রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯

লন্ডন প্রবাসী কবি ফাহমিদা ইয়াসমিনের একক কবিতা পাঠের আসর



গত ১৬ই আগস্ট সোমাবার প্রাকৃত প্রকাশের উদ্যোগে কবি ফাহমিদা ইয়াসমিনের একক কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়। কবি মামুন সুলতানের সভাপতিত্বে গল্পকার মিনহাজ ফয়সলের সাবলীল উপস্থাপনায় কবি সাবিনা আনোয়ার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন কবি ফাহমিদা প্রবাসে জীবন যাপন করলেও দেশের প্রতি রয়েছে গভীর মমত্ববোধ। তার কবিতায় যেমন প্রেমের কথা আছে তেমনি দেশের কথাও আছে।  তার কবিতায় এক ধরনের ভালো লাগা আছে। কবির কাব্যচর্চা  যেন অব্যাহত থাকে এই আশাবাদ উপস্থিত সকলেই ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি এম মোশাহিদ খান। কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন ছড়াকার দেলোয়ার হোসেন দিলু,কবি শফিকুল ইসলাম সোহাগ, কবি মোশাররফ হোসেন সুজাত, কবি জুবের আহমদ সার্জন, কবি নাসিম আহমদ লস্কর, কবি কামরুল ইসলাম বুলবুল,  কবি জেনারুল ইসলাম,কবি সাইফ মুহাম্মদ খালিদ, মুকিত খান,ও মাহবুবর রহমান।

বঙ্গবন্ধু স্মরণে খেলাঘরের সাহিত্য বাসর অনুষ্ঠিত




জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান স্মরণে খেলাঘরের বিশেষ সাহিত্য বাসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার সেমিনার হলে ১৭ আগষ্ট, শনিবার বিকাল ৪টায় শিশুদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, স্মৃতি চারণ ও শিশুরা সংগীত পরিবেশন করে। খেলাঘর কেন্দ্রী কমিটির সম্পাদক সৌমেন পোদ্দর’র সঞ্চালনায় স্বগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন খেলাঘর কেন্দ্রী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুনু আলী।

খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারপার্সন প্রফেসর মাহফুজা খানম’র সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে  শিশুসাহিত্যক আখতার হুসেন, কবি কাজি রোজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক ড. সেলু বাসিত, কবি অসিম সাহা, সুরকার সেলিম রেজা, অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস, ড. তপন বাগচী, ড. মামুন সিদ্দিকী শিশু, ড. শাহদৎ হোসেন নিপু, ছড়াকার সিরাজুল ফরিদ, স্যামসন বুড়ন প্রমুখ। এছাড়া এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শিল্পী ড. কাজি মোজাম্মেল হক, রথিন চক্রবর্তী, খেলাঘরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ, জহিরুল ইসলাম জহির, খেলাঘর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিনের কর্মী, ভাইবোন ও অভিভাবকসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
উপস্থিত কবি সাহিত্যকদের মধ্যে আলোচনা ও স্বরচিত লেখা পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা নূরুদ্দিন শেখ, রমজান মাহমুদ, ডা: আতিয়ার রহমান, এম আর মনজু, সব্যসাচি পাহাড়ি, সাংবাদিক ও খেলাঘর সংগঠক রহমান মুস্তাফিজ, কনক বিশ্বাস, জাহানারা জানি, তাহাজুল ইসলাম ফয়সাল, জহিরুল ইসলাম স্বপন, সাদিকা আল দৃষ্টিসহ  নবীন প্রবীন লেখদের আরও অনেকে।
বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে আবৃত্তি পরিবেশন করে মাসুম আজিজুল বাসার, তৌহিদ রিপন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ খেলাঘরের শিশু-কিশোর ভাইবোনেরা। আয়োজনে শিশু প্রতিনিধি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখে মুনাজ্জা আলীম।

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৯

'রাজাকার' এখন লজ্জার নয় গৌরবের নাম: সুস্ময় শরিফ

ছোটবেলা থেকেই ‘রাজাকার’ শব্দটিকে আমি চরম ঘৃণা করতাম, আমার চরম অপছন্দের শব্দটি ছিল ‘রাজাকার’। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন রাজাকার শব্দটি শোনামাত্রই আমি রেগে যেতাম আর আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। ভাবতাম, যদি রাজাকারকে কখনো কোথাও পাই তাহলে তাকে ধোলাই করবো। এমনই ঘৃণিত আর অপছন্দের শব্দ ছিল ‘রাজাকার’। কিন্তু বর্তমানে আমরা যে সময়ে, যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি, এ সময়ে রাজাকার একটি বিউটিফুল শব্দ। 
কেননা আজ যাদের রাজাকার খেতাব দেয়া হচ্ছে আদৌ তাদের বয়স ৪০ হয়নি। না তারা ৭১ এর যুদ্ধ দেখেছে, না তারা যুদ্ধাপরাধী! তারা কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত না। আজ যাদের রাজাকার খেতাব দেওয়া হচ্ছে, তারা সবাই ধার্মিক-আদর্শবান। তারা সবাই দেশকে ভালবাসে, দেশের পক্ষে কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা সুদ খায়না ঘুষ খায়না, তারা কারো দালালি করেনা।
আজকের রাজাকারের সংজ্ঞা হল, “সীমান্তে ভারত একের পর এক হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিবাদ করা, ফেলানি হত্যার বিচার চাওয়া, দেশে লুটপাট, চুরি-ছিনতাই, ধর্ষণ, শেয়ার বাজার লোপাট নিয়ে মুখ খোলা, ভোটাধিকার চাওয়া, তিস্তা সমাধান চাওয়া, সীমান্ত হত্যা বন্ধে সুষ্ঠু সমাধান চাওয়া,দিনে-দুপুরে মা-বোন ধর্ষিতা হচ্ছে, খুন হচ্ছে তার প্রতিবাদ করলেই দেয়া হয় ‘রাজাকার’ খেতাব।
রাস্তায় লাশের মিছিল চলছে কিন্তু নিরাপদ সড়কের দাবি করলেই সে রাজাকার। দাড়ি রাখা, ইসলামি পোশাক পরিধান করা, নামাজ-রোজা করলে পাচ্ছে রাজাকার খেতাব। আজ চামড়া শিল্প, পাটশিল্প, পোশাক শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে কথা বললেই বনে যাচ্ছে রাজাকার। মোটকথা, যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে রাজাকার বলে”।
অপরদিকে যে চুপ থাকে সে বনে যায় দেশপ্রেমিক। দেশে শান্তি থাক বা না থাক, ন্যায়বিচার না থাক, ভারতীয় মাদকে দেশ ডুবলে ডুবুক, শেয়ার বাজার ছয়লাপ তাতে অসুবিধা কি? চুপ থাকলেই দেয়া হচ্ছে দেশপ্রেমিকের সীলমোহর, পাচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা। আজ যে মাদকাসক্ত, নেশা করে রাস্তায় পরে থাকে, ভিনদেশিদের পা চেটে যাচ্ছে যারা তারাই হলো দেশপ্রেমিক।
সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন সাহেবের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ভিনদেশি সংগঠনগুলো কিভাবে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে, কিভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের নীলনকশা তৈরি করছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। আর এই বিষয়ে যদি কেউ কথা বলে, তখন সে হয়ে যায় রাজাকার, জঙ্গি।
মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক যারা কোনো অপরাধ করেনা, যারা দেশ-সমাজ নিয়ে চিন্তা করে, দাড়ি-টুপি আছে নামাজ-কালাম ঠিকমত আদায় করে, ঘুষ খায়না দুর্নীতি করেনা তাদেরকেও আজ ভাল মানুষ হিসেবে পরিচয় দেয়ার কোনো উপায় নাই। তারাও পেয়েছে ‘রাজাকার’ বা ‘জঙ্গি’ খেতাব। তার কারণ, তাদের অনেকেই রাজনীতি করেনা, আবার কেউ করলেও কোনো নেতার গোলামি করেনা। কারো পা চাটেনা। কোনো নেতার কাছে তারা করুণা চায়না। তারা সাহায্য চায় আল্লহর কাছে। অতএব তারা রাজাকার, জঙ্গি।
আজকে আমরা যে অবস্থানে আছি, সেখানে যদি কেউ চুপ থাকে তবে সে দেশপ্রেমিক আর বাধা দিলে রাজাকার। দেশের যারা অভিভাবক, যারা দেশের দায়িত্বে আছেন তারা যখন অন্যায়ে জর্জরিত, তখন কেউ কোনো কথা বলতে পারবেনা। বললে সে রাজাকার। 
কাস্মীরের মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে ভারত আর বাংলাদেশের মুসলিমসহ ৯৫% মানুষ যেখানে কাস্মীরের স্বাধীনতা কামনা করছে সেখানে মুসলিম নামধারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আমরা ভারতের পাশে থাকবো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৯৫% মানুষ সবাই রাজাকার। কেউ পারবেনা কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে। পারবেনা কেউ মানবতার পক্ষে থাকতে। যদি কেউ কাস্মীরের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে তাদের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নিজেকে দেশপ্রেমিকের পরিচয় দেয়ার ব্যর্থচেষ্টাও করেছেন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
সুতরাং আমি মনেকরি, বর্তমান সময়ে রাজাকার হওয়া অনেক সম্মানের ব্যাপার, অনেক যোগ্যতার ব্যাপার। আজকের রাজাকাররাই পারে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে। ‘রাজাকার তোমরা গৌরবিত, তোমরাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক’।

মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০১৯

সামাজিক সংগঠন প্রয়াসের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠিত


জহিরুল ইসলাম:সামাজিক সংগঠন প্রয়াসের  উদ্যোগে “গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান” বৃক্ষরোপন কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে ঘোড়াদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে  প্রয়াসের সাংগঠনিক সম্পাদক মারজানুল হকের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঘোড়াদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  দেওয়ান হেমায়েত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াসের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ডা.লুৎফা হক লাভলী।
আরো  অতিথির হিসেবে উপস্থিত  ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্র ছাত্রীবৃন্দ। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করা হয় ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অতিথিরা  সুপারি, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, নীম, জাম গাছসহ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম চারাগাছ   রোপন করেন।
এই সময় প্রয়াসের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম,মেহেদী হাসান,ফয়সাল, আলমঙ্গীর,তামান্নাসহ সকল সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলো। 

শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯

বাস্তব জীবনের গল্পে বন্ধুদের ভালোবাসা: রাজীব শীল জীবন

চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় পরপর তিনদিন স্কুলে যায়নি। ক্লাসের বন্ধুবান্ধবীরা খোঁজ নিয়ে জানল আমি অসুস্থ। যদিও তৃতীয় দিন একটু ভালো লাগলেও মা যেতে দেয়নি। কী আর করা ঐ দিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল শুরু হলে রাস্তায় বেরুলেই দেখলাম কিছু পরিচিত মুখ আসছে। দৌড় দিয়ে ঘরের বাঁশের তৈরি বানানো মাছার উপর অসুস্থ রোগীর মতো শুয়ে পড়লাম এবং মাকে বললাম আমার স্কুলের বন্ধুরা দেখতে আসতেছে। মা একটু এগিয়ে গিয়ে ওদেরকে নিয়ে আসল।

পাউরুটি, বিস্কুট, দুধ, চায়ের পাতা, চিনি নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগী আমাকে ওরা দেখতে আসল। আমার চারপাশে প্রিয় বন্ধু জনি, ইয়াসমিন, টিটু, সরোয়ার, নয়ন, তন্মম, রহমত, পারভেজ, মৌসুমী, তসলিমা, বাচা  ডাক নাম মাহফুজ, সাহিদ, সবাই বসল এবং মাথায় হাত দিয়ে বন্ধুত্বের থার্মোমিটারে ছোঁয়া দিয়ে মাপল জ্বর আছে কিনা। সকলের হাতের স্পর্শে শরীর মন যেনো এক বন্ধনের ঔষধ পেল, সকলের টলমল চোখের ভাষা দেখে মনে জানান দিল কত প্রেম বন্ধুদের ভালবাসায়।

দারিদ্রতার সাথে প্রতিনিয়ত অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল আমাদের পরিবারটি। চোখ ভেজা ভালবাসার জলে ওরা শেখাল বন্ধুত্ব আগে দারিদ্রতা দূরে। মা মুড়ি এবং চিনির শরবত বানিয়ে সবাইকে খেতে দিল। তখন এর থেকে ভালো খাবার দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের ছিল না। ওদের কাছ থেকে ক্লাসে কী কী পড়া হয়েছে, পরের দিন কী পড়া আছে নোট করে নিলাম, এরপর তারা যাওয়ার সময় মাকে বলে কোনকিছু প্রয়োজন হলে তাদের জানাতে বলে এবং আমাকে ঠিকমত ঔষধ খেতে বলে বন্ধুত্বের আলিঙ্গনে।

সেই ছোটবেলার বন্ধুরা এখন কেউ কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ গ্রামের দোকানদার,অনেকেই শিক্ষিকা,
কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ প্রবাসী, কেউ সরকারি চাকুরী আবার কেউ নামকরা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরীরত। ক্লাসে অনেকেই বলত আমি ডাক্তার হতে পারব, কেউ কেউ বলত ইঞ্জিনিয়ারই হবো না হয় শিক্ষক হবো, কেউ বলত ব্যারিস্টার।

এখন সময়ের আবর্তনে পরিবার ও বন্ধুদের দেখা সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে দেশান্তরী। প্রতিদিন বিলাসবহুল শহরে নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাথে, বিভিন্ন দেশের মেধাবী ও ধনীর দুলালদের সাথে পাঠদান এবং দামি রেস্টুরেন্টে খেলেও ছোটবেলার পকেট থেকে বন্ধুদের সাথে মুড়ি বের করে খাওয়া, গরম গরম বেকারির বিস্কুট, কেক ভাগ করে খাওয়ার মতো স্বাদ পাই না। বিভিন্ন দেশ ঘুরে চেনা অচেনা অনেকে বন্ধু হিসেবে আসলেও সেই সোনালী দিনগুলোতে বার বার ফিরে যেতে চাই কিন্ত সময়গুলো ফিরে না।

সেদিনের চতুর্থশ্রেণীর কচি মনগুলোর ভালোবাসায় আজো সিক্ত হই। সেদিন প্রতিবেশী অনেকেই এসে জিজ্ঞেস করেছিল ওরা কেনো এসেছিল? মনে মনে নিজেকে বলেছিলাম আর এখনো বলি আমাদের বন্ধুদের ভালোবাসা।
বন্ধু তোদের খুব মনে পড়ে, তোদের ভালবাসা আজো বহন করে পথ চলি, তোরা হৃদয়ে আছিস, থাকবি বন্ধুত্বের অটুট ভালবাসায়। স্কুল কলেজ, ভার্সিটির বন্ধুদের অনেক স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়।

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯

কবি সাজেদা পারভীন কবিতা নিশি কাব্য


নিশিদিন নিশিভোর নিশি নিশিক্ষন,
নিশিক্ষনে ভালো লাগে তোমার কথন।

নিশিকালে  নেশাভরা চাঁদ হাসে গগণে,
নিশিরাতে তুমি যে আসো মোর স্বপনে।

নিশিরাতে গগণে উঠে পূর্ণিমার চাঁদ,
নিশিতেই ভাঙে যত আবেগের বাঁধ।

নিশিপদ্ম হাতে নিয়ে চেয়ে রই নীলাকাশে,
নিশিচাঁদে তোমারে দেখে মন অকারনেই হাসে।

নিশিকাব্য রচি আমি ঘোর অমাবশ্যা নিশীথে,
নেশায় যে মাতাল হই বিরহ বন- বিথীতে।

নিশি ভোরে কখন যে আনমনে উঠি জেগে,
নিশীথেই অকারনে হাতরে খুঁজি তোমাকে।

নিশীথের প্রেমে আমি হই মশগুল,
নিশি চাঁদের কথা শুনে আমি হই আকুল।

নিশি প্যাঁচার নিম সুরে আমি অকারনে পাই ভয়,
তবু ও নিশীথিরে ভালোবাসিতেই মনে বেশি ইচ্ছা লয়।

নিশিরাতেই কখন ও বা ফুরায় মায়ার টান,
ফুরায়  জীবনের লেন দেন সব ঐকতান।

ভাবতে ভাবতে কখন যে নিশি ফুরায়,
আবার অপেক্ষায় থাকি নিশির আশায়।

বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯

ভালোবাসি বাবা নুসরাত জাহান (লিয়া)



আমাদের জন্য প্রস্তুত তার শেষ রক্তবিন্দু,
তিনি বাবা আমাদের প্রিয় বন্ধু।
পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার,
বাবা ভালোবাসার পাহাড়।

বিশ্ব বাবা দিবসে বলি নাই,
ভালোবাসি বাবা তোমাকে।
তাই কি বলো তোমার প্রতি,
ভালোবাসা আমাদের কমতি আছে?

সারাদিনের ব্যাস্ততা শেষে
তুমি যখন বাড়ি ফিরতে,
কি এনেছো আমার জন্যে
বলতাম তোমায় জড়িয়ে ধরে।

প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়েছি বাবা,
রাখো নাই তুমি মনে।
নিজের ঘাম ঝরিয়েছো,
আমাদের প্রয়োজনে।

মনে কি পরে তোমার প্রিয় খাবার,
মাছের মাথা খেয়েছো শেষ কবে?
সব সময় ভেবেছো তুমি,
কি করে আমাদের অন্ন যোগাবে।

বাবা তুমি হাটতে শেখালে হাত ধরে,
সুখ দুঃখে আছো তুমি পাশে।
শেষ করা যাবেনা তোমায় নিয়ে লিখে,
তুমি আমার সব বাবা এই পৃথিবীতে।



রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯

হতচ্ছাড়া প্রেম / তাসলিমা কবির রিংকি



কে বলেছে তুমি নেই !তুমি আর আসবে না
ওসব বাজে কথা আমি বিশ্বাসই করিনি
আমি তো বলেছিলাম একদিন ফিরে আসবে ।
আমার জন্য গোলাপ বেলী আর
সোনার কবিতা হাতে অবশেষে  এলে তো !

আমার কি য়ে হতচ্ছাড়া প্রেম !
আনন্দ না বেদনা না
শুধু বিরহ ছড়িয়ে তোমাকে খুঁজে;
বাড়াবাড়ি রকমের বেহায়াপনা ছাড়িয়ে
শুধু তোমাকেই বুঝে ।
তোমাকে পাওয়া সহজ না তাই চাই না
কবিতা লিখে প্ররোচিত করি
তুমি যে রহস্য গোপন রাখো আমি তার পিছু ছুটি,
তুমি যেখানে যাও চলি তোমার পায়ের তালে তালে
তোমার চোখে মুখে বুকে ছিলাম না কোনকালেই
ছিলাম এক পলকের মৃদু হাসিতে
সেটাই কম কিসে বলো ?
তোমার প্রেমে আত্মার দ্যুতি ছড়িয়ে মুগ্ধ আমি
স্বর্গের বাগানে তোমার পদ স্পর্শ করে আমি দূরে
প্রাণের স্পর্শে ফুটাই ফুল ।

শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯

সিডনিতে গ্র্যান্ড লাকেম্বা ঈদ বাজার উপলক্ষে প্রেস কনফারেন্স


আবুল কালাম আজাদ, সিডনি প্রতিনিধি: সিডনির লাকেম্বায় জুবিলী রিজার্ভ পার্কে আগামী ৩রা ও ১০ই আগস্ট ‘গ্র্যান্ড লাকেম্বা ঈদ বাজার’ উপলক্ষে গত ১৩ই জুলাই শনিবার বিকেল ৪:০০টায় স্হানীয় রেস্টুরেন্টে প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। এই কনফারেন্স ‘লেইস ফিতা’ ফ্যাশন হাউজের আয়োজনে এবং মাসুদা জামান ছবির উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়।


এই প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ‘লেইস ফিতা’র সত্ত্বাধিকারী তাম্মি পারভেজ ও মাসুদ পারভেজ। লেইস ফিতা পূর্বের ঈদগুলিতে কমিউনিটি হলের ইনডোরে অন্য ফ্যাশন গ্রুপের সাথে ঈদ মেলার কাজ করে আসছিলেন। তাঁরা লাকেম্বাতে প্রথমবারের মত আউটডোরে এককভাবে ঈদের কেনাকাটার জন্য স্থানীয় বাংলাদেশীদের সুযোগ তৈরী করার জন্যই এই মেলার আয়োজন। আর সিডনির কিছু ক্ষুদ্র মহিলা ব্যবসায়ীদের (বুটিক বা অন্যান্য কাপড় ব্যবসায়ীদের) একত্রিত করে কমিউনিটিতে ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াও তাদের উদ্দেশ্য।

লেইস ফিতা জানান, মেলায় থাকবে ৩০টি বিভিন্ন ধরণের পণ্যের স্টল থাকবে যার মধ্যে কাপড়, বুটিক, রিয়েল এস্টেট, ফুড ও জুয়েলারীর দোকানও থাকবে। সকাল ১১:০০টায় শুরু হয়ে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত চলবে মেলা।

আগামী ২০শে জুলাই সিডনিতে ‘হোয়াইট রিবন নাইটস’


আবুল কালাম আজাদ, সিডনি প্রতিনিধি: হোয়াইট রিবন অষ্ট্রেলিয়া’র আয়োজনে আগামী ২০শে জুলাই ২০১৯ শনিবার সন্ধ্যা ৬:০০টায় সিডনি ল্যাকান্বার স্হানীয় কহিনুর রেষ্টুরেন্টে ‘হোয়াইট রিবন নাইটস-২০১৯’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাংবাদিক, সম্পাদক ও হোয়াইট রিবন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাম্বাসেডর আবুল কালাম আজাদ খোকন। সঞ্চালনায় থাকবেন কমিউনিটির গুণীজন নাসিম সামাদ।

অষ্ট্রেলিয়াতে আগামী ২৬শে জুলাই হোয়াইট রিবন নাইটস। আর এই মহতী উপলক্ষকে সামনে রেখেই তাঁদের হোয়াইট রিবন এর আয়োজন। শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়কে অষ্ট্রেলিয়াতে হোয়াইট রিবন বলে। এদেশে ২৬শে জুলাই হোয়াইট রিবন নাইটস এবং ২৫শে নভেম্বর হোয়াইট রিবন ডে পালন করা হয়।

অনুষ্ঠান আয়োজন মালায় থাকবে বক্তব্য, নারী নির্যাতন দূরীকরণ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, নারী নির্যাতনসংক্রান্ত ছোট্র নাটক এবং বুকলেট বিতরন। বাঙ্গালী কমিউনিটির রোল মডেল দম্পতির সংসার জীবন (ডোমেষ্টিক ভায়োলেন্স ব্যাতীত) পার করেছেন তা দর্শকদের শেয়ার করবেন। এছাড়াও মানসিক ও নির্যাতনসংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি। হোয়াইট রিবন নাইটস উপলক্ষ্য কেক কাটা হবে। আর সবশেষে নৈশ্যভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।

আয়োজনস্থলে উপস্থিত থাকবেন হোয়াইট রিবন অষ্ট্রেলিয়ার দল, সাংবাদিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।

শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা: অর্জন, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়


শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। এই স্লোগান সামনে নিয়ে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা এগিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে। আমরা জানি যে, প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে সকল ধরনের শিক্ষার ভিত্তিস্বরূপ। যে কোন অবকাঠামোর ভিত্তি যদি মজুবত না হয়, তাহলে সেটা ঝুকিপূর্ণ বলে আমরা ধরে নেই। তদ্রুপ প্রাথমিক শিক্ষা যদি মানসম্মত না হয়; তবে পরবর্তী শিক্ষাস্তর টেকসই হওয়ার কথা নয়। প্রাথমিক শিক্ষার স্তর বলতে ১ম শ্রেণি হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বুঝায়।

যদিও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ উল্লেখ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং সে মোতাবেক বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এছাড়াও প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি নামে বাংলাদেশের প্রত্যেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি বিশেষ শ্রেণি রয়েছে। এ শ্রেণিটি হচ্ছে ১ম শ্রেণিতে ভর্তিও প্রস্তুতি স্বরুপ। বিদ্যালয়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় কক্ষটি হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য বরাদ্দ। ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা রয়েছে।

এ যোগ্যতাগুলি প্রত্যেকটি শ্রেণিতে বিষয়ভিত্তিক ভাগ করা রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী ১ম শ্রেণি হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষ করে যদি ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা সফলভাবে অর্জনের মধ্য দিয়ে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে আমরা ধরে নিব সে শিক্ষার্থীর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন হয়েছে।

ইতমধ্যে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু অভূতপূর্ব এবং যুগোপযোগী পরিবর্তন সাধন করেছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

১. সকল শিক্ষার্থীর হাতে ১ জানুয়ারীতে সম্পুর্ন বিনামূল্যে পাঠ্য বই দিয়ে আসছে সরকার। আমি যতদূর জানি পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এভাবে সম্পুর্ণ বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণ করা হয় না।
২. শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় নেওয়া হয়েছে এবং শিউরক্যাশ এর মাধ্যমে উপবৃত্তির অর্থ সরাসরি অভিভাবকদের মোবাইলে পৌঁছে যায়।

৩. ১৯৭৩ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একসাথে ৩৬১৬৫টি বিদ্যালয় জাতীয় করণের পর বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশিষ্ট ২৬১৯২টি বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করে নিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি সাহসী ও যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ।

৪. বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা হয়েছে এবং এ শ্রেণির জন্য প্রত্যেক বিদ্যালয়ে একটি করে কক্ষ নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশাপাশি এ শ্রেণির জন্য প্রত্যেক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

৫. ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছর হতে আগামী ৫ বছরের জন্য ৪র্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি নামে একটি প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা।

৬. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নিতকরণসহ সহকারী শিক্ষকগনের বেতেন গ্রেড উন্নিত করা হয়েছে।

৭. প্রত্যেক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণসহ স্লিপ, প্রাক-প্রাথমিক, রুটিন মেনটেইনেন্স, ওয়াসব্লক মেরামত, ক্ষুদ্র মেরামত, বৃহৎ মেরামতসহ বিভিন্ন ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে প্রতিবছর।

৮. বিদ্যালয়গুলোতে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, সাউন্ডসিস্টেম, পিএনও ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে।
৯. শিক্ষক এবং কর্মকর্তাগণের বিভিন্ন ধরনের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দেশে এবং বিদেশে।
১০. প্রত্যেক বিদ্যালয়ে একজন করে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও উল্লেখ করার মত আরও অনেক অর্জন রয়েছে আমাদের। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষের মধ্যে ৪ নম্বর লক্ষ্যটি হচ্ছে গুনগত শিক্ষা নিয়ে। এর মধ্যে আমরা যেহেতু কাজ করি প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তাই আমি গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরনের জন্য কিছু দিকনির্দেনামূলক কথা বলতে চাই।

২০৩০ সালের মধ্যে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরনে যে লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে সেখানে আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এ সকল প্রতিবন্ধকতা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১. দীর্ঘ দিন যাবৎ মামলাজনিত জটিলতার কারনে শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত ছিল। যদিও এখন মামলা নিস্পত্তির কারনে ২০১৮ সাল হতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়মিত হচ্ছে। এ ছাড়াও শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। এ সকল মামলার নিম্পত্তির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যদি একটু আন্তরিকতার সাথে দ্রুত নিম্পত্তির ব্যবস্থা করেন তাহলে আমাদের শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের প্রতি আরো বেশী আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাবে।

২. একজন শিক্ষক যদি প্রতিদিন ৬/৭টি ক্লাস নেন তাহলে সেই ক্লাসের গুণগতমান ততটা মানসম্মত হয় না। তাই আমি মনে করি একজন শিক্ষক ৪টি করে ক্লাস নেবেন প্রতিদিন। তাহলেই তিনি লেসন প্লান অনুসরণ করে, বাস্তব উপকরণ ব্যবহার করে এবং মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে মানসম্মত ক্লাস নিতে পারবেন।

৩. বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় একজন শিক্ষক বাংলা, গণিত, ইংরেজিসহ সকল বিষয়ের ক্লাস নিয়ে থাকেন। যদি একজন শিক্ষক সকল শ্রেণির ১টি বিষয়ের ক্লাস নেন, তাহলে সেই ক্লাসের গুনগতমান ঠিক থাকবে। তাই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করছি।

৪. ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা প্রত্যেক শ্রেণিতে এবং প্রত্যেক বিষয়ে ভাগ করা আছে। ১টি শ্রেণি হতে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই সকল যোগ্যতা অর্জন হয়েছে কিনা তার উপর জোর দিতে হবে। যদি কেউ ১টি শ্রেণিতে নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করতে না পারে তাহলে তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যাবে না।

৫. বিদ্যালয়ের সময়সূচির মধ্যেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। একজন শিক্ষক সকাল ৯ ঘটিকা হতে বিকাল ৪.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত টানা ক্লাস নিলে ক্লাসের গুণগতমান ততোটা ভাল হবে না।

৬. ইহা ছাড়াও শিক্ষার্থীরা একটু চঞ্চল হওয়ায় এত সময়ে বিদ্যালয়ে তাদেরকে ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। আমাদেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০% মহিলা শিক্ষক। তারা তাদের পরিবারের সকল কর্ম গুছিয়ে সকাল ৯টায় বিদ্যালয় উপস্থিত হওয়া দূরহ ব্যাপার। যদিও নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন, তথাপি তাদের মানসিক প্রশান্তির ঘাটতি রয়ে যায়। তাই আমার পরামর্শ বিদ্যালয়ের সময় সকাল ১০ ঘটিকা হতে বিকাল ৩.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত যথেষ্ট।

৭. শিক্ষকগণের পাশাপাশি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি) ও পিটিএ কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। কারন তারা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে।

৮. শিক্ষকগণকে দিয়ে জাতীয় বিভিন্ন ধরনরে কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করানো হয়। এ সময়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এটি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়।

৯. শিক্ষকগণের পদন্নোতির ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। একজন শিক্ষক মনে করেন তিনি যে পদে যোগদান করেছেন সেই পদেই অবসরে যাবেন; তাহলে তার মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ এবং আন্তরিকতা কমে যায়। শিক্ষকণনকে যদি তার পুরো চাকুরীজীবনে কমপক্ষে ২টি পদন্নোতির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে কাজের প্রতি তারা আরো বেশী আন্তরিক হবেন বলে আমার বিশ্বাস।

১০. প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজের পরিধি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন ধরনের তথ্যের কাজে প্রধান শিক্ষকগণকে বেশীর ভাগ সময় বিদ্যালয়ের বাহিরে গিয়ে কাজ করতে হয়। এছাড়াও অনেক ধরনের রেজিষ্ট্রার হালফিল রাখতে হয়। এ সকল দাপ্তরিক কাজের কারনে প্রধান শিক্ষকগণ শ্রেণি কার্যক্রমে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে একজন করে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

এগুলো ছাড়াও ছোট-বড় অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমরা সবগুলো একত্রে সমাধান করতে পারব না। কারণ সেই ধরনের সক্ষমতা আমাদের নেই। তারপরেও ধাপে ধাপে আমরা এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারি তাহলে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রাতেও ২০৩০ সালের পূর্বেই নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করে দক্ষিণ এশিয়ায় অনুকরণীয় হয়ে থাকতে পারব।

লেখক: মোঃ শাহাদাত হোসেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, চাটখিল, নোয়াখালী।

সিডনির ল্যাকেম্বায় ‘প্রবাসী বাংলা’ সংগঠনের পিঠা উৎসব


আবুল কালাম আজাদ, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি: শীত আসে, সেই সঙ্গে হাজির হয় পিঠা উৎসব। শীতকে আমরা বরণ করে নিই এই পিঠা উৎসবের মাধ্যমে। প্রবাসেও বিভিন্ন শহরে পিঠা নিয়ে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রবাসেও নর-নারীরাও এই আয়োজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে চান না।

বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য প্রতি বছরই পিঠা উৎসব করে থাকে সিডনির ল্যাকেম্বায় প্রবাসী বাংলাদেশি উইমেন এসোসিয়েশন (পিবিডাব্লিউএ) সংগঠন। পিঠা উৎসবের আয়োজন ছিল গত ৬ জুলাই সিডনি ল্যাকেম্বার চার্চ কনফারেন্স রুমে।


শীতের মজাদার প্রচলিত পিঠার মধ্যে চিতই, পাটিসাপটা, পুলি, পাতা পিঠা, পাকন, নারকেল পিঠা, ভাঁপা পিঠা, ঝাল পিঠা, মেরা পিঠা, নারকেলের গুরের নাড়ু বানিয়েছেন কেউ কেউ। কেউ আবার নকশা পিঠা, ঝিনুক পিঠা, চালের রুটি, সেমাই পিঠা, ক্ষীরপুলি পিঠা তৈরি করেছেন।

এছাড়াও স্পন্স রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, সূজীর পোয়া পিঠা, হ্নদয় হরণ পিঠা ও রকমারী পিঠার সমাহার ছিল। বেশীর ভাগ পিঠাই স্থানীয় গৃহিনীরা নিজের হাতে তৈরি করেছিল। পিঠা ছাড়াও বেশ কয়েকটি শাড়ি চুড়ির স্টল ছিল। অনুষ্ঠানটিতে স্থানীয় শিল্পীদের গান পরিবেশন করা হয়। সকাল এগারোটায় শুরু হয়ে পিঠা উৎসব চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

স্থানীয় গৃহিনীরা নিজের হাতে তৈরি করে নিয়ে এসেছিলেন এসব পিঠা । ‘প্রবাসী বাংলা’ আয়োজকদের মধ্যে ছিল ব্যপক উৎসাহ উদ্দিপনা। আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই মেলা আয়োজন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন ফয়জুন পলি এবং পিঠা উৎসবের সহযোগীতায় ছিলেন ফারহানা মোস্তফা, ফেরদৌস সুলতানা ও আমেনা খাতুন।

রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯

সিডনিতে ২০২০ সালের বৈশাখী মেলার তারিখ ঘোষণা


আবুল কালাম আজাদ, সিডনি,অষ্ট্রেলিয়া: বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি আয়োজিত অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০২০ (১৪২৭ বংলা) সালের বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে ৪ এপ্রিল (শনিবার)। ১৯৯৩ সালে বারউড স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বৈশাখী এখন সিডনির সবচেয়ে বড় নববর্ষ উদযাপনে পরিণত হয়েছে। স্মিথফিল্ড রোডের ফেয়ারফিল্ড শো-গ্রাউন্ডে এ মেলা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে।

এ বছর ২০১৯ সালের বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছিল ৬ এপ্রিল শনিবারে। ২০১৮ সালে থেকে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফেয়ারফিল্ড শো গ্রাউন্ডে। দীর্ঘদিন থেকে এই মেলা টেম্পি পার্কে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে অনেকের কাছে এই প্রাণের উৎসব টেম্পি মেলা নামে পরিচিত।


মেলায় সারাদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ফ্যাশন শো, বাচ্চাদের রাইড ও জমকালো আতশবাজি আয়োজন থাকবে। মেলার প্রধান আয়োজক গাউসুল আলম শাহজাদা জানান, মেলার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা সভা ও সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সভায় আরো বিস্তারিত কর্মসূচী জানাবেন বলে আয়োজকরা জানান।

বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯

কবিতা নিসর্গ সময় কবি ফাহমিদা ইয়াসমিন


নিসর্গ সময়
-কবি ফাহমিদা ইয়াসমিন

জলডোরা সাপের মতো আঁচলে মুখ গুঁজে
শীতল হয় পালকির বাহক।
ঘুঘুর ডাকা তপ্তদুপুরে সাঁতার কেটে
জলে আঁকে ক্যানভাস।
এযেন বারোয়ারি দূশ্যাবলী।
যেভাবে লতাপাতা ঘেরা অন্ধকার ডালে
মৌমাছি সাজায় বাসর।
ঠিক সেভাবেই কিচিরমিচির টুংটাং সুর তুলে
তোমার প্রেম।
আত্মপ্রতিকৃতি'র তীব্র সার্চ লাইটের মতো
চোখে খুঁজি নিসর্গ সময়।

বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০১৯

কবিতা-দেখা বা না দেখা কবি-নুরুননাহার ডলি


দেখা বা না দেখা
-কবি নুরুননাহার ডলি
 
আমরা মানুষেরা এই পার্থিব পৃথিবীতে বাস করি।
বিলম্বিত এবং পিছনের দিকে না তাকিয়ে চলি ।
আমারা কোন কিছু না দেখেই ভ্রমণ অথবা ভ্রমণ না করেই চলি।
আমাদের পৃথিবীটা অনেক বড় এবং রহস্যপূর্ণ ।
আমাদের আছে লম্বা ইতিহাস -অনাচছাদিত সত্য
যা আমাদের জীবনে তৈরি করে শান্তি।
আমাদের কারণ খোঁজার সময়ের বড় অভাব।
কিন্তু সামনে এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ় পায়ে।
আমরা লম্বা ছুটিতে যেতে চাই কেন আমরা আরাম খুঁজি?
আমাদের জীবন তো ক্ষণস্থায়ী।
সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি হও,
অন্য কোন পথ নেই ।
আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে,
যেভাবে আলো নিভে যায়।
সুতরাং আমাদের চৈতন্য থাকতে চেষ্টা চালাতে হবে অবিরাম।
সৃজনশীল ব্যক্তি সৃজনশীলতা খোঁজে দেখা বা না দেখা সব বিষয়ের মাঝে।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯

আজ সব্যসাচী লেখক সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এর জন্মদিন



বর্তমান বাংলা কবিতার মূলধারাকে তিনি শাণিত করছেন, বাঁক ও বিবর্তণে ভূমিকা রাখছেন। সব্যসাচী  লেখক সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার জন্য তিনি দেশ-বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছেন।
দুলাল ছাত্রাবস্থায় দৈনিক ইত্তেফাকের মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতার জীবন শুরু।

১৯৮০ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান এবং ১৯৯৬-এ খালেদা জিয়ার শাসনামলে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। তারপর স্বাধীনভাবেলেখালেখি, সম্পাদনা ও প্রকাশনার কাজে মনোনিবেশ। প্রবাসী বাঙালিদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন নিউজ এজেন্সি ‘স্বরব্যঞ্জন’, সেই সাথে ‘পাঠশালা’র প্রকাশনা। দীর্ঘ দিন প্রবাসের পত্র-পত্রিকায় যুক্ত ছিলেন। টরেন্টো থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বাংলা রিপোর্টারে প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের কানাডাস্থ বিশেষ প্রতিনিধি। এছাড়াও আমাদের সাপ্তাহিক সিবিএন এবং সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের উপদেষ্টা সম্পাদক।

তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। বিটিভির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দৃষ্টি ও সৃষ্টি’র উপস্থাপক। তাঁর লেখা বেশকিছু গান ও নাটক বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত নাটকসমূহ- সাযযাদ আমিনের কথা, জাকির, সাদিকের জীবন ও সাহিত্য, বৃক্ষ বন্দনা, মুহম্মদ আলির চিঠি, ভালোবাসি ভালোবাসি, ওডারল্যান্ড, শাখা ও শেকড়, বনসাই, বৈশাখী, জাদুকর ইত্যাদি। ‘ও ওবাংলাদেশ, বাংলাদেশ’, ‘এ দেশ আমার মায়ের আরেক নাম’, ‘ঐ পতাকায় তাকিয়ে দেখি আমার মায়ের শ্যামলা মুখ’…সহ বেশ ক’টি জনপ্রিয় গানের রচয়িতা। বর্তমানে ‘কানাডায় ১৯৭১’ নিয়ে গবেষণা করছেন।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। তারমধ্যে কানাডা নিয়েও তাঁর বেশ ক’টি বই আছে। যেমন- কানাডায় যাবেন কেন যাবেন’, ‘কানাডার কাশিমপুরে খুনি নূর চৌধুরী’, ‘হাড়ির খবর নাড়ির খবর’, ‘যুদ্ধশিশুর জীবন যুদ্ধ’, ‘ভূতের পাসওয়ার্ড’ ইত্যাদি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তৃষ্ণার্থ জলপরী’ বের হয় ১৯৮২ সালে আর সর্বশেষ বই ‘প্রমের আগে পড়েছি বিরহে’

আজ শিশুসাহিত্যিক ও উপন্যাসিক শাম্মীতুলতুল এর জন্মদিন



চট্টগ্রামের মেয়ে শাম্মী তুলতুল একজন লেখক, ঔপন্যাসিক ও শিশু সাহিত্যিক। পড়ছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে দেশ সেরা কলেজ চট্টগ্রাম কলেজে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় তরুণ লেখকদের মধ্যে সে অন্যতম। একটা সাহিত্য, সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক, অভিজাত ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে চট্টগ্রাম শহরে তার জন্ম। গ্রামের বাড়ি বিখ্যাত হালদা নদী ঘেষা গ্রাম রাউজান। পরিবারে সবাইকে একদিকে যেমন দেখেছে রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে, অন্যদিকে দেখেছে সমান তালে  সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে অংশগ্রহণ করতে। বাবা  আলহাজ আবু মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন তৎকালীন (রাউজান) সাহিত্য, সাংস্কৃতিক সংগঠন জাগরণী সংস্থার সভাপতি ও শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা।বর্তমানে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।মা আলহাজ কাজী রওশন আখতার ছিলেন রাউজান কলেজ ছাত্র সংগঠনের নেত্রী, রাজনীতিবিদ ও একজন সমাজসবেক ছিলেন। তিনি একজন  রত্নাগর্ভা মাও।
নানা ডাক্তার কাজী এজহারুল ইসলাম ছিলেন দৌলত কবির বংশধর। নানি কাজী লতিফা হক বিখ্যাত বেগম পত্রিকায় লেখালেখি করতেন, আর দাদু আলহাজ আব্দুল কুদ্দুস মাস্টার ছিলেন সুপরিচিত লেখক, কলামিস্ট,ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা, শিক্ষক ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের বালকবন্ধু। পরিবার থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এবং নিজের ইচ্ছা শক্তিবলে ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। সেই থেকে একযুগ চাইতে বেশী সময় ধরে একযোগে দেশের আঞ্চলিক, জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও দেশের বাইরে ভারতের ভিবিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে শীর্ষে আছেন। এই পর্যন্ত (২০১৩ থেকে ২০১৯) তার ১২ টি বই  প্রকাশতি হয় ভিবিন্ন শীর্ষ প্রকাশনী থেকে)। লেখালেখি ও পড়াশোনার পাশাপাশি সে চট্টগ্রাম টেলিভিশনে নিয়মিত আবৃত্তি ও চট্টগ্রাম বেতারে অনুষ্ঠান গ্রন্থনা করে থাকেন। তাছাড়া অনলাইন পত্রিকার সাথেও যুক্ত আছেন। এছাড়াও তিনি পাঠাগার আন্দোলনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন।
তাছাড়া সাহিত্যের অবদানের জন্য পর পর দুবার চট্টগ্রামে বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল সন্মাননা ও ঢাকায় বাংলাদেশ কবি পরিষদ থেকে পুরুস্কার,  গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার কবি নজরুল অগ্নিবীণা  শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান ২০১৮ তে।
রাউজানের নামকরা মোহাম্মদপুর স্কুল কৃতি সন্তান হিসেবে সন্মাননা প্রদান করেন তাকে। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চল খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক তাকে লেখালেখির অবদানের জন্য ২০১৬  বইমেলায় প্রশংসা পত্রে ভূষিত করেন এবং সন্মাননা প্রদান করনে। সেখানে পর পর তার তিনবার একক বই মেলা হয় তার। এছাড়াও গত এপ্রিল মাসে সে রোটারিয়ানদের পক্ষ থেকে পায় লেখালেখির অবদানের জন্য পুরস্কার ২০১৯।
 মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস চোরাবালির বাসিন্দা বইটির জন্য সে পাঠক মহলে যথেষ্ট সারা পান। তাছারা শিশু কিশোরদের জন্য লিখিত বেস্ট সেলার বই নান্টু ঝান্টুর বক্স রহস্য, পিঁপড়ে ও হাতির যুদ্ধ ,গণিত মামার চামচ রহস্য, দৈত্য হবে রাজা, টুনটুনির পাখিস্কুল, একজন কুদ্দুস ও কবি নজরুল  এই বইগুলো নিয়ে যায় তাকে দীগুণ খ্যাতির শীর্ষে। এছাড়াও গত এপ্রিল মাসে সে পায় রোটারিয়ানদের পক্ষ থেকে সাহিত্য পুরস্কার।

ফখরুল হাসান এর রম্যছড়া আবুল চাচার স্বপ্ন



আবুল চাচা মনে মনে চিন্তা করে ঘুমায়
ঘুমের মাঝে ছেলেটাকে দুই গালেতে চুমায়
আবুল চাচা স্বপ্নে দেখে ছেলে হলো নেতা
সকাল বেলা উঠে দেখেন ছিঁড়া চাচার খেতা।
.
মেঝো ছেলের চিন্তা করে যেই না আবুল ঘুমে
টাকার বান্ডিল দেখতে পেলো হাজার কোটি রুমে
ছেলে তাহার হলো কি না মস্ত বড়ো অফিসার
ঘুমের ঘোরে আবুল বলে ভাঙলে কেন আমার ঘাড়
.
ছোট ছেলে অন্য রকম সবার কাছে কদর পায়
এক ইশারায় গুলি করে মানুষ বুঝি নিরুপায়
এই ছেলেটা উজ্জ্বল করবে আবুল চাচার মুখ
পুলিশ এলেই ধড়ফড় করে আবুল চাচার বুক।

বুধবার, ২৯ মে, ২০১৯

দলছুট মেঘ চুম্বন আয়েশা মুন্নি

শিল্পসাহিত্যঃ
 

দলছুটমেঘের গহীনে জলরঙে আঁকা
ছোপছোপ ষোড়শীর আঁচলের চিত্র
ন্যাওরা চুলে গুঁজে নেব সাদা মেঘফুল
একমুঠো মেঘ ছুঁয়ে হবো পবিত্র।

হৃদপিন্ডে স্থবিরতা মেঘমাল্লার গানে
অমিত্রাক্ষরে ছন্দ কাব্যাঙ্কন,
ভাগ্যরেখার শঙ্খমালায় ভালবাসায়
আকাশ ছুঁয়ে করবো দৃঢ়পণ।

অঞ্জলি ভরে মেঘের সৌন্দর্য প্রবাহ
খুঁজি আমার প্রতিচ্ছবি
মেঘ চুম্বনের চানক্য স্পর্শে শিহরন
মুগ্ধ বিহ্বলে হবো কবি।

মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯

কবি শাহীন রেজা'র এক গুচ্ছ কবিতা


শিল্পসাহিত্যঃ 
সংযম
শাহীন রেজা

তিনি বলেছেন, সংযমী হও।
তোমার সামনে ছড়িয়ে থাকবে সকল প্রলোভন কিন্তু তুমি কিছুতেই নিজেকে হতে দেবেনা তাদের আহার।

দেহের চেয়েও যে হৃদয় পরিশুদ্ধ জরুরি
তা আমাদের বুঝতে হবে এই মাসটিতেই। সংযমী হতে হতে আমাদের পরিনত হতে হবে সেই বিশুদ্ধ হীরকখন্ডে; যার দ্যূতিতে
আলোময় সমগ্র বিশ্ব সকল চরাচর।

রমযান মানে সংযমের খেরোখাতা;
সে খাতায় বাঁধতে হবে পঞ্চইন্দ্রিয়কে এবং
সত্য ও বোধনমন্ত্রে জাগ্রত বিবেককে
তুলে দিতে হবে তাঁর সেই বিশালত্বে
আর বিলীন হয়ে যেতে যেতে উচ্চারণ
করতে হবে তাঁরই কীর্তিগাঁথা
আপন খেয়ালে।

রিপু দমনের মাস রমযান,
সংযমী হতে হতে তাঁর করুণা লাভের এইমাসে
এসো আমরা বিনয়ী হই,
কঠিন ও কঠোর প্রার্থনায় সঁপে দেই
আমাদের মুহূর্তগুলো।

______________________
তাহলে সে কথাই থাকল
শাহীন রেজা

তাহলে সে কথাই থাকল; নক্ষত্রপুর থেকে সূর্যগাড়িতে চড়ে তুমি পা রাখবে ছায়াবীথিতে আর আমি অগ্নিশ্বর থেকে মেঘঘুড়িতে চেপে যথাসময়ে জলসবুজের আস্তানায়;
নুহাশপল্লীতে আমাদের স্বাগত জানাবেন স্বয়ং হুমায়ূন আর তারসাথে বাঁশীতে সুর তুলে অশ্রুযাদুকর বারী সিদ্দিকী।

নাহ আমরা বিষণ্ন হবনা মোটেই; কারন সময়টা বর্ষাকাল নয় আবার চান্নিপসর হতেও দেরী বেশ খানিকটা অতএব লোবানের ভয় নেই একদম। তুমি তো জানোই আমার সব সহ্য হয় কিন্তু মৃত্যুর ঘ্রাণ আমি সইতে পারিনা কিছুতেই। নুহাশে আর সবকিছুর সাথে যেটা আমাদের উদ্বেল করার জন্য প্রস্তুত তা হচ্ছে কিছু উত্তেজিত কামিনী আর তার সাথে অসংখ্য মাতাল মল্লিকা। আমি নিশ্চিত তোমার পাগলি খোঁপায় গুঁজে দেব কিছু একান্ত সৌরভ।

এইসব নয় সেইসব দিনরাত্রির উন্মাদনা আমাদের উতল করে তুললে আমরা সহজেই খুঁজে নিতে চাইব কানকাটা রমজানকে। দূর থেকে যদিও আমাদের সাহস জোগাবেন দূর্বার বাকের তবুও আমরা সন্ত্রস্ত থাকব মীর্জার মেজাজ মর্জিতে।

তাহলে সে কথাই থাকল; আমরা মিলিত হব দারুচিনির স্বপ্নে বিভোর চন্দনসভায় আর আমাদের চারদিকে উড়তে থাকবে নন্দিত নরকের বিশাল শিশিরসম্ভার; যার পাখায় পাখায় আলোর ডাহুক শুধু প্রতীক্ষায় অনন্ত ভৈরবীর।




_______________________
কেউ জানেনা
শাহীন রেজা

কোথায় তুমি কোথায় তুমি মোহন জাম
বুক পকেটে লুকিয়ে আছে হলুদ খাম

সাতক্ষীরা সেই অনেক দূর বৃষ্টি-বাসে
স্মৃতির কদম কেমন সুবাস ছলকে আসে

পেয়ারা গাছে বুলবুলিটা করুণ ডাকে
এত খুঁজি তবুও আমি পাইনা তাকে

অরূপ শালিক কোথায় থাকে কোন গলিতে
শিকড় ছাড়ে বকুল সে গাছ কোন পলিতে

কোথায় তুমি কেমন আছ কেউ জানেনা
উদোম বুকে হাওয়ার কুমীর আর টানেনা

যেথায় থাক যেমন থাক ভালই থেকো
সেই চুৃুমুটা গোপন গালে লুকিয়ে রেখো

ছিলাম আমি ছিলাম সেদিন বড্ড আপন
উদাস রোদে পেখম মেলে ময়ূর যাপন

সেই আমিটা তেমনি আছি মেঘের পাখি
তিরিশ ফাগুন ছাতিম ডালে লুকিয়ে রাখি

বড়শীটা নেই বড়শীটা নেই মাছের ভীড়ে
মুখ লুকিয়ে পঁচিশ কাঁদে আস্তে ধীরে

কেউ জানেনা কেউ জানেনা গোপন ঘুড়ি
উড়তে গিয়ে হয়েই গেল কখন চুরি।

কবিতা কেন এমন হয় কবি ফাহমিদা ইয়াসমিন



তোমাকে ভালবাসি কি না জানি না
তবে প্রতিটি মুহুর্তে তোমাকে অনুভব করি।
তোমার বিরহে অন্তর পুড়ে!
একটি পলক না দেখলে
দৃষ্টির আঙিনা জুড়ে অন্ধকার নামে।
কেন এমন হয়?
এ যেন অদ্ভুত টান!
বুকের গহীণে নাড়া দেয়...
কিছু বুঝার আগেই
এলোমেলো হয়ে যায় সব।

রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯

কবিতা - কিছু কথার গল্প হয় কবি - আরজুমুন

শিল্পসাহিত্যঃ
 

নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনিতে মিশে আছে তালপাতার ঝিরিঝিরি বাতায়ন

গাছের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেয় কথামালা, কিছু কথা গল্প হয়,কিছু গল্প উপন্যাসে এসে মিশে
তালপাতার বাতাসে মৃদু মৃদু গরম অনুভূত হয়

হাত থেকে ঝরে পড়ে কবিতাগুচ্ছ
নীরবতায় হৃদয়মেলে বসে থাকে
অনেকের হাতছানি

স্মৃতি বিস্মৃতিগুলো তালপাতার ছাউনি তুলে মনের দেয়ালে
ভিতরটা অন্তঃসার

কোনভাবেই দখিনা আকাশে চোখ পড়ে না
ঝাপসা হতে থাকে পিয়ানোর ঝংকার

কেটে যায় বিক্ষত বিক্ষোভ
আপেক্ষেরা চিৎকার করে
রাখালের মন করে আনচান

দূর হতে একটা আর্তনাদ কানে ভাসে
অথচ নিরুত্তাপ দেখে,বিক্ষোভরা মিছিল করে পিয়ানোর সুরে

একদিন তোমার বিচার বসবে হাটতলায়, জটলা করবে কিছু মিথ্যার দগদগে ঘা

তথাপি তালপাতার বাঁশি বাজবে না
বাঁশিটা বিমর্ষ খুব যতনে

হেলান দিবে সত্যরা আক্ষেপে
সত্য কোন না একদিন জয় পাবে
পাখাটা মুক্তি পাবে
এক জহ্নুকন্যার সুরতহালে।

বিবেক-কে নাড়া দেয়া উপন্যাসের নাম আপনালয় 'ফখরুল হাসান'


শিল্পসাহিত্যঃ ফখরুল হাসান  



বৃদ্ধাশ্রমের করুণ কাহিনি নিয়ে লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস আপনালয়। লেখকের বর্ণনায় ২০৪৬ সালে রাজধানী ঢাকার চিত্র খুবই ভয়াবহ। ঢাকার কোথাও যৌথ পরিবার নেই। সর্বত্র নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। একক পরিবার। ঢাকার সকল পরিবারে কোনো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নেই। সবাই ওল্ডহোমে। বৃদ্ধাশ্রমে। শ্রমে-রক্তে গড়ে তোলা বাড়ি-ঘরে নিজেরা থাকতে পারছে না। কষ্টে-দুখে লালন করা সন্তানরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে রাখছে না নিজেদের সাথে। ২০৪৬ সালের এমনই অবিশ্বাস্য চিত্র লেখকের কলমে ধরা পড়লো। লেখক সেসব অবিশ্বাস্য ভয়াবহ চিত্র বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরলেন! যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। লেখকের আশংকা, বর্তমানে যে হারে বৃদ্ধাশ্রমগুলোয় বয়স্ক মানুষ দিয়ে পূর্ণ হতে চলেছে, না জানি এ ধারাটা বাড়তে বাড়তে এক সময় সমাজের পরিবারগুলোর অবস্থা লেখকের উক্ত বর্ণনার ২০৪৬ সালের চিত্র হয়ে দাঁড়ায়।

২০৪৬ সালে ঢাকা শহরের চিত্রটা যেন এমন, সব মানুষ উদোম হয়ে গেছে। ফিরে গেছে সেই আদিম যুগে। কারো শরীরে নেই জামা-কাপড়। ঠিক সেই নাজুক সময়ে একজন লোককে দেখা গেলো ব্যতিক্রমী। জামা-কাপড় পরা আপাদমস্তক এক সাধু পুরুষ। সব লোক জড়ো হলো তাকে দেখতে। বিভিন্ন চ্যানেল, পত্রিকা, নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে দৌড়ে এলো নিউজ কাভারে। বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়তে হবে 'আপনালয়'।

২০৪৬ সালের সমাজের চিত্র এতোটা নৃশংস কর্তব্যহীন, কোথাও যৌথ পরিবার আছে বলে কল্পনাও করা যেত না! ঠিক সেসময়ে একটি যৌথ পরিবারের দেখা মিললো হাসপাতালের সিসি টিভির ক্যামেরায়। ঘটনাটা লেখকের বিবরণে এরকম-
'মেজোকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আকুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মোহিত। 'বাবা আর নেই, রোহিত। বাবা আর নেই!' ছোটও কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল বড়ো ভাইকে। হাসপাতালে উপস্থিত গুটিকয়েক ডাক্তার আর নার্স অবাক হয়ে দেখল, এই স্বার্থপর জমানায় নিউক্লিয়ার পরিবার আর ওল্ডহোমের আধিপত্যের যুগেও পিতা হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে তিন ভাইয়ের একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আকুল কান্না। হাসপাতালের অটোমেটেড সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া তিন ভাইয়ের কান্নার দৃশ্য আপলোড হয়ে গেল। আর সাথে  সাথে হাসপাতালের সফটওয়্যার কাজ শুরু করে দিল। প্যাশেন্ট রিকগনিশন টুলস দিয়ে বের করে ফেলল রোগীর সব তথ্য উপাত্ত। ডাটাবেজে হানা দিয়ে জেনে গেল, ঢাকা শহরের একমাত্র যৌথ পরিবারের মাথাটা আজ থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গেল। হাসপাতালের নিউজ সেকশন সাথে সাথে খবরটা লুফে নিয়ে হাসপাতালের নিজস্ব নিউজ চ্যানেলে প্রচার শুরু করল। সেখান থেকেই নিউজটা পেয়ে গেল অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল। ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়, ওয়েব থেকে ওয়েবে। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে কিসের টানে টিকে রইল একটি যৌথ পরিবার? কিংবা কি ছিলো কালো ব্রিফকেসে? গুপ্ত ধনের চাবি নাকি অন্যকিছু ?ঘোলাটে রহস্য উম্মোচনে মনোযোগী পাঠক হয়ে পাঠ করতে হবে 'আপনালয়।'

'আপনালয়' উপন্যাসটি প্রতিটি সন্তানের পড়া উচিত, তাইলে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর নোংরা ভাবনায় একটু হলেও ফাটল ধরবে বলেই আমার বিশ্বাস। প্রতিটি মা বাবারই বইটি পড়া উচিত, তাইলে অলিক কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এসে সন্তানদের ব্যপারে মধ্যম পহ্না অবলম্বন সহজ হবে, আর মঞ্জু সাহেবের মত এটিই শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আপনালয় গ্রন্থটি হতে পারে, তীব্র হিংস্রতায় আমাদের ঘায়েল করতে থাকা বৃদ্ধাশ্রম নামক ভাইরাসের প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন ।


বই পরিচিতি:
নাম: আপনালয়
লেখক: প্রিন্স আশরাফ
প্রকাশকঃ তাহমিনা খানম
প্রধান নির্বাহী, রোদ্দুর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: শতাব্দী জাহিদ
মূল্য: ২৫০ টাকা

'বিবেক-কে নাড়া দেয়া এক উপন্যাসের নাম আপনালয়' ফখরুল হাসান


শিল্পসাহিত্যঃ

বৃদ্ধাশ্রমের করুণ কাহিনি নিয়ে লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস আপনালয়। লেখকের বর্ণনায় ২০৪৬ সালে রাজধানী ঢাকার চিত্র খুবই ভয়াবহ। ঢাকার কোথাও যৌথ পরিবার নেই। সর্বত্র নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। একক পরিবার। ঢাকার সকল পরিবারে কোনো বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নেই। সবাই ওল্ডহোমে। বৃদ্ধাশ্রমে। শ্রমে-রক্তে গড়ে তোলা বাড়ি-ঘরে নিজেরা থাকতে পারছে না। কষ্টে-দুখে লালন করা সন্তানরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে রাখছে না নিজেদের সাথে। ২০৪৬ সালের এমনই অবিশ্বাস্য চিত্র লেখকের কলমে ধরা পড়লো। লেখক সেসব অবিশ্বাস্য ভয়াবহ চিত্র বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরলেন! যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। লেখকের আশংকা, বর্তমানে যে হারে বৃদ্ধাশ্রমগুলোয় বয়স্ক মানুষ দিয়ে পূর্ণ হতে চলেছে, না জানি এ ধারাটা বাড়তে বাড়তে এক সময় সমাজের পরিবারগুলোর অবস্থা লেখকের উক্ত বর্ণনার ২০৪৬ সালের চিত্র হয়ে দাঁড়ায়।

২০৪৬ সালে ঢাকা শহরের চিত্রটা যেন এমন, সব মানুষ উদোম হয়ে গেছে। ফিরে গেছে সেই আদিম যুগে। কারো শরীরে নেই জামা-কাপড়। ঠিক সেই নাজুক সময়ে একজন লোককে দেখা গেলো ব্যতিক্রমী। জামা-কাপড় পরা আপাদমস্তক এক সাধু পুরুষ। সব লোক জড়ো হলো তাকে দেখতে। বিভিন্ন চ্যানেল, পত্রিকা, নিউজ পোর্টালের সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে দৌড়ে এলো নিউজ কাভারে। বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়তে হবে 'আপনালয়'।

২০৪৬ সালের সমাজের চিত্র এতোটা নৃশংস কর্তব্যহীন, কোথাও যৌথ পরিবার আছে বলে কল্পনাও করা যেত না! ঠিক সেসময়ে একটি যৌথ পরিবারের দেখা মিললো হাসপাতালের সিসি টিভির ক্যামেরায়। ঘটনাটা লেখকের বিবরণে এরকম-
'মেজোকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আকুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো মোহিত। 'বাবা আর নেই, রোহিত। বাবা আর নেই!' ছোটও কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল বড়ো ভাইকে। হাসপাতালে উপস্থিত গুটিকয়েক ডাক্তার আর নার্স অবাক হয়ে দেখল, এই স্বার্থপর জমানায় নিউক্লিয়ার পরিবার আর ওল্ডহোমের আধিপত্যের যুগেও পিতা হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে তিন ভাইয়ের একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আকুল কান্না। হাসপাতালের অটোমেটেড সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া তিন ভাইয়ের কান্নার দৃশ্য আপলোড হয়ে গেল। আর সাথে  সাথে হাসপাতালের সফটওয়্যার কাজ শুরু করে দিল। প্যাশেন্ট রিকগনিশন টুলস দিয়ে বের করে ফেলল রোগীর সব তথ্য উপাত্ত। ডাটাবেজে হানা দিয়ে জেনে গেল, ঢাকা শহরের একমাত্র যৌথ পরিবারের মাথাটা আজ থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গেল। হাসপাতালের নিউজ সেকশন সাথে সাথে খবরটা লুফে নিয়ে হাসপাতালের নিজস্ব নিউজ চ্যানেলে প্রচার শুরু করল। সেখান থেকেই নিউজটা পেয়ে গেল অসংখ্য অনলাইন নিউজ পোর্টাল। ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়, ওয়েব থেকে ওয়েবে। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে কিসের টানে টিকে রইল একটি যৌথ পরিবার? কিংবা কি ছিলো কালো ব্রিফকেসে? গুপ্ত ধনের চাবি নাকি অন্যকিছু ?ঘোলাটে রহস্য উম্মোচনে মনোযোগী পাঠক হয়ে পাঠ করতে হবে 'আপনালয়।'

'আপনালয়' উপন্যাসটি প্রতিটি সন্তানের পড়া উচিত, তাইলে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর নোংরা ভাবনায় একটু হলেও ফাটল ধরবে বলেই আমার বিশ্বাস। প্রতিটি মা বাবারই বইটি পড়া উচিত, তাইলে অলিক কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এসে সন্তানদের ব্যপারে মধ্যম পহ্না অবলম্বন সহজ হবে, আর মঞ্জু সাহেবের মত এটিই শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আপনালয় গ্রন্থটি হতে পারে, তীব্র হিংস্রতায় আমাদের ঘায়েল করতে থাকা বৃদ্ধাশ্রম নামক ভাইরাসের প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন ।


বই পরিচিতি:
নাম: আপনালয়
লেখক: প্রিন্স আশরাফ
প্রকাশকঃ তাহমিনা খানম
প্রধান নির্বাহী, রোদ্দুর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: শতাব্দী জাহিদ
মূল্য: ২৫০ টাকা

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৯

সাকসেসফুল অনুষ্ঠান করলো ' বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ।

শিল্পসাহিত্যঃ- 

‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সংস্কৃতির ভূমিকা’ শীর্ষক
আলোচনা, স্বরচিত কবিতাপাঠ এবং আবৃত্তি-অনুষ্ঠান হয়ে গলো পাবলিক লাইব্রেরি সেমিনার কক্ষে বৃহস্পতিবার   বিকাল ৪ টায়।

কবি অসীম সাহার সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি  ছিলেন মোস্তাফা জব্বার, মন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মো. মুরাদ হাসান এমপি, প্রতিমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রণালয়।

সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক উপাচার্য, ঢাবি।

মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান।
আলোচনায় ছিলেন কবি কাজী রোজী এমপি, অধ্যাপক ড. সাজেদুল আউয়াল।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কবি আসলাম সানী।

স্বাগত বক্তব্য : কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ পথিক, সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন. ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি মাসুদ পথিক  আমাদের বাংলাদেশ ডটনেট কে জানালেন ঈদের পর  সমগ্র বাংলাদেশে সংগঠনটির জেলা কমিটি ও বহিবিশ্বে কমিটি ঘোষণা করা হবে।
           


   

মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯

অমীমাংসিত জিজ্ঞসা কবি আয়েশা মুন্নি

শিল্পসাহিত্যঃ
 

ষোল বছরের যে প্রেমের আবেগ
আমায় ভাসিয়েছিল,
চলমান জীবনের গতিপথ
আজ ভিন্নরূপে চিত্রায়িত।
এখন আবেগের দরজায়
তালা লাগানো।
সময়ের স্রোতে ভেসে ভালবাসাও কি স্থানান্তরিত হয়?
তবে কি মনমাঝি
তার ভেলা বাইতে বাইতে
নতুন তীরে নাও ভিড়ায়?
আর সে নাওয়ের পালে
হাওয়া লেগে
মনটা দুলতে থাকে।
দুলন্ত মনটা মাঝেমাঝে
স্মৃতির বন্ধ ঘরে উঁকি দেয়।
জীবন নামক গ্রন্থের ওজনটা
কেজি দরে দাঁড়িপাল্লায়
যদি মাপা যেত!
তবেই হয়ত বুঝতাম
কি পেয়েছি!
কি হারিয়েছি!
কি পাইনি!
কতটা পেলে
মনটা ভালবাসাময় হয়?
কতটা পথ পেরুলে
মনটা তৃপ্ত হয়?
নাকি
অদৃষ্টের লিখন খন্ডন করে
নিয়তি আমার একটিবার
রঙিণ প্রজাপতির ডানায় ভর করে ভাসবে না !
একটি ফুলেল ভালবাসার মুগ্ধতা
আমার কাছে
অতৃপ্তই রয়ে যাবে আজন্মকাল।

রবিবার, ১৯ মে, ২০১৯

কবি ফখরুল হাসান এর কবিতা কাপুরষ হবে না যুবক

শিল্পসাহিত্যঃ
 

ফুল হাতে নিয়ে পেছনে ডেকো না প্রিয়তমা
ক্ষতি নেই যদি আর দেখা না হয় দুজনার
লড়াইয়ের মাঠ থেকে ফিরে আসি যদি
লাল সবুজের সাথে তোমাকে করে নেব প্রতিমা।
.
বেকারত্বের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে প্রতি ঘরে
ঘুষ আর দুর্নীতির ধ্বংসস্তুপে ডুবছে স্বদেশ!
লড়াই লড়াই এসো প্রিয়সী লড়াইয়ে মাঠে দেখা হবে
লাখো মানুষের কাফেলায় হবে মিছিলের চুম্বন বেশ।
.
তোমার প্রণয়ের ছোঁয়ায় আর কাপুরুষ হবে না যুবক
স্বদেশ ডাকছে সাইরেন বাজে সামনে যুদ্ধের ময়দান
তোমাকেই বলছি যুবক দুর্নীতির চেয়ারে দাও আগুন
প্রতিরোধে কূচক্রিদের কাছে যায় যদি যাক এ জান।
.
ফুল নিয়ে এসো না প্রিয়তমা সামনে আরো দুর্দিন
পুঁজিবাদের প্রবল স্রোতে হারাচ্ছে মনুষ্যত্বের দেশ
শান্তির বাণী সিন্ধুকে রেখে লড়াই করো যুবক
তবেই হবে ঘুষখোর আর দুর্নীতি চিরতরে শেষ।

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯

সুখে থাকবে বাংলাদেশ ফাহমিদা ইয়াসমিন

শিল্পসাহিত্য ঃ
 

মনের ভেতর কেবল ঘুরপাক খায়
অনেক জানার ভেতর  অজানা
কথাগুলো বারবার ফিরে আসে
স্মৃতির মুকুরে।
তোমার অনুভূতি জানতে পারিনি আজও।

কত মানুষের কত দুঃখ বেদনার কথা
কত মানুষের সর্বস্ব বিলীন হওয়ার কথা
কত মানুষের প্রেম বিরহের কথা
কত সত্য এখনও অগোচরে
পড়ে আছে অজানা অন্তরে।

আমি জানতে চাই স্বাধীনতার কাছে
দেশের গরিব দুঃখী মেহনতি
মানুষের অভাব ঘুছবে কবে
অনাহারী মানুষের সংখ্যা কমবে ঘরে ঘরে কবে?

মূছে যাবে দারিদ্রের দুরাশার দুর্দিন
আমি সেই সত্যের প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান
খেটে খাওয়া মানুষের হাড়ে হাড়ে যে দাগ
পড়ে গেছে কালি ও কয়লার মত দূষিত
ভাইরাসে আমি তার মূলৎপাটন চাই।

বিলাসি জীবনের অন্তরালে যে প্রেতাত্মারা
হাসে তাদের বিনাশ চাই।
শ্রমিকের ন্যায্যতা নিয়ে যেদিন ঘরে যাবে
শ্রমিক সকল সেদিন হয়তো স্বাধীন বাংলা
আনন্দে আয়েশে রাত্রিযাপন করবে কলরবে।
সুখে থাকবে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৯

অনন্ত অপেক্ষায় - তানিয়া নিগার

  শিল্পসাহিত্যঃ 

নীল সাগর হাতছানি দেয়
বলছে শুধুই প্রীতির মায়ায়
চোখ ভরা নোনা জল!
সইতে না পারার বুঝি
বুক ফাঁটা ফল!

আয় কাছে আয় 
দেখবি চেয়ে দুধার বেয়ে
লালন করেছি লবণাক্ত
আজন্মের শোকে চলেছি সয়ে

আদি হতে অনন্তকাল,
বেদনা তিথি অশান্ত বিকাল
ছুটে যাই মোহনায় নির্জনে
কেন তবে অশান্ত আনমনে?

হয়তো অনন্ত অপেক্ষায়,
বসে আছে পথ টি চেয়ে
ছুটবো সেদিন বল্গাহীন
সাগরের পথ বেয়ে।

সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯

কবিতা লীন কবি আয়েশা মুন্নি


কষ্টের নীল সাগরে ভাসে
অপূর্ণতার স্মৃতির ভেলা।
দৃষ্টির সীমান্ত জুড়ে অদ্ভুত
আলোর নীলে প্রতীকী প্রেম।
স্বপ্নের শৈল্পিক শব্দরা তোলে
রক্তকণিকায় সূরের মূর্ছনা।
উপেক্ষিত মিঠে বর্ণগুলো অস্তিত্বজুড়ে ছড়ায় কলতান।
স্মৃতিচারণে ভ্রষ্টার পাখনায়
সবুজ স্মৃতির মাদুর পাতা।
অদৃশ্য আবছায়ার স্বপ্নময়তায়
কষ্টকাব্যের মলিন প্রচ্ছদ।
বিবর্ণ বিস্মৃত স্মৃতির সমীরণে
মরুর মায়ায় আকাশ ছোঁয়া
জলন্ত দুঃসময়ে ভোরের ভ্রুণে ঢালা বিভ্রান্তির কুৎসিত শোষণ।
পর্ণপুটে মুড়ে রাখা বিচিত্রতায় লীন হওয়া জীবনের রঙ।
জাগতিক রহস্যময়তার বেনামী পত্র হলুদ খামে গন্তব্যহীন।

সোমবার, ৬ মে, ২০১৯

কবিতা রাজারবাগ ৭১ কবি আয়েশা মুন্নি


আজ আমি কবিতা বলছি না
গল্প বা উপন্যাসের স্মৃতিচারণও নয়
আমি আজ বলছি বীরত্ব গাঁথা
একটি ইতিহাস জন্মের কথা...
২৫ মার্চ ১৯৭১ সাল
রাত প্রায় সাড়ে ১০ টা
সেই কালরাত্রির ইতিহাসে বাংলার
প্রথম প্রতিরোধের কথা বলছি ...
পুলিশ লাইন ওয়্যারলেস বেজ ষ্টেশনের বেতারযন্ত্রে ভেসে আসা কথাগুলো বলছি--
' চার্লি সেভেন ফর বেজ,
অ্যাবাউট থার্টি ফাইভ
টু থার্টি সেভেন ফর বেজ,
অ্যাবাউট থার্টি ফাইভ টু থার্টি সেভেন ট্রাকস উইথ পাক আর্মি অ্যাপ্রোচিং টু আওয়ার ঢাকা সিটি ফরম ক্যান্টনমেন্ট, ওভার।
বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ঢাকা তখন এক ভুতুরে শহর
এক বিশাল মৃত্যুকূপ,

শুধু মাত্র ওয়্যারলেস সেটেই
ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে
রাজারবাগ হামলার কথা।
প্রস্তুত তখন রাইফেল সহ
প্রায় সব পুলিশ সদস্য।

তবে শোন...
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে
জ্বলে উঠলো পুলিশ বাহিনীও,
স্বাধীনতার আলোচনায় মসগুল...
চললো সলাপরামর্শ স্বপ্নের বাংলাদেশ সৃষ্টিতে...

বনর্না করছি বাংলার ইতিহাসের প্রথম গুলি,
প্রথম প্রতিরোধ প্রতিশোধের প্রথম ধারাপাত...
স্বাধীনতার একখণ্ড ইতিহাস,
প্রথম অধ্যায়ের প্রথম আত্মত্যাগ।

বঙ্গবন্ধু  যখন ঢাকা হামলার সংবাদ পাঠালেন---
আজ রাতেই ঢাকা হামলা হবে।
তখন চলছিল পুলিশের রাতের রোল কল।
মাতৃভূমির বিরুদ্ধ শক্তির বিপক্ষে
প্রতিরোধের নেশায়
উত্তেজিত পুলিশ সদস্যরাও,
অস্ত্রাগার খুলে অস্ত্র নেবার সিদ্ধান্তে অটল।
অস্ত্রাগার খুলে ৩০০-৩৫০ থ্রি নট থ্রি রাইফেল এবং ২০ টি করে গুলি ভগাভাগি করে
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের আশোপাশে  অবস্থান নিলেন।
অতঃপর...
তেজগাঁও এলাকার ওয়্যারলেস কল সাইন চার্লি সেভেন থেকে
ভেসে এল সতর্কবার্তা...
সাথে সাথে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে
বাজে পাগলা ঘন্টা।
ঘুমন্ত, ক্লান্ত, বিশ্রামরত যে যেভাবে ছিল
ছুটে এল সব পুলিশ সদস্যরা।
চিৎকার করে বললো --
রাইফেল চাই, গুলি চাই
অস্ত্র চাই অস্ত্র দাও।
ভাঙলো দ্বিতীয় অস্ত্রাগারও শাবলের জোড়ে।

বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা।
এই শ্লোগানে উজ্জবিত হতে হতে তারা অস্ত্র হাতে অবস্থান নিল।
পাকিস্তানি সেনাদের বহর যখন রমনা পার্কে,
বেইলি রোড হয়ে শান্তিনগর প্রবেশ করে তখন চামেলীবাগ ডন স্কুলের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড,
পাকিস্তানি ফোর্স নেমে আসে আর তখনই ডন স্কুলের ছাদে পজিশন নেয়া পুলিশ বাহিনী আক্রমণ...
শুরু হয় গোলাগুলি, দেশমাতৃকার টানে।
দুই পাকিস্তানি সেনার বুকে বিদ্ধ হল স্বাধীনতার প্রথম বুলেট, প্রথম প্রতিশোধ, প্রতিরোধে লেখা হলো
প্রথম ইতিহাসের জন্মকথা।
'ফাস্ট বুলেট ফর দ্য ইনডিপেনডেন্ট'।
শুরু হল যুদ্ধ, রাত পৌনে বারটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে চলল গুলি।

একদিকে পুলিশের সেকেলে থ্রি নট থ্রি রাইফেল,
অন্যদিকে তাদের মর্টার শেল, মেশিনগানের গুলি...
বন্দি হয় দেড়শত পুলিশ সদস্য।
অস্ত্র গোলাবারুদসহ কিছু পুলিশ সদস্য রাজারবাগ ত্যাগ করতেও সক্ষম হলো।
আর সেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে।
অতঃপর নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে
জন্ম হলো লাল সবুজের এই বাংলাদেশ।

শনিবার, ৪ মে, ২০১৯

কবিতা দুর্ভিক্ষ চলছে কবি আইরিন সুলতানা লিমা

শিল্পসাহিত্যঃ

দুর্ভিক্ষ চলছে নিঃশ্বাসের দুর্ভিক্ষ
দুর্ভিক্ষ চলছে ভালোবাসার দুর্ভিক্ষ
এ শহরে দুর্ভিক্ষ চলে লজ্জা ও কৃতজ্ঞতার।
এখানে কেউ এসো না, এরা সবাই অহংকারী।
দুর্ভিক্ষ চলছে সত্যের দুর্ভিক্ষ
এখানে কেউ এসো না
কেউ কথা রাখবে না।
চেয়ে দেখো এটা মৃত্যুর মিছিল
এখানে পরাজয় নেই আছে ধ্বংস হওয়া।
ঠিক যেমন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
তিনিও পরাজিত হতে চাননি
অথচ ধ্বংস হয়েছিলেন লড়াই করতে করতে।
আর ধ্বংসের পরতো পরাজয় আসতে বাধ্য
তাইতো আর্নেস্ট ধ্বংসের পর হয়েছেন পরাজিত।
অতএব, অন্ধকার এ শহরে অন্ধকার গহ্বরে এসো না।
এখানে কতগুলো কীট সর্বদা মৃত্যুর মিছিল করে
এখানে ধ্বংস নিশ্চিত।
জেনে রেখো ধ্বংসের পরেইতো আসে পরাজয়।

সোমা বড়ুয়া রিমির ছোট গল্প আনন্দ বিরহ


শিল্পসাহিঃ

আকাশের জমাটবাঁধা মেঘটা অনেকক্ষণ থেকেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনি ঝরে পরবে।অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও সে জলধারার দেখা না পেয়ে খুব অভিমান হলো তিলার।রুমে ঢুকে ফোন হাতে নিতেই দেখে অভ্রর মেসেজ।তিলা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে শিল্পকলার পথে হাঁটতে লাগলো।তিলার হাঁটার অভ্যাস আছে,তবে সে এখন হেঁটে যাচ্ছে একটা রিকশা ও পাচ্ছে না তাই।তার তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে যেকোন ভাবেই হোক।শিল্পকলায় গিয়ে দেখে অভ্র কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কিছুটা খুশি হয়ে আর কিছুটা উদ্বেগে দাঁড়িয়ে আছে।।তিলা আসতেই অভ্র ওর হাতের ব্যাগটা নিয়ে রিকশা ডাকলো।রিকশায় ওরা দুজন শুধু টাকা পয়সার কথাই বললো,আর কিছু না।টাকা-পয়সা খুব মানিয়ে গুছিয়ে খরচ করতে হবে ওদের এখন।রিকশা কাজী অফিসের সামনে এসে থামলো।অভ্র তিলার হাত ধরেই নামালো,এতো ভারী শাড়ি তিলা এই প্রথম পরলো।তিলাকে অনেক সুন্দর লাগছে,বউ বউ লাগছে।তিলা একদমই সাজেনি,শুধু লিপস্টিক পরেছে।কাজলে ওর এলার্জি আছে তাই শখ করেও পরেনা,ভীষণ রকম যন্ত্রণা হয় চোখে।অভ্র তিলাকে ডাকলো।
-কিছু বলবে?
-হুম।
-বলে ফেলো তাড়াতাড়ি।
-তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বলেই একগুচ্ছ সাদা বুনো ফুল এগিয়ে দিলো তিলার দিকে।উইল ইউ ম্যারি মি তিলা?
-ইয়েস।
-আচ্ছা, আসো। তাড়াতাড়ি ভেতরে চলো।
-এই এরকম নাহ।কিছু হলো এটা?
-কেন তুমি যেমনভাবে বললে সেভাবেই তো প্রপোজ করলাম।
-আমার হাত ধরে নিয়ে যাবে না তুমি?
-আচ্ছা আসো।
-শোনো, ইচ্ছে করে এসব না বুঝার ঢং করলে কেস দিয়ে দেবো আমাকে তুলে এনে জোরপূর্বক বিয়ে চাট্টিখানি কথা নয় কিন্তু।
-আচ্ছা,যা মন চায় পরে করো।আগে বিয়েটা করো।
-তোমার ভাইয়া আসছে?
-হুম।
তিলা আর মামুনের বিয়েটা হয়ে গেলো। মামুন হলো অভ্রর বড় ভাই।তিলা আর মামুনের সম্পর্ক সাত বছর ধরে।অভ্র তিলার ক্লাসমেট ছিলো।ওরা খুব ভালো বন্ধু ছিল।ঘনিষ্ঠতা ছিলো বেশি।ক্লাসের সবাই ভাবতো ওদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ছিল।তাই তিলার শখ হয়েছিলো অভ্র একদিন ওকে প্রপোজ করুক সত্যি সত্যি।তিলার বাচ্চামিপনা অভ্র জানতো, তা বলে সে ভাবেনি এরকম বিষয়ে ও এমনটা করতে পারে তিলা।অভ্রর পরিবারের সবাই জানতো তিলা আর মামুনের সম্পর্কের কথা।তারা তিলাকে বউ হিসেবে মানবে না তাই ওরা তিনজন মিলে পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।অভ্র অবশ্য ওদের বিয়ে দিতে পেরে অনেক খুশি।কিন্তু বুকের কোণে যেন কিসের একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে ও।ওদিকে পাত্তা দিলে চলবে না ওর।তাই একটা সিএনজি ডেকে মামুন আর তিলাকে নিয়ে রওনা দিলো টংগীর দিকে।সেখানে একটা ভাড়া বাসায় তুলে দিবে মামুন আর তিলাকে।তিলা আজ চিরদিনের জন্য অন্যকারো হয়ে যাবে ,হোক ওর ভাইয়ের তাও তো অন্যকারো।তিলা কোনদিনই বুঝলো না অভ্রকে।অভ্রর চোখ ভিজে গেল।টংগীতে গিয়ে একটা বিল্ডিং এর নিচে এসে সিএনজি থামলো।নিচতলায় ওদের বাসা।বেল দিতেই দরজা খুললো মামুনের বোন হিয়া।ঢুকতেই দেখা গেলো,মামুন আর তিলা দুজনের বাবা-মা সবাই আছে।তিলার চোখ পানিতে ভরে গেলো,আনন্দে।অভ্রকে ডেকে বললো,
-তুই এসব বলিস নি কেন আগে?
-তুই যে সারপ্রাইজ পেতে পছন্দ করিস।
সবাই এখন খুশি,যে যার মতো আনন্দে মেতে আছে।শুধু অভ্রর মনের কোণে জমেছে এক টুকরা বিষাদ।যে বিষাদ কখনো তিলাকে ছোঁবে না।তিলা তো ওর ভাবীই হবে।ভালো থাকুক ওরা,ভালো থাকুক আকাশের সকল তারা।তিলা তাঁর স্বামীর সাথে রাতের নিশ্চুপ আকাশ দেখতে গিয়ে হয়তো কখনো দেখবে হঠাৎ একটি তারা খসে পরেছে নিচে।তিলা তারাটির জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে তখন,কিছুসময় পরে আবার ভুলে যাবে তারাটির কথা,তারাটির ব্যথা।রাত ভোর হবে,তখন হয়তো একটি ছোট্ট তিলা ওদের ঘরময় ঘুরে বেড়াবে।আনন্দে বিরহ ভুলিয়ে দেবে।

তাসলিমা কবির রিংকির কবিতা বাসন্তী আগুন



চাইলেই ভালবাসা প্রেম হয়ে যেতে পারে
এতোটুকু ইচ্ছায়, খেয়াল বা ব্যস্ততা বিদির্ণ করে।
কেউ কি ডাকে গভীর মমতায়!
যে ডাকতো তার মত করে...
আমার তো ক্ষন কাটে
মাটির চোখে বিলীন জীবনের
মীমাংসা খুজে।
পুড়ে বাসন্তী আগুনে মন
তাই দেখে চাঁদ হেসে খান খান
বদলে যায় আকাশ
ঘ্রাণে বিভোর হাসনাহেনা
তবুও অভিমানীর মান ভাঙাবে না?
সপ্ত ঋষির ধ্যানাসনে
মন্ত্রপাঠে গঙাজলের স্নানে
শুভ্র ভালবাসার কঠোর  অঙ্গীকারে
এসো একবার শুধু একবার ছুঁয়ে দিয়ে যাও
ঐ সাগর জল পর্বত হিমালয় ছেড়ে ।

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯

মে দিবসের অঙ্গীকার কবি আয়েশা মুন্নি

সাহিত্যঃ

দুনিয়ার মজদুর এক হও
বিশ্বজুড়ে শ্লোগান,
মালিক-শ্রমিকে কেন বিভেদ
গাই সাম্যের গান।

অধিকার আদায়ে মজলুম শ্রমিক
হও আজ ঐক্যবদ্ধ।
মালিকরূপি শোষক ও শোষনে বিরুদ্ধে করতে হবে যুদ্ধ।

মূল্যস্ফীতির তপ্তচাপে শ্রমিকের
দিন কাটে অর্ধাহারে,
মালিকরূপি ওই শিল্প বনিক
করে যায় আঘাত তারে।

শরীরের রক্ত ঘাম হয়ে ঝরে
পায় না শ্রমের মূল্য,
ওরা চেনে টাকা, মানবতাহীন
নয়কো মানুষের তুল্য।

মে দিবসে শ্রমিকের হোক
আজ নতুন অঙ্গীকার।
আদায় করে ফিরবে সে নীড়ে ছাড়বে না অধিকার।

মালিক শ্রমিক ব্যবধান রোধে আনতে হবে শক্ত বিধান।
মালিকরূপী পাষাণ হায়েনার
যেন না নেয় শ্রমিকের প্রাণ।

শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯

ফখরুল হাসান এর ছোটগল্প দুইতলার মেয়েটি

শিল্পসাহিত্য
   #দুইতলার_মেয়েটি #ছোটগল্প #প্রথম #পর্ব
#ফখরুল_হাসান

আব্বু আম্মু যাবে কক্সবাজার ঘুরতে। তাই আব্বু আম্মুর প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো তাদের সাথে গুছিয়ে দিচ্ছি । প্রতি বছর এই সময়টা তাঁরা ঘুরে ঘুরে আমাদের এই সুন্দর দেশটা দেখেন। প্রকৃতির অপূর্ব সুন্দরের লীলাভূমি আমাদের এই দেশ। প্রতি বছর আমিও যাই আব্বু আম্মুর সাথে কিন্তু, এবার
আমার যাওয়া হবেনা, সামনে ভার্সিটির সেমিস্টার ফাইনাল। ঘুরতে যেতে আমার খুব ভালো লাগে, তাই একটু মন খারাপ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো এই পড়াশুনার জন্য আর কত স্যাক্রীফাইস করতে হবে কে জানে? কিন্তু ছাড়তেও তো পারিনা ভবিষ্যতের কথা ভেবে। ঢাকার এই ফ্ল্যাটটা বাবা কিনেছিলেন।
যিনি বাড়িটা তৈরি করেছিলেন, তিনি অবসর প্রাপ্ত সরকারী অফিসার। তিনি নিজে থাকবেন বলে , বাড়ির সামনে প্রচুর জায়গা রেখেছেন। মাঝে উঠোন
চারদিক দিয়ে উচু বিল্ডিং দিয়ে প্রাচীর দেয়া । সহজে  কেউ বাড়ির ভেতরে ঢুকে যেতে পারবে না। নানান রকমের গাছপালার সমাহার দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি রুচিশীল মানুষ। তিন তলা বিল্ডিং তৈরি করে পরে টাকার অভাবে বিক্রি করে দেন কিছু পজিশন।
আব্বু আম্মু যেদিন প্রথম আসে বাড়ি কিনতে বাড়ির সামনে বিরাট অংশ দেখেই পছন্দ করে ফেলেন। বাড়ির ভিতরে ঢুকে তো অবাক ! ঢাকা মহানগরীর মাঝে সবুজে ঘেরা এমন বাড়ি আছে ভাবনার বাহিরে। সেই থেকে এই বাড়িতেই আমাদের বসবাস। ভদ্রলোক নিজে থাকার জন্য দুইতলা আর বাকি ফ্লোর গুলো বিক্রি করে দেন। এই বিল্ডিংয়ে নিজে থাকতেন দুইতলা। দুইটি মাত্র ছেলেমেয়ে। ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের জন্য পছন্দসই পাত্র খুঁজে হয়রান। আর আমরা থাকি তিনতলা। এ ছাড়াও আর একটা ফ্যামিলি থাকে চারতলাতে। আব্বু আম্মুর যাবার সময় এসে গেলো। আমি ওনাদের বিমানবন্দর দিয়ে এলাম। বাড়ি ওয়ালার ফ্যামিলীর সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। ওনার ওয়াইফ আমাকে তার নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসেন। উনার কোন ভাই বোন নেই। ওনার ওয়াইফ আর ছোট বোন। আমার এই কদিনের খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করে, বাড়ি ওয়ালার বাসাতেই। আমি ফিরে এসে খেতে বসবো এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। গিয়ে খুলে দেখি বাড়ি ওয়ালার বোন দাঁড়িয়ে। হাতে একটা প্লেট ঢাকা। বলল ভাবি তোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে, খেয়ে নিস। ঢাকনা সরিয়ে দেখি ভাত, সবজি, ডাল আর মুরগির ঝাল ফ্র্যাই। বাড়ি ওয়ালার বোনের নাম মুনা । মুনার এজ ৩০+ । সি.এ পাস করে এখন একটা মালটিন্যাশনাল কোম্পানিতে রিজিওনাল একাউন্ট ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছে। দেখতে বেশ দারুন। হাইট প্রায় সাড়ে ৫ ফিট। ফর্সা বাট হাল্কা মোটা হয়েছে তাই একটু তুলতুলেও লাগে। ফিগার ৩৫-৩২-৩৮। রেগুলার পার্লারে যায় তাই চেহারায় একটা অন্যরকম টোন আছে। এলাকায় ছেলেরা শুধু না অনেক বিবাহিত লোকও ওর জন্য পাগল। আমি প্রথমে মুনাকে আনটি বলে ডাকতাম। কিন্তু উনি আমাকে আপু বলে ডাকতে বলেন। আমি মুনা আপুকে থ্যাংকস জানিয়ে দরজা বন্ধ করবো ভাবছি, তখন দেখি মুনা আপু হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে একটু ঘরের দিকে উকি মারার চেষ্টা করছে। আমি ব্যাপারটা বোঝার জন্য ওর মুখের দিকে কৌতুহল ভরে তাকালাম।

#দুইতলার_মেয়েটি #ছোট_গল্প_দ্বিতীয়_পর্ব
#ফখরুল_হাসান

মুনা আপু পরের দিন সকালে আমায় ডেকে বললেন, আপু তাঁর বান্ধবীর সাথে সন্ধ্যায় মুভি দেখতে যাবে। যমুনা ফিউচার পার্কে। আমি যেন বিকালে ইস্টার্ণ প্লাজা মার্কেট থেকে তার মোবাইলটা সাড়িয়ে আনি। দুদিন আগে বান্ধবীর বিয়েতে গিয়ে নাচানাচি করে মোবাইলের স্ক্রিনটা ভেঙে যায়। মুনা আপু বাসা থেকে বের হবার সময়, আমাকে বলে গেলো মোবাইলটা ওয়ারড্রোবে রেখেছে ,আমি যাবার সময় যেনো নিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর আপুর রুমে গিয়ে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম! আমার মনে হলো , মুনা আপু গায়ে গতরে বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু বুদ্ধিশুদ্ধি এখনো হয়নি। কোনোকিচ্ছু সামলে রাখতে জানে না। নিজের কাপড়চোপড়, জুতো, অফিসের ব্যাগ, পারফিউম সব ঘরের ভিতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে একদম একাকার। বাসার যেখানে সেখানে ব্রা-প্যান্টি ফেলে রেখেছে। খাটের উপরে ফেলে রেখেছে ডি প্লাস ব্রা-প্যান্টি। ওয়ারড্রোব খুলে দেখি ডি প্লাস ব্রার উপরে মোবাইল। মুনা আপুর সাপের মতো শরীরে এত বড় বড় স্তন গুলো বড্ড বেসামাল থাকে সবসময়। একটু নড়াচড়া করলেই ভয়ংকর ভাবে দোলা খেতে শুরু করে। লম্বাও মেয়েটা কম নয়। পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। পাতলা কোমর, উঁচু পাছা দেখলে যে কোনো ছেলে কাত হয়ে যাবে। বুঝতে পারছি যে আমাকে দেখাতেই রুমে সবকিছু ইচ্ছা করে এলোমেলো করে রেখেছে। রুমে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চলে গেলাম মোবাইলটা নিয়ে ইস্টার্ণ প্লাজায়।
দোকানের ছেলেটা ফোনটা চার্জ দিতে বলেছিলো বলে চার্জারে কানেকশন দিলাম আমার রুমেই। সাথে সাথে মোবাইলটা অন হয়ে গেলে। আই ফোন সেভেনে এই এক জ্বালা, চার্জার লাগালেই সেট অন। মোবাইলটা অন হয়ে গেলো সাথে সাথে। যথারীতি লক করা। কেন যেন হঠাৎ করে আপুর ফোনটা ঘাটতে ইচ্ছে হলো আমার। আগ্রহটা তৈরি হয়েছে মুনা আপুর কারণেই। কার সাথে কথা বলে, কার সাথে চলাফেরা করে বা কার সাথে সেলফি তোলে এগুলো চেক করে দেখার আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমার আগ্রহ মুনা আপুর মোবাইলের ফটো গ্যালারি । কিন্তু পাসওয়ার্ড কোথায় পাই! আমি জানি আপুর পাসওয়ার্ড টা পাঁচ সংখ্যার। কিন্তু পাসওয়ার্ডটা কী? ভাবতে ভাবতে একটা আন্দাজে মনে পড়লো আমার বা মুনা আপুর নাম্বার এর প্রথম সংখ্যাগুলো দিয়ে দেখি। সেটা দিতেই মোবাইলের লক খুলে গেল। মোবাইলের সব কিছুই ঠিক ঠাক। কিন্তু সেলফি গুলোর দিকে চোখ পড়তেই মাথাটা আমার গরম হয়ে গেল। মুনা আপু সেলফি তুলেছে অন্তত কয়েকশ। প্রতিটাতেই খুব যত্ন করে মেকআপ করা। কিন্তু তাদের সব কয়টাতেই তার শরীরে বাঁকগুলো বাড়াবাড়ি রকমের চোখে পড়ছে। গায়ের জামা কাপড় ও অসংলগ্ন। একটা সেলফিতে তো প্রায় দুটো বুকই ডীপ নেক নাইট টিশার্টের ফাক দিয়ে বের হয়ে এসেছে। সেটাতে আবার ঠোঁট পাউট করে মুনা আপু সেলফি তুলেছে, যেন কোন প্রেমিককে দিচ্ছে। চিকন স্লিভের টিশার্ট পড়া একটা পিকে নিজের কোমড়ের ওপর টিশার্ট তুলে নিজের নাভী আর টাইটস পড়ার জঙ্ঘার ছবি তুলেছে মুনা আপু। একটা না ,এমন ছবি পেলাম অন্তত দশটা। একেকটা একেক কালারের টাইটস পড়া । আমার মনে হলো মুনা আপু যেন আগুনের গোলা । এমন আগুন ঘরে রাখলে, ঘর পুড়তে বাধ্য।

#দুইতলার_মেয়েটি #ছোট_গল্প_তৃতীয়_পর্ব
#ফখরুল_হাসান

'বেশ ভালোইতো আছিস !'
'কেন আপু?'
'খুব এনজয় করবি এই কদিন, তাইনা?'
'কেন, এতে এনজয় করার কি আছে?'
'কেন আবার, এ কয়দিন একা থাকবি, ড্রিংক করবি, বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা মারবি, রাতে মজা করবি সেটা এনজয়মেনট না?'
'ও তাই বলো !'
'তাছাড়া কাল শুক্রবার তাই আজতো পার্টি নাইট তাইনা?'
'না না তেমন কিছু না !'
এই এখন খেয়ে দেয়ে একটু টিভি দেখে তারপর ঘুম দেব। তারপর কাল উঠে নাস্তা করে একটু আড্ডা মারব। বিকেলের কোন প্ল্যান নেই। কথা গুলো শুনে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো মুনা আপু , তার পর বললো।
'বাহ, তবে তুই তো ভালো ছেলে।'
'ভালো কি না জানি না। তবে তুমি যা বলছো সেগুলো আমার পছন্দ না।'
'তাহলে তো তুই সত্যি ভালো ছেলে।'
জানিস, আমরা যখন এই রকম সুযোগ পেতাম তখন সব মেয়েরা একসাথে হয়ে যা যা করতাম তা তুই আন্দাজও করতে পারবি না।
'তুই ভালো ছেলে, যা খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়।'
কাল দেখা হবে। এই বলে মুনা আপু উপরে চলে গেলো। আমি খেতে খেতে আমাদের কথাবার্তা গুলো ভাবতে লাগলাম মুনা আপু কথা গুলো যা যা করতাম তা তোরা আন্দাজও করতে পারবি না।
যাই হোক, খাওয়া শেষ করে লাইট অফ করে শুয়ে টিভি দেখছি একবার ভাবলাম মুনা আপুর মোবাইল-এ কল দিই, তারপর আবার ভাবলাম কি জানি কি ভাববে, তাই আর কল দিলাম না। একটু পর একটা এসএমএস করলাম গুড নাইট বলে। মুনা আপুকে। তারপর শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না। এইভাবে প্রায় ৩০ মিনিট কেটে গেছে, হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখি মুনা আপু ফোন করেছে। রিসিভ করতেই মুনা আপু বলল,
'কিরে, কি করিস?'
'না তেমন কিছু না!'
'ঘুম আসছে না নাকি?'
 ফোনের ওপাশ থেকে মুনা আপুর গলাটা কেমন যেন অন্য রকম লাগলো। আমিও বললাম,
'না আপু, ঘুম আসছেনা।'
তারপর একটু ফাজলামো করে বললাম।
'তাইতো তোমার কথা চিন্তা করছি।'
ওপার থেকে কোন জবাব এলো না। তাতে আমি একটু ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
'রেগে গেলে নাকি, মজা করলাম বলে?'
'না রে রাগ করিনি। বাট…!'
'বাট কি?'
'আসলে আমারও ঘুম আসছিলো না!'
তাই ভাবলাম তোর সাথে ফোন-এ একটু গল্প করি।
'এটা তো বেশ ভালো।'
'তাই না?'
'হ্যাঁ।'
দু'তলা আর তিনতলা ফোন-এ গল্প করছে। একটা কাজ করি চলো, তুমি নিচের বারান্দাতে দাড়াও, আর আমি উপরের বারান্দাটাই দাড়াই তারপর গল্প করি, শুধু শুধু মোবাইল কোম্পানি-কে টাকা দিয়ে কি হবে?
মুনা আপু হাসল, কিন্তু কোন রেসপণ্ড করলো না।
তারপর আপু হঠাৎ করে বলল
'এই ‌শুভ্র, ছাদে যাবি?'
 'এখন?'
'হ্যাঁ, এখন।'
'তোমার ভাইয়া, ভাবী যদি কিছু বলে?'
'ওরা টের পাবে না।'
'কেন?'
'ঘুমিয়ে পড়েছে, তুই ছাদে চলে যা আমি একটু পরে আসছি।'
এই বলে ফোনটা কেটে দিলো মুনা আপু।

#দুইতলার_মেয়েটি_ছোট_গল্প_চতুর্থ_পর্ব
#ফখরুল_হাসান

লজ্জায় আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকে। ঘামতে শুরু করে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। দ্রুত নিচে নেমে আসলাম। রুমে গিয়ে পানি পানের জন্য গ্লাস নিলাম তিন চার বা পাঁচ গ্লাস পানি গিলে ফেললাম । মনের ভিতরে তার একটা খটকা লেগেই থাকে। মুনা আপুর মুখ কেন লাল হয়ে উঠছে, আর তার সারা শরীর ঘামে বৃষ্টিতে ভেজার মতো হয়ে ওঠেছে কেন? এক চরম সত্যের মুখোমুখি পড়ে গেলাম । আমার আগের বিশ্বাস সব ধ্বসে পড়তে থাকে ! বিজ্ঞানের ভাষায় সম্পর্ক যদি মানসিক এর চেয়ে শারিরীক হয় তবেই নাকি ভালবাসা বেশী হয়। কে না নীরবে বসে বসে কামচিন্তা করতে পছন্দ করে? আমার মনে হয় যারা অস্বীকার করে তারা মিথ্যে বলে। রুমে এসে বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম কিছুক্ষন আগের অনুভূতিগুলো। নারীর লজ্জা হচ্ছে লজ্জাবতী গাছের মতো। হাত লাগলেই শেষ। সেটা স্বামীর হাত হোক বা অন্য কোনো পুরুষের। এই হাত লাগা মানে শুধু শারীরিক স্পর্শ না,পুরুষের সঙ্গতায়ও নারীর লজ্জা কেটে যায়। যেমন রাতে ছাদে চক্ষু লজ্জা উঠে গেছে মুনা আপুর। কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়েকে ওড়না ছাড়া দাঁড়াতে বললে সে লজ্জায় মরে যাবে। অথচ মুনা আপু ! ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা, ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের শব্দে। দরজা খুলে দেখি মুনা আপু দাঁড়িয়ে আছে চায়ের কাপ হাতে। কোন কিছু না বলেই হঠাৎ কপালে একটা চুমুর সাথে গুডমর্নিং উইশ করে আমাকে দুপুরে ওদের ওখানে খেতে যেতে বললো।