অনুগল্প রাখি গল্পকার মনি রায় ঘোষ
সকাল থেকে পৌষালীর খুব মন খারাপ।শুধু কান্না পাচ্ছে।আজ রাখী পূর্নিমা ।গত বছর পৌষালীর দাদা বাইক অ্যাকসিডেন্টে মারা যায়।এ বছর ও কাকে রাখী পড়াবে?
দাদা থাকতে এই দিনে কত আনন্দ হতো।দাদা রাখী পড়ে বলত এ মা তোর জন্য তো গিফট আনতেই ভুলে গেছি।এবার কি হবে?থাক পরের বছর দেবো।এটা শুনলেই পৌষালী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠত।ও জানে দাদা মিথ্যে বলছে তবুও ও রেগে যাওয়ার ভান করত।ওর এই রাগটুকু দেখতেই তো দাদা এই মিথ্যে টা বলত।সেটা বুঝেই ও রেগে যেত।তারপর ওর রাগ ভাঙাতে একটা দারুণ গিফট ওর হাত দিয়ে গাল টা টিপে দিত আর বলতো।আমার পাগলী বোনটার জন্য গিফট না আনলে আমার রক্ষে আছে।তারপর চলত ভাইবোনের খুনসুটি।এই সাত বছর ধরে দাদা আর এসে গাল টিপে দেয়না চুল ধরে টানে না।মা এর কাছে ওর নামে নালিশ করেনা ওর প্লেট থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে খায়না।হাউমাউ করে কেদেঁ ওঠে পৌষালী।কোথায় চলে গেলি দাদা।একটিবার আমার কাছে আয় তোকে রাখী পরাবো।দেখনা তোর পাগলী বোন টা রাখী নিয়ে বসে আছে।বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে দাদা।কোথায় তুই।তুইতো বলতিস আমার চোখের জল দেখলে নাকি তোর কষ্ট হয় আমার কান্নার শব্দ তুই সহ্য করতে পারিস না তবে আজ কি তুই শুনতে পাচ্ছিস না।তোর বোন তোর জন্য কাদঁছে।
আড়াল থেকে পৌষালীর মাও ডুকরে কেঁদে ওঠে।ছেলেকে হারিয়ে পৌষালীর মা কেমন যেন পাষান হয়ে গেছে।অতিরিক্ত চুপচাপ হয়ে গেছে।কিন্তু মেয়ের কান্না দেখে পাষাণ হৃদয়ও কেপে ওঠে।শুকিয়ে যাওয়া চোখের জলে আবার চোখের কোনগুলা ভিজে ওঠে।
হঠাৎ পা এর আওয়াজ শুনে মা মেয়ের হুশ ফেরে।একটা ভিখারী এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে।দেখেই মনে হচ্ছে অনেকদিন পেটে কিছু পড়েনি।জামা কাপড়ে ছেড়া।
কিছু দেবে বোন অনেকদিন কিছু খাইনি।এতদিন পর বোন ডাক টা শুনে পৌষালীর বুকের ভেতর টা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো।ছুটে রান্নাঘরে চলে গেল।থালায় খাবার সাজিয়ে এনে ছেলেটিকে খেতে দিল।পরম তৃপ্তিতে ছেলেটি সবটুকু খাবার খেল।জল খেলো।তারপর ঢেকুর তুলে বলল -মুখে তৃপ্তির হাসি এনে বলল তোমার হাতের ওই রাখী টা কি সুন্দর গো।জান আমার বুনি ও আমাকে রাখী পড়াতো ভাই ফোটা দিত।তিনদিনের জ্বরে বোন টা মরে গেল।হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাচাঁতে পারলাম না।সেই থেকে আর কেউ রাখী পড়ায় না আমায়। ছেলেটির চোখ ছলছল করছে।
ছেলেটি উঠে চলে যেতেই পৌষালী ওকে পেছন থেকে ডাকলো।ওকে বসিয়ে আবার ঘরের ভেতরে গেল।একটা থালায় মিষ্টি আর একটা প্রদীপ
জ্বালিয়ে নিয়ে এল।ছেলেটি কে বসিয়ে ওর হাতে রাখী টা পড়িয়ে দিল।মুখে মিষ্টি তুলে দিল ঠিক যেমন করে দাদা কে দিত।তারপর দাদার আলমারি থেকে এতদিন ধরে যত্ন করে রাখা ভাল ভাল জামা কাপড় গুলো ছেলেটির হাতে তুলে দিল।ছেলেটির দুচোখ থেকে ঝরঝর করে জল ঝরছে।পৌষালী আর কাদঁছে না।হাসি মুখে ছেলেটিকে বিদায় দিল।ছেলেটিও চলে গেল।চলে যাওয়ার পর পৌষালীর চোখ আটকে গেল ।যেখানে ছেলেটি বসে ছিল সেখানে একটা চকলেট পরে আছে।পৌষালী এই চকলেট টা খেতে খুব ভালোবাসে।ওর দাদা এই চকলেট টা ওকে মাঝে মধ্যেই এনে দিত।একটা ভিখারী এত দামি চকলেট কোথায় পেল?
কিন্তু সেটা আর কাকেই বা জিজ্ঞেস করবে ছেলেটি যে ওর বাড়ির আঙিনা ছেড়ে অনেকটা দূর চলে গেছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পৌষালী।কে এসেছিল ?তবে কি বোনের কান্না সহ্য করতে না পেরে দাদা এসেছিল?
আর কিছু ভাবতে পারছে না পৌষালী।শুধু মনে মনে বলল পরের বছর আবার আসিস দাদা।