শনিবার, ৪ মে, ২০১৯

সোমা বড়ুয়া রিমির ছোট গল্প আনন্দ বিরহ


শিল্পসাহিঃ

আকাশের জমাটবাঁধা মেঘটা অনেকক্ষণ থেকেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনি ঝরে পরবে।অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও সে জলধারার দেখা না পেয়ে খুব অভিমান হলো তিলার।রুমে ঢুকে ফোন হাতে নিতেই দেখে অভ্রর মেসেজ।তিলা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে শিল্পকলার পথে হাঁটতে লাগলো।তিলার হাঁটার অভ্যাস আছে,তবে সে এখন হেঁটে যাচ্ছে একটা রিকশা ও পাচ্ছে না তাই।তার তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে যেকোন ভাবেই হোক।শিল্পকলায় গিয়ে দেখে অভ্র কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কিছুটা খুশি হয়ে আর কিছুটা উদ্বেগে দাঁড়িয়ে আছে।।তিলা আসতেই অভ্র ওর হাতের ব্যাগটা নিয়ে রিকশা ডাকলো।রিকশায় ওরা দুজন শুধু টাকা পয়সার কথাই বললো,আর কিছু না।টাকা-পয়সা খুব মানিয়ে গুছিয়ে খরচ করতে হবে ওদের এখন।রিকশা কাজী অফিসের সামনে এসে থামলো।অভ্র তিলার হাত ধরেই নামালো,এতো ভারী শাড়ি তিলা এই প্রথম পরলো।তিলাকে অনেক সুন্দর লাগছে,বউ বউ লাগছে।তিলা একদমই সাজেনি,শুধু লিপস্টিক পরেছে।কাজলে ওর এলার্জি আছে তাই শখ করেও পরেনা,ভীষণ রকম যন্ত্রণা হয় চোখে।অভ্র তিলাকে ডাকলো।
-কিছু বলবে?
-হুম।
-বলে ফেলো তাড়াতাড়ি।
-তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বলেই একগুচ্ছ সাদা বুনো ফুল এগিয়ে দিলো তিলার দিকে।উইল ইউ ম্যারি মি তিলা?
-ইয়েস।
-আচ্ছা, আসো। তাড়াতাড়ি ভেতরে চলো।
-এই এরকম নাহ।কিছু হলো এটা?
-কেন তুমি যেমনভাবে বললে সেভাবেই তো প্রপোজ করলাম।
-আমার হাত ধরে নিয়ে যাবে না তুমি?
-আচ্ছা আসো।
-শোনো, ইচ্ছে করে এসব না বুঝার ঢং করলে কেস দিয়ে দেবো আমাকে তুলে এনে জোরপূর্বক বিয়ে চাট্টিখানি কথা নয় কিন্তু।
-আচ্ছা,যা মন চায় পরে করো।আগে বিয়েটা করো।
-তোমার ভাইয়া আসছে?
-হুম।
তিলা আর মামুনের বিয়েটা হয়ে গেলো। মামুন হলো অভ্রর বড় ভাই।তিলা আর মামুনের সম্পর্ক সাত বছর ধরে।অভ্র তিলার ক্লাসমেট ছিলো।ওরা খুব ভালো বন্ধু ছিল।ঘনিষ্ঠতা ছিলো বেশি।ক্লাসের সবাই ভাবতো ওদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ছিল।তাই তিলার শখ হয়েছিলো অভ্র একদিন ওকে প্রপোজ করুক সত্যি সত্যি।তিলার বাচ্চামিপনা অভ্র জানতো, তা বলে সে ভাবেনি এরকম বিষয়ে ও এমনটা করতে পারে তিলা।অভ্রর পরিবারের সবাই জানতো তিলা আর মামুনের সম্পর্কের কথা।তারা তিলাকে বউ হিসেবে মানবে না তাই ওরা তিনজন মিলে পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।অভ্র অবশ্য ওদের বিয়ে দিতে পেরে অনেক খুশি।কিন্তু বুকের কোণে যেন কিসের একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে ও।ওদিকে পাত্তা দিলে চলবে না ওর।তাই একটা সিএনজি ডেকে মামুন আর তিলাকে নিয়ে রওনা দিলো টংগীর দিকে।সেখানে একটা ভাড়া বাসায় তুলে দিবে মামুন আর তিলাকে।তিলা আজ চিরদিনের জন্য অন্যকারো হয়ে যাবে ,হোক ওর ভাইয়ের তাও তো অন্যকারো।তিলা কোনদিনই বুঝলো না অভ্রকে।অভ্রর চোখ ভিজে গেল।টংগীতে গিয়ে একটা বিল্ডিং এর নিচে এসে সিএনজি থামলো।নিচতলায় ওদের বাসা।বেল দিতেই দরজা খুললো মামুনের বোন হিয়া।ঢুকতেই দেখা গেলো,মামুন আর তিলা দুজনের বাবা-মা সবাই আছে।তিলার চোখ পানিতে ভরে গেলো,আনন্দে।অভ্রকে ডেকে বললো,
-তুই এসব বলিস নি কেন আগে?
-তুই যে সারপ্রাইজ পেতে পছন্দ করিস।
সবাই এখন খুশি,যে যার মতো আনন্দে মেতে আছে।শুধু অভ্রর মনের কোণে জমেছে এক টুকরা বিষাদ।যে বিষাদ কখনো তিলাকে ছোঁবে না।তিলা তো ওর ভাবীই হবে।ভালো থাকুক ওরা,ভালো থাকুক আকাশের সকল তারা।তিলা তাঁর স্বামীর সাথে রাতের নিশ্চুপ আকাশ দেখতে গিয়ে হয়তো কখনো দেখবে হঠাৎ একটি তারা খসে পরেছে নিচে।তিলা তারাটির জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে তখন,কিছুসময় পরে আবার ভুলে যাবে তারাটির কথা,তারাটির ব্যথা।রাত ভোর হবে,তখন হয়তো একটি ছোট্ট তিলা ওদের ঘরময় ঘুরে বেড়াবে।আনন্দে বিরহ ভুলিয়ে দেবে।

Share: