সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮

সৌদী আরবের রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ শোকে স্তব্দ নরসিংদীর রবিনের পরিবার দ্রুত লাশ ফিরিয়ে আনার দাবী

সুজন বর্মণ দীপ, নরসিংদী:
সৌদী আরবের রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত নরসিংদীর রবিনের পরিবার এখন শোকে স্তব্দ। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে এলাকার পরিবেশ।
৬ লাখ টাকা দেনা করে বিদেশে পাড়ি জমানো রবিনের স্বপ্ন ছিলো ঋণ পরিশোধ করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনবে। একদিকে ছেলে হারানো অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। প্রিয় সন্তানের মুখখানি দেখতে সরকারের নিকট দ্রুত নিহতের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন স্বজনরা।
নিহত রবিন মাধবদী থানার কাঠালিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
সরেজমিন কাঠালিয়া গ্রামে গিয়ে নিহতের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, বাবা মা ও তিন ভাই ও এক বোনকে নিয়ে রবিনের পরিবার। পরিবারটি বড় হওয়ায় অনেকটা টানাপোড়নের মধ্যে চলতে হত তাদের। পরিবারের অভাব দূর করতে তিন মাস আগে এনজিওসহ বিভিন্ন জনের নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে রিয়াদে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন রবিন। বিমান বন্দর সংলগ্ন নূরা ইউসিভার্সিটিতে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেয়।
শুক্রবার সৌদি সময় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ রুমের সিলিন্ডার বিস্ফোরন হয়। সে সময় তারা নিজেদের রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। ওই সময় তাদের সাথে আরো ৪৫ জন শ্রমিক ছিল। সিলিন্ডারের আগুন মুহুর্তের মধ্যেই ভবনের প্রবেশদ্বারে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় রবিনসহ ৮ বাংলাদেশি দগ্ধ হয়ে মারা যায়। আগুনে দগ্ধ হয়ে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঝের চর গ্রামের পাভেল নামে একজন গুরুত্বর আহত হয়।
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় দুর্ঘটনায় রবিনের মারা যাওয়ার খবর পান পরিবার। এরপর থেকে বিলাপ করতে করতে এখন শোকে স্তব্দ হয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহত রবিনের মা রিনা বেগম বলেন, সৌদি যাওয়ার পর থেকে আমার ছেলে রবিন অনেক কষ্ট করেছে। এক গ্লাস পানিও পায়নি, গাছের পাতা-লতা খেয়ে বেচে ছিল। বিছানাও ছিলনা তার বাহিরে ঘুমায়ে ছিল কত দিন। কোন রকম কষ্ট করে একটা কাজ পায়। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই আমার ছেলের লাশটা যেন শেষ বারের মত দেখতে পাই। আমার একদিকে ঋনের বোঝা অন্যদিকে সন্তান হারানোর বেদনা আমি যেন আর পারছিনা।
নিহত রবিনের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ছেলেটা আমাদের সুখি করতে গিয়ে চিরদু:খী করে দিলো। অভাবের সংসারে ঋণের বোঝা কিভাবে বইবো, ছেলের শোক কিভাবে সইবো ?
নিহত রবিনের চাচাত ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার চাচা একদম গরীব মানুষ। তার তিন ছেলে মেয়ে এবং তিনি ট্রলি চালিয়ে সাংসার চালায়। রবিনকে বিদেশ পাঠানোর সময় ঋণ করে তাকে সৌদি পাঠানো হয়েছে। সংসারের স্বচ্ছলতা আসবে এই আশা নিয়ে তাকে সৌদি পাঠায়। কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরন হয়ে সে মারা যায়। আমি সরকারের কাছে এই আবেদন আমরা যেন ভাইয়ের লাশটা ফেরত পাই। আমার চাচা গরিব হিসেবে এই পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে পরিবারটাকে বাচিয়ে রাখার।
নিহত রবিনের ছোট ভাই রনি বলেন, আমি জুম্মার নামাজ পড়ে বাড়িতে এসে দিকে অনেক লোকজন। পরে জানতে পারলাম আমার বড় ভাই রবিন সৌদিতে মারা গেছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। তখন সৌদিতে ফোন দিয়ে ভাইয়ের মোবাইলে পাওয়া যাইনি। পরে ভাইয়ের সাথে থাকা বন্ধুদের ফোন দিলে তারা আমাকে জানায় আমার ভাই রুমে ঘুমিয়ে ছিল আর দুইজন রান্না ঘরে রান্না করার সময়  গ্যাস সিলিন্ডর বিস্ফোরন আমার ভাই মারা যায়।
এদিকে  রিয়াদ সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মেজর মোহাম্মদ আল-হামাদির বরাত দিয়ে স্থানীয় একটি বার্তা সংস্থা বলেছে, শ্রমিকদের থাকার ওই ভবনের প্রবেশদ্বারে যখন আগুন লাগে তখন সেখানে ৪৫ জন ছিলেন। সেখানে মোট ৫৪ জন থাকতেন, যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি। ভেতরের দিকের কক্ষগুলো থেকে শ্রমিকদের বেরোনোর অন্য কোনো পথ ছিল না। নিহত সাতজনের অধিকাংশই ওই সব কক্ষের বাসিন্দা বলে সিভিল ডিফেন্সের এক টুইটে বলা হয়েছে।
নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, বিষয়টি উপজেলা পরিষদের সমন্বয়সভায় আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিহতের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


Share: