এই তো সে দিন ট্যানেচ ফার হয়ে আসলাম। সাথে সাথে বাসার সাবাই কে জানানো হলো, তার বদলির কথা। এমনি তেই প্রায় মাসের শেষ, আগামি তিন দিনের মধ্যে এ বাসা ছেড়ে চট্রোগ্রাম শহরে যেতে হবে। বাসা গুছানোর ভিষন ব্যস্ততায় মিরা আজ দুনি ধরে নিলয়ের বাসায় যেতে পারিনি, এমন কি তার বান্ধবি নিলার সাথেও দেখা করার সুযোগ হয়নি। ওদিকে নিলয় মিরার পথ চেয়ে আছে, আজ দু-দিন যাবত নিলয় মিরার দেখতে পাচ্ছেনা, কোন খোজ খবর নেই, কি হয়েছে তাও জানে না। পরের দিন সকালে ঠিক ১০ টার দিকে তাদের নিজস্ব প্রাইভিট কারে করে চট্রোগ্রাম শহরে রওনা দিলো। সেই মুহুরতে মিরার চলে যাওয়ার বেদনা দায়ক খবরটা নিলয়ের কানে এসে পৌছায়, মিরা বার- বার পিছনে ফিরে ফিরে তাকাতে থাকে। আর অপেক্ষা করতে থাকে তার ভালো বাসার মানুষ নিলয়ের জন্য।

নিলয় তার বেদনা দায়ক ভাঙ্গা মন কে সামনে নিয়ে মিরার দিকে ছুটতে থাকে, নিলয় মিরার কাছে পৌছাতে না পৌছাতেই মিরা তাদের প্রাইভিট কারে উঠে গেছে। কিন্তুু চোঁখ দুটি তার ছল-ছল করছে, হৃদয়ের উজাড় করা সব টুকু ভালো বাসা উদ্দাম সকালে রাগে অনুরাগে পানির ন্যায় ফুটা-ফুটা হয়ে তার বাহারী ওরনাতে পড়ছে।
হঠাৎ জালানার কাঁচ দিয়ে দেখলো নিলয় তার জন্য গাড়ির পিছন পিছন ছুটছে, তবুও যেন কিছুই করার নেই, নিয়মের বাঁধা জ্বালে আটকা পড়া মিরার। নিলয়কে ছেড়ে মিরার চলে যাওয়াতে নিলয়ের বুকে বেদনার ঝড় উঠলো, ভেঙ্গে গেলো সব স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্খা চোঁখের নিমেসেই,সবি হলো যেন হঠাৎ করে। কেন জানি না মিরা আর নিলয়ের জীবন ঘুড়ির কেন সুতো ছিড়ে গেলো, ভালো বাসা শুরুতেই শেষ হয়ে গেলো. শেষ হয়ে গেলো.................#
রচনাকাল: ১২/০১/২০২০ ইং

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

দনিয়া পাঠাগার-থিয়েটার হল

বোরহান বিশ্বাস: দক্ষিণ দনিয়ার গোয়ালবাড়ি মোড়ের শাহী মসজিদ সড়ক, বায়তুস সালাম জামে মসজিদ সড়ক কিংবা গোয়াল বাড়ি সড়ক- তেমন প্রশস্ত নয়। তবে এ সরু সড়কগুলোর যে কোনো একটি দিয়েই চলে যাওয়া যায়  দনিয়া পাঠাগার ও দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলে।




















পাড়া-মহল্লায় পাঠাগার থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু স্টুডিও থিয়েটার হল? সুস্থ বিনোদনের জন্য যে তাও হতে পারে সেটি প্রমাণ করেছেন দনিয়ার কিছু সংস্কৃতিমনা তরুণ। অপেক্ষাকৃত কম উন্নত এলাকাও যে সাংস্কৃতিক চর্চার পীঠস্থান হতে পারে তা তারা করে দেখিয়েছেন।

আশির দশকের একেবারে শেষ ভাগে কয়েকজন তরুণের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে দনিয়া পাঠাগার। গোয়ালবাড়ি মোড়ের সেদিনের সেই টিনের ঘরের পাঠাগার থেকেই গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের স্টুডিও থিয়েটার হল। দনিয়া পাঠাগারের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে এটি। এখানে একসঙ্গে ১০০ জন দর্শক প্রদর্শিত নাটক কিংবা চলচ্চিত্র দেখতে পারেন। এই মঞ্চে এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সফল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আর প্রতিটি অনুষ্ঠানেই দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি দনিয়া পাঠাগারের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এটি উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জআমান নূর এমপি। উদ্বোধনী দিন থেকে চার দিনব্যাপি চলে আন্তর্জাতিক একক নাট্যোৎসব (ভারতের তিনটি ও বাংলাদেশের চারটি দল এতে অংশ নেয়)। এরপর ২২ থেকে ২৬ মার্চ চলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র উৎসব।

এ বছর ২৩ মার্চ দনিয়া সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র উৎসবে স্কুল ছাত্রছাত্রীরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ উপভোগ করে। এছাড়া শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘দীপু নাম্বার টু’ এবং মঞ্চনাটক ‘অতঃপর মাধো’র প্রদর্শনীও উপভোগ করে শিক্ষার্থীরা।

গত ২১ জুন দনিয়া সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এবং দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলের সহযোগিতায় ‘আধুনিক বাংলা নাট্যে নিজস্বতার খোঁজ’ শীর্ষক সেমিনারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশি-বিদেশি সংস্কৃতিকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন। এতে ভাবনা থিয়েটার ম্যাগাজিন, কলকাতার সম্পাদক অভীক ভট্টাচার্যের প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসার আহমেদ, নাট্যজন অনন্ত হীরা এবং নাট্য সমালোচক আবু সাঈদ তুলু। অনুষ্ঠানে ভারতের বিশিষ্ট নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামীও আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছ।

দনিয়া পাঠাগারের সাবেক সভাপতি, দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলের পরিচালক এবং ঢাকার মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহনেওয়াজ।

গোয়ালবাড়ির এমন সরু পথ দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরের নাট্যজনেরা যখন সেমিনারে আসছিলেন তাদের অভিব্যক্তি কেমন ছিল?

জানতে চাইলে শাহনেওয়াজ বললেন, রাস্তার ছোট্ট পরিসর দেখে প্রথম দিকে তারা কিছুটা সঙ্কোচবোধ করলেও পরে সবাই আমাদের নাট্যমঞ্চ নির্মাণের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সেমিনারের এক পর্যায়ে তারা বলেন, বড় বড় হল না করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এমন ছোট ছোট স্টুডিও থিয়েটার হল করলে মানুষ উৎসাহিত হতো।

সারা বছর দর্শকের চাহিদা মেটানো হবে কী করে? কিংবা এ মঞ্চের দর্শকইবা কারা হবেন?

শাহনেওয়াজ বলেন,  “আমাদের ২৫ জন মঞ্চবন্ধু সদস্য আছেন। যারা এক হাজার টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য যে কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন। এই সদস্যদের মধ্যে চাকরিজীবি, গৃহিণী ও ছাত্ররাও আছেন। যে কেউ মাত্র দুই হাজার ৫০০ টাকা ভাড়ায় হলটিতে অনুষ্ঠান করার সব ধরনের সুবিধা পাবেন।”

নাট্যমঞ্চ তৈরির ভাবনা নিয়ে শাহওনেওয়াজ বললেন,  “আমাদের এই দনিয়া এলাকায় উল্লেখযোগ্য মাঠ কিংবা শিশুপার্ক নেই। দনিয়া সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দিবসে আমরা রাস্তার পাশে অনুষ্ঠান করতাম। আমাদের প্রধান দর্শক ছিলেন মা ও শিশুরা।

“নামাজের জন্য যখন দীর্ঘ সময় অনুষ্ঠান বিরতি রাখা হতো; তখন দেখতাম, কি অদম্য স্পৃহা নিয়ে তারা বসে আছেন। রাস্তার পাশে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চ থেকে যখন মা ও শিশুদের মুখগুলো দেখতাম নিজেদের অসহায় মনে হতো। ভাবতাম, ওদের জন্য কি কিছুই করার নেই আমাদের? সেই দায়িত্ববোধ থেকেই নাটক কিংবা বিনোদনে জন্য স্থায়ী কোনো কিছু করার চিন্তা করতে থাকি আমরা।”

স্মৃতি হাতড়ে তিনি বললেন,   “১৯৯৩ সালে আমরা কয়েকজন মিলে দনিয়া সাংস্কৃতিক জোট গঠন করি। তখন এ অঞ্চলে কোনো প্রভাতফেরি হতো না। আমরা জোটের পক্ষ থেকে একুশ উদযাপন পরিষদ গঠন করে দনিয়া গোয়াল বাড়ি মোড়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করি। প্রভাতফেরির আয়োজন করি।

“সেই প্রভাতফেরিতে বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা ফুল দিতে আসে। এ ঘটনায় আমরা স্বার্থক হয়েছি বলে মনে করি। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা আমরাই এ অঞ্চলে প্রথম চালু করি। এখন বিভিন্ন স্কুলও এটা করে।”

মঞ্চ তৈরির পেছনে আরো একটি অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন শাহনেওয়াজ।

তিনি বলেন, “দনিয়া এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কয়েকটি হাইস্কুল আছে। আমরা এখানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি। বইমেলার আয়োজন করি। বিভিন্ন দিবসে সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করি। সেখানে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এমনি একটি উৎসবে আমরা টিকেট কেটে দর্শকদের নাটক দেখানোর ব্যবস্থা করি। বিস্ময়করভাবে অনুষ্ঠানের আগেই সব টিকেট শেষ হয়ে যায়। তখন আমাদের মনে হলো এখানে একটি নাটকের মঞ্চ করাই যায়।”

“দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলটি করতে আমাদের সাহস জুগিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। আমরা যখন তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি তারা আমাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। সরকারের কাছ থেকেও আমরা কিছু সহযোগিতা পেয়েছি”, বলেন শাহনেওয়াজ।#

কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত তেওতা জমিদার বাড়ি

বোরহান বিশ্বাস: প্রমীলা-নজরুল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কিছুদিন আগে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ির মাঠ সংলগ্ন ‘নজরুল-প্রমীলা স্মৃতি মঞ্চে’ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইফুল ভাইয়ের আমন্ত্রণে সেখানে যাওয়া  হয় আমার।
স্থানীয় কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে জমিদার বাড়িতে বিকেল কাটাতে ছুটে এসেছে।  জেনেসিস থিয়েটারের নূর হোসেন রানা ভাই, ইমন, ইকবাল, সমুদ্র আর আমিও ছিলাম সেদিন। শুকিয়ে যাওয়া ছোট্ট খাল পেরিয়ে জমিদার বাড়ির পেছনের সবুজ ঘাসের মাঠে উঠতেই গোবর দিয়ে বানানো ঘুঁটে চোখে পড়লো।
সূর্য ডুবু ডুবু। ইকবালের ক্যামেরায় পড়ন্ত বিকেলে জমিদার বাড়ির কিছু ছবি তুলে ফেললাম। বেশ পুরনো জমিদার বাড়ি। অনেক জায়গায় ইট খুলে পড়েছে। পলেস্তারা নেই অনেক দেয়ালেই। অযত্নে থাকার ছাপ সবখানে। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই মূত্রের উৎকট গন্ধ নাকে এলো। ছোট পরিসরের দরজা দিয়ে ঘরের ভেতর তাকিয়ে মাটির ঢিবি চোখে পড়লো। অনেকদিন অব্যবহৃত থাকলে এমনটা হয়।
জমিদার বাড়ির সামনের অংশে কাঁটা তারের বেড়া। যা তেমন কোনো কাজে আসে না বলে দেখে মনে হলো। এলাকার লোকজনও একই কথাই বললেন।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ অনন্ত কুমার সরকার আমাদের বললেন, ১৯৮৮ সালের বন্যায়ও এই জমিদার বাড়িটি অনেক খোলামেলা ছিল। পাশের যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে অনেক পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই জমিদার বাড়ির মাঠ ও এর আশপাশে বসত গড়ে থাকছিল।
কয়েক বছর আগে সরকার এখান থেকে সবাইকে উচ্ছেদ করে কাঁটা তারের বেড়া লাগিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। এখন আর কোনো পরিবার এখানে থাকে না। এটি দেখভালের জন্য সরকার থেকে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জমিদার বাড়ির পশ্চিমে তেওতা ইউনিয়ন পরিষদ, দক্ষিণে তেওতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলা ভূমি অফিস এবং ঈদগাহ মাঠ। বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালকের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের জন্য সতর্কতামূলক একটি বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়েছে।

জমিদার বাড়ির সামনের বিশাল নবরত্ন মন্দিরটি নতুন করে রঙ করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এই জমিদার বাড়িটি দেখতে আসেন। তবে থাকার জন্য তেমন ভালো কোন ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন অনন্ত।
তেওতা জমিদার বাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন একটি জমিদার বাড়ি ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার তেওতা নামক গ্রামে অবস্থিত। বর্তমানে এই স্থাপনাটির মালিক বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

বিভিন্ন ইতিহাস থেকে জানতে পারি, ১৭শ শতকে জমিদার পঞ্চানন সেন এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। যদিও পঞ্চানন সেন এক সময় খুব দরিদ্র ছিলেন তবে  দিনাজপুর অঞ্চলে তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পর তিনি এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তবে পঞ্চানন সেনের পর এখানে  জয়শংকর ও হেমশংকর তাদের জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু দেশ ভাগের পর তারা দুজনেই ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
এই জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা দেবীর বাড়ি। তাই জমিদার বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কবি নজরুল ও আশালতা সেনগুপ্ত প্রমীলা (দুলি) দেবীর প্রেমের স্মৃতি। প্রমীলার রুপে মুগ্ধ হয়ে নজরুল লিখেছিলে, ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ’।

প্রমীলা দেবীর বাবা বসন্ত সেনের ভাতিজা বীরেন সেনের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের পরিচয় সূত্রে প্রায়ই তাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। এভাবেই প্রমীলা দেবীর সঙ্গে নজরুলের প্রেম। নজরুল অনেকবারই তেওতা এসেছেন; থেকেছেন। লিখেছেন ছোট হিটলার, হারাছেলের চিঠি, ইছামতি, লিচুচোরসহ অনেক কবিতা, গান ও কীর্তন। ছোট হিটলার কবিতায় কবি বলছেন, ‘‘ভয় করি না পোলিশদের জার্মানির ঐ ভাওতাকে/ কাঁপিয়ে দিতে পারি আমার মামার বাড়ি তেওতাকে…।’’


‘কুহেলিকা’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট এখানে বসেই  রচনা করেছেন নজরুল। জমিদার বাড়ির কাছে যমুনা নদীর সৌন্দর্য দেখে কবি লিখেছিলেন ‘আমার কোন কূলে আজ ভিড়লো তরী…’।


পর্যটকদের থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা এবং জমিদার বাড়ির অন্দর মহলকে সুসজ্জিত করে পুরাকীর্তির এই স্থানটিকে আকর্ষণীয় করে তোলা এখন সময়ের দাবি। সরকার এ দিকটায় আরো মনযোগী হলে ঢাকার অদূরের এই তেওতা জমিদার বাড়িটি হতে পারে পর্যটকদের জন্য এক দারুণ আকর্ষণীয় স্থান।

আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক চিঠি

একদিন ক্লাসে একজন ম্যাডাম আমাদেরকে আমেরিকার ষোড়শ রাষ্ট্রপতির আব্রাহাম লিংকনের কাছে চিঠিটি পড়তে বললেন, যা তিনি তাঁর সন্তানের জন্য প্রধান শিক্ষকের জন্য লিখেছিলেন; সেই অনুসারে আমরা সেই ক্লাসে পড়েছি। পরের ক্লাসে, তিনি এসেছিলেন এবং চিঠিতে আমরা কতগুলি মানবিক গুণাবলি পেয়েছি তা জানতে চেয়েছিলাম। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকেই উত্তর দিচ্ছিলাম, কিন্তু ম্যাডাম বোর্ডে একটি গোল চিহ্ন রেখে 'আব্রাহাম লিংকনের চিঠিতে মানবিক গুণাবলী' লিখেছিলেন এবং তারপরে বোর্ডে গিয়ে প্রত্যেককে চিঠিতে বর্ণিত একটি গুণ লিখতে বলেছিলেন। এক, দুই, তিনটি এভাবে লেখার সময় আমরা চিঠিটি সত্যিই কিছুটা বুঝতে পারি। আমি হাসছিলাম আর বলছিলাম আমরা কত বোকা; আমাদের কেবল একটি চিঠি বোঝার ক্ষমতা নেই।



আমরা যে গুণটি প্রথম আবিষ্কার করেছি তা হ'ল জ্ঞান প্রতিটি আদর্শ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়। শুধুমাত্র তখন. লিংকন বলেছেন প্রত্যেককে খাড়া হওয়া উচিত; পাশাপাশি মনে করিয়ে দেওয়া, সমস্ত মানুষ সত্যবাদী হয় না। আমরা ভাবি না যে লোকেদের খারাপ হিসাবে আমরা জানি বা স্বীকৃতি দিয়েছি তারা ভুল বা আমরা ভাবতে পারি যে অন্যেরা যারা মন্দ বলে মনে করে তাদের দ্বারা উপকৃত হয়, আমরা মনে করি না যে তাদের মতো কেউ আছে যার বীর শক্তি আছে। এই চিঠিতে আছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই ভাবেন যে রাজনীতিবিদরা সর্বদা তাদের নিজের স্বার্থের সন্ধান করেন, তারা নিজেরাই যা কিছু করতে পারেন তা করতে পারেন, তবে তাদের পিছনে এমন কেউ আছেন যিনি সত্যিকার অর্থেই জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমাদের সবার এই রাজনীতি সম্পর্কে আরও কিছুটা জ্ঞান থাকা দরকার।


আব্রাহাম লিংকন চিঠিতে এতটাই লিখেছিলেন যে এক ডলারের মূল্য পাঁচ ডলারেরও বেশি। আমাদের প্রত্যেকের জ্ঞান থাকা জরুরী। সমাজে এমন ব্যক্তিরা আছেন যাঁরা সর্বদা অন্যের সম্পদের লোভী হন, কখন অর্থ ও সম্পদ নেওয়ার জন্য কাউকে প্রতারণা বা ভয় দেখান; এ জাতীয় লোকেরা এটি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ব-নির্ভরশীল এবং নিজের ভাল কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াও সহায়ক।


আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা খুব সহজেই পরাজয় মেনে নিতে পারেন না, আমাদের মনে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বা আমাদের প্রতিপক্ষের প্রতি বিরক্তি রয়েছে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অনেক সময় আমি অপ্রত্যাশিত কিছু করতে দ্বিধা করি না এবং কখনও কখনও পরাজিত ব্যক্তি নিজেকে বিভিন্নভাবে আঘাত করে; এটি অনেক কিছুই থেকে লুকায়। পরাজয়কে কীভাবে গ্রহণ করবেন তা শিখিয়ে দেওয়ার জন্যও তিনি শিক্ষককে অনুরোধ করেছিলেন। আব্রাহাম লিংকন তাকে বিজয়ল্লাস কীভাবে উপভোগ করবেন তা শেখানোর জন্য শিক্ষককে অনুরোধ করেছিলেন, যার অর্থ হ'ল পরাজয়টি যেমন মেনে নেওয়া উচিত এবং বিজয়োল্লারও একটি মানদণ্ড রয়েছে।


এছাড়াও অন্যান্য যে বিষয়টি তিনি শিক্ষককে সন্তানের শেখানোর জন্য প্রত্যাশা করেছিলেন তা হ'ল কীভাবে দুঃখের মুখে হাসি ফোটানো, বুঝতে হবে যে কাঁধে কোনও লজ্জা নেই, নিষ্ঠুর ও নির্মম মানুষকে ঘৃণা করতে শিখতে হবে এবং অতিরিক্ত স্বাচ্ছন্দ্যে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি চেয়েছিলেন যে শিক্ষক সন্তানের সাথে সদয় আচরণ করুন তবে তা করা থেকে বিরত থাকুন। এই প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিশ্বাস করেছিলেন যে আগুনটি খাঁটি ইস্পাত। তিনি চাননি যে তাঁর সন্তানের খুব সহজ কিছু নিয়ে অধৈর্য হয়ে উঠুন, কিন্তু চিঠিতে তাঁর শিক্ষককে তাকে ধৈর্য ধরার সাহস দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি আবার বলেছিলেন যে সন্তানের নিজের মধ্যে অতিমানবিক আস্থা থাকা উচিত এবং মানবজাতির প্রতি তার ভাল বিশ্বাস থাকতে হবে।
একজন শিক্ষকের জন্য আব্রাহাম লিংকনের যে চিঠিটি খুব সাবধানতার সাথে পড়তে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে তার মতো, একইভাবে সমস্ত শিক্ষার্থী, পিতা-মাতা, সমাজের অন্যান্য সদস্য, জনপ্রতিনিধি, যে কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সমস্ত সাধারণ মানুষ। এই চিঠিটি, বহু ভাষায় অনুবাদিত, কেবল আব্রাহাম লিংকন এবং এটি যে শিক্ষক লিখেছিলেন তা ভাবা উচিত নয়; এটি সমস্ত অভিভাবকদের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়াও, আমরা কি বুঝতে পারি না যে উপরের গুণগুলি সবার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত? আদর্শ শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মান ও সম্মান দেওয়া হয়।

বর্ষা মুখর দিন


বৃষ্টি কখন যে শুরু হয়েছে আর কখনইবা থামবে- দুটোর কোনটারই ইয়ত্তা নেই। শহরে বর্ষা মানেই এক হাঁটু জল, কাদাপানি মাড়িয়ে অফিস ছুটতে থাকা। ভোগান্তির মাত্রা এমনই চরমে যে, রবি ঠাকুরের ‘ঝর ঝর মুখর বাদল’ উপভোগ্য হয়ে ওঠে না। ফুটপাত থেকে দালানের চৌকাঠ, সবখানেই জলের বাড়বাড়ন্ত। বর্ষা নগর জীবনে প্রাণের স্পন্দন থামিয়ে দিয়ে যায় যেন।


অথচ শৈশবে এই বর্ষায়, একটা ‘রেইনি ডে’ আশীর্বাদ হয়ে আসতো। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ রগরাতে রগরাতে যেদিন অঝোর বৃষ্টির সাথে দেখা হতো, সেই দিনের মত আনন্দময় আর কিছুই যেন হয় না।

মফস্বলের শেষ দিকটায় দিগন্ত জোড়া মাঠে একবার একটা মার্বেল কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই ছিল সর্বোচ্চ সুখকর স্মৃতি। কিন্তু বলা-কওয়াহীন এই বর্ষার আগমন সেই স্মৃতিকে এক ঝটকায় কোথায় যেন দমকা বাতাসের সাথে উড়িয়ে নিল।

এমন দিনে মা বলতেন, ‘থাক আজ আর স্কুলে গিয়ে কাজ নেই’। এরপরই অপ্রত্যাশিত দিনটা কীভাবে কাটবে তার পরিকল্পনা শুরু হয়ে যেত। ঘরের দেরাজ, উঠোনের কোনা বা সিলিং থেকে বের হতো কিম্ভূত সব খেলনা। যেন গুপ্তধন। শৈশবের খেলনা বলতে তো সেই। প্ল্যাস্টিকের আধিক্য সেসময় ছিল না। হয় জোড়াতালি দেওয়া কাঠের বাক্স, যার ভেতরে ভরা রাজ্যের মনি-মুক্তো আর মনোপলি। লাটিম, মার্বেল, ম্যাচের খোল, ভাঙা পিস্তল, চুম্বক কত কি!

খেলনার দিকে শুধু তাকিয়ে থেকেই গোটা সময় বয়ে যেত। সকালটা কোথা দিয়ে যে উড়ে যেত! সাথে সেসময় সঙ্গী-সাথী পাড়ার ছেলেমেয়েরা। বৃষ্টি না থামলে কী হবে; ঘরে বসে থাকার জো নেই ডানপিটে শৈশবের।    

মা অবশ্য এতো কিছুর খোঁজ রাখতেন না। হারাধনের ছেলের মতো কোথায় যেতাম কী করতাম তা নিয়ে ভাবার অত অবকাশ কোথায় একান্নবর্তী পরিবারে।

ঘরে ফেরা হতো কেবল দুপুরে খাওয়ার সময়। দুটো খেয়েদেয়ে মা যখন ভাতঘুমের আয়োজন করতেন, আমরা বসতাম কমিকস কিংবা গল্পের বই নিয়ে। বর্ষার রাজ্য থেকে কয়েক মুহূর্তের জন্য হারিয়ে যেতাম অজানা কোনও দুনিয়ায়।

মা ঘুমিয়ে পড়েছে; যখনই বুঝতে পারতাম, গুটিগুটি পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছি ততক্ষণে। বৃষ্টি যদিও ছাড়েনি তখন। ধরে এসেছে কিছুটা সবে। তাতে কী? হাতঘড়ি না দেখেও বলে দেয়া যেত এখন সময় বেরিয়ে পড়ার। মাদবড় বাড়ি বা বড় বাড়ির চিলেকোঠায় ততক্ষণে জমায়েত পাড়ার বিচ্ছুগুলো। কার গাছে হানা দেয়া যায়, নতুন কী বানানো যায় জলঝড়ার দিনে বা কিছুই না হলে নিদেনপক্ষে জামাই-বউ খেলার ফিকির জমে গেছে।

দিনশেষে সরকার বাড়ির আতা, কর্নেল সাহেবের সাধের লাল পেয়ারা সাবার করে তবেই ঘরে ফেরা। একরাশ মন খারাপ ভর করতো তখন। সেই তো কাল আবার স্যারের কড়া শাসন। পড়তে বসে কেবলই জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে রাতের আকাশে কী যেন দেখার চেষ্টা হতো। যেন এই রেইনি ডে শেষ না হয়। দিব্যি আর মানতের শেষ থাকতো না।

ছেলেবেলার সেসব পাগলামি মনে পড়লে এখন কেবল হাসি পায়।

মিটিমিটি হাসি থেকে সম্বিৎ ফিরে এলো বাসের কন্ডাক্টরের ডাকে- ‘মামা ভাড়াটা দেন’।

চারপাশে চেয়ে দেখি বৃষ্টির সকালে পরিবহন সংকটে প্রাণের শহর ঢাকা। তিন বাসের যাত্রী উঠে পড়েছে একটা গাড়িতে। রেইনি ডে’তে একটা সিট অন্তত আমার কপালে জুটেছে, তাই বা কম কিসে?

মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কবি বিপ্লব হোসেন মোল্লা’র কবিতা ‘একমুঠো ভাত ’



একমুঠো ভাত
           
          বিপ্লব হোসেন মোল্ল


       কখনো কি কেঁদেছো তুমি
             একমুঠো ভাতের জন্য
কখনো কি পেতেছো তুমি,
             পাঁচটি টাকার জন্য হস্ত?
                     তবে কি বুঝবে!

নদী মাঝে লঞ্চ চলে
                        কাঁদে কত শিশু
পথে পথে ভাত খুজতে
                         হেঁটেছে কি যিশু?
হাঁটেনি যিশু, কাঁদেনা কারো মন
কাঁদে যত শিশু, তার অসহায় সজন!
                    ধমক দেয় সাহেব দাতা
                           টাকা দেবো না যা!
ওরে সাহেব, তেহেরী কাচ্চি খাও
অর্ধেক খাও অর্ধেক ফেলাও!
কেক কাঁটো শুভ জন্মদিনে
ভাবনা, আছে কজন অনাহারে?
একমুঠো  ভাত করনা কেউকে প্রদান
মঞ্চ-মাতাও ;বলো আমি খাদ্যের ভগবান।

হায়রে খাবার হায়রে মানুষ
হারিয়ে তর বিবেক, হসনে অমানুষ!
                    ঘুরে দেখ আজ ঘুরে দেখ
                                  বিদেশ ঘুরে নয়,
তুই কি সেই মানুষের শ্রেয়?
কিসে তর এত বড়াই
                        কিসের অহংকার
একদিন হবে তর সবি মিছে
              যেদিন হবে পাপের যোগ্য প্রমাণ।
খুলে রাখ তর কান
দিতে হবে সেই চোখের জলের দাম!
ধমক দিয়ে নয়,লাঠিঘাতে নয়
দন্ড তার শ্রেষ্ঠ বিচারখান।
                                     ওরে সাহেব,
চাইলে ভিক্ষা বলো যে ব্যবসা
                           হও একদিকে কাত
     কে দেবে,ঐ একমুঠো ভাত?

 রচনাকাল:   ২৬/০১/২০২০,মাওয়া ঘাট

কবি জাহাঙ্গীর এ. মল্লিক’র কবিতা ‘ঘুম-প্রেম’


ঘুম-প্রেম 
                                জাহাঙ্গীর এ. মল্লিক

মোহনীয় আর মায়াময় ঘুম-নেপথ্য ;
সাধারন বিবরন-বর্জিত সুখাচ্ছন্নতায় ললিত
   মিলিত মানব-মানবী বলিত.........
ধীরে শুয়ে থাকিবার আহ্বল্লাদীয় ঘুম । 
ভাল বাসি আমি ; আমার.....
শিঁকড়-বৃত্তের দহরম-মহরম
হারানোর আগে খোঁজা শব্দম
উল্টো রথের পীঠে সব হাজারময়ম
                       ....শান্তি আশ্রম ,
পূর্বতম বংশ-গোষ্ঠী অহর্নিশ সরগরম
                     ঘুম-ঘুম সহ্যম ....।
মোহ আর মায়াময় প্রেম-নেপথ্য ;
অসাধারন বিবর্তন-অর্জিত অবধারিত...
‘অলিত-গলিত’..পালিত........
বধিরে ঘুম-চুম বাসিবার প্রত্যায়িত,
ভালবাসি অঅমি ; আমার......
সৌধিও বৃত্তের পরম-মরম,
পাওয়া না পাওয়ার মর্মে শরম ,
সোজা-পথে ঘোরা ঘুম-প্রেম মম
    প্রেম সাহসিক  ....শান্তি আশ্রম ।
পরতম অমরত্বময় সমাধী সম
সাধু-প্রেম বোধক ।

শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কবি মুন্সী কবির এর কবিতা ‘২১শে'র গজল’


২১শে'র গজল
-মুন্সী কবির

ফাগুন আসি-আসি
পলাশ বনে বড় উদ্বেল শত কু্ঁড়ি,
ফুল হবে যবে তবে অঞ্জলী হবে
ত্যাগের অহমে জ্বলবে ভাষার মিনারে গৌরবে।
বাতাসে তখন শুধু একটাই তান
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো মাতৃভাষার গান।
বিটোফেন হেরে যাবে এই গানে
সুরের বাঁশীও নিভে যাবে অভিমানে,
মিঞা তানসেনের সেই সে অগ্নি ধ্যানে
তনয়া তানসেন করবে যে আলাপ
তাতেও মেঘের চোখে শুধু বৃষ্টির বিলাপ।
সারা বিশ্বে মাতৃভাষার লাগি
শুধু একটাই গজল আজ
প্রভাতফেরীর মিছিলে যা ঝরিছে অনর্গল
হতবাক হবে বিশ্ব বেঁচে রবে যত পল!
একুশের এই মন্ত্রবীজ উড়িছে সপ্ত গগনে
বাংলা, বাঙালি,বাংলা ভাষা আজ বিশ্ব মহিমান্বে।।

এ.আই রানা চৌধুরী‘র কবিতা ‘মা এখন বৃদ্ধাশ্রমে’



মা এখন বৃদ্ধাশ্রমে

এ.আই রানা চৌধুরী

ষাট বছর পেরিয়েছে,
মা এখন বৃদ্ধাশ্রমে;
পেছনে ক্রন্দনরত সোনালী অতীত।
একটা সময় ছিল,
মায়ের স্নেহের খোকা মা মা বলে
সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো।
বাবা বকলে মায়ের আঁচলে মুখ লুকাতো।
কেউ মারলে তবে নালিশ হতো-
"মা দেখ, ছোটন আমায় মেরেছে।"
স্কুলে যাবে না বলে
গোটা ডজন বায়না,
মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর স্বাদ নিতে
এক চিলতে ভুল হতো না খোকার।
ঘুম না আসলে-
"একটা গল্প শোনাও না মা।"
রাজা-রানি পরীর গল্প শুনে তবেই
ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাতো সেই ছোট্ট খোকা।
ঘুম ভাঙলে আলতো করে চুমু পেত,
প্রত্যুত্তরে মায়ের গালেও পড়তো ভালোবাসার দাগ।
দিনে দিনে দিন বদলেছে,
নতুন প্রেক্ষাপট জন্ম নিয়েছে
জীবনের রংচঙে আঙিনায়।
যৌবনে পদার্পণ করেছে সেদিনের সেই ছোট্ট খোকা।
আর মা,
এখন আর আগের মতো নেই।
বার্ধক্য ছুঁয়েছে তাঁর অস্তিত্বকে;
জন্ম নিয়েছে নতুন প্রেক্ষাপট।
খোকা এখন সুখে থাকে অগাধ সম্ভ্রমে
একলা একা পথ চলে মা
এখন বৃদ্ধাশ্রমে।