একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না’—এই দুর্ঘটনা কাঁদাতে চেয়েছিল আহাদুল ইসলামকেও! দুবছর বয়সেই কেড়ে নিয়েছে তার ডান পা। এক পা কেড়ে নিলেও সারাজীবনের জন্য কাঁদাতে পারেনি তাকে। আহাদ তখন খুব ছোট। তখনকার স্মৃতিগুলো এখন ঝাপসা। খুব একটা মনে নেই তার। পা হারানোর কষ্টে অনেক কাঁদতে হয়েছে তাকে। ছোটবেলায় স্কুলের বন্ধুরা ল্যাংড়া বলে ক্ষ্যাপাত, এতে নীরবে কান্না করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। দরিদ্র বাবা-মায়ের সংসারে বেড়ে উঠতে কী কষ্টই না করতে হয়েছিল। এখন তিনি আর কাঁদেন না! কারণ তিনি শিখে নিয়েছেন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কীভাবে বাঁচতে হয়! এখন তিনি বাঁচতে জানেন, দেশের জন্য লড়তে জানেন। ‘হুইলচেয়ার ক্রিকেট কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশ’ দলের অন্যতম সদস্য তিনি। গত ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত ‘ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল’ ত্রিদেশীয় সিরিজে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল তার দল। আগামী মার্চে আরেকটা ট্যুর আছে তাদের। এবারের গন্তব্য ভারত! এর পরের যাত্রা এশিয়া কাপের উদ্দেশ্যে। এছাড়াও একই দলের বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দলনেতা তিনি। আহাদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগরের ওমর গনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজজীবনের শুরুতে গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা থেকে এসে নিয়মিত ক্লাস করতেন, কারণ শহরে থাকার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা তার ছিল না। যেখানে সরাসরি আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম নগরে এসে ক্লাস করার কথা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কল্পনাও করে না, সেখানে আহাদ তা করে দেখিয়েছেন এক পায়ে। আসা-যাওয়ার পথে তিনটা গাড়ি পরিবর্তন করতে হতো তাকে। তিনি জানান, এতে কিছুটা কষ্ট হলেও খুব একটা গায়ে মাখতেন না। বর্তমানে নগরীর বহাদ্দারহাট এলাকায় একটা মেসে থাকেন। রান্নাসহ সব কাজ নিজেই করেন। মেসের খরচ জোগান টিউশনি করে। ক্রাচে ভর দিয়ে চষে বেড়ান পুরোটা শহর। ‘বিডি ক্লিন’ নামক একটা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে পরিষ্কার করার কাজেও নেমেছেন তিনিও। এছাড়া ‘আলো দেখাও’ নামের অন্য একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন পথশিশুদের জন্য। অথচ গ্রামের বাড়িতে ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা কিংবা অতিরিক্ত সুবিধা পান না এ প্রতিবন্ধী তরুণ। এক পা না থাকলেও জীবনের রূপ, রস, গন্ধ নিতে ভুলেননি। গ্রামে গেলে অন্যদের সঙ্গে ফুটবল খেলেন, থাকেন গোল কিপার! গাছেও উঠতে পারেন অনায়াসে। নানাবাড়িতে বেড়াতে গেলে এখনো গাছে উঠে ডাব খাওয়া হয়। হার না-মানা এ তরুণ স্বপ্ন দেখেন, একদিন প্রতিবন্ধীদের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে, সবাই বেড়ে উঠবে একসঙ্গে, সবার প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাবে প্রিয় সোনার বাংলা।