নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদী জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভরাট হয়ে যাওয়া নদী সমূহ খননের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি
ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্যায় নদীর পাড় ভাঙ্গন থেকে তীর রক্ষা, নদী পথে সঠিক নাব্যতা ফিরিয়ে নৌ চলাচলের উন্নয়ন, পানির গুনগতমান উন্নয়ন, পানি সম্পদ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষাসহ পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের লক্ষ্যে ৫শত কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নদী পুন:খনন প্রকল্পের কাজ শনিবার(২৮এপ্রিল’২০১৮) শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। নরসিংদী সদর উপজেলার নদী ঘেরা করিমপুর ইউনিয়নের শুটকিকান্দী গ্রামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নদী পুন:খননের কাজ উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে: কর্ণেল (অব:) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বীর প্রতীক।
নরসিংদী জেলায় অন্তর্ভূক্ত পুন:খনন এর জন্য নির্ধারিত নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আড়িয়াল খাঁ নদ, হাড়িদোয়া নদী, পাহাড়িয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ (নরসিংদী অংশ), মেঘনা নদীর পশ্চিম চ্যানেল ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ, এবং নারায়নগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত ব্রহ্মপুত্র নদ (নারায়নগঞ্জ অংশে আড়াই হাজার, সোনারগাঁ ও বন্দর)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকার, প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনন্ট্রাকশন বিগ্রেড মহা পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার আনিছ এএফডব্লিউসি, পিএসসি, অতিরিক্ত মহা পরিচালক কর্ণেল মো: তৌহিদ হোসেন পিএসসি, প্রকল্প পরিচালক লে: কর্ণেল কিসমৎ হায়াৎ পিপিএম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো: মাহফুজুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (কে:অ:) এ.এইচ.এম ফখরুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবদুল মতিন সরকার, নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী, নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবদুল মতিন ভূইয়া, নরসিংদী পৌরসভার মেয়র মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল, করিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হারিছ মিয়া প্রমুখ।
প্রকল্পটি আর্থ সামাজিক এবং সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় গত ২৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট ব্যয় ৫শত কোটি ২৮ লক্ষ টাকায় বাস্তবায়ন করার বিষয়টি একনেক সভার সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত ভৌতকাজ সমূহ নি¤œরুপ; নদী পূন:খনন কাজ-২৩১.৮০ কিলোমিটার, ঢেউয়ের আঘাত হতে নদীর তীর রক্ষার কাজ-২২.২০৪ কিলোমিটার, নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ-১.১৫০ কিলোমিটার, ব্রীজ শক্তিশালী করণ কাজ ৮৫টি ব্রীজ।
এছাড়া নদী সমূহে খননকৃত মাটি দ্বারা নদীর দুই পাড়ে বিদ্যমান রাস্তা, খেলার মাঠ, জনসাধারনের ব্যবহারযোগ্য ভূমি, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, গীর্জার ভিটা/আঙ্গিনা ভরাট এবং জনসাধারণের মালিকানাধীন অপেক্ষাকৃত নীচু কৃষিভূমি অথবা পতিত ভূমি চাষাবাদযোগ্য করার লক্ষ্যে উচুকরণ কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণের সাথে সরকারের কাজ করার পথ আরো প্রশস্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালীন ও বাস্তবায়নোত্তর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর জন্য বিশেষত:দিন মজু, স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দরিদ্র বিমোচন করা হবে।
জন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির বাস্তবায়নে বিশেষ বিবেচনায় এবং নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নিমিত্তে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
ঢাকা থেকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব ও পূর্ব দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুপাশে নরসিংদী জেলা অবস্থিত। নরসিংদী সদর, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব, রায়পুরা ও পলাশ এ ৬টি উপলজেলা নিয়ে নরসিংদী জেলা গঠিত। নরসিংদী জেলার দুপাশে মেঘনা ও শীতলক্ষা নদী সারা বছর নাব্যতা বিরাজ করলেও অন্যান্য নদী সমূহ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদী নাব্যতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ কাজ হাতে নিয়ের্ছে। বাস্তবায়নকাল ডিপিপি অনুয়ায়ী জানুয়ারী ২০১৭ থেকে জুন ২০২১, বাস্তবায়নকাল কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী এপ্রিল ২০১১ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯।