বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০

ফিরে এসো

   


 ফিরে এসো

  -এ বিশ্বাস দেলোয়ার


আমার খেয়ালে,আমার যতনে

বসতি ছিলো হৃদমাঝারে,

খুব কাছের,চিরোচেনা মুখ

ভুলে থাকতে সবকিছু।


আত্মা থেকে আত্মার সঞ্চার পথ

খুব সহজেই বোধগম্য,

অবাধ আসা যাওয়া ছিলো

ইচ্ছের অনুকুলে।


কোন অভিমানে চলে গেলে

দুরে-বহুদূরে

হৃদয়ের পথ ধরে

আরো দূরে।


এখনোও

ফিরে দেখি অশুণ্য স্মৃতিচারনে

চেয়ে থাকি পথপানে

ফিরে এসো সেই পথ ধরে।

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

বিধাতার অভিপ্রায়

 
বিধাতার অভিপ্রায়

          -নজরুল ইসলাম

পাত্রী পক্ষে পাত্রীর বাবা,কাকা,মামা,নানা পাত্রের বাড়ি উপস্থিত।পাত্রের বাড়ি ঘর,অ্যাপায়ন ব্যাবস্থা সহ পাত্র কে দেখা পর্ব শেষ করে,বিয়ের তারিখ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আলোচনা হলো।আজ একুশ তারিখ আগামী আঠাশ তারিখ বুধবার শুভ বিবাহের দিন ধার্য্য।পাত্র পক্ষ যথারীতি গহনা,বাজার কেনাকাটাতে ব্যাস্ত।


পাত্রের মহা আপত্তি আটাশ তারিখ ছুটির দিন নয়। তার নিকট বন্ধু বান্ধব আসতে পারবে না। তাই তারিখ পরিবর্তন করতে হবে। আটাশ নয় তিরিশ তারিখ শুক্রবার হতে হবে। পাত্রী পক্ষ কে অবহিত করা হলো।

তারা বিষয় টি সব শুনলো এবং সশরীরে  পাত্র পক্ষের সাথে আলোচনায় এলো।আলোচনা হলো, যেহেতু পাত্র পাত্রী কেউ কাউকে এখনও দেখে নাই,আলাপ করে নাই ,তাই তাদের মধ্যে দেখা ও জানার জন্য আলাপ হওয়া জরুরী।আটাশ তারিখ পাত্র পাত্রী দেখার দিন ধার্য হলো।


আঠাশ তারিখ যথারীতি পাত্র পক্ষ পাত্রীর বাড়িতে উপস্থিত।পাত্র পাত্রী কে এবং পাত্রী পাত্র কে দেখা ও আলাপ পরিচয় পর্ব শেষ।উভয় সন্তুষ্ট ও সম্মত।

পাত্র পক্ষ ও পাত্রীর পক্ষ আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে আজই শুভ কাজ সম্পন্ন করার মনস্থির করে নিয়ে ,বিবাহ কাজ শেষ করে নিল।

বিধাতা আটাশ তারিখ কবুল করে নিয়ে ছিলেন,তাই চেষ্টা করেও তা পিছানো গেলো না। বিধাতার ইচ্ছায় আটাশ তারিখ শুভ হিসাবে চিহ্নিত ছিল।

এটাই হলো বিধাতার অভিপ্রায়,যা মানতেই হয়।

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

কর্মই শ্রেষ্ঠ _বিপ্লব হোসেন মোল্লা

র্মই শ্রেষ্ঠ

-বিপ্লব হোসেন মোল্লা

তুমি মনে করো আমি ইংরেজ
তাইতো প্যান্ট পরি,
তুমি মনে করো আমি বাঙ্গালী
তাই লুঙ্গিতে সাজি।
তুমি মনে করো আমি কামার
তাই লোহাতে গড়ি
তুমি মনে করো আমি কুমর
মাটিকে ভালবাসি।
তুমি মনে করো আমিই তাঁতি
সুতোই জোড়া বাঁধি
তুমি মনে করো আমি দর্জি
কাপড় তৈরি করি।
তুমি মনে করো আমি কৃষক
খাদ্য জোগাড় করি
তুমি মনে করো আমি শিক্ষক
শিক্ষাই দিয়ে থাকি।
তুমি মনে করো আমি সে জেলে
জাল ফেলি ঐ জলে
তুমি মনেই করো আমি মাঝি
পারাপার করে হাঁসি।
তুমি মনে করো আমি ভিক্ষুক
ভিক্ষার ছলে চলি
মনে করো তুমি সেলাই করো
তাইতো আমি মুচি।
মনে করো তুমি সর্ব পেশাদার
এই জগৎতে সর্ব পেশা তোমার
করোনা ছোট,কোন কর্ম ভ্রষ্ট্র
মনে রাখো সর্ব কর্মই শ্রেষ্ঠ।
তুমি মনে করো আমি মানুষ
জগৎ জুড়ে সব কর্মে আছে সুখ
এই কর্মে কোন ছোট বড় নয়
কর্মই শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞজনে কয়!
সকলের আছে শুভ অশুভ ক্ষণ
প্রতি কর্মের আছে প্রয়োজন।

শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০

তালুকদার বাড়ি _সুমন আখন্দ


তালুকদার বাড়ি

তালুকদার বাড়ি
সুমন আখন্দ

সেই শান বাঁধানো পুকুর-ঘাট
বিরাট গম্বুজের মসজিদ,
মোটা দেয়ালের বড় বাড়ি!
শেষ শ্রাবণের কোন দিনে কাটা হয়েছিল নাড়ি
সেই আঁঠাল মাটি আজও আমার মুখে,
সেই স্মৃতি-গন্ধ্যা সন্ধ্যা আজও জেগে ওঠে বুকে
ধান-কাউনের উঠোন ভরা তালুকদার বাড়ি!

চড়ুই. শালিকের ঝগড়া লাগা চিলেকোঠা
সামনেই মাঠের মতো বিশাল ছাদ,
পাচিল ঘেরা ছাদে ছোট-বড় ছায়াদের ছুটোছুটি
আজ মনে পড়ার পুকুরে ডুব দেই, সাঁতার কাটি!
সেই তিল-তিশির রোদ-শুকানো আজও আমার দুপুর-ঘুমে
ঘুম আসে না, চোখের পানিতে পাতা হয়ে যায় ভারি
কৈ-শিং-শোল ভরা পুকুরের তালুকদার বাড়ি!

একটা শিকড় হয়েছে অনেক ঘর
দরজার কাচারি-ঘর অব্যবহারে হয়েছে পর,
হারিকেন-কুপির আলো মরা মরা
তবু বকধরা ঘুমে নামতা পড়া
অনিচ্ছায় অযু করা, নিয়মিত নামাজ পড়া
বসন্তের মতো বিদায় নিয়েছিল তালুকদারী!
তবু মাথা উঁচু করা তালুকদার বাড়ি!

সেই সিঁদুরে আম, কোমফা আম
শিউলি-শেফালী, চামেলী-এমেলী
ভুলে যাওয়া আরও কত ফুলের নাম
আমি নেই, হারিয়েছি, হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরেছি
ফিরেছি, সেই পাকা-দেয়ালের গোরস্থানে, বেহেস্ত যেখানে
খালপাড়ের খেঁজুর গাছটায় রসে ভরে গেছে হাঁড়ি
কত জনের, কত মনের মনিকোঠায় তালুকদার বাড়ি!

সেই আরামে বাওয়া লিচু গাছ
গাছে দোল-দোল দোলুনী,
মক্তবে সুরা ভুলে গেলে হুজুরের পিটুনি
নানার আদর, খালা-মামাদের স্নেহ, মায়ের বকুনী,
বৌচি-কানামাছি, ফুলটোক্কা, এক্কা-দোক্কা
পেকে গেছে দাঁড়ি, তবু কি ভুলতে পারি
আমার এবং আমাদের প্রিয় তালুকদার বাড়ি!




শাহজাহান আলীর কবিতা_সঙ্গী







মোঃ শাহজাহান আলী

সঙ্গে রে তুই নিবি যারে
                       সেই হবে তর সঙ্গী,
আগে থেকেই ভেবে বুঝে
                        দেখবি তাহার ভঙ্গি।
সঙ্গী তরে দিতে পারে
                         নতুন এক জীবন
যদি তাহার সঙ্গ ধরে
                        থাকিস সারাক্ষণ।
সঙ্গীটা তর ভালো হলে
                        হবিরে তুই খাটি!
সঙ্গীটা তোর মন্দ হলে
                         সব করিবে মাটি।
জীবন্টাকে করতে হলে
                          পরিশুদ্ধ পরিস্কার;
মনের মত সঙ্গী একটা
                         করে নে জোগাড়।
যে জন তোমার দূর করিবে
                          মনের আধার অন্ধকার,
সেই তোমার পরম বন্ধু
                           উত্তম সঙ্গী তোমার ।


মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০

সহজা-সরলা _সুমন আখন্দ


সহজা-সরলা
দুটো প্রিয় পাখি
দুটো প্রিয় ফুল
এক জোড়া দুল,
তুলি দিয়ে আঁকি!

দুটো প্রিয় বই
দুটো প্রিয় চারা
এক জোড়া তারা,
হাসি খুশি খই!

সহজা-সরলা
দুটো প্রিয় গান
দুটো প্রিয় মাস
এক জোড়া হাঁস,
হই চই ফান!

দুটো প্রিয় রুম
দুটো প্রিয় ফোক
এক জোড়া চোখ,
চোখ জুড়ে ঘুম!

সহজা-সরলা
দুটো প্রিয় চেরি
দুটো প্রিয় শুরু
এক জোড়া ভ্রæ,
টম এন্ড জেরি!

দুটো প্রিয় ঘুড়ি
দুটো প্রিয় চাঁদ
এক জোড়া ছাদ,
উঠে যাই, উড়ি!

সহজা-সরলা
দুটো প্রিয় ছবি
দুটো প্রিয় ঘড়ি
এক জোড়া পরী,
ঘোরাফেরা হবি!

দুটো প্রিয় ফুড
দুটো প্রিয় রঙ
এক জোড়া সঙ,
রাগে লাগে গুড!

সহজা-সরলা
দুটো প্রিয় ফল
দুটো প্রিয় গদি
এক জোড়া নদী,
পানি টলমল!

দুটো প্রিয় নাম
দুটো প্রিয় ছুটি
এক জোড়া ঝুঁটি,
ডান আর বাম!

দেশটা বুঝি তোদের -এম রেজাউল করিম রকি

দেশটা বুঝি চোরের হাতে,
থামাতে চুরি নাই রে মানা!
ইচ্ছে মতো ই করছে রাতে,
মোদের বুঝি চোখ টি কানা!

চাল চুরি ও গম চুরি তে,
দেখিয়ে দিলো হরেক খেল,
তেলা মাথায় তেল যে দিতে
খাটের তলায় জমায় তেল।

কি পেয়েছিস মদন কাকু?
দেশটা বুঝি তোর একার!
লাইভে এসে পাগলা টা'কু
মার লো বউ ঠিক সীমার।

মারছে কেউ মরছে কেউ,
করছে মিছিল কাটা পায়ে।
করোনা কে করছো হেয় ও
ঘুরছে মৃত্যু নিজের ছায়ে।

নেতার হায়া ছাড় লো কায়া,
চুরি তে নেই শরম তাই!
পুকুরে সে চাল ডুবাইয়া
খাটের তলে তেল লুকাই।

বাঁচবি কিরে এসব করে?
পড়বি ধরা ঠিক সময়ে।
ছাড় দে রবে,ছাড়বে নারে!
মরবি ওরে যাতন সয়ে।

রচনাকাল:-১৬/০৪/২০২০ খ্রিস্টাব্দ।
পুরুত্যাখালী, চকরিয়া,কক্সবাজার। 

শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০

কবি আমিনুল ইসলাম এর কবিতা ‘আহ্বান’


আহ্বান 
আমিনুল ইসলাম 

এসো হে নবীন তারুণ্যের ছায়াপথে, 
আর কত থাকবি বসে অতল গহ্বরে, 
শীর নত  করবি কত আর ইবলিশের পদতলে।
ভেঙে ফেল তোর পচা মনের ওই রাজ সিংহাসন,
এঁকেদে আজ ধরণীর বুকে যৌবনের ব্যাকরন। 
ছুরে দে তোর আত্মঅহংকার যাক ধুলোয় লুটিয়ে,
বিভেদ, অভেদ, ক্ষান্তি আর রক্তিম সম্মুখে।
থাকবি কত বিধাতার দেয়া ভাগ্য পানে চেয়ে,
কাটাবি কতো নকশা ওয়ালা রাজটিকা টি পড়ে।

দেখো তুই আজ ধরণীর বুকে চেয়ে,
কেমন করে রবি কিরণ দেয় ওইদূর নীলিমায় বসে 
পাহাড়-পর্বত মহাসাগর আর হিমালয় করি জয়,
দুর্লভ কান্তি দিতে হবে পাড়ি মনে নেই কোন সংশয়।
তেজোদ্দীপ্ত অশ্বরশি মস্তক ধাবিত বেশে,
উঠবে দিবাকর ফুটবে হাসি বিভাবরী যাবে প্রান্তে।
মিকাইলের মেঘ বর্ষণ হতে দেব না'ক আজ মোরা,
শোন সব শয়তান আত্মভিমান ভুলে পরাস্ত হয়ে ছিস যারা।
হীনমান্য, প্রাপ্ত চারণ্য রপ্ত করি বেশে,
অহি-নকুল সমাপনী আজ বর্ত পরিবেশে।

শোনো হে নবীন বলি তোমারে পুঁথীবিদ্যা ছেরে, 
রণ ভঙ্গ, অন্তরঙ্গ, বিহঙ্গ ডানামেলে।
ডাকিছে তোমারে বর্তনীড়ে প্রলয়ের মাঝে হুংকার,
মেঘো বর্জ্য বিদ্যুৎ কম্পিত শাণিত জাগুয়ার।

১১৯৫ পূর্বমনিপুর মিরপুর ১০ ঢাকা

কবি হিমু রাশেদের কবিতা ‘‘বাংলা আমার’’


বাংলা আমার
           -হিমু রাশেদ

বাংলা আমার মায়ের ভায়া,
রাখবো তাঁকে; যতনকরে দিবা-নিসি অহরবেলা।
বাংলা সে যে, ব-দ্বীপ রেখা,
রাখবো তাঁকে; জ্বলে ধুয়ে সারাবেলা।
বাংলা আমার ঝিঁঝিঁ পোঁকার বাঁসিওয়ালা,
সেজে বাঁজে সান্ধো বেলা।
বাংলা আমার-দেশত্ব বোধেরমাতৃসুধা,
রাখলো ধরে; তাঁরা জীবনদিয়া। 
বাংলা আমার লালন ধারা,
চেনে তাঁকে; বাউল,সাধু,গুরু, সন্ন্যাসী-রা।
বাংলা আমার নকসি কাথার চরনতলা,
রাখবো তাঁকে; মাটি,পাটি,চালাই পাড়া।
 বাংলা আমার বোনের বকুল ফুলের গাঁথা মালা,
রাখবো তাঁকে; গলেভরে জোড়া জোড়া।
বাংলা আমার প্রানে রক্তোধারা,
রাখবো বজায়; সেই স্রোতধারা।
বাংলা আমার পান্তা ইলিশ গাঁয়ে ভরা ,
খাবো তাঁকে; সবাই মিলে পেটভরা।
বাংলা আমার বায়স্কোপে খুদিরামের ছবি দেখা,
রাখবো তাঁকে; মন-নয়নে যতনকরা। 
বাংলা আমার রাঁখাল ছেলের বাঁসিওয়ালা,
রাখবো তাঁকে; বাবলা তলায় খোলাকাশের বাতাসদিয়া।
বাংলা আমার সাঁখ বাঁজানো সাজেরবেলা,
রাখছে ধরে; মা,পিসি-মাসি,জেঠি,দিদি সবাই তাঁরা।  
একুশ হলো; ছালাম,রাফিক,বরকত ভাই এর রক্তদানে- প্রানখুলা কথাবলা,
রাখবো তাঁদের; মাথায়করে বিশ্ব-মোরা।
একুশ পেলো বিশ্বভাষা,
সাধু জানায়; তাঁদের প্রাণঢালা।
বাংলা আমার হাজার বছর জীবনধারা,
রাখবো তাঁকে ধরে; কোটি মানুষ জীবন দিয়া।


কবি জাহাঙ্গীর এ. মল্লিক এর কবিতা ‘‘কবিতার ছোঁয়া’’


কবিতার ছোঁয়া
     জাহাঙ্গীর এ. মল্লিক

সব শব্দ গুলো নির্বাক আজ
মৃদুল বাতাসও অবাক !
নিস্তরঙ্গ মৃদু কল্পিত শিহরনকে জাগাতে ।

কি উড়ন্তময় বাসন্তিকে দেখছি আমি 
মুঠোকন্ঠের শব্দে যেখানে
কবিতার শব্দগুলো বিভোর হতো ;
সেখানে আজ স্বয়ং কবিতারই কল্পমূর্তি !
আমি কি আত্মা ভরে দেখবো ?
নাকি কবিতার গভীরে স্পর্শ নেব ?
 নিরাভরন শব্দগুলো নির্বাক,
তাই বাতাসও অবাক ।

শুধু আত্মা কথা বলে যায়; পরমাত্মার সাথে  
উদ্বেলিত আমি ; উচ্ছসিত হাসির কলরোলে-
যেন শতাব্দির পর শতাব্দি-
অন্তর-দোঁলানো হাসির প্রতিধ্বনি বাঁজে,
সারা প্রকৃতি জুড়ে ।

তোমার গভীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি সমর্পন করি 
           জলছবি ছুঁয়ে,
আর উড়ে চলি, ছবির দেশে - কবিতার দেশে,
নির্মলীন স্পর্শের আবেশ বুকে নিয়ে …..।

বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল -বিপ্লব হোসেন মোল্লা


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল
-বিপ্লব হোসেন মোল্লা


একটি গল্প বৃহৎ অল্প
১৩০৬ বাংলা,আঠারোশ নিরানব্বই
আসিয়া ছিলো পৃথিবীতে
১১ই জ্যৈষ্ঠ,২৪শে মে
সে মোর কবি কাজী নজরুল।
কর্মক্ষেত্রে মুয়াজ্জিন লেটোগানের দলে
রুটির দোকানে কাজ করেছে অন্ন পাবে বলে।
অন্যায় অবিচার রুখতে
দিয়েছে প্রেমময় গানের সুর
সে মোর কবি কাজী নজরুল।

সব্যসাচী, কমল কাটা, সাম্যবাদী
অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, বিদ্রোহী
সন্ধা, সন্ধাতারা, ফাল্গুনী
ধুমকেতু, ঈশ্বর, প্রভাতী, নারী।
মৃত্যুক্ষুধা, বনগীত, কুলি-মজুর
সে মোর,সত্য কবি কাজী নজরুল।

তুমি বিদ্রোহী আমি অবাধ্য
আমি বুঝিনা কোথায় সুখের সমুদ্র
বুঝিনা কোনটা সত্য-মিথ্যা
বুঝিনা কোনটা বেদ-গীতা।
বুঝিনা কে ঘাতক কে বিচারক
বুঝিনা কে সুজন্মা কে জারজ
বুঝিনা কে রক্ষক কে ভক্ষক
বুঝিনা কেমনে জীবন স্বার্থক।
বুঝিনা কোনটা আলো আধার
বুঝিনা কোনটা মানবাধিকার
বুঝিনা কোনটা দায়িত্ব কর্তব্য
বুঝিনা কেমন মনুষ্যত্ব।
আমি বুঝি তুমি ফুল বকুল
তুমি মোর কবি কাজী নজরুল ।

আমি বুঝিনা কোনটা ঠিক-বেঠিক
বুঝিনা কে ধর্মিক কে অধার্মিক ।
বুঝিনা কে হিন্দু কে বৌদ্ধ
বুঝিনা কে মুসলিম কে খ্রিষ্ট
বুঝিনা কোন বিধাতা শ্রেষ্ট !
তুমি সমগ্র জনতার কুল
তুমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল।
২৯শে আগস্ট গিয়াছো চলি
মোদের পর করি
জ্বালা শুধু জ্বালা নয়, নিদারুণ
তুমি মোর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল।

(২৯ শে আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে-
"কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদ" ও আমার শকাহত শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করা কবিতা,)
(কোন জাতি বা ধর্মকে আঘাত করা বা কোনন মানুষকে আঘাত করা এই কবিতা বা কবির উদ্দেশ্য নই)

কবি এ.আই রানা চৌধুরীর কবিতা ‘কেমন বাঙালি’


কেমন বাঙালি
এ.আই রানা চৌধুরী


বাংলাতে না বলি কথা
বাঙালি কেমন তবে?
বাংলার বুকে জন্মে মোরা
বাঙালি হবো কবে?
কথায় কথায় ইংরেজিতে
অনেকে বলে কথা,
এসব শুনে হৃদয় আমার
পেয়েছে হাজার ব্যথা।
রফিক সালাম কেন তবে
বিলিয়ে দিলো রক্ত?
আমরা এমন জাতি হায়রে
একুশেই শুধু ভক্ত।
হাজার হাজার সালাম জানাই
একুশে ফেব্রুয়ারি,
অন্তরে নই বাঙালি যে
বাঙালি বেশ যে ধরি।


রচনা কাল: ০৪/০২/২০২০খ্রিঃ

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

কবি হিমু রাশেদের কবিতা ‘পতিতা আমি’


পতিতা আমি
হিমু রাশেদ

মানুষ...নয়! পতিতা আমি ।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
মানুষ হতে ইচ্ছে হয় সখের জীবন-করাত।
পতিতা হওয়ায় এথেকে মুক্তি দেয় খুুব সহজে আমায়।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
সতি; সেতো কেতোনা ছল-চাতুরী,টাল-বাহানা নীতি প্রঙ্গা চুুরি।
আমার সেতো খোলা দোকান; পয়াস দিলেই মিলবে রসদ হাড়ী।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
সাজো তুমি কার জন্যে? বাহিরে-অন্তরবাসে।
বলিবে; স্বামীর নজর যেনো আসে।
বলি; চোখ শুধু তার কপালেই? অন্যরা অন্ধকারে!
আমি সাজি সবার হয়ে।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
আমি কাজকরি- দেহ, রক্ত ঘাম ঝরায়ে সর্বে সজ্যে,
তার তুলনা সুধইু কৃষক দিন মুজুর দ¦য়ে।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
চাকুরীর দোহায় বাহির হও সাত সকালে,
ফেরো সান্ধোপরে,
বসকে খুশি রাখাতে, মায়নে বাড়াতে, 
কতোনা রঙ্গিন চেহারায় থাকো ঘোরে।
আমার সেতো সস্তা ক্রিম
স্বল্প কাপুড়ের জামা, 
আর একটু চোখে চোখ রাখলেই শিধে সখা।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
অভিনয় করতে করতে বড়ই কøান্ত তুমি।
আর আমার অভিনয় একই; সে পতিতা আমি।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
বুঝলাম তোমার আয় হালাল,তারপরও মসজিদ
গীরজা উপসনালয়ে দানে; হাজির তুমি।
আমার আয় হারাম তারপরও কখনও যায়না- 
মসজিদ গীরজা উপসানলয়ে আমি।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
ভক্ষনে তুমি বড়ই কৃপনও বটে-
 নিজে খাবার অন্যকে খায়িয়ে ভাবো ;বেজায় সুখে।
নিজে খেলে গায়ে লাগবে, আয়ে আসবে জস।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
ঘুুস, দূর্নীতি, চোরাকারবারী ঝণঞ্জায়
গড়ো দালান কোটা;চড়ো বড়ো বড়ো গাড়ী।
আমার আছে ফুট পথ, বস্তী, কখনও পরিতক্ত তোমাদেরই বাড়ী।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
সভ্য বলে করেন যারা দাবি। 
যানেন কিনা তারা ? 
তাহাদের আর্শিবাদে সৃষ্টি হলেম এ পতিতা আমি।
তোমাদের মনরঞ্জণে উজাড় থাকি আমি।
আমি পতিতা বলেই গর্ববোধ করি।
রক্তে রংএ যাইনা কারা চেনা;
তবে কেনো আমায় করো ঘৃণা।
আমি তোমাদেরই কারো না কারো সন্তান 
কারো বোন ,কারো মা,কারো ভগ্নি-
 হয়তো কারো ছিলাম স্ত্রী নয় প্রিয়োসী।
আমি তোমাদেরই! বাহিরের কেহ নয়। 
আবারও বলি; আমি তোমাদেরই প্রয়োজনে সৃষ্টি।
নিজেকে চরমভাবে ঘৃণা করলেও পতিতাকে নয়!
পতিতাই যে দিয়েছে; তোমাদের মাঝে বেচে থাকার সেই ঠাই।
মরেও,,এখনও  বেচে আছি,,,,,,,,,।
 তাই মানুষ নয়; পতিতা বলেই গর্ববোধকরি।

'ফিরে এসো' এ বিশ্বাস দেলোয়ার




ফিরে এসো

 এ বিশ্বাস দেলোয়ার

আমার খেয়ালে,আমার যতনে
বসতি ছিলো হৃদমাঝারে
খুব কাছের,চিরোচেনা মুখ
ভুলে থাকতে সবকিছু।

আত্মা থেকে আত্মার সঞ্চার পথ
খুব সহজেই বোধগম্য
অবাধ আসা যাওয়া ছিলো
ইচ্ছের অনুকুলে।

কোন অভিমানে চলে গেলে
দুরে…..বহুদূরে
হৃদয়ের পথ ধরে
আরো দূরে….।

এখনোও…………….
ফিরে দেখি অশুণ্য স্মৃতিচারনে
চেয়ে থাকি পথপানে
ফিরে এসো সেই পথ ধরে।

শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

নুরুল আলম বাকুর কবিতা 'বাংলা আমার মাতৃভাষা '


বাংলা আমার মাতৃভাষা 
নুরুল আলম বাকু


বাংলায় হাসি বাংলায় কাঁদি

বাংলায় জীবনের সুরতান বাঁধি
বাংলায় গাই গান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বাংলায় রচি প্রেমের পদবলি
বাংলায় বলি বিরহের কথাকলি
বাংলায় গাই জীবনের জয়গান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

নিদ জাগরনে
অনুভব অনুরননে
বাংলা করে পরম শান্তিদান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বাংলা আমার হৃদয়ের কলতান
যুগ যুগ ধরে দিয়েছে সম্মান
বাংলা ভাষা জুড়ায় যে প্রাণ
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বাংলাস্রোতে ভেসে যাক জ্বরা
বাংলাস্নানে সুচি হোক ধরা
বাংলা দানুক নতুন প্রাণ
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে
দামাল ছেলেরা উদার মনে
সালাম রফিক জব্বার বরকত
অকাতরে দানিল প্রাণ
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

মায়ের ভাষা রক্ষার তরে
বীরেরা জীবন উৎসর্গ করে
রাখলো দেশের মান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

যতদিন রবে
বাংলা এ ভবে
ততদিন যেন অনাদর অবহেলায়
তাদের এ ত্যাগ হয়না কভু ম্লান
বাংলা আমার মাতৃভাষা
বাংলা আমার প্রাণ।

'হঠাৎ' বখতিয়ার রহমান


হঠাৎ
বখতিয়ার রহমান

হঠাৎ রফিক সাহেবের চিঠি এসে গেলো। রফিক সাহেব তার ট্রান্সফারের চিঠি হাতে নিয়ে খুলনা শহরের বয়রাই এসে উঠল গোধূলী সন্ধায়।জাগাটা নতুন, তবুও তাদের বেশ পছন্দ হলো। রফিক সাহেবের এক মেয়ে ও এক ছেলে, মেয়েটার নাম মিরা, আর ছেলেটার নাম হিরা। মিরা ক্লাস টুয়েল মানে ১২ ক্লাসে পড়ে, বাবার বার বার ট্রান্সফারের  জন্য মিরার ২ বছর জীবন থেকে নষ্ট হয়ে গেছে, তাই মিরা এবার এইচ. এস.সি পরিক্ষার্থী। আর হিরা তো হিরাই, ক্লাস এইটে ট্যালেন্ট ফুলিতে বৃত্তি পেয়ে ক্লাস নাইনে। মা গৃহিনী। থাকলো রফিক সাহেব, তিনি সরকারী কর্ম কর্তার বড় অফসার, তাই রফিক সাহেবকে দুই এক বছরের বেশি এক জাগাতে রাখেনা। ট্যানেচ ফারের চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে এ শহর থেকে ও শহর বদলি করে দেয়। নতুন বাসাতে উঠতেই যেন সব কিছু নতুন নতুন লাগছে তাদের কাছে। ঘরটা যেন শাত রঙের রং তুলিতে সাজানো। সারা রাত নতুন বাসা নিয়ে কথা বলা-বলি করতে করতে নিশী কেঁটে ভোরের সোনালী সৃর্য উদাই হলো। শুরু হলো নতুন জীবন।নিজেকে সাজানোর এক হঠাৎ

