রবিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৯

অধিকাংশ লেখকই পান না লেখক সম্মান ও সম্মানী: মোজাম্মেল হক নিয়োগী


সব লেখক পরিশ্রমের মূল্য পান না। কেউ কেউ পান। অথচ লেখকদের পরিশ্রমের অন্ত নেই। সারাদিন চাকরি করে আরামের রাতটিকে বেছে নেন লেখার জন্য, পড়ার জন্য। সেই খাটাখাটির ফলে অধিকাংশ লেখকই সম্মান ও সম্মানী পান না; বরং অনেকক্ষেত্রেই সমাজের চলমান বৈষয়িক চাপে অসম্মানিত হন। অনেক নতুন লেখক প্রতারিতও হন এমন নজিরও আমাদের চোখে পড়ে। এর পিছনে প্রধান কারণ হলো বই বিক্রি না হওয়া। এদেশের মানুষ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন কিনতে পারলেও ৮০ টাকা দিয়ে একটি বই কিনতে পারে না। সন্তানের জন্মদিনে হাজার হাজার টাকা খরচ করে উৎসব করলেও তাদের মনোবিকাশের জন্য একশ টাকা খরচ করতে গেলেই হাত কাঁপে। ঈদ-পার্বনে হাজার হাজার টাকা খরচ করলেও শিশুদের হাতে বই দিতে গেলেই টাকার বড় অভাব দেখা দেয়। এক কেজি ভালো মানের চালের দাম যেখানে সত্তর টাকা সেখানে ৮০ টাকা দামের বইয়ের দাম অধিক দাম বলে বই কিনতে চান না। বইমেলায় এসে ঘুরেফিরে পেটপুরে যে টাকার খাওয়া হয় তার এক চতুর্থাংশ টাকারও বই কেনা হয় না। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ, অথচ বই কেনার জন্য সরকারের টাকা নেই। বইয়ের দোকানগুলো আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে আর সেখানে হচ্ছে কাপড়ের আর খাবারের দোকান। আজিজ সুপার মার্কেট এর একটি উদাহরণ। লেখকরা সমাজের বিবেক, সমাজকে পথ দেখায়। অথচ তাঁদের ত্যাগের মূল্য খুব সামান্যই ভাগ্যে জুটে।
ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সময় পড়ার জন্য পড়ুয়া জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে অথচ সে গবেষণায় বাংলাদেশের নামগন্ধও নেই। স্বাধীনতার পর থেকে দেখছি মানুষ মেধা বিকাশের চিন্তা না করে কেবল কুইক মানির দিকে ছুটছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এ ব্যাপারে উদাসীন। উদাসীন অভিভাবকমহল। উদাসীন শিক্ষকমহল। শিক্ষকমহল কেবল সিলেবাস শেষ করার দিকে ব্যস্ত অথবা ম্যাকানিকেল পড়ার মাধ্যমে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর পাওয়ার হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি নিজেদের বেতন-ভাতার অঙ্ক কষেই সময় পার। শিশুদেরকে পড়ার জন্য উৎসাহিত করার আদম-শুমারি হলে কয়জন পাওয়া যাবে তা ভাববার বিষয়। এভাবে কতদিন চলবে?
শুধু একটি প্রশ্নের কি উত্তর দিতে পারবেন- বই না পড়ে কোন মানুষটি বা কোন জাতি উন্নতি করতে পেরেছে? পারবেন না।
সাহিত্য বিষয়ক বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ অর্জন করে ভাষাজ্ঞান ও ভাষাদক্ষতা। আর ভাষাজ্ঞান ও ভাষাদক্ষতাই কিন্তু কোনো মানুষের উন্নত জীবনের সোপান। তাই দিনের একটু সময় বের করে বই পড়ার অভ্যাস করুন। শৈশবে ও যৌবনে এই অভ্যাস করলে বৃদ্ধ বয়সে অন্তত নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে তোলার একটি উপায় হবে। এখন যারা বৃদ্ধ হয়েছেন তারাও নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য বই পড়তে পারেন।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে বৃদ্ধদের পড়ার উপযোগী একটি বইও নেই। গত তিন বছর আগে একদিন ফেসবুকে এ ব্যাপারে লিখেছিলাম যে, বিভিন্ন বয়স উপযোগী বই প্রকাশ করা দরকার। বৃদ্ধদের পড়ার উপযোগী বই প্রকাশকদের প্রকাশ করা দরকার; যেমন- বড় হরফে লেখা। কারণ, ছোট হরফের বই বৃদ্ধরা পড়তে পারেন না, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার কারণে।
আমি স্বপ্ন দেখি সারাটা দেশ একটি বড় পাঠাগার। মানুষ বই কিনছে, বই পড়ছে। প্রখ্যাত লেখক, গবেষক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হবে না জানি, তবু স্বপ্ন দেখি। ভীষণ স্বপ্ন দেখি আমি। আমি বড় স্বপ্নদ্রষ্টা।
Share: