কবি সোনাই মন্ডলের এক গুচ্ছ কবিতা
লোলিহান নারীমাংস
হাজার হাজার নারী মাংস একাকী দাঁড়িয়ে
নীল নির্জনে নিল ল্যাম্পোষ্টের নীলের অন্তরালে,
নীরবে নিভৃতে বাস ঐ ক্ষুধার রাজ্যে l
ক্ষতবিক্ষত দেহতরী সাজিয়ে কামুক প্রতীকের বনলতা
পেটের দায়ে উলঙ্গ নারী তাইতো রাজকুমারী পতিতা
কিছু বিক্ষত বুভুক্ষ পথিক অস্ত্র চালিয়ে ক্রমাগত নখরে সদন্তে,
রাতের আলেয়ায় সুখ খুঁজে চলে ওই লোলিহান স্তনবৃন্তে।
অসংখ্য নিরব অশ্রুকণা সেও নাকি রঙিন মাদকের মতো
ভাগ্যিস রঙিন
তাইতো রঙের আবরণে ঢাকা পড়ে লিপস্টিকের বিষাক্ত ক্ষত।
অশরীর বিস্তার নেই লাল লোলিহান সম্ভ্রম শূণ্য
উঁচু নিচু ঢেউ খেলানো শরীর সদাই প্রেমাগ্নিতে পূর্ণ
ভুল করে কিছু ভুল...
প্রেমাগ্নি নয়, শরীর মাঝে কামুকরস খুঁজে চলা পথিক
দিনের অন্ধকারে রুমালে চোখ চেপে রাতের আলোতে মত্ত অঙ্গ আঙিনা,
উত্থাল পাত্থাল ঘৃণ্যিত প্রেমে ভাসায় পুরুষত্বের কিনারা।
বিনিদ্র রাতের মুদ্রা সুখে বিকিয়ে পরম অনুভূতি
প্রতিনিয়ত চলছে বুনন সুশীলের বিকৃত শতাব্দি !
হাজার টাকায় বিকিয়ে বস্ত্র দেওয়ালে দেওয়ালে সম্মানিত পোস্টার,
খুদার রাজ্যে ফুঁপিয়ে কান্না নেয়নি কখনো দারিদ্রতার দায়ভার।
নষ্টা কেবল ভদ্র সমাজ বাহবায় ভরা অস্পৃশ্য ঘৃণ্য,
পেটের দায়ে সম্ভ্রম বিকিয়ে তবুও ওই নারী মাংস ধন্য।
যদি কখোনো
যদি কখনও সময় পাও একবার ছুঁয়ে দেখো শীতরাত্রি শেষের হিম ধরা শরীরটাকে
যেখানে দীর্ঘ রাত্রির শরীরটি তোমাকে ছাপিয়ে যেতে পারে আরো স্থায়ী গহীন আঁধারে।
যা কিছু স্পর্শ নয়,অস্পর্শে ছড়িয়ে আছে আমার শত শত হিমশীতল শরীরে,
উদ্দেশ্যহীন অনিশ্চয়তার আশায় আমি না হয় থাকলাম কিছুটা নিরুদ্দেশে।
যদি কখনো ভুল করে চেয়ে থাকি তোমার অপেক্ষারত অলস মধ্যাহ্ন,
তবে শেষবারের মতন আমার বুকে এঁকো তোমার শৃঙ্খলহীন অসংলগ্ন পদ-চিহ্ন।
আমার বিশ্বাস এখনো ভাসমান বিকেলের নিরপেক্ষ রোদে
হাজার স্মৃতি নিয়ে এখনো মেঘমল্লা ঘুরে ঘুরে যায়,
তোমার অহর্নিশ ফেরার তাগিদে এখনো অপেক্ষারত দৃষ্টি
যেখানে রাস্তার দ-ুধারে অবহেলায় গজিয়ে ওঠা উদ্বাস্তু ঘাস ধূলোতে বাতাসে হয় অন্তলীন।
ঘুমকাতুর স্বপ্নগুলো আদ্র স্নিগ্ধতার বৃষ্টি শেষে অভিমান কুড়াচ্ছে হৃদপিন্ডের আনাচে-কানাচে
অসময়ের মেঘেরা বারবার জানান দেয় অলস ঘুমের পড়ন্ত বিকেলের কথা,
তাদের ভাষা বোধহয় বড়ই দুর্বোধ্য
অন্তহীন অস্পষ্ট দিনগুলি বারবার অতীতে প্রসারিত হয়ে গড়ে তোলে দূর্গম সমুদ্র।
যেখানে আদি-অন্ত নেই, আছে শুধু আনন্দনির্ঝর পরিসর।
ফেরারী মানবিকতা
মুঠো ভরা অভিনয় গুলো তর্ক জমিয়েছে রাস্তার মোড়ে
বলছে তাদের স্বপ্ন ছিঁড়েছে নাকি কোন অবেলায়,
বস্তা পচা সস্তা জীবিত ভয়ার্ত স্পর্শ গুলো
জানান দিল অগ্রিম অবক্ষয়।
ভয়টা নাকি শিরদাঁড়া বেয়ে মাটিতে নেমেছে
দুপায়ের হাঁটু মুড়ে বসে আছে মৌন পরাজয়,
প্রতিনিয়ত ভাগ্যের সাথে বোঝাপড়া শেষে
শবযাত্রী বাহীতো শবগুলোও কেমন পরাজয়ের গান গায়।
এক এক করে হারিয়ে ফেলেছি অপ্রিয় মানবিকতা আলমারি স্বরূপ কফিন গুলো বলছে নিজেকে সঁপে দাও ভাগ্যের হাতে,
ভিখারি পাগলিনী মা তো জানে না বাঁচার মানে কি?
তাইতো পাশবিকরা সুখ খোঁজে মায়ের বপুতে প্রতি রাতে।
ঘটা করে আগমনীর আবাহনে মত্ত বসুন্ধরা
চারি রাত্রির মহা ধুমধামে
পূজিতা মাটির প্রতিমাখানি,
প্রতি ঘরে ঘরে স্পর্শ জাগায় মা রুপী কপালিনী, ক্ষণদা
শূণ্য ভয়েতে আবার উঠবে জেগে অসুর নিধনকারী মানবিকতা।