কবিতা রাজারবাগ ৭১ কবি আয়েশা মুন্নি
আজ আমি কবিতা বলছি না
গল্প বা উপন্যাসের স্মৃতিচারণও নয়
আমি আজ বলছি বীরত্ব গাঁথা
একটি ইতিহাস জন্মের কথা...
২৫ মার্চ ১৯৭১ সাল
রাত প্রায় সাড়ে ১০ টা
সেই কালরাত্রির ইতিহাসে বাংলার
প্রথম প্রতিরোধের কথা বলছি ...
পুলিশ লাইন ওয়্যারলেস বেজ ষ্টেশনের বেতারযন্ত্রে ভেসে আসা কথাগুলো বলছি--
' চার্লি সেভেন ফর বেজ,
অ্যাবাউট থার্টি ফাইভ
টু থার্টি সেভেন ফর বেজ,
অ্যাবাউট থার্টি ফাইভ টু থার্টি সেভেন ট্রাকস উইথ পাক আর্মি অ্যাপ্রোচিং টু আওয়ার ঢাকা সিটি ফরম ক্যান্টনমেন্ট, ওভার।
বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ঢাকা তখন এক ভুতুরে শহর
এক বিশাল মৃত্যুকূপ,
শুধু মাত্র ওয়্যারলেস সেটেই
ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে
রাজারবাগ হামলার কথা।
প্রস্তুত তখন রাইফেল সহ
প্রায় সব পুলিশ সদস্য।
তবে শোন...
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে
জ্বলে উঠলো পুলিশ বাহিনীও,
স্বাধীনতার আলোচনায় মসগুল...
চললো সলাপরামর্শ স্বপ্নের বাংলাদেশ সৃষ্টিতে...
বনর্না করছি বাংলার ইতিহাসের প্রথম গুলি,
প্রথম প্রতিরোধ প্রতিশোধের প্রথম ধারাপাত...
স্বাধীনতার একখণ্ড ইতিহাস,
প্রথম অধ্যায়ের প্রথম আত্মত্যাগ।
বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা হামলার সংবাদ পাঠালেন---
আজ রাতেই ঢাকা হামলা হবে।
তখন চলছিল পুলিশের রাতের রোল কল।
মাতৃভূমির বিরুদ্ধ শক্তির বিপক্ষে
প্রতিরোধের নেশায়
উত্তেজিত পুলিশ সদস্যরাও,
অস্ত্রাগার খুলে অস্ত্র নেবার সিদ্ধান্তে অটল।
অস্ত্রাগার খুলে ৩০০-৩৫০ থ্রি নট থ্রি রাইফেল এবং ২০ টি করে গুলি ভগাভাগি করে
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের আশোপাশে অবস্থান নিলেন।
অতঃপর...
তেজগাঁও এলাকার ওয়্যারলেস কল সাইন চার্লি সেভেন থেকে
ভেসে এল সতর্কবার্তা...
সাথে সাথে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে
বাজে পাগলা ঘন্টা।
ঘুমন্ত, ক্লান্ত, বিশ্রামরত যে যেভাবে ছিল
ছুটে এল সব পুলিশ সদস্যরা।
চিৎকার করে বললো --
রাইফেল চাই, গুলি চাই
অস্ত্র চাই অস্ত্র দাও।
ভাঙলো দ্বিতীয় অস্ত্রাগারও শাবলের জোড়ে।
বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা।
এই শ্লোগানে উজ্জবিত হতে হতে তারা অস্ত্র হাতে অবস্থান নিল।
পাকিস্তানি সেনাদের বহর যখন রমনা পার্কে,
বেইলি রোড হয়ে শান্তিনগর প্রবেশ করে তখন চামেলীবাগ ডন স্কুলের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড,
পাকিস্তানি ফোর্স নেমে আসে আর তখনই ডন স্কুলের ছাদে পজিশন নেয়া পুলিশ বাহিনী আক্রমণ...
শুরু হয় গোলাগুলি, দেশমাতৃকার টানে।
দুই পাকিস্তানি সেনার বুকে বিদ্ধ হল স্বাধীনতার প্রথম বুলেট, প্রথম প্রতিশোধ, প্রতিরোধে লেখা হলো
প্রথম ইতিহাসের জন্মকথা।
'ফাস্ট বুলেট ফর দ্য ইনডিপেনডেন্ট'।
শুরু হল যুদ্ধ, রাত পৌনে বারটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে চলল গুলি।
একদিকে পুলিশের সেকেলে থ্রি নট থ্রি রাইফেল,
অন্যদিকে তাদের মর্টার শেল, মেশিনগানের গুলি...
বন্দি হয় দেড়শত পুলিশ সদস্য।
অস্ত্র গোলাবারুদসহ কিছু পুলিশ সদস্য রাজারবাগ ত্যাগ করতেও সক্ষম হলো।
আর সেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে।
অতঃপর নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে
জন্ম হলো লাল সবুজের এই বাংলাদেশ।