সময়। যে সময় একবার চলে গেলে তা আর কখনো ফিরে আসেনা। সময়টা ছিলো গরমের, সকালের দক্ষিনা মৃদ্য বাতাসে মিরার দিঘন কালো রেশমী চুল গুলো এলো মেলো ভাবে দুলছে। কানেতে দুলছে কান ফুল ও গোলাপী রঙের ওরনা। হাতে ধরা এক কাফ সকালের গরম কফি। কফির কাফটা হাতে নিয়ে বেলকুনীর এক কোনে দাড়িয়ে ছিলো মিরা। হঠাৎ মিরার দিকে চোঁখ পড়ে যায় পাশের বিল্ডিং এ থাকা নিলয়ের। ভালো নাম আশিকুর রহমান (নিলয়) সবাই নিলয় বলেই ডাকে। নিলয় মিরাকে দেখেই অবাকই হতো বম্ভ হয়ে যায়,মিরার অপরুপ চিহারার কারিসমা দেখে নিলয় যেন টাসকি খেয়ে গেলো। নিলয় মনে-মনে ভাবতে থাকে,আর বলতে থাকে এত সুন্দর মেয়ে এই বাড়িতে থাকে, আমি তো আগে কখনো দেখিনি। তাহলে এতো দিন কোথায় ছিলো, বাহিরে থেকে পড়তো, না নতুন ভাড়াটে। এ রমক উত্তর না জানা অনেক প্রশ্ন নিলয়ের মাথায় চরকির মতো ঘুরতে থাকে এসব কথা ভাবে আর মাথা নিচু করে থাকে, নিলয় মাথা তুলতেই মেয়েটি মানে মিরা আর নেই। হঠাৎ এক পলক দেখে দিয়েই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। নিলয় অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, বাড়িতে তার এক ভাই ও এক বোন, ভাই টা ক্লাস ওয়ানে পড়ে, বোন এবার এইচ. এস.সি পরিক্ষার্থী। মা গৃহিনী, বাবা স্কুল মাষ্টার। সব মিলে তাদের একটা সুখি পরিবার বলা যায়। ইচ্ছার আকাশে ভাবনার বাতাসে, মনের রং তুলিতে সাজানো কথা গুলো যেন বার বার বেঁজে উঠছে। কিছু বলতে ইচ্ছা করছে তার। হঠাৎ দেখা, নাম না জানা অজানা-অচিনা সেই মেয়েটির।

কে তুমি কোথায় থাকো
কোথায় তোমার ঘর,
এক পলকেই ভালো বেসে ফেলেছি
ভেবো না আমার পর।
নাম কি তোমার সুন্দরী গো
কোন ক্লাসে পড়ো,
এই কথাটার জবাব তুমি
আমায় দিতে পারো।
মুখের কথাটা বলতে বলতেই, হঠাৎ আবার দেখা গেলো মিরার। সময়টা ছিলো বৈশাখীর বিকালের শেষ পান্তের গোধূলী লগ্নে। মিরাকে দেখতে না দেখতেই হঠাৎ আবার হারিয়ে ফেলে নিলয়। নিশী কেঁটে উঠা সকালের সোনার রবি যখন সময়ের টানে হেলিয়া পড়ে বিকালের সর্যায়। তেমনি হারালো মিরা নিজেকে আড়াল করে গোধূলী সন্ধায়। তার পর থেকে মাঝে মাঝে তাদের দেখা হয়, সময়ের ফাঁক-ফুঁকে, শুধু তাকিয়ে থাকে দুজন দুজোনার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে, কিন্তুু কোন কথা না। মনের ব্যকুলতা মনেই থেকে যায়। এভাবেই পার হয়ে যায় কিছু মাস। দেখতে দেখতে প্রায় ১ বছর হতে আসে,মিরার ফাইনাল পরিক্ষা দেওয়ার সময় হয়ে যায়। পরিক্ষার কিছু টিপ্স হেল্প লাগবে বলে মিরা নিলয়ের বাসায় আসে, নিলয়ের বোনের কাছে, কারন নিলয়ের বোন নিলাও পরিক্ষার্থী। এভাবেই মিরা মাঝে মাঝে নিলয়ের বাসায় আসতো তার বোন নিলার সাথে দেখা করার জন্য, তাকে কিছু টিপ্স হেল্প করা বা হেল্প নেওয়ার জন্য, নিলয়ের মত মিরাও নিলয়ের একটু একটু পছন্দ করতো, তাই মিরা প্রায়ই নিলয়ের বাসায় আসতো তার বোন নিলার সাথে দেখা করতে। সেটা একদিন দেখে ফেলে নিলয়, আর তা দেখে নিলয় অনেক খুশি হয়। শুরু হয় না বলা ভালো বাসা বাসি, তাই নিলয় প্রায় প্রতিদিনি মিরার জন্য চিঠি লিখতো, তার পর তার বোন নিলার বইয়ের পাতার ভাঁজে সুন্দর করে রেখে দিতো। নিলয় কোন দিন সামনে আসতো না , নিলয়ের কেন যানি মনে হলো মিরার সামনে যাওয়ার সময় এখনো হয়নি। এটা ভাবতে ভাবতেই ১ বছর হয়ে গেলো অনায়াসে। বইয়ের পাতার ভাঁজ থেকে নিলয়ের দেওয়া চিঠি খানি অবশেষে মিরার হাতে এসে পড়লো। চিঠি পেয়ে মিরা তো বেজায় খুশি,মিরাও যেন চায়ছিলো যে এমনটাই হোক। " তাই হলো অবশেষে " চিঠির উত্তর দেওয়ার জন্য মিরাও একটা মিষ্টি করে চিঠি লিখলো নিলয়ের নামে। সমস্ত আবেগ নিয়ে তাকে এক পলক দেখার জন্য অপেক্ষা করা, কলেজ থেকে আসতে মিরার একটু দেরি হলে অভিমানে চোঁখ দুটি তার ছল- ছল করা, ও রিদয়ের সব টুকু উজাড় করা ভালো বাসা পূর্ন চিঠি দেওয়া। এগুলোর সব কিছু মিরা জানতো, তাই তো সে চিঠিতে এগুলোর উত্তরই লিখেছে। চিঠির উত্তর সাজাতে সাজাতে নিশী কেঁটে ভোর হয়ে যায় মিরার। সকালে বাসা থেকে বের হতেই সামনা সামনি দুজন-দুজনার দেখা হয়ে যায়। তারা কিছু বলতে চেষ্টা করে, কিন্তুু কিছুই বলতে পারেনা, নিশ্চুব হয়ে যায় পাথরের মূর্তির মতো। কিছুক্ষন পর মাথা নিচু করে দুজন-দু - দিকে চলে যায়। সকাল গড়িয়ে বিকাল হয়ে আসলো, রফিক সাহেব বারান্দাতে নিজ চিয়ারে বসে চা- খাচ্ছেন।

হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ......
রফিক সাহেব বলে উঠল কে.......?
বাইরে থেকে পিওন আওয়াজ করলো আমি স্যার আমি পিওন।
ভিতরে আসুন।
রফিক সাহেব দেখলো একটা চিঠি হাতে পিওনের, চিঠি
দেখেই রফিক সাহেব বুঝে গেছেন যে তার যাওয়ার সময় হয়েছে। তবুও বলে উঠে, এই তো সে দিন ট্যানেচ ফার হয়ে আসলাম। সাথে সাথে বাসার সাবাই কে জানানো হলো, তার বদলির কথা। এমনি তেই প্রায় মাসের শেষ, আগামি তিন দিনের মধ্যে এ বাসা ছেড়ে চট্রোগ্রাম শহরে যেতে হবে। বাসা গুছানোর ভিষন ব্যস্ততায় মিরা আজ দুনি ধরে নিলয়ের বাসায় যেতে পারিনি, এমন কি তার বান্ধবি নিলার সাথেও দেখা করার সুযোগ হয়নি। ওদিকে নিলয় মিরার পথ চেয়ে আছে, আজ দু-দিন যাবত নিলয় মিরার দেখতে পাচ্ছেনা, কোন খোজ খবর নেই, কি হয়েছে তাও জানে না। পরের দিন সকালে ঠিক ১০ টার দিকে তাদের নিজস্ব প্রাইভিট কারে করে চট্রোগ্রাম শহরে রওনা দিলো। সেই মুহুরতে মিরার চলে যাওয়ার বেদনা দায়ক খবরটা নিলয়ের কানে এসে পৌছায়, মিরা বার- বার পিছনে ফিরে ফিরে তাকাতে থাকে। আর অপেক্ষা করতে থাকে তার ভালো বাসার মানুষ নিলয়ের জন্য।

নিলয় তার বেদনা দায়ক ভাঙ্গা মন কে সামনে নিয়ে মিরার দিকে ছুটতে থাকে, নিলয় মিরার কাছে পৌছাতে না পৌছাতেই মিরা তাদের প্রাইভিট কারে উঠে গেছে। কিন্তুু চোঁখ দুটি তার ছল-ছল করছে, হৃদয়ের উজাড় করা সব টুকু ভালো বাসা উদ্দাম সকালে রাগে অনুরাগে পানির ন্যায় ফুটা-ফুটা হয়ে তার বাহারী ওরনাতে পড়ছে।
হঠাৎ জালানার কাঁচ দিয়ে দেখলো নিলয় তার জন্য গাড়ির পিছন পিছন ছুটছে, তবুও যেন কিছুই করার নেই, নিয়মের বাঁধা জ্বালে আটকা পড়া মিরার। নিলয়কে ছেড়ে মিরার চলে যাওয়াতে নিলয়ের বুকে বেদনার ঝড় উঠলো, ভেঙ্গে গেলো সব স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্খা চোঁখের নিমেসেই,সবি হলো যেন হঠাৎ করে। কেন জানি না মিরা আর নিলয়ের জীবন ঘুড়ির কেন সুতো ছিড়ে গেলো, ভালো বাসা শুরুতেই শেষ হয়ে গেলো. শেষ হয়ে গেলো.................#
রচনাকাল: ১২/০১/২০২০ ইং

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

দনিয়া পাঠাগার-থিয়েটার হল

বোরহান বিশ্বাস: দক্ষিণ দনিয়ার গোয়ালবাড়ি মোড়ের শাহী মসজিদ সড়ক, বায়তুস সালাম জামে মসজিদ সড়ক কিংবা গোয়াল বাড়ি সড়ক- তেমন প্রশস্ত নয়। তবে এ সরু সড়কগুলোর যে কোনো একটি দিয়েই চলে যাওয়া যায়  দনিয়া পাঠাগার ও দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলে।




















পাড়া-মহল্লায় পাঠাগার থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু স্টুডিও থিয়েটার হল? সুস্থ বিনোদনের জন্য যে তাও হতে পারে সেটি প্রমাণ করেছেন দনিয়ার কিছু সংস্কৃতিমনা তরুণ। অপেক্ষাকৃত কম উন্নত এলাকাও যে সাংস্কৃতিক চর্চার পীঠস্থান হতে পারে তা তারা করে দেখিয়েছেন।

আশির দশকের একেবারে শেষ ভাগে কয়েকজন তরুণের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে দনিয়া পাঠাগার। গোয়ালবাড়ি মোড়ের সেদিনের সেই টিনের ঘরের পাঠাগার থেকেই গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের স্টুডিও থিয়েটার হল। দনিয়া পাঠাগারের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে এটি। এখানে একসঙ্গে ১০০ জন দর্শক প্রদর্শিত নাটক কিংবা চলচ্চিত্র দেখতে পারেন। এই মঞ্চে এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সফল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আর প্রতিটি অনুষ্ঠানেই দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি দনিয়া পাঠাগারের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি এটি উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জআমান নূর এমপি। উদ্বোধনী দিন থেকে চার দিনব্যাপি চলে আন্তর্জাতিক একক নাট্যোৎসব (ভারতের তিনটি ও বাংলাদেশের চারটি দল এতে অংশ নেয়)। এরপর ২২ থেকে ২৬ মার্চ চলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র উৎসব।

এ বছর ২৩ মার্চ দনিয়া সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র উৎসবে স্কুল ছাত্রছাত্রীরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ উপভোগ করে। এছাড়া শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘দীপু নাম্বার টু’ এবং মঞ্চনাটক ‘অতঃপর মাধো’র প্রদর্শনীও উপভোগ করে শিক্ষার্থীরা।

গত ২১ জুন দনিয়া সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এবং দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলের সহযোগিতায় ‘আধুনিক বাংলা নাট্যে নিজস্বতার খোঁজ’ শীর্ষক সেমিনারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশি-বিদেশি সংস্কৃতিকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন। এতে ভাবনা থিয়েটার ম্যাগাজিন, কলকাতার সম্পাদক অভীক ভট্টাচার্যের প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসার আহমেদ, নাট্যজন অনন্ত হীরা এবং নাট্য সমালোচক আবু সাঈদ তুলু। অনুষ্ঠানে ভারতের বিশিষ্ট নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামীও আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুছ।

দনিয়া পাঠাগারের সাবেক সভাপতি, দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলের পরিচালক এবং ঢাকার মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহনেওয়াজ।

গোয়ালবাড়ির এমন সরু পথ দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরের নাট্যজনেরা যখন সেমিনারে আসছিলেন তাদের অভিব্যক্তি কেমন ছিল?

জানতে চাইলে শাহনেওয়াজ বললেন, রাস্তার ছোট্ট পরিসর দেখে প্রথম দিকে তারা কিছুটা সঙ্কোচবোধ করলেও পরে সবাই আমাদের নাট্যমঞ্চ নির্মাণের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সেমিনারের এক পর্যায়ে তারা বলেন, বড় বড় হল না করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এমন ছোট ছোট স্টুডিও থিয়েটার হল করলে মানুষ উৎসাহিত হতো।

সারা বছর দর্শকের চাহিদা মেটানো হবে কী করে? কিংবা এ মঞ্চের দর্শকইবা কারা হবেন?

শাহনেওয়াজ বলেন,  “আমাদের ২৫ জন মঞ্চবন্ধু সদস্য আছেন। যারা এক হাজার টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য যে কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন। এই সদস্যদের মধ্যে চাকরিজীবি, গৃহিণী ও ছাত্ররাও আছেন। যে কেউ মাত্র দুই হাজার ৫০০ টাকা ভাড়ায় হলটিতে অনুষ্ঠান করার সব ধরনের সুবিধা পাবেন।”

নাট্যমঞ্চ তৈরির ভাবনা নিয়ে শাহওনেওয়াজ বললেন,  “আমাদের এই দনিয়া এলাকায় উল্লেখযোগ্য মাঠ কিংবা শিশুপার্ক নেই। দনিয়া সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দিবসে আমরা রাস্তার পাশে অনুষ্ঠান করতাম। আমাদের প্রধান দর্শক ছিলেন মা ও শিশুরা।

“নামাজের জন্য যখন দীর্ঘ সময় অনুষ্ঠান বিরতি রাখা হতো; তখন দেখতাম, কি অদম্য স্পৃহা নিয়ে তারা বসে আছেন। রাস্তার পাশে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চ থেকে যখন মা ও শিশুদের মুখগুলো দেখতাম নিজেদের অসহায় মনে হতো। ভাবতাম, ওদের জন্য কি কিছুই করার নেই আমাদের? সেই দায়িত্ববোধ থেকেই নাটক কিংবা বিনোদনে জন্য স্থায়ী কোনো কিছু করার চিন্তা করতে থাকি আমরা।”

স্মৃতি হাতড়ে তিনি বললেন,   “১৯৯৩ সালে আমরা কয়েকজন মিলে দনিয়া সাংস্কৃতিক জোট গঠন করি। তখন এ অঞ্চলে কোনো প্রভাতফেরি হতো না। আমরা জোটের পক্ষ থেকে একুশ উদযাপন পরিষদ গঠন করে দনিয়া গোয়াল বাড়ি মোড়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করি। প্রভাতফেরির আয়োজন করি।

“সেই প্রভাতফেরিতে বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা ফুল দিতে আসে। এ ঘটনায় আমরা স্বার্থক হয়েছি বলে মনে করি। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা আমরাই এ অঞ্চলে প্রথম চালু করি। এখন বিভিন্ন স্কুলও এটা করে।”

মঞ্চ তৈরির পেছনে আরো একটি অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন শাহনেওয়াজ।

তিনি বলেন, “দনিয়া এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও কয়েকটি হাইস্কুল আছে। আমরা এখানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি। বইমেলার আয়োজন করি। বিভিন্ন দিবসে সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করি। সেখানে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এমনি একটি উৎসবে আমরা টিকেট কেটে দর্শকদের নাটক দেখানোর ব্যবস্থা করি। বিস্ময়করভাবে অনুষ্ঠানের আগেই সব টিকেট শেষ হয়ে যায়। তখন আমাদের মনে হলো এখানে একটি নাটকের মঞ্চ করাই যায়।”

“দনিয়া স্টুডিও থিয়েটার হলটি করতে আমাদের সাহস জুগিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। আমরা যখন তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি তারা আমাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। সরকারের কাছ থেকেও আমরা কিছু সহযোগিতা পেয়েছি”, বলেন শাহনেওয়াজ।#