সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ছোট গল্প -তুমি আমার আপন মানুষ যে..



লেখক-:
জাকওয়ান হুসাইন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুপুরটা আজ কেমন যেন বিষন্নতায় ভরা। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। সকাল থেকে বেশ কয়েকটা লাশ এসেছে এ পর্যন্ত। চারদিকে অসংখ্য পুলিশ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে সকাল থেকেই রাস্তায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সরকারের অগনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল অসংখ্য ছাত্র তরুণ। মিছিলে পুলিশের হামলায় নিহত হয় অনেকেই। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সুদীপ্ত শাহরিয়ার  সকাল থেকে ব্যস্ত লাশগুলোর পোষ্ট মর্টেম করা নিয়ে। আজ তার মন ভাল নেই। তার দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনে বহু লাশের পোষ্টমর্টেম করেছেন। একটুও খারাপ লাগেনি। কিন্তু আজ তার নিপুন অভ্যস্ত হাতটা কেন যেন কাপছিল এই তরুণদের শরীরের ছুড়ি কাচি চালাতে। ৬টা লাশের পোষ্টমর্টেম শেষ করে ৭ নম্বরটার কাছে যেতেই প্যান্টের পকেটে অর্ধেক বের হয়ে আসা একটা মানিব্যাগ দেখতে পায়। অ্যাটেনডেন্টকে দেয়ার জন্য মানিব্যাগ তুলতেই একটা সাদা কাগজ দেখতে পায় মানিব্যাগে। কৌতুহলবশত কাগজটা খুলতেই বুঝতে পারে এটা একটা চিঠি। মনে পড়ে যায় আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর সেই বিখ্যাত কবিতার কথা। এক ভাষা শহীদের পকেটে পাওয়া মায়ের কাছে লেখা সেই রক্তে ভেজা চিঠিটার কথা। কৌতুহল বেশ ভালই পেয়ে বসে ডা.সুদীপ্ত শাহরিয়ারকে। পকেটে রেখে দেয় চিঠিটা। পোষ্টমর্টেম শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সব কাজ শেষ করে যখন বাসায় ফেরে তখন মাঝরাত।  কোন রকম ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বেতের চেয়ারে বসে পড়ে চিঠিটি পড়ার জন্য। এখন কৃষ্ণপক্ষ চলছে। আকাশে চাঁদ নেই। আছে অগুনতি তারকারাজি। ব্যালকুনিতে বসতেই জোরে একটা দমকা হাওয়া ভেসে আসলো। বৃষ্টিও আরম্ভ হয়ে প্রায় সাথে সাথেই। ব্যালকনিতে টবে লাগানো হাস্নাহেনা গাছ থেকে মাতাল করা সুবাস আসছে। ডা.সুদীপ্ত অচেনা সেই যুবকের চিঠিটা পড়ার জন্য চোখের সামনে মেলে ধরে। পড়তে শুরু করে চিঠির লেখা…..
প্রিয়তমা, ভাল আছ কি না জানি না। তবে ভাল থেকো এই প্রার্থনাই সবসময় করি। তোমাকে আবারও চিঠি লেখবার ইচ্ছে হলো। জানি এই চিঠিটাও তোমার কাছে পৌছবে না। আমি পৌছানোর কোন চেষ্টাই করবো না। মানিব্যাগে রেখে দেব। বরাবরের মতো আবার কিছুদিন পর টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলবো। তোমাকে চিঠি লেখা আর ছিড়ে ফেলা এক অদ্ভুত খেলা আমার কাছে। এবার কিন্তু অনেকদিন পর চিঠি লিখছি। কোন একটা কাজে পল্টনে এসেছিলাম। ফেরার পথে শাহবাগের কাছে আসতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টিতে আমার বড্ড তোমার কথা মনে পড়ে। তাই পরিবাগের একটা বারে চলে আসলাম। এখানে বসেই চিঠিটা লিখছি। আলো আধারের ছায়া আর সিগারেটের ধোয়ায় একটা অপার্থিব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কামরাটায়। দীর্ঘদিনের পরিচিত ওয়েটারের কাছে যখন কাগজ আর কলম চাইলাম সে বেশ অবাকই হলো। বারে এসে সচরাচর কেউ কাগজ কলমের খোঁজ করে না। তার তো অবাকই হবার কথা। যাইহোক,হুইস্কির সাথে বেনসন সিগারেট সবসময়ই স্বর্গীয় সুখ অনুভব করায়। তুমি যদি চিঠিটা কখনো পড়তে বেশ অবাকই হতে তাই না? আমি তো তোমার ভয়ে সিগারেটও খেতাম না। কিরকম একটা হাস্যকর ব্যাপার ছিল বলো তো? কি ভয়টাই না পেতাম তোমায়। চির অগোছালো আমি তোমার ভয়ে তোমার করে দেয়া রুটিন মাফিক চলতাম। রাতের প্রথম প্রহরে ঘুমোতে যাওয়া,ভোরে ওঠা সহ সব কাজ রুটিন ধরে ধরে করার অভ্যাস করিয়ে দিয়েছিলে। বেশ ভালই লাগতো কিন্তু। আর এখন দেখো! কতটা বদলে গেছি। তুমিই তো বলেছিলে, তোমার বিকল্প খুজে নিতে। বিশ্বাস করো অ্যালকোহল,নিকোটিন আর নির্ঘুম প্রত্যেকটি রাতের চাইতে ভাল কোন বিকল্প পাইনি  আমি। তোমার বিকল্প হিসেবে এসব কিন্তু খুব একটা খারাপ না! আমাকে বেশ ভালই বাঁচিয়ে রেখেছে।
সূর্য কতবার উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত গিয়েছে,চাঁদ তার মাসিক সফর শেষ করেছে অসংখ্যবার,লাখোবার ভোরের আলোয় আত্মগোপন করেছে রাতের অন্ধকারে দীপ্তি ছড়ানো সিতারার দল। কত লক্ষ মূহুর্ত পার হয়ে গেছে তোমাকে না দেখার। তবুও তো বেঁচে আছি। আর বেশ ভালই তো আছি। চাওয়া পাওয়ার হিসেবগুলো আমার সব মিটে গেছে।
সেদিন পাহাড়ে গেছিলাম। একদিন তুমি আমি যেখানে একসাথে বসে নেকড়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখেছিলাম একসাথে সেই জায়গায় বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়েছি একা একা। আমার না হাসি পাচ্ছিলো। কত না পাগলামি আর ছেলেমানুষি করেছিলাম দুজন মিলে। জানো সেদিনও বৃষ্টি হয়েছিল। তোমার আমার সবকিছুতেই বৃষ্টির অংশগ্রহণ যেন একটা নিয়ম ছিল। তোমাকে পাওয়া থেকে শুরু করে বিচ্ছেদের দিনটাতেও বৃষ্টি হাজির হয়েছিল তার স্বমহিমায়। প্রথম চুমু খাওয়া,প্রথম হাত ধরা সবদিনই কিন্তু বৃষ্টি স্বাক্ষী ছিল আমাদের। থাক স্মৃতিচারণ আর না করি। চিনচিনে কেমন যেন একটা ব্যথা অনুভূত হয়ে বুকে স্মৃতিচারণে।
শুনলাম তুমি নাকি তুমুল সংসারী হয়েছ? অথচ একদিন আমরা সন্যাস নেয়ার প্ল্যান করেছিলাম। হাহাহা। আমি পুরো সন্যাসী না হলেও আধা সন্যাসী কিন্তু আমাকে বলায় যায়। হিহিহি। আমি কিন্তু বেশ ভালই আছি। কখনো আমার কথা ভেবে অপরাধবোধে ভেবো না। পারলে আমাকে অনেকখানি ঘৃণাই করিও। অন্তত অপরাধবোধ থেকে বাঁচবে তাহলে। তোমার প্রতি আমার কিন্তু কোন রাগ,অভিমান বা অভিযোগ নেই। তুমি আমায় অনেক দিয়েছ। যা আমার মতো অভাগার পাবার যোগ্যতা ছিল না। তোমার মনে আছে? এক বিকেলে দখিনা আকাশে একখন্ড কালো মেঘ দেখিয়ে বলেছিলাম, দেখেছ নৈঃশব্দবতী দখিনা আকাশে মৃত্যুর ছায়া আঁকা আছে, একদিন আমিও ছায়া হবো তুমি ছবি এঁকো..
আমি কিন্তু সত্যিই ছায়া হয়ে গেছি নৈঃশব্দবতী। শুধু মৃত্যুটুকুই বাকী। জানো,অনেকেই অনেকরকম প্রশ্ন করে। কিন্তু আমি চুপ করে থাকি। চোখের নীচের কালো দাগ দেখে আড়ালে আবডালে অনেকে বাজে কথা বলে। তাদের কি করে বুঝাই বলো তো! আমি রাতে ঘুমুইনা কারণ তোমাকে কথা দিয়েছিলাম যে তোমাকে ঘুম না পাড়িয়ে আমি ঘুমুবো না। তোমাকে দেয়া কথা কি আমি না রেখে পারি বলো? এখন তো আমি জানি না তুমি ঘুমাতে পারো না কি না। তাই জেগে থাকি সারাটি রাত্রি ধরে। আমার কিন্তু কোন কষ্ট হয় না। আমি এখনো তোমাকে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে দেখি। বিশ্বাসের জায়গায় আমার কাছে তোমার অবস্থান ঈশ্বরের থেকে বেশি কাছাকাছি…
তোমাকে আজ অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু হাত কাপছে। ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের দৃষ্টি। হুইস্কি তার প্রভাব শুরু করেছে আমার উপর। অথচ একদিন প্রভাব শুধু তোমারই ছিল। ভালই থেকো প্রিয়তমা।  আর হা আমি এখনও তোমাকে ভয় পাই। তাই এই অগোছালো জীবনের খবর লুকিয়েই রাখতে চাই। বরাবরের মতো এই চিঠি কিছুদিন পকেটবন্দী হয়েই থাকবে। পরে আবার কোন এক বৃষ্টির দিনে হয়তো টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলবো। আবার হয়তো নতুন করে লিখবো কোন একদিন।
দখিনা হাওয়ায় সেদিনই মৃত্যুর গন্ধ পেয়েছিলাম যখন তোমার আমার বিচ্ছেদ ঘটেছিলো সময় আমাকে একটি চিরস্থায়ী মৃত্যু উপহার দিয়েছে তোমার বিচ্ছেদের প্রতিটি সেকেন্ড,আমার একেকটি মৃত্যু মুহুর্ত।
সব শেষ হয়ে যায়। হৃদয়ে থেকে যায় শুধু তোমার নাম। তুমি আমার আপন মানুষ যে…..

চিঠি পড়া শেষ হয়। কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে থাকে ডা,সুদীপ্ত। বাইরে বৃষ্টির বেগ আরো বেড়ে গেছে। জলের ছাট এসে ভিজে গিয়েছে শরীরের একপাশ। পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। তারপর এসে দাঁড়ায় গ্রিলের কাছে। টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে চিঠিটা। চোখের সামনে তার ভেসে ওঠে লাশকাটা ঘরে রাখা সেই অচেনা প্রেমিকের ছবি। বৃষ্টির বেগ বাড়তেই থাকে……

নীলিমা নীলু'র কবিতা কলম


আমার আছে একমাত্র পরম বন্ধু
তার নাম কলম
এ যে শত্রুর যম
কলম তুমি নও শুধু ক্ষুদ্র তুচ্ছ হাতিয়ার
কাগজের বুকে খসখস শব্দে ধেয়ে চল
সে শব্দ যেন চলমান ট্যাংক বহরের গর্জন
নিধন কর শত্রু,জয় কর কত জনপথ রাজধানী।
তোমার মহান আসন
মানুষের হৃদয় বরাবর জামার এক ছোট্ট পকেটে
তোমার আয়তন ত সুবিশাল নয়
অথচ তোমার দাপট এটমের চেয়েও ভয়ংকর।
ধ্বংস কর, কর নির্মাণ, কত মানব মন
জ্ঞানী গুণীরাই জানে তোমার মহিমা অপার
কেবল তারাই তোমাকে করে সদ্ব্যবহার,
করে ধারণ আমরণ পণ...।

মিঠুন সাহা নরসিংদী ছাত্র-যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত

জহিরুল ইসলাম :
 নরসিংদী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সভায়, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক| উপস্থিত ছিলেন সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ| সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক নরসিংদী হিন্দু মহাজোট|

সভাপতিত্ব করেন নরসিংদী হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের অধ্যাপক অহিভূষন চক্রবর্তী, সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন সাহা| সভায় বক্তব্য রাখেন নরসিংদী জেলা যুবলীগের সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী সহ হিন্দু সমাজের নেতৃবৃন্দ| উক্ত সাধারণ সভায় নরসিংদী জেলা ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি এলটন গোস্বামী মিঠুন সাহা কে সভাপতি ও সুমন ঘোষ কে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে নরসংদী শহর শাখার কমিটি ঘোষণা করে|

শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কবিতা নীলিমা নীলু



কবিতা!  তুমি আমার পরম আনন্দ

আমার প্রিয়তম সখা

আমার স্বপ্নচারিনী তুমি

আমার কল্পনায় অদেখা।

তুমি আমার অন্তরের সুখ বসন্তের সুস্নিগ্ধ সমীরণ

দুঃখে বেদনায় তুমি জননীর আকুল স্নেহভাজন।

সংগ্রামে সংকটে তুমি প্রেরণাদায়িনী একান্ত সুহৃদ

তোমার সাধনায় জাগি নিরব রজনী চোখে নাই নিদ।

চির সাথী হয়ে তুমি থাক মোর জীবনে মরণে

অস্ত না যাওয়া গ্রহ তাঁরা তুমি আমার গগনে।

আমার ভাষা আর শব্দের নৈপুণ্য হও মূর্তিমান

জেগে থাকো তুমি হৃদয়ে উজ্জ্বল মহীয়ান।

শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ছোট গল্প আমার কথা গল্পকার মনি রায় ঘোষ



"ছোটবেলা থেকেই আমি একটু সাহিত্য প্রেমী।যেকোন ধরনের গদ্য পদ্য দেখলেই জল দিয়ে গিলে খেতে ইচ্ছে করতো।কারো বাড়িতে গেলে যদি পছন্দের লেখকের বই দেখতাম তাহলে হ্যাংলার মত চেয়ে নিয়ে আসতাম।যদি না দিত তাহলে চুরি করে নিয়ে আসতাম।।।পড়ে আবার সময়মত ফেরতও দিয়ে আসতাম।একদম ই অভদ্র চোর ছিলাম না।একদিন পড়ার বই এর মধ্যে লুকিয়ে গল্পের বই পড়তে গিয়ে কাকিমার কাছে ধরা পড়ে গেছিলুম।সে বাপু এক কেলেঙ্কারি কান্ড হয়েছিল বটে।সেত প্রায় কান ধরে আমার মাতৃ দেবীর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত।
যাই হোক পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে সে যাত্রা রক্ষা পেয়েছিলাম বটে।তবে সেই অভ্যাস টা কিন্তু ছিলই।শুধু আরেকটু সতর্ক হতে হয়েছিল এই যা।

লুকিয়ে লুকিয়ে গল্পের বই কবিতার বই পড়ার অপরাধে কত যে মার খেয়েছি মা এর কাছে তা আর মনে না করাই ভাল।আসলে পড়া লেখাতে কোন কালেই বাবা মা কে খুশি করতে পারিনি আমি।কোনদিনই তাদের পছন্দ মত রেজাল্ট করতে পারিনি তাই একরকম বাধ্য হয়েই বোধহয় মা আমার সাহিত্য প্রেমের বিরুদ্ধা চারন করত।আমি বুঝতাম সেটা।কিন্তু কি করতাম।ওই পড়া শুনা নামক ব্যাপারটা আমার কাছে বরাবরেরই অপ্রিয় বিষয়বস্তু ছিল।তা আর কে বুঝত।কাকেই বা বোঝাতে পারতাম।

একটু বড় হতে নিজেই কলম ধরলাম কবিতা লেখার চেষ্টায়।লিখতাম ও হিজিবিজি।সেসব কবিতা হত কিনা সেটা বলা মুশকিল।আমার এক মাষ্টার মশাই ভাল কবিতা লিখতেন।তার পর থেকে ওনাকেই আমার কবিতার গুরু ভাবতে শুরু করলাম।সেটা অবশ্য ওনার অজান্তেই।রোজ একখানা হিজিবিজি লিখে ওনার হাতে ধরিয়ে দিতাম।উনি ভুল ত্রুটি শুধরে দিতেন।উনিও মনে মনে এই কাজখানা ওনার ডিউটির মধ্যেই ফেলেছিলেন যদিও এর জন্য আলাদা কোন মাইনে দেয়া হতনা।তবুও উনি আগ্রহের সহিত এই কাজখানা করতেন।

আমার পরিবারে দুর দুর পর্যন্ত তাকালেও একজন সাহিত্য প্রেমী খুজে পাওয়া যাবে না এটা আমি হলফ করে বলতে পারি।ছোটবেলায় অবশ্য মা কে গল্পের বই পড়তে দেখতাম।আমার এক দুর সম্পর্কের মামা ছিলেন যিনি কড়া দামে গল্পের বই ভাড়া দিতেন।মা কে দেখতাম ওনার কাছ থেকে বই ভাড়া করে এনে পড়ত।সন্ধ্যে বেলা মা আমাকে পাড়া থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসত।গায়ের ধুলো কাদা ঝেড়ে মানুষের রুপ ফিরিয়ে পড়তে বসাত।আর তখন মা ও গল্পের বই নিয়ে বসত ঠিক আমার পাশটিতে।একেই তো নাচুনি বুড়ি তার মধ্যে আবার ঢোলের বাড়ি।নাচতে তো ইচ্ছে জাগবেই।আমার আর কি দোষ।কিন্তু মা সেটা বুঝলে তো।মা তো সময় কাটানোর জন্য কড়া দামে বই আনত যাতে আমাকে পড়াতে অধর্য না হতে হয়।কিন্তু ওই গল্পের বই এর মধ্যেই যে আমার প্রেম লুকিয়ে আছে সেটা মা বুঝবেই বা কি করে।

আমি সেই ছোটবেলা থেকেই তাসলিমা নাসরিন এর অন্ধ ভক্ত।ওনাকে মনে মনে গুরু মেনে এসেছি বরাবরই।ওনার মত বাস্তববাদী লেখিকা আমি আজ অবধি খুব কমই দেখেছি।সারাজীবন উনি মেয়েদের সন্মান নিয়ে ভেবেছেন।ওনার লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন।তার জন্য ওনাকে অনেক অপমান লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে।দেশ থেকে পর্যন্ত তারিয়ে দেয়া হয়েছে।এত কিছুর পরেও উনি ওনার কলম থামান নি।প্রতিবাদ বন্ধ করেন নি।নিজের জায়গা থেকে এক চুল নড়েন নি।
আমার বাবা মাঝে মধ্যে ওনার বই নিয়ে আসত হাতে করে দু এক খানা মা এর জন্য।আমি ওগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে গিয়েও কম পিঠ ফোলাই নি।যাই হোক সেসব এখন অতীত।ভাগ্য টা বরাবরই আমার এমনি উল্টো।
বিয়ে করলাম একজন ঘোর অসাহিত্যিক কে।
যিনি কোনদিনই ধর্য ধরে একখানা গল্প পড়ে শেষ করতে পারেন নি।আর ওনার কাছে এটা খুবই আশ্চর্যের যে কেউ কি করে গল্পের বই এর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে থাকতে পারে।তাই আমিও এনার কাছে বেশ আশ্চর্যেরই বটে।
অবশ্য এসবে আমার দুঃখ নেই কোনকালেই।
যা লিখি যা পড়ি তা আমার একান্ত আপনার।আমার বেচে থাকার শক্তি ।
কেউ পড়ল কিনা কেউ দেখল কিনা তা নিয়ে মাথা ব্যাথা খুব একটা হয়না।আমি আমার কথা লিখি।রাগ হোক কিংবা আনন্দ।আমার সবেতেই ছন্দ।
যা আমি মুখে বলতে পারি না তা আমার কলম বলে।আমার সবথেকে কাছের বন্ধু আমার কলম।

বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কবি লুফাইয়্যা শাম্মীর এক গুচ্ছ কবিতা



 রাত

আমি বিষণ্ণ রাত-
চাঁদ হেলে পড়লে ঢলে পড়ি।
এক হাতে সূর্য নিয়ে আমার বুকে ছুড়ে জিউস,উত্তপ্ত বিছানায় প্রেমিকার প্রত্যাখ্যানে।অভিশাপ দিতে দিতে সরে যাই,নেমে আসে দিন।

ফিরে আসি বারংবার, প্রেমিকার টানে।একটা প্রগাঢ়  চুম্বন, কিছু বিষণ্ণ স্মৃতি ছুঁয়ে ভাবি-হয়তো আমি কোনো চর্বির পিণ্ড- যে ভার সইতে না পেরে জিউসপত্নী সরে যায় দূরে।
নেমে আসে বিষণ্ণ রাত।


স্বপ্ন

আমার কোনো স্বপ্ন নেই-
বৃষ্টির মত ঝরেছে যে ফুল সেখানে আমার কোনো গন্ধ নেই,শুধু মুগ্ধতার মায়া কান্নায় কেঁদে চলেছি স্রোতের মত।
স্বপ্ন স্বর্ণলতার মত তরতর করে বেয়ে উঠেনা আমার ঘরের কার্নিশে,
বাগানবিলাস আজকাল আর ফুটেনা তাই।
এই যে আজ সত্যি কথার মত মেঘ ও আমায় বৃষ্টি হয়ে ছোঁয় না যেন আমি নিষিদ্ধ কোনো পাপ।
তবুও আমার মেঘের মতো জমাট বাঁধা সেই স্বপ্ন ছুঁতে ইচ্ছে করে,জানতে ইচ্ছে করে তারা বৃষ্টি হয়ে ঝরে নাকি আকাশ হয়ে রয় মাথার উপর।
আমি একটা আকাশ চাই,যেখানে বিস্তৃত থাকবে আমার অধিকার আর স্বপ্নেরা।


ভালোবাসি

শব্দের বাহুল্যতায় জটিল কাব্য তুমি,
যেখানে ইচ্ছের ঘুরপাকে শব্দ সাজাতে যেয়ে পা পিছলে যাই বারংবার ;আঙুল ছুঁইয়ে যদি ভরসা দাও
অপেক্ষা সেই সময়ের-
ব্যাকরণের "তীর্থের কাক" হয়ে অপেক্ষা সেই অমোঘ ক্ষণের -ক্লান্ত -ঘুম ঢুলো ঢুলো চোখে।

পদচিহ্ন খুঁজে ফেরা সেই পথ-যে আঙিনায় শুকোতে দিয়েছি আমার আদ্র হৃদয়।

সমুদ্রের মত বিশাল তোমাতে যখন আকাশ নামে-আমি পথ খুঁজেফেরা এক নদী ;তোমার বুকে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায় কাটে এক একটা মুহূর্ত।
যেখানে বিলীন এক গাঙচিলের সুখ!

অপেক্ষার ভার পাহাড়সম -তবুও আকুল প্রতীক্ষা সেই মুহূর্তের!
যখন সকল দ্বিধা কিংবা জড়তা ভেঙে;চলমান সময়ের মতই চঞ্চল হয়ে
বুকে আছড়ে পড়ে বলবে 'ভালোবাসি'।

বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নীলিমা নীলুর কবিতা উপমা

উপমা

সাগর আকাশ যখন দেখলো মোর চোখে...
শুধালাম -কি  মনে হয়?
বললো আমায় এবার হয়েছে পরাজয়।।         
যখন  দেখলো মোর হাসি...
বললাম নয়ন ভরে দেখো                         
আমাকে  ম্লান করেছে এ কোথা থেকে এসে । 
স্বপ্নে যখন বললাম তাকাও ভালো করে     
বললো শেষে,,,উপমা  দেই কিসে                   
আমি যে হেরে গেছি তোমার রুপে                             
তোমাকে  খোঁজার মতো দুটো চোখ 
অপলক তাকিয়ে নয়নে নয়নে রেখে
তোমার কপলে আলতো ছোঁয়া
 এঁকে দিলেম মনের অজান্তে।।।

কবি ফারহানা নিমগ্ন দুপুর পেলেন বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সম্মাননা স্মারক ২০১৮

ফখরুল হাসান :--

কবি ফারহানা নিমগ্ন দুপুর
পেলো বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সাহিত্য সম্মাননা স্মারক-২০১৮  অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহামান্য বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান ও মিসেস মজিবুর।
গ্লোরিয়াস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট কাঁটাবন ১১-০৯-১৮ সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন তরুণ কবিদের এই সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন কবি ফারিহা রহমান স্নেহা। অনুষ্ঠানে আগত কবিদের উৎসাহ দেয়ার জন্য।  বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান বলেন। এটা আমার নিজস্ব আয়োজন , নবীন লেখকদের উৎসাহ দেয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য । ষোল কোটি জনগণের এই দেশে হাতে গোনা গুটিকয়েক ভালো লেখক আছে । এখন থেকে ভালো লেখক তৈরি না হলে এই দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে । তাই যারা লেখালেখি করছে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে। ভালো লেখক হওয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা ।

কবি পথিক রানা পেলেন বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সম্মাননা স্মারক ২০১৮

ফখরুল হাসান :--
কবি পথিক রাানা পেলো বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সাহিত্য সম্মাননা স্মারক-২০১৮  অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহামান্য বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান ও মিসেস মজিবুর।
গ্লোরিয়াস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট কাঁটাবন ১১-০৯-১৮ সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন তরুণ কবিদের এই সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন কবি  আরজুমুন। অনুষ্ঠানে আগত কবিদের উৎসাহ দেয়ার জন্য।  বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান বলেন। এটা আমার নিজস্ব আয়োজন , নবীন লেখকদের উৎসাহ দেয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য । ষোল কোটি জনগণের এই দেশে হাতে গোনা গুটিকয়েক ভালো লেখক আছে । এখন থেকে ভালো লেখক তৈরি না হলে এই দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে । তাই যারা লেখালেখি করছে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে। ভালো লেখক হওয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা ।

উপন্যাসে ফারিহা রহমান স্নেহা পেলেন বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সাহিত্য সম্মাননা ২০১৮

ফখরুল হাসান :--
উপন্যাসের জন্য ফারিহা রহমান স্নেহা পেলো বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সাহিত্য সম্মাননা স্মারক-২০১৮  অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহামান্য বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান ও মিসেস মজিবুর।
গ্লোরিয়াস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট কাঁটাবন ১১-০৯-১৮ সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন তরুণ কবিদের এই সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনপ্রিয় লেখিকা ফারিহা রহমান স্নেহা। অনুষ্ঠানে আগত কবিদের উৎসাহ দেয়ার জন্য।  বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান বলেন। এটা আমার নিজস্ব আয়োজন , নবীন লেখকদের উৎসাহ দেয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য । ষোল কোটি জনগণের এই দেশে হাতে গোনা গুটিকয়েক ভালো লেখক আছে । এখন থেকে ভালো লেখক তৈরি না হলে এই দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে । তাই যারা লেখালেখি করছে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে। ভালো লেখক হওয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা ।

কবি আরজুমুন পেলেন বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সাহিত্য সম্মাননা ২০১৮

ফখরুল হাসান:-
কবি আরজুমুন পেলো বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান সাহিত্য সম্মাননা স্মারক-২০১৮  অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহামান্য বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান ও মিসেস মজিবুর।
গ্লোরিয়াস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট কাঁটাবন ১১-০৯-১৮ সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন তরুণ কবিদের এই সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন কবি ফারিহা রহমান স্নেহা। অনুষ্ঠানে আগত কবিদের উৎসাহ দেয়ার জন্য।  বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমান বলেন। এটা আমার নিজস্ব আয়োজন , নবীন লেখকদের উৎসাহ দেয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য । ষোল কোটি জনগণের এই দেশে হাতে গোনা গুটিকয়েক ভালো লেখক আছে । এখন থেকে ভালো লেখক তৈরি না হলে এই দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে । তাই যারা লেখালেখি করছে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে। ভালো লেখক হওয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা ।

রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কবিতা আমার কাছে যতোটা শিল্প তার চেয়ে বেশি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার :-- কবি হানিফ মোহাম্মদ


হানিফ মোহাম্মদ। অন্তর্মুখী একজন মানুষ। সূর্যের মতো নিজেকে পুড়িয়ে জীবন জাগাতে ভালবাসেন।
.
ঢাকা জেলার ডেমরা শিল্পাঞ্চলে জন্ম ২৫ নভেম্বর একটি বাম প্রগতিশীল শ্রমিক পরিবারে। পিতা মরহুম ইদ্রিশ আলী ছিলেন লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের প্রকৌশল বিভাগের শ্রমিক, মাতা হনুফা বেগম সাদামাটা গৃহকর্ত্রী।
.
বাওয়ানী আদর্শ বিদ্যালয়, ডেমরা থেকে এস,এস,সি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করে ভর্তি হোন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বি,এসসি'তে। প্রথম বর্ষ সমাপ্ত করেই ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবনযুদ্ধে। সেই থেকে অবিরাম চলছে যুদ্ধ।
.
১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং যোগ দেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)এ।
.
কর্মক্ষেত্রে স্কাইল্যান্ড এন্ড ফ্যাম লিঃ সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।বর্তমানে বেসরকারি সাহায্যসংস্থা সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
.
কবিতা, নাটক আর রাজনীতি নিয়েই তার কর্মমুখর জীবন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই লেখলেখির শুরু। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে যাচ্ছেন বিভিন্ন পত্রিকায় এবং লিটলম্যাগে। ১৯৮৮ সালে তার যৌথ কাব্যগ্রন্থ 'অনীক' প্রকাশিত হয়।
ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জের তালেপুর গ্রামে পূর্বপুরুষের ভিটায় তার বর্তমান আবাস।

কাব্যগ্রন্থ পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য
কবি হানিফ মোহাম্মদ
অনুপ্রাণন প্রকাশন, কনকর্ড এ্যাম্পোরিয়াম, কাঁটাবন,শাহবাগ।
প্রচ্ছদ  আইয়ুব আল আমিন
মূল্য ১৬০ টাকা
.

কবি হানিফ মোহাম্মদ মুখোমুখি হয়েছেন আমাদের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ঃ-  কবি ও সাংবাদিক ফখরুল হাসান-

ফখরুল হাসান :-- পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য কাব্যগ্রন্থটির নাম রাখার বিশেষ কি কোন কারণ আছে? বাজারে প্রচলিত আছে কবিতার পাঠক কম। কারণ কবিতা অনেকেই বোঝেনা। তার উপরে আপনার কবিতার বইটির নাম বেশ কঠিন। তার পেছনে কি কোন রহস্য লুকিয়ে আছে?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- পাঞ্চজন্য হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ শাঁখ বা শঙ্খ যা অসুরের হাড় থেকে তৈরি। আমার মনে হয় সমাজ থেকে অসুরনিধনের লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাই পাঞ্চজন্য-ধ্বনি এখনো খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। আমার এই পাঞ্চজন্য বেজে উঠবে পদ(কবিতা)কে আশ্রয় করে। সার্বিক অসুর নিধনের এই লড়াইয়ে পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য সামান্যতম ভূমিকা রাখতে পারলেও আমার এই প্রয়াস সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।
.
ফখরুল হাসান :-- আমি যতটা জানি কবি হানিফ মোহাম্মদ অন্তর্মুখী একজন মানুষ। বাম ঘরানার রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই দল বা ক্ষমতার কাছে পরাজিত নয় অন্য কবিদের ন্যায়। সেক্ষেত্রে কতটা চাপা ক্ষোভ, পাঠক আপনার কবিতায় পাবে?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- ক্ষোভ নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কবিতা লিখি। কবিতা আমার কাছে যতোটা শিল্প তারচে বেশি হাতিয়ার। এর মানে এই নয় যে শিল্পের সাথে আপোষ করেছি, বরং শিল্পের প্রতি যথার্থ সম্মান রেখেই কবিতাকে আমি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সামাজিক বঞ্চনা আর সমাজের নানাবিধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে শঙ্খধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে পারে এই গ্রন্থে। বাকিটা পাঠক মূল্যায়ন করবে।
.
ফখরুল হাসান :-- বাজারে তো আরো হাজার হাজার কবিতার বই আছে। বিখ্যাত কবিদের কবিতার বই রেখে আপনার পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য কেন কিনবে পাঠক?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- কঠিন প্রশ্ন। আসলে সব কবিতাই লেখা হয়ে গেছে। কবিতার জন্য নতুন কোনো বিষয় নেই। একই বিষয় নিয়ে রবীন্দ্রনাথ তার মতো করে লিখেছেন, জীবনানন্দ লিখেছেন তার মতো করে। হানিফ মোহাম্মদও লিখছেন তার মতো করেই। এইযে নিজস্ব প্যাটার্ন, ভঙ্গি বা ধরণ এটাই পাঠককে কবিতা পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমি মনে করি, আমি যে নিজস্ব স্বর তৈরি করার চেষ্টা করেছি তা প্রজন্মের পাঠকের ভাল লাগবে। আর এই ভিন্নস্বর বা ভঙ্গির কারণেই পাঠক পদাশ্রিত পাঞ্চজন্য পড়ে আনন্দ পাবেন বলে আমি মনে করি।
.
ফখরুল হাসান :-- আপনার প্রায় কবিতায় রেনু নামে একটি নারী চরিত্র আছে। আপনার পাঠক কে কি সেই নারী সম্পর্কে কিছু বলবেন?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- পদাশ্রিত পাঞ্চজন্যে রেনু সিরিজের কোনো কবিতা নেই। তবু প্রশ্ন যেহেতু এসেছে তো বলি, আমি সাধারণত রোমান্টিক কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। একটা বিশেষ প্রেক্ষাপটে আমার মনে হলো বয়স্ক নর-নারীর যে মনস্তত্ত্ব বা তাদের সম্পর্কের যে রসায়ন তা নিয়ে বাংলাসাহিত্যে সেভাবে কোনো কাজ হয়নি। সেই চিন্তা থেকেই 'প্রিয় রেনু' সিরিজের উদ্ভব। যেখানে রেনু একজন মধ্যবয়সী নারী কিন্তু মনের দিক থেকে যে এখনো খুবই চঞ্চলা অথচ সামাজিক দায়ও সে এড়াতে পারে না। মোটামুটি এই হচ্ছে রেনুর ইতিবৃত্ত।
.
ফখরুল হাসান :-- আপনার বই প্রকাশ করতে প্রকাশক আপনাকে কতটা সহযোগিতা করেছে যখন এক শ্রেণীর প্রতারক প্রকাশকদের প্রচারে নতুনরা না বুঝে প্রতারিত হচ্ছে।
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- প্রথমত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'অনুপ্রাণন প্রকাশন' থেকে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সম্পূর্ণ প্রকাশকের ইচ্ছায় এবং তাদেরই বিনিয়োগে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রতারণা বা অন্যকোনো অনিয়মের কোনো অবকাশই ছিলো না।
.
ফখরুল হাসান :-- তার মানে, শত বা হাজার বইয়ের ভিড়েও পাঠক একটি ভালো পাঠ উপযোগী বই পাচ্ছে? এটাই বলছেন?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- আমি আমার সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং পাঠকের ভাল লাগবে এটাই আমার বিশ্বাস। বাকিটা কেবল সময়ের হাতেই ছেড়ে দেয়া যায়।
.
ফখরুল হাসান :-- আমি যতটুকু জানি, কবি হানিফ মোহাম্মদ এর নিজস্ব একটা পাঠক মহল আছে। আমার মাধ্যমে তাদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ বা বার্তা আছে কি?
.
হানিফ মোহাম্মদ :-- কবিতার এখন ঘোর ক্রান্তিকাল। চারদিকে বিনোদনের এতোবেশি চমকপ্রদ আয়োজন যে কবিতার দিকে ফিরে তাকানোর ফুরসুত কমই বলা চলে। এর মাঝেও যারা কবিতা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, ভাবেন বা চর্চা করেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। যারা আমার কবিতা ভালবাসেন যারা আমার কবিতা পড়েন, একজন নগণ্য কবিতা-শ্রমিক হিসেবে আমি তাদের কাছে ঋণী, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
.
ফখরুল হাসান :-- শ্রদ্ধেয় কবি, শত ব্যস্ততার মাঝে আমাকে সময় দেয়ার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
.
হানিফ মোহাম্মদ :--আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।

শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কবিতা প্রতিক্ষা কবি নীলিমা নীলু

প্রতিক্ষায়

এসেছিলে
আজ  প্রাতে

স্বপ্নে  আমার দুটি আঁখিপাতে

ভরে গিয়েছিলো কোন এক গন্ধে

ঘরের আঁধার কেঁপেছিল কি আনন্দে

সে যে পাশে এসে বসেছিল

স্বপ্নের মাঝে দিল স্বপ্নিল ছোঁয়া

জেগে দেখি  পাগল  করা দক্ষিণ হাওয়া

সে গন্ধই ভেসে বেড়ায়।

কেন আমার রজনী যায়

কাছে পেয়ে কাছে না পায়

কেন বুকে লাগেনি পরশ ছোঁয়া

আজ কত বেদনায়

গভীর  বিরহ বেলায়

কত প্রেম হায় কত বাসনায়

কত সুখ কত দুখে

সারা নিশি তাঁরায় তারাঁয়

যদি এসে চোখে নিরবে দাঁড়ায়

তবুও  জানো মন তোমারে চায়

সব ছেড়ে সব পাবার আশায়

মনে মনে মন তোমারে চায়

জানবে শুধু

নিরলে চেয়ে আছি তোমারি প্রতিক্ষায়।।

বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

অনুগল্প রাখি গল্পকার মনি রায় ঘোষ



সকাল থেকে পৌষালীর খুব মন খারাপ।শুধু কান্না পাচ্ছে।আজ রাখী পূর্নিমা ।গত বছর পৌষালীর দাদা বাইক অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়।এ বছর ও কাকে রাখী পড়াবে?
দাদা থাকতে এই দিনে কত আনন্দ হতো।দাদা রাখী পড়ে বলত এ মা তোর জন্য তো গিফট আনতেই ভুলে গেছি।এবার কি হবে?থাক পরের বছর দেবো।এটা শুনলেই পৌষালী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠত।ও জানে দাদা মিথ্যে বলছে তবুও ও রেগে যাওয়ার ভান করত।ওর এই রাগটুকু দেখতেই তো দাদা এই মিথ্যে টা বলত।সেটা বুঝেই ও রেগে যেত।তারপর ওর রাগ ভাঙাতে একটা দারুণ গিফট ওর হাত দিয়ে গাল টা টিপে দিত আর বলতো।আমার পাগলী বোনটার জন্য গিফট না আনলে আমার রক্ষে আছে।তারপর চলত ভাইবোনের খুনসুটি।এই সাত বছর ধরে দাদা আর এসে গাল টিপে দেয়না চুল ধরে টানে না।মা এর কাছে ওর নামে নালিশ করেনা ওর প্লেট থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে খায়না।হাউমাউ করে কেদেঁ ওঠে পৌষালী।কোথায় চলে গেলি দাদা।একটিবার আমার কাছে আয় তোকে রাখী পরাবো।দেখনা তোর পাগলী বোন টা রাখী নিয়ে বসে আছে।বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে দাদা।কোথায় তুই।তুইতো বলতিস আমার চোখের জল দেখলে নাকি তোর কষ্ট হয় আমার কান্নার শব্দ তুই সহ্য করতে পারিস না তবে আজ কি তুই শুনতে পাচ্ছিস না।তোর বোন তোর জন্য কাদঁছে।
আড়াল থেকে পৌষালীর মাও ডুকরে কেঁদে ওঠে।ছেলেকে হারিয়ে পৌষালীর মা কেমন যেন পাষান হয়ে গেছে।অতিরিক্ত চুপচাপ হয়ে গেছে।কিন্তু মেয়ের কান্না দেখে পাষাণ হৃদয়ও কেপে ওঠে।শুকিয়ে যাওয়া চোখের জলে আবার চোখের কোনগুলা ভিজে ওঠে।

হঠাৎ পা এর আওয়াজ শুনে মা মেয়ের হুশ ফেরে।একটা ভিখারী এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে।দেখেই মনে হচ্ছে অনেকদিন পেটে কিছু পড়েনি।জামা কাপড়ে ছেড়া।
কিছু দেবে বোন অনেকদিন কিছু খাইনি।এতদিন পর বোন ডাক টা শুনে পৌষালীর বুকের ভেতর টা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো।ছুটে রান্নাঘরে চলে গেল।থালায় খাবার সাজিয়ে এনে ছেলেটিকে খেতে দিল।পরম তৃপ্তিতে ছেলেটি সবটুকু খাবার খেল।জল খেলো।তারপর ঢেকুর তুলে বলল -মুখে তৃপ্তির হাসি এনে বলল তোমার হাতের ওই রাখী টা কি সুন্দর গো।জান আমার বুনি ও আমাকে রাখী পড়াতো ভাই ফোটা দিত।তিনদিনের জ্বরে বোন টা মরে গেল।হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাচাঁতে পারলাম না।সেই থেকে আর কেউ রাখী পড়ায় না আমায়। ছেলেটির চোখ ছলছল করছে।
ছেলেটি উঠে চলে যেতেই পৌষালী ওকে পেছন থেকে  ডাকলো।ওকে বসিয়ে আবার ঘরের ভেতরে গেল।একটা থালায় মিষ্টি আর একটা প্রদীপ
জ্বালিয়ে নিয়ে এল।ছেলেটি কে বসিয়ে ওর হাতে রাখী টা পড়িয়ে দিল।মুখে মিষ্টি তুলে দিল ঠিক যেমন করে দাদা কে দিত।তারপর দাদার আলমারি থেকে এতদিন ধরে যত্ন করে রাখা ভাল ভাল জামা কাপড় গুলো ছেলেটির হাতে তুলে দিল।ছেলেটির দুচোখ থেকে ঝরঝর করে জল ঝরছে।পৌষালী আর কাদঁছে না।হাসি মুখে ছেলেটিকে বিদায় দিল।ছেলেটিও চলে গেল।চলে যাওয়ার পর পৌষালীর চোখ আটকে গেল ।যেখানে ছেলেটি বসে ছিল সেখানে একটা চকলেট পরে আছে।পৌষালী এই চকলেট টা খেতে খুব ভালোবাসে।ওর দাদা এই চকলেট টা ওকে মাঝে মধ্যেই এনে দিত।একটা ভিখারী এত দামি চকলেট কোথায় পেল?
কিন্তু সেটা আর কাকেই বা জিজ্ঞেস করবে ছেলেটি যে ওর বাড়ির আঙিনা ছেড়ে অনেকটা দূর চলে গেছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে  রইল পৌষালী।কে এসেছিল ?তবে কি বোনের কান্না সহ্য করতে না পেরে দাদা এসেছিল?
আর কিছু ভাবতে পারছে না পৌষালী।শুধু মনে মনে বলল পরের বছর আবার আসিস দাদা।

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কবিতা প্রতীক্ষা কবি নীলিমা নীলু



রাত জেগে জেগে যদি দুচোখে পড়ে বিষাদের ছায়া,

অভিমানের পালা শেষ না হলেও বুকে জমে থাকে মায়া,

মনে রেখো আমি এখনো আছি তোমারি প্রতিক্ষায়।

এমন ও অনেক দিন গেছে

আমি অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি

হেমন্তের পাতা ঝরার শব্দ শুনবো বলে

নিঃশব্দে অপেক্ষায় করেছি কোন বনভূমিতে

কোন বন্ধুর জন্য হয়তো বা কোন শুভাশিসর জন্য

এমন অনেক দিন গেছে ম্যাসেজ এসেছে

অপেক্ষা করো আমি আসছি

হয়তো বা কেউ বলবে শীতের সকালে

তোমায় নিয়ে হেঁটে অনেক পথ পাড়ি দিবো

কুশায়ার চাদর জড়িয়ে।

হয়তো বা বলবে তৈরি থাকিস সিনেমায় যাবো

প্রতীক্ষা করবো শুধু তোমার জন্য

প্রতীক্ষা শব্দটি শুধুই তোমার জন্য

খুব যতনে বুকের তরঙ্গ এ তুলে রাখলাম

আমি  তোমার জন্য পথে প্রান্তরে

অনঃন্ত কাল ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকবো

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কান্ত হবো

তবু ও প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হবে না

বৃক্ষের মতো অনড় হয়ে প্রতীক্ষায় থাকবো।

তেমনি...

তুমি ও আমার জন্য প্রতীক্ষায় থেকো প্লিজ...

রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

জন্মাষ্টমী ও শ্রীকৃষ্ণের জন্মকথা

গোষ্টলাল দাস:

'কৃষ্ণ' শব্দটি 'কৃষ্' এবং 'ণ' এই দুটি মূল থেকে উৎপন্ন। 'কৃষ্ণ' শব্দটির সংস্কৃত অর্থ হলো-কালো, ঘন বা ঘন-নীল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথিকে কেন্দ্র করেই শুভ জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। জন্মাষ্টমীকে কৃষ্ণাষ্টমী, শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী, গোকুলাষ্টমী ও অষ্টমী রোহিণী প্রভৃতি নামেও ডাকা হয়। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করা হয়। ঘরে ঘরে ভক্তরা উপবাস থেকে জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা ও পূজা, গীতাযজ্ঞ, জন্মাষ্টমী মিছিল, কৃষ্ণপূজা, পদাবলি কীর্তন করে থাকেন।

শাস্ত্রীয় বিবরণ অনুযায়ী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগে ৩২২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ আগস্ট বুধবার ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যাদব(যদু) বংশে জন্মগ্রহণ করেন (মৃত্যু বরণ: খ্রিস্টপূর্ব ৩১০২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি)। দ্বাপরযুগের এইদিনে পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই অসুন্দর, অসুর ও দানবীয় পাশবিক শক্তিকে দমন করে মানবজাতিকে রক্ষা এবং শুভশক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল পূর্ণ অবতার রূপে। মানবরূপের পৃথিবীর আবির্ভাবের কারণ সম্পর্কে গীতায় তিনি বলেছেন-
 ''যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।
 অভ্যুত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।
 পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
 ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে।"
             (জ্ঞানযোগ:৭/৮)
(হে ভবত, যখনই পৃথিবীতে অধর্ম বেড়ে যায় তখন আমি অবতীর্ণ হই, অবতীর্ণ হয়ে সাধুদের রক্ষা, দুষ্টের বিনাশ ও ধর্ম সংস্থাপন করি।)

হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মতে, প্রতিবছর মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে এ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ বছর তেসরা সেপ্টেম্বর ২০১৮ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করা হচ্ছে।

উগ্রসেন নামে মথুরার এক রাজা ছিলো। রাজা উগ্রসেন ছিলেন খুবই ধার্মিক। কিন্তু রাজা ধার্মিক থাকলে কি হবে, তাঁর ছেলে কংস ছিল খুবই অত্যাচারী এবং পাষ-। কংসের অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে নিজের পিতা উগ্রসেনকেও সিংহাসনচ্যুত এবং কারাবন্দী করে নিজেই সিংহাসনে বসে এবং মথুরায় রাজত্ব করে। আবার এই কংসই আরাধনা করে বর লাভ করেছিল, তার বোন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান ছাড়া অন্য কোনো ভাবে তার মৃত্যু হবে না। এজন্যই কংসের অত্যাচারের মাত্রাটাও এত বেশি ছিল।

দেবকীর বিবাহ হয় যদুবংশীয় শূরসেনের পুত্র বসুদেরে সাথে। বর-কনেকে রথের উপর বসানো হয়েছে এবং রথের সারথি হচ্ছে কংস। রথ চলছে এমন সময় হঠাৎ করে সেই দৈববাণীটি কংসের কানে বেজে উঠলো, "ওরে নির্বোধ যাকে তুমি রথে করে নিয়ে যাচ্ছো তার গর্ভের অষ্টম সন্তান তোমার প্রাণ হরণ করবে।" দৈববাণী শুনে কংস সঙ্গে সঙ্গে খড়গ হাতে দেবকীকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। এ দেখে বসুদেব কংসকে অনেক সবিনয় অনুরোধ করে রাজি করালো এই বলে যে, তাদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই কংসের হাতে সোপর্দ করা হবে। একথা শুনে কংস শান্ত হলো ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দেবকী বসুদেবকে কারাগারে নিক্ষেপ করলো।
মাঝখানে কেটে গেল অনেক বছর। একে একে জন্ম নিলো ছয়টি সন্তান। ছয়টি সন্তানকেই একেক করে কংস নিজ হাতে হত্যা করে। সপ্তম গর্ভের সন্তান যখন বলদেব অধিষ্ঠিত হয়েছিল তখন ভগবানের নির্দেশে যোগমায়া দেবী দেবকীর গর্ভ হতে তাকে স্থানান্তরিত করে নন্দালয়ে রোহিণীর গর্ভে স্থাপন করে এবং প্রচার করা হয় দেবকীর গর্ভপাত হয়েছে।

এবার অষ্টম গর্ভের সন্তান অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মগ্রহণ করার পালা। কারাগারের বাইরে পূর্বের চেয়ে কংস এবার আরও বেশি পাহারার ব্যবস্থা করলো। মাস ছিল ভাদ্র, তিথি ছিল অষ্টমী এবং রজনী ছিল ভীষণ দুর্যোগময়। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে প্রকৃতি ধারণ করে এক অন্য রবম মূর্তি, বিদ্যুৎ উচ্ছ্বলিত ঠিক এমন সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর গর্ভে আবির্ভূত হন এবং দৈববাণী শোনা যায়, "বসুদেব, তুমি এখনই গোকুলে যেয়ে নন্দের স্ত্রী যশোদার পাশে তোমার ছেলেটিকে রেখে এসো এবং এই মুহূর্তে তার যে কন্যা শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে তাকে এনে দেবকীর কোলে শুয়ে দাও। আমার মায়ায় পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এখন গভীর ঘুমে অচেতন, যার ফলে কেউ কিছই জানতে পাবে না।" সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে নিয়ে বসুদেব ছুটতে লাগলো নন্দের বাড়ির দিকে। পথে যমুনা নদী। বর্ষাকাল তাই যমুনা কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিলো। তখন বসুদেবের নিরুপায় মনে হলো। হঠাৎ করে বসুদেব দেখলো যমুনার জল শুকিয়ে গিয়েছে এবং একটা শৃগাল যমুনা নদী পার হয়ে যাচ্ছে। বসুদেব তখন ঐ রূপধারী শৃগালকে পথ প্রদর্শক মনে করে তার পেছনে পেছনে হাঁটতে লাগলো। এমন সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। বসুদেব ও শ্রীকৃষ্ণকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য নাগরাজ তার বিশাল ফণা বিস্তার করলো তাদের মাথার উপরে। কিছু সময়ের মধ্যে বসুদেব তার ছেলেকে যশোদার কোলে রেখে যশোদার কন্যা যোগমায়াকে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে এল।

সকাল বেলা কংস খবর পেল দেবকীর অষ্টম সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কারাগারে চলে এসে দেবকীর কোল থেকে মেয়েটিকে ছিনিয়ে নিয়ে পাথরের উপরে আছাড় মারতেই মেয়েটি শূন্যে উঠে যেয়েই যোগমায়া মূর্তি ধারণ করে। মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার পূর্বে কংসকে বলে গেলো, "তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বেড়েছে সে।" এই কথা শুনে কংস মথুরার সকল শিশুকে মারার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।কংস কৃষ্ণকে অনুসন্ধান করে হত্যা করার অনেক চেষ্টা করেন, কিন্তু সব ব্যর্থ হয়ে যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসকে বধ করে মাতামহ উগ্রসেনকে সিংহাসনে বসিয়ে মথুরা তথা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথিতে অকল্যাণ, অমঙ্গলের সবকিছুর চিরবিদায় নিয়ে শান্তি বর্ষিত হোক এটাই আজকের প্রার্থনা।

গোষ্টলাল দাস
প্রভাষক(বাঙলা),দৌলতকান্দি গার্লস কলেজ
রায়পুরা, নরসিংদী।