রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯

'বিবেক-কে নাড়া দেয়া এক উপন্যাসের নাম আপনালয়' ফখরুল হাসান


শিল্পসাহিত্যঃ

বৃদ্ধাশ্রমের করুণ কাহিনি নিয়ে লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস আপনালয়। লেখকের বর্ণনায় ২০৪৬ সালে রাজধানী ঢাকার চিত্র খুবই ভয়াবহ। ঢাকার কোথাও যৌথ পরিবার নেই। সর্বত্র নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। একক পরিবার। ঢাকার সকল পরিবারে কোনো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নেই। সবাই ওল্ডহোমে। বৃদ্ধাশ্রমে। শ্রমে-রক্তে গড়ে তোলা বাড়ি-ঘরে নিজেরা থাকতে পারছে না। কষ্টে-দুখে লালন করা সন্তানরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে রাখছে না নিজেদের সাথে। ২০৪৬ সালের এমনই অবিশ্বাস্য চিত্র লেখকের কলমে ধরা পড়লো। লেখক সেসব অবিশ্বাস্য ভয়াবহ চিত্র বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরলেন! যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। লেখকের আশংকা, বর্তমানে যে হারে বৃদ্ধাশ্রমগুলোয় বয়স্ক মানুষ দিয়ে পূর্ণ হতে চলেছে, না জানি এ ধারাটা বাড়তে বাড়তে এক সময় সমাজের পরিবারগুলোর অবস্থা লেখকের উক্ত বর্ণনার ২০৪৬ সালের চিত্র হয়ে দাঁড়ায়।

২০৪৬ সালে ঢাকা শহরের চিত্রটা যেন এমন, সব মানুষ উদোম হয়ে গেছে। ফিরে গেছে সেই আদিম যুগে। কারো শরীরে নেই জামা-কাপড়। ঠিক সেই নাজুক সময়ে একজন লোককে দেখা গেলো ব্যতিক্রমী। জামা-কাপড় পরা আপাদমস্তক এক সাধু পুরুষ। সব লোক জড়ো হলো তাকে দেখতে। বিভিন্ন চ্যানেল, পত্রিকা, নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে দৌড়ে এলো নিউজ কাভারে। বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়তে হবে 'আপনালয়'।

২০৪৬ সালের সমাজের চিত্র এতোটা নৃশংস কর্তব্যহীন, কোথাও যৌথ পরিবার আছে বলে কল্পনাও করা যেত না! ঠিক সেসময়ে একটি যৌথ পরিবারের দেখা মিললো হাসপাতালের সিসি টিভির ক্যামেরায়। ঘটনাটা লেখকের বিবরণে এরকম-
'মেজোকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আকুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মোহিত। 'বাবা আর নেই, রোহিত। বাবা আর নেই!' ছোটও কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল বড়ো ভাইকে। হাসপাতালে উপস্থিত গুটিকয়েক ডাক্তার আর নার্স অবাক হয়ে দেখল, এই স্বার্থপর জমানায় নিউক্লিয়ার পরিবার আর ওল্ডহোমের আধিপত্যের যুগেও পিতা হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে তিন ভাইয়ের একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আকুল কান্না। হাসপাতালের অটোমেটেড সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া তিন ভাইয়ের কান্নার দৃশ্য আপলোড হয়ে গেল। আর সাথে  সাথে হাসপাতালের সফটওয়্যার কাজ শুরু করে দিল। প্যাশেন্ট রিকগনিশন টুলস দিয়ে বের করে ফেলল রোগীর সব তথ্য উপাত্ত। ডাটাবেজে হানা দিয়ে জেনে গেল, ঢাকা শহরের একমাত্র যৌথ পরিবারের মাথাটা আজ থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গেল। হাসপাতালের নিউজ সেকশন সাথে সাথে খবরটা লুফে নিয়ে হাসপাতালের নিজস্ব নিউজ চ্যানেলে প্রচার শুরু করল। সেখান থেকেই নিউজটা পেয়ে গেল অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল। ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়, ওয়েব থেকে ওয়েবে। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে কিসের টানে টিকে রইল একটি যৌথ পরিবার? কিংবা কি ছিলো কালো ব্রিফকেসে? গুপ্ত ধনের চাবি নাকি অন্যকিছু ?ঘোলাটে রহস্য উম্মোচনে মনোযোগী পাঠক হয়ে পাঠ করতে হবে 'আপনালয়।'

'আপনালয়' উপন্যাসটি প্রতিটি সন্তানের পড়া উচিত, তাইলে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর নোংরা ভাবনায় একটু হলেও ফাটল ধরবে বলেই আমার বিশ্বাস। প্রতিটি মা বাবারই বইটি পড়া উচিত, তাইলে অলিক কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এসে সন্তানদের ব্যপারে মধ্যম পহ্না অবলম্বন সহজ হবে, আর মঞ্জু সাহেবের মত এটিই শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আপনালয় গ্রন্থটি হতে পারে, তীব্র হিংস্রতায় আমাদের ঘায়েল করতে থাকা বৃদ্ধাশ্রম নামক ভাইরাসের প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন ।


বই পরিচিতি:
নাম: আপনালয়
লেখক: প্রিন্স আশরাফ
প্রকাশকঃ তাহমিনা খানম
প্রধান নির্বাহী, রোদ্দুর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: শতাব্দী জাহিদ
মূল্য: ২৫০ টাকা
Share: